somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খোশ আমদেদ রমজানুল মুবারক

০৭ ই আগস্ট, ২০১০ দুপুর ১:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মহান রাব্বুল আলামীনের রহমত, বরকত ও নেয়ামতের মাস রমজানুল মুবারক। বিশ্বের সকল মুসলমানের নিকট এই পবিত্র মাসটি অতীব খুশি ও আনন্দের মাস। পার্থিব লোভ-লালসা মুক্ত রাখা, ত্যাগ-সহিষ্ণুতার পরাকাষ্ঠা এবং মানবিক মূল্যবোধে উজ্জীবিত হওয়ার প্রশিক্ষণে এ মাসের গুরুত্ব, মর্যাদা সীমাহীন। মাহে রমজানের রোজা পালন সম্পর্কে পবিত্র কোরআনুল করীমে সূরা বাকারা আয়াত ১৮৩ নম্বরে বলা হয়েছে- ‘ইয়া আইয়্যুহাল্লাজিনা আমানু কুতিবা আলাইকুমুচ্ছিয়ামু কামা কুতিবা আলাল্লাজীনা মি ক্বাবলিকুম- অর্থাৎ হে ঈমানদারগণ, তোমাদের ওপর রমজানুল মুবারক মাসের রোজা ফরজ করা হয়েছে। যে রূপ তোমাদের পূর্ববর্তীগণের উপর ফরজ করা হয়েছিল। যাতে তোমরা সাধুত্ব এবং পরিশুদ্ধতা লাভ করতে পারো- অন্য আর একটি আয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে-‘ফামান শাহিদা মিনকুমুশশাহরুফালইয়াছিমহু’। অর্থাৎ তোমাদের মধ্যে যে কেহ রমজানুল মুবারক মহিনা প্রাপ্ত হয়, সে যেন তখন রোজা রাখে।’ (আয়াত নম্বর-১৮৫)

আরবী বারো চাঁদের মধ্যে রমজানুল মুবারকের মাহাত্ব ও গুরুত্ব অতীব তাৎপর্যপূর্ণ। মানব জীবনকে পূত-পবিত্র, সুন্দর এবং পারোলৌকিক মুক্তি, সুখ-শান্তির নিশ্চয়তা দেয় এই রমজানুল মুবারক। পারস্পরিক সহমর্মিতা, সৌহার্দবোধ এবং আত্মশুদ্ধির মহান শিক্ষা ও অনুশীলনে রমজানুল মুবারক মাসের ভূমিকা অনস্বীকার্য। সত্য-অসত্য, পাপ-পুণ্য এবং ভালো-মন্দের যথার্থ উপলব্ধির মাধ্যমে মানব জীবনকে মহিয়ান ও সফল করে গড়ে তোলার লক্ষ্যেই রমজানুল মুবারকের শুভ আগমন। আমাদের জীবনের সকল ক্ষেত্রে রমজানের সিয়াম সাধনা করে পবিত্রতম ও ঐশ্বর্যমণ্ডিত। এক কথায় মাহে রমজান ত্যাগ ও সংযমের মহান শিক্ষা দিয়ে আমাদের রহমত ও বরকতের পাল্লা ভারি করে। অন্যদিকে সমাজ জীবনে সাম্য প্রতিষ্ঠার রমজানের মরতবা ও ফজিলত অপরিসীম, ধনী-গরীবের মধ্যকার ভেদাভেদ ভুলে আমরা এই মহান মাসে পরস্পর একাত্ম হই।

এছাড়া ইবাদত-বন্দেগী, দোয়া কবুল, দুনইয়া-আখেরাতের শান্তি লাভ এবং পাপ পংকিলতা থেকে মুক্তির জন্যে রমজানের উদ্দেশ্য আরো ব্যাপক ও সুদূর প্রসারী। পবিত্র মাহে রমজানের মর্যাদা ও ফজিলত প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের জন্য নেয়ামতস্বরূপ। এই পবিত্র মাসেই বিশ্ব মানবের সংবিধান কোরআনুল করীম মহান আল্লাহ পাক অবতীর্ণ করেছেন এবং বলেছেন-রোজা আমারই জন্য (উদ্দেশ্যে) রাখা হয়, আমি স্বয়ং রোজাদারদের পুরুষ্কৃত করবো। তিনি আরো বলেছেন-যারা রিপু দমন করে খাঁটি পথে অটল থাকবে তাদের আমি অগণিত সওয়াব প্রদান করবো।

ইসলামে পাঁচটি রোকনের মধ্যে রোজা (সিয়াম) পালন তৃতীয় স্তম্ভ। রমজানের এই রোজা গুরুত্বপূর্ণ পালন একক বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ইবাদত। এই ইবাদত পালনের মধ্যেই মানুষের সর্বাধিক ত্যাগ-সংযম-ধৈর্য ও কষ্ট সহিষ্ণুতার প্রমাণ মেলে এবং শারীরিক, মানসিক, নৈতিক, আত্মিকসহ রমজানুল মুবারকের পরম সওয়াব হাসিল করি। হযরত ওমর (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, হযরত রাসূলে পাক (সাঃ) এরশাদ করেছেন, মাহে রমজান আগমনের সঙ্গে সঙ্গে বান্দাদের জন্য আনন্দ-উল্লাস ও সচ্ছলতার আগমন ঘটে। এছাড়া একটি হাদীসে উল্লেখ রয়েছে- মাহে রমজানের বেহেশতের দ্বারসমূহ খুলে দেয়া হয়। দোজখের দরজা বন্ধ ও শয়তানকে বন্দী রাখা হয়। আরো একটি হাদীসে আছে, রমজান মাসের রোজা পালনকারী ফেরেশতা, কীট-পতঙ্গ, পশু-পাখি এমনকি বিশ্ব চরাচরের সকল প্রাণী বরকত প্রাপ্ত হয়। বিভিন্ন হাদীস শরীফে পবিত্র রমজানুল মুবারক সম্পর্কে মূল্যবান উদ্ধৃতি রয়েছে - তেবরানী আহমদ ও তিরমিজী শরীফে রমজানুল মাস সম্পর্কে বলা হয়েছে-রমজানুল মুবারক মাস বরকত, রহমত, গুনাহ-খাতা মাফ ও দোয়া কবুলের মাস। এই পবিত্র মাসে ফেরেশতারা প্রত্যহ মানুষের উদ্দেশ্যে বলেন, হে মঙ্গল অনুসন্ধানকারী আল্লাহর কথা স্মরণ কর, তাঁর ইবাদত-বন্দেগীতে কায়মনে রত হও। দিল-মন দিয়ে অতি বিনয়ীভাবে তওবা-এস্তেগফার কর। তোমরা এ পবিত্র মাসে যা চাইবে, কামনা করবে আল্লাহ পাক পরওয়ার দিগার তা কবুল করে নিবেন। এই রমজানুল মুবারকে মহান রাব্বুল আলামীন অগণিত দোজখীদের মুক্তি দেন।

এছাড়া আমাদের প্রিয় নবী করীম (সাঃ) পবিত্র চারটি আসমানী গ্রন্থের বরাত দিয়ে বলেছেন, তওরাত গ্রন্থে রমজানুল মুবারকে পাপ, পংকিলতা থেকে মুক্তি পাওয়া, যবুর গ্রন্থে আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভ, ইঞ্জিল গ্রন্থে পাপ মুক্তির পবিত্র মাস এবং কোরআনুল করীমে এই মাসকে কু-প্রবৃত্তি দমন এবং ঈমানের শাখা-প্রশাখা সঞ্জীবিত হওয়া আল্লাহর রহমত, বরকত এবং পুণ্য অর্জনের মাস বলেছেন। নবীয়ে দোজাহা, সরওয়ারে কায়েনাত আরো এরশাদ করেছেন; রমজানুল মুবারকে এক দেরহাম দান-খয়রাতের বরকতে হাজার দেরহামের সওয়াব লিপিবদ্ধ করা হয়। এছাড়া এই মহান পবিত্র মাসের ফজিলত বরকত ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ‘ মোনাকেবে মোহাম্মদী গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে যে, রাব্বুল আলামীনের অশেষ রহমত, বরকত ও করুণা বর্ষিত হয়। ধন-সম্পদ অর্জনে অত্যন্ত বরকত পাওয়া যায়। আয়-রোজগারে উন্নতি প্রাপ্ত এবং নেক, সৎ কাজের মর্যাদা অধিক বাড়িয়ে দেয়া হয়- সর্বদা মহান স্রষ্টার রহমত, বরকত ও নেয়ামত বর্ষিত হয়। আসমান-জমীন এবং ফেরেশতাকুল রোজাদারদের উপর আশীর্বাদ পাঠাতে থাকে এবং তাদের জন্য বেহেশত মনোরম ও সুসজ্জিত করে সাজানো হয়।

আসুন, রমজানুল মুবারকের এই পবিত্র মহান মাসের প্রতি যথার্থ শ্রদ্ধা প্রদর্শন, পবিত্রতা ও মর্যাদা বজায় রেখে অত্যন্ত সতর্ক চিত্তে শুধু আল্লাহর নিমিত্ত রোজা পালন, তারাবীহ আদায়, ইফতার-সেহরী, দান-খয়রাত, যাকাত, সদ্‌কায়ে ফিতরা আদায়, শবে কদর, ঈদ উৎসব ইত্যাদি এসব কিছুর মাধ্যমে আল্লাহর অশেষ নেয়ামত, বরকত এবং প্রকৃত শান্তি, মুক্তি অর্জন করি।


**************************
মূল লেখক মাওলানা শাহ আবদুস সাত্তার

৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×