জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ও পিরোজপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে যুদ্ধাপরাধের মিথ্যা ও কল্পিত অভিযোগ থেকে নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল তদন্তকারী দলের কাছে পিরোজপুর ও জিয়ানগরের মুক্তিযোদ্ধা ও জনপ্রতিনিধিরা আবেদন জানিয়েছেন। আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল তদন্ত দল ১৮ আগস্ট পিরোজপুরের পাড়েরহাট বন্দরে আসলে তারা তাদের কাছে কিছু বলার জন্য যায়। কিন্তু পরিস্থিতি প্রতিকূলে থাকায় তাদের বক্তব্য লিখিতাকারে তদন্তদলের প্রধানের বরাবর ডাকযোগে পাঠানো হয়েছে। লিখিত বক্তব্যে পিরোজপুরের বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধারা ছাড়াও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাও স্বাক্ষর করেছেন। লিখিত আবেদনে তারা বলেন ‘‘ পিরোজপুর-১ আসন থেকে দু'বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত ও তাকে আদর্শিকভাবে মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়ে রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপরায়ণ কিছু সংখ্যক ব্যক্তি আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতা বিরোধী ও যুদ্ধাপরাধের সাথে যুক্ত করে তার বিশ্বব্যাপী ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ণ ও জনগণ থেকে তাকে বিচ্ছিন্ন করার ভিন্ন মিশন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অবিরাম তার বিরুদ্ধে কতিপয় মিথ্যা কাহিনী প্রচার করে যাচ্ছে। এরই অংশ হিসাবে ইতোমধ্যে পিরোজপুরের প্রতিহিংসাপরায়ণ কতিপয় ব্যক্তির পৃষ্ঠপোষকতায় তার বিরুদ্ধে অর্থের বিনিয়মে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ২টি মামলাও দায়ের করা হয়েছে। আল্লামা সাঈদীর বিরুদ্ধে পরিচালিত এসব ষড়যন্ত্র লক্ষ্য করে আমরা নিম্ন স্বাক্ষরকারী মুক্তিযোদ্ধা, স্থানীয় গণ্যমান্য ও বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ আল্লামা সাঈদীর বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ ঘৃনাভরে প্রত্যাখ্যান করে অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে প্রচন্ড ক্ষোভ ও ধিক্কার জানিয়ে সরকারের নিকট তার নিঃশর্ত মুক্তি দাবী করছি।
আমরা মুক্তিযোদ্ধারা দৃঢতার সাথে বলতে চাই মামলা দুটির তথ্য ও উপাত্ত ও সাক্ষী সবই মিথ্যার উপর প্রতিষ্ঠিত। কারণ, আমরা নবম সেক্টরের সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর অবঃ জিয়াউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে পিরোজপুরে হানাদার বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করি ও পিরোজপুরকে শত্রুমুক্ত করি। সাঈদী স্বাধীনতা বিরোধী কোন কর্মকান্ডে অংশ গ্রহণ করেছে বলে আমাদের জানা নাই। মুক্তিযুদ্ধে তার মানবতা বিরোধী, স্বাধীনতা বিরোধী কোন ভূমিকা থাকলে তা আমদের আগে বা আমাদের চেয়ে অন্য কারো বেশী জানার কথা নয়। আমরা পিরোজপুরের শীর্ষ স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা ইতোপূর্বে একাধিক বার সাঈদীর বিরুদ্ধে প্রকাশিত মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে বিবৃতি দিয়েছি। বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে তার বিরুদ্ধে প্রকাশিত মিথ্যা সংবাদের প্রতিবাদ করেছি। মুক্তিযুদ্ধের পুরো নয় মাস তিনি আমাদের মধ্যেই পরিবার নিয়ে অবস্থান করেছেন। অন্যদের তুলনায় আমরাই তার সম্পর্কে সর্বাধিক অবগত। মুক্তিযুদ্ধের পরে পিরোজপুরে যারা স্বাধীনতা বিরোধী ছিল আমরা তাদের শাস্তির বিধান করেছি। তিনি যদি মুক্তিযুদ্ধে বিতর্কিত ভূমিকা পালন করতেন তাহলে পিরোজপুরে তিনি নিরাপদে থাকতেন না এবং মুক্তিযোদ্ধারাও তার পক্ষাবলম্বন করতেন না। দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে যুদ্ধাপরাধের বিচার হোক এটা আমদের প্রাণের দাবি, কিন্তু এ বিচার করতে গিয়ে কোন নির্দোষ মানুষ যেন দন্ডিত না হয় বা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকারে পরিণত না হয় সেদিকেও সংশ্লিষ্ট সকলের সতর্ক দৃষ্টি রাখা একান্ত প্রয়োজন। আমরা চাই না রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে বা ভুলক্রমে নির্দোষ মানুষ অকারণে দন্ডিত হোক। সাঈদী স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরুদ্ধে সামান্যতমও বিতর্কিত ভূমিকা পালন করেননি। মহান মুক্তিযুদ্ধে রাজাকার আলবদর, আল-শামস বা শান্তি কমিটির কোন তালিকায় তার নাম নাই। এমনকি বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে (২০০৭-০৯) পিরোজপুর জেলা পরিষদ প্রকাশিত ‘পিরোজপুরের ইতিহাস' গ্রন্থের ২১৩ পৃষ্ঠায় প্রকাশিত স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকারদের তালিকাতেও সাঈদীর নাম নাই। বরং একই বইয়ের ৪২৫ পৃষ্ঠায় পিরোজপুরের কৃতী সন্তানদের নামের তালিকায় সাঈদীর জীবনালেখ্য প্রকাশ করা হয়েছে। স্বাধীনতার পরে মুফাসসিরে কোরআন হিসাবে তিনি সমগ্র দেশে পরিচিতি লাভ করে এবং এক পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়েন বিশ্বময়। ইরাক ও কুয়েতে যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে গঠিত আন্তর্জাতিক কমিটির তিনি সদস্য ছিলেন। পৃথিবীর অর্ধ শতাধিক দেশে তিনি ইসলামের বাণী পৌঁছে দিয়েছেন। সব মানুষের প্রিয় এ ব্যক্তিত্বকে মুক্তির মাধ্যমে দেশের লক্ষ কোটি মানুষের প্রাণের দাবি পূরণের জন্যে সরকারের নিকট আমরা দেশ রক্ষার অতন্দ্র প্রহরী মুক্তিযোদ্ধাগণ আকুল আবেদন জানাচ্ছি।
অমুসলিম সংখ্যালঘুরাও সাঈদীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল। পিরোজপুরে যখন তিনি প্রবেশ করেন হিন্দু-মুসলিমরা তার কাছ থেকে নসিহত শোনার জন্য ও দোয়া নেবার জন্য অধীর আগ্রহে প্রতিক্ষায় থাকতেন। আমরা সুস্পষ্ট ভাবে জানাচ্ছি যে, মহান মুক্তিযুদ্ধে মাওলানা সাঈদীর কোন বিতর্কিত ভূমিকা ছিল না। মাওলানা সাইদী মুক্তিযুদ্ধে সমান্যতম বিতর্কিত ভূমিকাও পালন করেননি। মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত সরকারি দলিল পত্রেও তার প্রমাণ রয়েছে। গত ৩টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পিরোজপুর, নাজিরপুর ও জিয়ানগরের স্বনামধন্য উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বীর মুক্তিযোদ্ধা মাওলানা সাঈদীর সাথে থেকে তাকে বিজয়ী করার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। পিরোজপুরবাসী তার স্বাক্ষী। মাওলানা সাঈদী যুদ্ধাপরাধী বা রাজাকার হলে আমারা মুক্তিযোদ্ধারা কোনক্রমেই তার পক্ষাবলম্বন করতাম না। আমরা পিরোজপুরের বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ ও সর্বস্তরের মানুষ সকল ধরনের মিডিয়া ও দেশবাসীর জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে, আমরা পিরোজপুরবাসী তাকে শৈশবকাল থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত অত্যন্ত কাছ থেকে তাকে দেখে আসছি। আমরা অপপ্রচারকারী সংশ্লিষ্ট মহলকে সাঈদীর বিরুদ্ধে সকল ধরনের মিথ্যা প্রচার বন্ধের জোর দাবি জানাচ্ছি। এবং সেই সাথে সাথে সরকারের নিকট আবেদন করছি সম্মানিত ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে যে সকল স্বার্থান্বেষী মহল অপপ্রচার চালাচ্ছে তাদেরকে সমাজে হেয়প্রতিপন্ন করার ব্যর্থ চেষ্টা করছে তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। আবেদনে স্বাক্ষরকারী ব্যক্তিরা হলেন, পিরোজপুর জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক এমপি গাজী নুরুজ্জামান বাবুল, সাবেক পৌর চেয়ারম্যান ও মুক্তিযোদ্ধা এম. ডি লিয়াকত আলী শেখ বাদশা, পিরোজপুর পৌর কাউন্সিলর ও মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম বাতেন, পিরোজপুর সাবেক পৌর কাউন্সিলর ও মুক্তিযোদ্ধা আঃ রাজ্জাক মুনান, জিয়ানগরের মুক্তিযোদ্ধা মোকাররম হোসেন কবির, পিরোজপুরের মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার রেজাউল আলম শানু, মুক্তিযোদ্ধা মোশাররফ হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম হাওলাদার, মুক্তি যুদ্ধকালীন পাড়েরহাট ক্যাম্প সংগঠক মুক্তিযোদ্ধা মোঃ খসরুল আলম, জিয়ানগর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইকরামুল কবির মজনু, পাড়েরহাট ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আঃ সত্তার তালুকদার, শেখ হেমায়েত উদ্দিন, ইউপি সদস্য তোফাজ্জেল হোসেন, আঃ রাজ্জাক হাওলাদার, ও সাবেক ইউপি সদস্য মোঃ রুস্তুম আলীসহ আরো গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।
আয়কর আইনজীবীর বিবৃতি
মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে আয় গোপন
ও কর ফাঁকির মামলা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন
স্টাফ রিপোর্টার : প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন ও জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে আয় গোপন ও কর ফাঁকির অভিযোগে যে মামলা দায়ের করা হয়েছে সে সম্পর্কে গতকাল শনিবার তার আয়কর আইনজীবী মোঃ হান্নান হোসেন বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, আমার মোয়াক্কেল মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে আয় গোপন ও কর ফাঁকির অভিযোগে যে মামলা দায়ের করা হয়েছে তা মোটেই সঠিক নয়। ২০০৫-২০০৬ সাল থেকে ২০০৯-২০১০ সাল কর বর্ষ পর্যন্ত মোট ২ কোটি ২৭ লাখ ৪০ হাজার এক শত বিশ টাকা আয় গোপন ও কর ফাঁকি দেয়ার অভিযোগে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত এ মামলা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
তিনি বলেন, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী সর্বশেষ ১৩/৫/২০১০ তারিখ পর্যন্ত তার সকল আয় ও আয়কর রিটার্ন প্রদর্শন করেছেন। মামলায় যে ২ কোটি ২৭ লক্ষ ৪০ হাজার ১শ ২০ টাকা আয় গোপন করার অভিযোগ করা হয়েছে সেটা মূলত: মাওলানা সাঈদীর নিজের নয়। এই টাকা তার দেশ-বিদেশের ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষীগণ বিভিন্ন ধর্মীয়, সামাজিক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণের উদ্দেশ্যে অনুদান হিসেবে দান করেছেন। অনুদানকৃত ঐ অর্থ শতাধিক মসজিদ, ৪টি কামিল মাদ্রাসা, ১০টি ইয়াতিমখানা এবং ৪টি টেকনিক্যাল কলেজসহ বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠান নির্মাণ, বন্যা ও সিডরে আক্রান্ত দু:স্থ নারী-পুরুষের সাহায্যে ব্যয় করা হয়েছে। তার হিসাবও সর্বশেষ গত ১৩/৫/২০১০ তারিখে দাখিলকৃত আয়কর রিটার্নে প্রদর্শন করা হয়েছে। যার রিটার্ন রেজিস্ট্রারের ক্রমিক নং ১৫৯/০৯-১০ থেকে ১৬৯/০৯-১০।
তিনি বলেন, যেহেতু উল্লেখিত টাকা আমার মোয়াক্কেল মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর উপার্জিত অর্থ নয় সেহেতু তার ব্যক্তিগত রিটার্নে তা প্রদর্শন করা হয়নি। তথাপিও কর কর্মকর্তার জ্ঞাতার্থে সর্বশেষ উল্লেখিত সংশোধনী রিটার্নে তার নিজের উপার্জিত অর্থ ও অনুদানের অর্থ আলাদা আলাদাভাবে প্রদর্শন করা হয়েছে।
এ থেকে স্পষ্টভাবেই প্রতীয়মান হচ্ছে যে, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে আয় গোপন ও কর ফাঁকির অভিযোগে যে মামলা দায়ের করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। মামলার বিষয়টি আমরা আইনগতভাবেই মোকাবেলা করব। তিনি আশা প্রকাশ করেন এ বক্তব্যের পরে জনমনের সকল বিভ্রান্তির অবসান হবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই নভেম্বর, ২০১২ রাত ১০:৫১