মানুষ সব সময় সিন্ধান্ত বিষয়ে প্রমাণ চায়, প্রমাণ না পেলে কোন সিন্ধান্ত সে মেনে নিতে চায় না। একটি শিশুর চরিত্র যদি পরিক্ষা করি তাহলে দেখবো যে সে অনবরত প্রশ্ন করে এবং প্রশ্ন না করলে তার সন্তুষ্টি হয় না।
একই প্রশ্ন সে বারবার উচ্চারণ করে---"কেন?
জীবনের প্রত্যেক ক্ষেত্রে যুক্তি প্রয়োগ করতে গেলে এবং কারণ নির্ণয় করতে গেলে বহুবিধ সমস্যার সৃষ্টি হয়। সে কারণে আমাদেরকে প্রমাণের জন্য একটি মানদন্ড নির্ণয় করতে হবে। অর্থাৎ যে কোন বিষয়েই একটি চূড়ান্ত প্রমাণের ব্যবস্থা না নিলে জটিলতা দূর করা যাবে না। মানুষেরও অনবরত প্রশ্ন করার একটি প্রবণতা আছে। সে প্রবণতার কথা মনে রেখেই আমাদের প্রমাণের জন্য বিশেষ অবস্থা বা তথ্যের বিশ্বস্ত প্রমাণ তৈরী করতে হবে। এ প্রমাণগুলো না পেলে বিশ্বাস নির্মান করা সম্ভবপর হবে না।
পবিত্র কোরআন শরীফের সত্যতা প্রমাণ করতে হলেও এ বিবেচনাটি মনে স্থান দিতে হবে। একজন চিন্তাশীল খ্রীস্টানকে যদি জিজ্ঞেস করি সে কেন খ্রীস্টান ধর্ম অবলম্বন করে আছে? সে তার উত্তরে বলবে, পুনর্জাগরণের যে আলৌকিকতা তার মাহাত্ম্যেই আমি খ্রীস্টানধর্ম অবলম্বন করে আছি। তার এই বিশ্বাসের ভিত্তি হচ্ছে দু'হাজার বছর আগেকার একটি ঘটনা। একজন মারা গিয়েছিলন এবং তাকে আবার জীবন ফিরিয়ে আনা হয়েছিল। এই আলৌকিক ঘটনাই হচ্ছে তার বিশ্বাসের (পরশ পাথর) । কেননা তার খ্রীস্টীয় বিশ্বাস এবং চিন্তা ধারা এই পরশপাথরের উপর নির্ভরশীল। এই পরশ পাথর তো দু'হাজার বছর আগে ছিল, এখলো কি এই পরশ পাথরটি আছে? এখন কি মৃত ব্যক্তিকে জীবিত করা যায়? এ প্রশ্ন দু'টির কোন উত্তর নেই।
একজন মুসলমান কে যদি জিজ্ঞেস করা যায়, আপনি কেন মুসলমান? আপনার এই বিশ্বাসের পিছনে কোন আলৌকিক ঘটনা আছে কি? বিশ্বাসি মুসলমান কোরআন শরীফ হাতে নিয়ে বলবেন, আমার বিশ্বাসের ভিত্তিমূলে একটিমাত্র আলৌকিক বস্তূ আছে, সে আলৌকিক হচ্ছে
কোরআন শরীফ। চৌদ্দ'শ বছর আগে এটা যেমন ছিল, আজও তেমনি আছে। চৌদ্দ'শ বছর আগে এটাকে অবলম্বন করেই মুসলমানরা যেভাবে ধর্মকর্ম নির্বাহ করত, আজও তাই করে।
এখন আমরা কোরআন শরীফের নিয়ে সত্যতা নিয়ে এবং আলৌকিকতা বিষয়ে পরিক্ষা করে দেখতে পারি। ধরা যাক, আমি একজন লোককে বললাম, আমি তোমার পিতাকে জানতাম। লোকটি কিন্তু সহজে আমার কথা মেনে না নিতে পারে। সে প্রশ্ন করতে পারে, আপনি বলেছেন আপনি আমার পিতাকে জানতেন, বলুন তো তিনি কি হ্রস্বকায় ছিলেন না দীর্ঘকায়, তাঁর মাথার চুল কি কোঁকড়ানো চিল? তিনি কি চশমা পড়তেন?
আমি যদি তার প্রশ্নের উত্তর ঠিক ঠিক বলে দেই তাহলে সে বিশোস করবে যে, আমি সত্যিই তার পিতাকে জানতাম।
কোরআন শরীফ এমন একটি গ্রন্থ যার লেখক হচ্ছেন সয়ং আল্লাহ। তিনি এ দাবি করেছেন যে বিশ্বসৃষ্টির সূচনালগ্নে তিনি উপস্থিত ছিলেন এবং জীব সৃষ্টির সূচনালগ্নেও। আমরা আল্লাহকে প্রশ্ন করতে পারি, আপনি আমাদের কে প্রমাণ দিন বিশ্বব্রহ্মান্ড শুরুতে এবং জীবন যখন আরম্ভ হল তখন আপনি উপস্থিত ছিলেন?
কোরআন শরিফে সুরা আম্বিয়াতে ৩০ নং আয়াতে এর উত্তর আছে।''অবিশ্বাসীরা কি দেখেনা যে, সকল আকাশ এবনফ ভূ-মন্ডল একটি একক ছিল এবং আমরা তাকে বিচ্ছিন্ন করলাম? প্রতিটি জীবিত প্রানকণাকে আমরা পানি থেকে সৃষ্টি করেছি। তবুও কি তারা বিশ্বাস করবে না?এখানেই কিন্তূ সমস্ত সৃষ্টির সূচনালগ্নে আল্লাহর উপস্থিতির প্রমাণ হয়। প্রমাণ যে, সৃষ্টির আদিতে তিনি ছিলেন এবং সৃষ্টির সকল রহস্য তার সুম্মুখেই উদঘাটিত হয়েছে। আমরা জানি যে । বিশ্ব সৃষ্টির রহস্যের মূলে বিজ্ঞানীগণ তত্ত্ব উপস্থিত করেছেন। সে তত্ত্ব অনুসারে বিজ্ঞানীরা বলে থাকেন যে, আকাশমন্ডলী এবং পৃথিবী যাকে হয় 'মনোরক' অকম্মাৎ এক সময় বিদীর্ণ হয় এবং চতুর্দিকে বিস্তার হতে থাকে। এভাবেই আমরা পৃথিবীকে পেয়েছি। এটি আধুনিক সময়েরই বিজ্ঞানের অবিস্কার। কিন্তূ চৌদ্দ'শ বছর আগেই কোরআন শরীফে আল্লাহ একথা বলেছেন।
আরেকটি উদহারণ দেয়া যাক। কোরআন শরীফে ঊননব্বই সূরার সপ্তম আয়াতে, 'ইরাম' নামক একটি শহরের কথা বলা হয়েছে। ইরাম শহরের নাম ইতিহাসে নেই। ১৯৭৩ সালে সিরায়ার ' এরলূস' নামক একটি পুরানো শহর খনন কার্যের ফলে কিছু পুরানো লিখন পাওয়া যায়। এ লেখনগুলো মাটির ফলকের উপর খোদিত ছিল। এ সমস্ত লিখন পরিক্ষা করে চার হাজারের পুরানো সভ্যতার নিদর্শন পাওয়া গেছে। এ লিখনগুলোর মধ্যে 'ইরাম' শহরের উল্যেখ আছে। এরলূস, অঞ্চলের লোকজন 'ইরাম' শহরের লোকজনের সঙ্গে ব্যবসা বাণিজ্য করত। এ সত্যটা আমরা আবিস্কার করলাম মাত্র সেদিন ১৯৭৩ সালে। তাহলে কোরআন শরীফের মধ্যে এই শহরের নাম এল কি করে?? এর উত্তর সহজেই দিতে পারি। যেহেতু কোরআন আল্লাহ বাণী এবং তিনি সৃষ্টির সকল অবস্থাতেই বিদ্যমান ছিলেন, তাই ইরাম শহরকে তিনি জানতেন এবং আজ থেকে চৌদ্দ'শ বছর পূর্বে তাঁর রাসুলকে প্রথম জানিয়েছেন এবং বর্তমানে আমরাও বিশ্বাস করতে বাধ্য হচ্ছি।
কোরআন শরীফের বর্ণনাটি নিম্নরূপ।
' তোমরা কি দেখোনি কিভাবে তোমাদের প্রভু আদ জাতির প্রতি ব্যবহার করেছিলেন, কি করে তিনি উচ্চ স্তম্ভযুক্ত ইরাম শহরকে ধ্বংস করেছিলেন। যার সমতুল্য আর কোন শহর পৃথিবীতে ছিলনা। (৮৯,৬৬-৮)
দেখা যাচ্ছে যে কোন টিকাকারই ইরামের অস্তিত্ব খুঁজে পাননি। ইয়াহুদীদের ধর্মগ্রন্থে পাননি, খ্রীস্টানদের ধর্মগ্রন্থে পাননি, এবং পৃথিবীর লোক-পুরাণেও পাননি। সুতরাং পৃথিবীর কোন মানুষ ইরাম নামের সাথে পরিচিত ছিলনা। ইরামের অস্তিত্ব জানতেন শুধু মহান আল্লাহ। তাই তিনি ইরামের উধারণ দিয়েছেন এবং আজ আল্লাহর বাণীসম্বলিত একটি আলৌকিক অভিজ্ঞান। (চলবে)