somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঢাকা আমার ঢাকা। স্মৃতিতে মুড়ির টিন।

০৬ ই জানুয়ারি, ২০১১ রাত ১০:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তখন পাঠশালার চৌকাঠে পা মাড়ানো হয়নি। বাসার পাশ দিয়েই ছিল রাজপথ। বারান্দায় উঁকি দিলে দুই পাশের দুই বাস স্ট্যান্ড পরিষ্কার দেখা যায়। সারাদিন অসংখ্য যান্ত্রিক/অযান্ত্রিক যানবাহনের সারি দৌড়ে চলেছে। রাস্তায় তখন অধিকাংশই টেম্পু, মিনিবাস, বেবিট্যাক্সি আর রিকশা। ট্রাকও ছিল। তবে, কার-জিপের সংখ্যা স্পষ্টতই কম। সবচেয়ে বিচিত্র ছিল রংবেরঙএর টেম্পু। ছোট চাকা, বড় চাকা, ট্যারা-ব্যাকা... আবার, বিআরটিসির লাল রঙ্গা বাস, সামনের দাঁত ভাঙ্গা দো'তলা বাস, হলুদ ছাদওয়ালা/সাদা ছাদওয়ালা মিনিবাস। এরই মাঝে একদিন দুপুরে হঠাৎ দেখলাম দানবাকৃতির একটা বড় বাস সামনের দিক থেকে এসে সোজা চলে গেল। এত এত গাড়ির ভিড়ে এই জিনিস তো আগে দেখিনি। আবার, আর সব বাসের মত স্টপেজে দাঁরালও না। যেন রাজার মত আসল, আবার সেভাবেই কারও দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে আপন গতিতে প্রস্থান! ফার্স্ট ইমপ্রেশন ইজ দা লাস্ট ইমপ্রেশন! মনে হল আজকের দিনের বোইং সেভেন ফোর সেভেন আকৃতির মত। পরের দিন সারাদিন অপেক্ষায় থাকলাম। এভাবে তিন চার দিন অপেক্ষার পর আরেকদিন দেখা পেলাম আবার! অনেকটা আকাশে কাকের ভিড়ে যেমন কদাচিৎ একটা-দুইটা চিলের দেখা মিলে। ততদিনে নামটাও জেনে ফেলেছি, মুড়ির টিন! সাথে আরও জেনেছি, এই রাস্তার রাজা এই রুটে নিয়মিত চলে না, কখনও হয়তবা প্রয়োজনে আসা-যাওয়া করে।

তখনই মনে উকি-ঝুকি দিতে শুরু করল, একদিন চড়তেই হবে এই মুড়ির টিন খ্যাত রাস্তার রাজার বুকে। দিন গুনতাম, কখন আসবে উপলক্ষ্য। কিন্তু হায়, ভাগ্য যখন সহায় হয়না, শত সবুরেও আর মেওয়া ফলেনা। যখন যেখানেই গন্তব্য থাকে না কেন, কাকতালীয়ভাবে তা এই রাজকীয় বাহণের আওতার বাইরেই থেকে যেত। দিন যায়, মাস যায়, এমনকি বছরও। তবু হাল ছাড়িনি। অবশেষে একদিন এল সেই মহেনদ্রক্ষন! এত দিনে বুঝি ভাগ্যদেবী মুখ তুলে চেয়েছেন! গ্রান্ড প্যারেন্টের বন্ধুস্থানীয় একজনের বাসায় যাচ্ছি সন্ধ্যায়। গন্তব্য শহরতলী হওয়ার সুবাদে যাবার সময় না হোক, অন্তত ফেরার সময় পূরণ হবে এতদিনের অপূর্ণ সাধ! কিন্তু হায়। কোন্‌ এক কুক্ষনে কর্কশ হর্ন বাজিয়ে হাজির হল পিতাজির কর্মস্থলের কুতসিৎ দর্শন এক মাইক্রোবাস।

তার পরও হাল ছাড়িনি। আবার আশায় বুক বাঁধলাম। হয়ত একদিন! অপেক্ষার প্রহর দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হতে থাকে। একদিন মামা আসল ঢাকায়। কি কি সব জরুরি কাজে। তিন দিন থাকবে, খুবই ব্যাস্ত। টাইট শিডিউল। ঘটনাচক্রে ভিসার মেয়াদ একদিন বেড়ে গেল। শেষদিন প্রায়শ্চিত্তের সূরে বলল, একটা দিন আমার জন্য বারদ্দ। কিন্তু চিড়িয়াখানা বা শিশুপার্ক; কোনওটাতেই মনঃস্থির করতে পারলাম না। তখনও একটা ক্ষীন আশা, এমন কোথায় কি যাওয়া যায়, যেখানে গেলে পাব আমার চির সাধের মুড়ির টিনে আরোহণের সুযোগ! যা হোক, উদ্দ্যেশ্যহীন ঘুরোঘুরি চলল নতুন-পুরান ঢাকা মিলিয়ে অনেক যায়গায়। যানযটবিহীন সেই আমলে ৪০০বছরের ঐতিহ্যের ঢাকা দিনের একভাগেই সিংহভাগ দেখে ফেলার সুযোগ ছিল। পড়ন্ত সন্ধার সামান্য আগে গুলিস্তানে দাঁড়িয়ে অপেক্ষায় আছি শেষ গন্তব্য বাড়ি ফেরার বাহন ধরতে। আমার চোখ দু'টো তখন এদিক-সে'দিক খুঁকে ফিরছে রাজকীয় মুড়ির টিন। এই শেষ সুযোগ। বলা তো যায় না, সব ভাল তার...! অ্যাডভেঞ্চার ঢাকা পর্বের শেষটা যদি মনমত হয়েই যায়!
কিন্তু হায়। হৃদয় ভেঙ্গে খান খান হয়ে গেল, যখন থালা আকৃতির সামনের চাকা বিশিষ্ট একটা টেম্পু ধেয়ে এসে থামল আমাদের সামনে...

ধীরে ধীরে সেই ইচ্ছাটা ক্ষীন থেকে ক্ষীনতর হতে লাগল। তারপর একদিন ছেড়েই দিলাম এই শহর। আধদশক পর যখন আবার ফিরলাম, ততদিনে সেই সাধ প্রায় মৃত।

এখন হাজারও যন্ত্রযানের ভীড়ে আর খুজে ফিরিনা সেই মুড়ির টিন। ডারউইনের বিবর্তনবাদ সত্য প্রমাণ করে যা আজ শুধুই স্মৃতি। রাজকীয় সেই ডাইনোসরের বদলে রাজপথ দখলে নিয়েছে কতশত মার্সিডিজ বেঞ্জ, ভলভো। শুধু নাই আমার দেখা বোইং-747
_______________

ছবিঃ গুগল থেকে নেয়া।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১১ ভোর ৫:০৩
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×