somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কালাপানি

০৭ ই নভেম্বর, ২০০৬ দুপুর ১২:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বন্ধুত্ব কি?
হুমম . . . কোনই চিন্তার কথা না। তাইনা? এতোদিন ভেবেছি তাই ।

ভেবেছি ভুল।

আমার বন্ধু . . আমার গার্জিয়ান, আমার কনফিদান্ত । ক্লাস সেভেনে ফুটবল টিমের ম্যানেজার ছিলো বলে স্কুলে তোর নামই হয়ে গেল ম্যানেজার। ফেল মারা স্টুডেন্ট ছিলাম আমি। টুপি পড়ে আইডিয়াল স্কুলে যেতাম ঠিকই . . . কিন্তু মন ছিল না পড়ালেখায়।

এইটে উঠলাম . . . মারলাম অংকে ফেল। নাইনে ওঠার সময় বাবার মার তো খেলামই . . . কি পোয়েটিক জাস্টিস . . . শালার স্কুল বলে আমাকে সায়েনস নিতে দেবেনা। তোর ক্লাস রোল ছিলো 36 আমার 38 । দেখলাম . . .পাশ করেও তুই কি সুন্দর ভাবে নিয়ে নিলি কমার্স। বিশ্বাস কর . . . তোকে দেখেই সাহস পেয়েছিলাম কমার্স নেবার।

ততো দিনে তুই গেছিস বড়ো হয়ে। হা করে দেখতাম . . .টুপিটা পকেটে ভরে কলোনির চিপার কোন সিঁড়িতে তোর এক্সপার্ট 29 খেলা। হা টা আরো বড় হতো যখন বোঝার চেস্টা করেও ওই 52 তাসের গোলমালটা বুঝতে পারতাম না। তোর ঠোটে ঝুলতো সিগারেট। যতোই ইচ্ছে করুক . . . ভাব দেখিয়ে বলতাম . . . জীবনেও খাবো না। তুই হাসতি।

ওফ এস এসসির দিন গুলা। পড়া . . . পড়া . . . আরো কিছু পড়া। আবারো হা করে শুনতাম তুই বলতি যখন শরতের লেখা আর লা নুই বেঙলী কত জোস এগুলো। আমি তখন কেবল তিন গোয়েন্দা থেকে রানায় উঠেছি। রেজালট হওয়া। এক লগে ওয়াল স্ট্রীট মুভি টা দেখেছিলাম কদিন আগে। যদিও কিসসু বুঝিনি তখন, দুজনেরই খুব জোস লেগেছিল শ্যাম্পেনের বোতল দিয়ে সেলিব্রেট করাটা।

রেজালট এর পরে 1 লিটারের কোকের বোতল ঝাঁকিয়ে তাই করলামও মহা সেলিব্রেট।

কোন কলেজে ঢুকবো? আবার তোর লেজ ধরা। তুই যখন সাহস করে বললি . . . কমার্স কলেজ বৃন্দাবনে আছে তো কি হয়েছে? পড়াবে তো ফ্রি! আমিও না বুঝেই বল্লাম সাধু . . সাধু।
আট টায় ক্লাস . . .ভোর ছটায় তুই বাসায় এসে জাগিয়ে দিতি আমায় আর ঘুম ঘুম চোখে তোর পিছে পিছে সোনালী ব্যাংকের সামনে দাঁড়াতাম স্টাফ বাস টার জন্য। গানের সমঝদার ছিলি তুই। কাক ভোরে ফাকা রাস্তায় আর সব পোলাপানের গান আর তোর ইনপুট জোস লাগতো। পলটন থেকে তুইতো তুলে নিলি চাটগাইয়া ওই ঘুমকাতুরে ছেলে টাকে।

মনে আছে . . সবার আগে পৌছতাম আমরা। ক্লাসে ঢুকে নিজের সিটে বসতাম। দেখতাম সব কেমন গুছিয়ে রাখতি তুই। 20 মিনিট পরে মেয়েগুলা ঢুকতো। ওরে . . . কেমনে ভুলি . . .আমার প্রথম ক্রাশ। কিন্তু তুই পড়লি প্রেমে। চুপ করে সরে গেছিলাম। তুই বঝেছিলি . . . হেসেছিলি . . . কিন্তু কিছু বলিসনি।

তোদেরকে আমরা আর সবাই বলতাম পারফেক্ট কাপল। ভেঙে গেলি তোরা। আবার আমার হা হওয়ার পালা। আাম জীবনে কল্পনাও করিনি দুজন দুজনকে এতো অসম্ভব রকমের ভালো বাসার পরও কেমন করে আলাদা হয়ে গেলি । দুজনের সমঝোতায়।

আমাকে বলেছিলি তুই . . .আমি ভুলিনি। তোর ফ্যামিলিতে তোকেই দাঁড়তে হবে। প্রমান করতে হবে তুই ফেলনা নোস। ক্লাস স্ট্রাকচার আর সোসাইটিকে কিই না ঘৃণা করতাম আমরা।

আমি প্রেমে পড়লাম আমাদের সবচেয়ে ভালো বন্ধুটার সাথে। তুই চুপ থাকলি আমার কথা ভেবে। তিনটা বছর তুই আমাকে তোর সবটা সাপোর্ট দিলি। চেন স্মোকার হলাম। মনে আছে হরতালের দিনে তোকে পিছে বসিয়ে সাইকেলে করে কতো গেছি মতিঝিল থেকে গুলশান? আজ ভাবতেই অবাক লাগে না ?

আমি ভাংলাম। তুই পাশে থাকলি। ইউনিভার্সিটির সেই ভর্তির সময় আমি ওর পিছু ধরে ঢুকলাম এক ডিপার্টমেন্টে আর তুই গেলি আরেকটায়। তাও পাশে থাকলি। চেষ্টা করলাম দেশ ছাড়ার এক সাথে। পারলাম না। আমি ভাংতে থাকলাম তুই দাড়িয়ে রইলি আমার সাথে।

10টা বছর। বন্ধু . . .10 টা বছর। আমাকে তুই কতোবার হাত ধরে তুলেছিস ইয়ত্তা নেই। কেমন করে আমরা আর ইনোসেন্ট থাকলামনা . . কিন্তু ডিসেনসি আর ডিগনিটি থাকলো ঠিকই।

ওরে . . . আমি পালাতে চেয়েছিলাম । থাইল্যান্ডে। আবারো পারিনি। তুই চুপ ছিলি। কিন্তু যখন আজ তুইই পালিয়ে গেলি। বিশ্বাস কর . . . আমার দুনিয়া ফাঁকা হয়ে গেছে। জানি আমরা কথা বলেছি . . .দেখা করেছি হয়তো মাসে দুবার। কিন্তু আমার চোখে তাকিয়েই যখন তুই বলতি .. একটা সেকেন্ড বিরতি দিয়ে . . .

হোয়াটস আপ ম্যান ? ..

আমি জানতাম, আমার মুখ খোলার দরকার নেই . . . তুই বুঝেছিস সবকিছু।

কাল রাতে তোকে বিদায় দেবার সময় বুকটা ফেটে গেলেও হা হা করে হেসেছি। কিল দিয়েছি তোর পিঠে দুটো। একবারও বলিনি তোকে রেখে আসি চল। সব বুঝেছি বলেই হয়তো বা। যদিও জানি তুই ছেড়ে যাচ্ছিস চির দিনের মতো . . . মুখ ফুটে বলিনি। তোর ফ্যামিলির দাবিকে সম্মান করেছি।

তুই মনে হয় দেখিসনি আমাকে আজ। সারারাত ঘুমাতে পারিনিতো . . . তাই সেই আগের মতো . . . কাক ঢাকা ভোরে বেরিয়ে পড়েছিলাম আজ। এয়ার পোর্টে তোর বোর্ডিং গেট কতো জানিনা । ভোর 5 টা থেকে 1 থেকে 16 নম্বর গেটের দিকে তাকিয়ে ঘুরেছি. . . ওই বেষ্টনীর বাইরে। কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে রেখেছিলাম । মাথা থেকে চিন্তা ঝাড়ার জন্য। তবুও শালা বানচোত মন . . . 3 বছর আগের ওই অস্ট্রেলিয়ার ফ্লাইট ভুলতে পারলাম না।

তোকে শেষ দেখা দেখেছি বন্ধু। 4 নম্বর গেটে ঢুকতে । তোর পেেকটে হাত ঢুকিয়ে হাঁটা দেখে আর সামলাতে পারিনি বন্ধু। পালিয়েছি। শুধু শুধু তোর মন খারাপ করতে চাইনি।

কালাপানি . . . বন্ধু।

হাসতে হাসতে 5 বছর আগে আমরা বলেছিলাম কালাপানি পার হলে ওই ছেঁড়া বাধন আর জোড়া লাগেনা। শিভালরির একটা ওথ নিয়েছিলাম মনে আছে? বাধন ছেড়ার শেষ মুহূর্তে আমরা সব সময় বিদায় জানাবো .. তার আগে নয়? বড় হয়ে গেছি . . . আমিও জানি তোর মনে আছে.. কিন্তু সামাজিকতায় . . আর তোয়াক্কা নেই ভাবটা দেখাতে পারিনা .. তুই .. আমি .. কেউই। কিন্তু দোস্ত প্রমিজটা রেখেছি। আমাদের লাস্ট চেয়ার আমি।

নিজের জন্যই বড়ো প্রয়োজন ছিলো তোকে বিদায় দেয়ার। চোরের মতো হলেও . . . চুপি চুপি হলেও . . . তুই না দেখলেও . . . বন্ধু. . . শেষ মুহূর্তে আমি ছিলাম।

"এন্ড অফ অ্যান এরা .. অফ এরাস"

কালাপানি . . . দোস্ত ।
বন্ধুত্ব কি. . . আমি বুঝেছি তোকে ওই ভিড়ের মধ্যে লাস্ট চোরা চোখে দেখায়।

ওপারে তোর নতুন জীবন ভালো কাটুক।

সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই নভেম্বর, ২০০৬ সকাল ৯:২০
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×