somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শৈশব নামক ইচ্ছেঘুড়ির পিছে আমি

১১ ই জুলাই, ২০১৬ সকাল ৯:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মানুষের অনেক সুপ্ত বাসনার একটা হল, "ইশশ!!! আবার যদি শৈশব টা ফিরে পেতাম।"

মানুষ ছোট থাকতে অনেক বাধা নিষেধের গন্ডির ভিতরে বেড়ে ওঠে। এটা করা যাবে না, সেটা করা যাবে না, দুপুরে ঘুমাতে হবে, বিকালে ছাড়া খেলা যাবে না, সন্ধ্যার সময় পড়তে বসতে হবে। নানা আদেশ-নিষেধের এক অভেদ্য বেড়াজাল।

তখন বড় ভাইয়া বা আপুকে দেখে মনে হত, "আহা, ওরা কতইনা সুখে আছে। নিজের ইচ্ছামত চলে ফেরে। কি আনন্দ!!!" কবে যে বড় হব!!!

তারপর সময়ের নিরন্তর পথপরিক্রমায় বড় হয়ে যাই।
চাঁদকে আর মামা ডাকি না। জেনে ফেলেছি, ওটা পৃথিবির একমাত্র উপগ্রহ। পাথর, বালু, পাহাড় সর্বস্ব আর উল্কার আঘাতে প্রতিনিয়ত ক্ষতবিক্ষত হওয়া এক বিরান প্রান্তর। হঠাতই বড় পর হয়ে যায় আলোর গোলকটা।

জেনে যাই, খাড়া শিংওয়ালা হাট্টিমা টিমটিম রা মাঠে ডিম পাড়েনা। আদৌ এ নামে কোন প্রানীর অস্তিত্ব পৃথিবিতে নেই।
তালগাছের কাছের গ্রামের কানাবগিদের পুঁটিমাছ খাওয়ার কথা আর শোনা হয় না।

মায়ের আর আমার বিছানা আলাদা হয়ে যায়। শীতের রাতে ভোরের দিকে তার কোলের কাছের সেই ওম আর পাই না।
শরীর হয়ে যায় বড়, কন্ঠ তার কমনীয়তা হারিয়ে ভারী আর গম্ভীর হয়ে ওঠে। টেবিলের উপর বইয়ের স্তুপ উঁচু থেকে আরো উঁচু হতে থাকে। কেউ তাড়া না দিলেও নিজের গরজেই পড়তে বসি। খেলতে যাই বিকেলে, কারও বলতে হয় না।

ছোট বেলায় ঘরের জানালা দিয়ে পাশের একটা শিরিষ গাছ আর একটা কলাগাছ এর ঝোপের মাঝ দিয়ে দুরে রাস্তায় এক ঝাঁকড়া হিজল গাছ দেখা যেত। মাঝে মাঝেই দেখতে পেতাম বড় ভাইয়া, চাচারা সেখান দিয়ে বাজার করতে যাচ্ছে। ভাবতাম কবে যে বড় হব আর হিজল গাছটা কাছ থেকে দেখতে পাব!!! আব্বু যখন প্রথম চুল কাটাবে বলে আমাকে হাটে নিয়ে গিয়েছিলেন(তার আগে বাড়িতে নাপিত এনে কাটানো হত), তখনই প্রথম খুব কাছ থেকে গাছটা দেখি। ছোট বন্ধুমহলে জনশ্রুতি ছিল, গাছটায় নাকি ভুত আছে। তারপরেও ভয় না পেয়ে তাকিয়ে ছিলাম গাছটার দিকে অবাক বিস্ময়ে। ফিরে তাকিয়েছিলাম বাড়ির দিকে। শিরিষ আর কলাগাছের ভিতর দিয়ে আমার জানালাটা চোখে পড়েছিল। নিজেকে খুব বড় মনে হয়েছিল সেদিন।

কিন্তু বুঝিনি সত্যিকার বড় হওয়া কাকে বলে। বুঝতে পারিনি সপ্নের মৃত্যু কতটা কষ্টের। আকাশে ওড়ার সপ্নের কাছেই যেতে পারিনি। সে যোগ্যতা বা সামর্থ্য যে নেই, এটা জেনে বুকের মধ্যে যে অবোধ্য কষ্ট হয়েছিল তার কোন তুলনা হয় না। নিজের লক্ষ্য ঠিক করা ছিল না। আব্বু-আম্মুকে যথেষ্ট কষ্ট দিয়ে তাদের চাহিদাও পুরন করতে পারিনি।

চেয়ে চেয়ে অন্যদের সাফল্য দেখেছি আর নিজের জন্য লজ্জিত হয়েছি। আশেপাশের মানুষদের হঠাতই অচেনা হয়ে যেতে দেখেছি। দেখেছি তাদের আসল রূপ। কষ্ট পেয়েছি আর গোপন করেছি। বড় হয়েছি না!!!!! এত আবেগ দেখালে কি চলবে???
এখানে একটা শব্দই বাস্তব। বাস্তবতা। ভাবাবেগের কোন স্থান নেই। এটাকেই বড় হওয়া বলে। দায়িত্বশীলতা, স্বনির্ভরতা, সামাজিকতা, আরো কত কি!!!

কিন্তু আমি যে আর পারি না। মনের শিশুটা এখনো বড় হয়নি যে। একটু কেয়ার চায় সেটা। কি করতে হবে? বাস্তবতার পাষান প্রাচীরে সেটাকে আছড়ে মারতে হবে!!! তারপর মুখোমুখি হতে হবে বাস্তবতার।

কই শৈশবে তো এত ঝুট ঝামেলা ছিল না! একটা গন্ডির ভিতরে থাকতে হত ঠিকই, কিন্তু একপ্রকার স্বাধীনতা ছিল। চিন্তার স্বাধীনতা, খেয়ালের স্বাধীনতা, ভাবাবেগ প্রদর্শনের স্বাধীনতা।
বড় হবার পর কোন একাকী মুহুর্তে যদি ইচ্ছেঘুড়ি কে মনের আকাশে উড়তে দেই, তবে সেটা শুধু শৈশবের দিকেই ছুটে যায়। আমার খুব ইচ্ছা হয় সেটার পিছু নেবার।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুলাই, ২০১৬ সকাল ১০:০০
৭টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজ রমনায় ঘুড়ির 'কৃষ্ণচূড়া আড্ডা'

লিখেছেন নীলসাধু, ১৮ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৬




আজ বিকাল ৪টার পর হতে আমরা ঘুড়ি রা আছি রমনায়, ঢাকা ক্লাবের পর যে রমনার গেট সেটা দিয়ে প্রবেশ করলেই আমাদের পাওয়া যাবে।
নিমন্ত্রণ রইলো সবার।
এলে দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×