somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অবিনাশী কাজী নজরুল

০৭ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৪:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখাকে সমসাময়িক অনেক কবি-সাহিত্যিক-সমালোচকেরা বেশ সমালোচনা করতেন। তার কবিতায় সাহিত্যিক উপাদান কম, মেটাফোর-সিমিলি এর বালাই নাই, কেমন সহজ সরল, সাহিত্যিক আড়ম্বর নেই..... এরকম আরও কথা।

নজরুল ছিলেন জিনিয়াস। তার জীবনের দিকে তাকালেই সবাই বুঝতে পারবেন। কি করেন নি তিনি!!! কতরকম মানুষের সাথে মিশেছেন, কত অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন, জীবনের কত রূপ দেখেছেন তার ইয়ত্তা নেই। না, অন্য অনেক কবি সাহিত্যিকদের মত তার আপন বেড়াজাল ছিল না। বেড়াজাল, আগল, শিকল, বন্ধন- ভাংগার জন্যই চির বিদ্রোহী মানুষটা মর্ত্যে এসেছিলেন।

দুঃখের যত প্রকার আগুনে পুড়লে একজন মানুষ খাটি সোনায় পরিণত হন, তার প্রত্যেকটাতেই তিনি পুড়েছিলেন। প্রেম, সাম্য, দুঃখ, বিদ্রোহ - কি ছিল না তার লেখায়!!! বিদ্রোহী কবিতার কঠিন-শক্তিশালী পদাবলীর মাঝেও তিনি বলতে পেরেছেন প্রেমের কথা। যেমন করে রক্তে কাঁপন তুলে বলেছিলেন,

“আমি যুবরাজ, মম রাজবেশ ম্লান গৈরিক।
আমি বেদুইন, আমি চেঙ্গিস,
আমি আপনারে ছাড়া করি না কাহারে কূর্ণিশ।
আমি বজ্র, আমি ঈষাণ-বিষানে ওঙ্কার,
আমি ইস্রাফিলের শৃঙ্গার মহা-হুঙ্কার,
আমি পিনাক-পাণির ডমরু ত্রিশুল, ধর্মরাজের দন্ড,
আমি চক্র-মহাশঙ্খ, আমি প্রণব-নাদ প্রচন্ড!
আমি ক্ষ্যাপা দুর্বাসা, বিশ্বামিত্র-শিষ্য,
আমি দাবানল-দাহ, দহন করিব বিশ্ব।
আমি প্রাণ-খোলা হাসি উল্লাস, -আমি সৃষ্টি-বৈরী মহাত্রাস
আমি মহাপ্রলয়ের দ্বাদশ রবির রাহু-গ্রাস!”

ঠিক তেমনি কুসুম কোমল সুরে পরক্ষণেই বলেছিলেন,
”আমি উজ্জ্বল, আমি প্রোজ্জ্বল,
আমি উচ্ছল জল-ছল-ছল, চল ঊর্মির হিন্দোল-দোল!- আমি বন্ধনহারা কুমারীর বেনী, তন্বী নয়নে বহ্নি,
আমি ষোড়শীর হৃদি-সরসিজ প্রেম উদ্দাম, আমি ধন্যি! আমি উন্মন, মন-উদাসীর”

“আমি অভিমানী চির ক্ষূব্ধ হিয়ার কাতরতা, ব্যাথা সূনিবিড়,
চিত চুম্বন-চোর-কম্পন আমি থর থর থর প্রথম পরশ কুমারীর!
আমি গোপন-প্রিয়ার চকিত চাহনি, ছল ক’রে দেখা অনুখন,
আমি চপল মেয়ের ভালোবাসা, তাঁর কাঁকণ-চুড়ির কন্‌-কন্‌।”

এমন লিখতে কয়জনে পারত বা পারে এখনো!! নজরুল ছিলেন সর্বগামী। তিনি কবি। তাই তার সমালোচনার জবাব কবিতা দিয়েই দিয়েছিলেন। যারা বলেছিল তার কবিতা কবিতাই হয় না, অমর হবে কিভাবে, তাদের বলেছিলেন,

“বন্ধু গো, আর বলিতে পারি না, বড় বিষ-জ্বালা এই বুকে!
দেখিয়া শুনিয়া ক্ষেপিয়া গিয়াছি, তাই যাহা আসে কই মুখে।
রক্ত ঝরাতে পারি না ত একা,
তাই লিখে যাই এ রক্ত-লেখা,
বড় কথা বড় ভাব আসে না ক’ মাথায়, বন্ধু, বড় দুখে!
অমর কাব্য তোমরা লিখিও, বন্ধু, যাহারা আছ সুখে!”

সমাজের উঁচু তলায় বসে গরীবের দুঃখ, পরাধীনতার গ্লানি, সাধারণের কষ্ট থেকে আপন গা বাঁচিয়ে মনের সুখে অন্যের খুত ধরা সহজ। আগেও হত, এখনো হয়।

রবি ঠাকুরের মত একজন বড় কবিও জীবন সায়াহ্নে এসে নিজের কবিতার বৈশিষ্ট্য এর মৃদু সমালোচনা করে গিয়েছিলেন। বলেছিলেন তার কবিতা উচ্চমার্গীয় হলেও সর্বগামী হয় নি। নির্দিষ্ট এক শ্রেণীর জন্য হয়ে গেছে। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন অন্য কবিরা তিনি যা লিখতে পারেননি তাই লিখবেন।

’জন্মদিনে’ কাব্যগ্রন্থ এর ১০ নম্বর কবিতায় বলেছেন,

”সব চেয়ে দুর্গম-যে মানুষ আপন অন্তরালে,
তার কোনো পরিণাপ নাই বাহিরের দেশে কালে।
সে অন্তরময়
অন্তর মিশালে তবে তার অন্তরের পরিচয়।
পাই নে সর্বত্র তার প্রবেশের দ্বার,
বাধা হয়ে আছে মোর বেড়াগুলি জীবনযাত্রার।
চাষি খেতে চালাইছে হাল,
তাঁতি বসে তাঁত বোনে, জেলে ফেলে জাল--
বহুদূরপ্রসারিত এদের বিচিত্র কর্মভার
তারি 'পরে ভর দিয়ে চলিতেছে সমস্ত সংসার।

অতি ক্ষুদ্র অংশে তার সম্মানের চিরনির্বাসনে
সমাজের উচ্চ মঞ্চে বসেছি সংকীর্ণ বাতায়নে।
মাঝে মাঝে গেছি আমি ও পাড়ার প্রাঙ্গণের ধারে,
ভিতরে প্রবেশ করি সে শক্তি ছিল না একেবারে।
জীবনে জীবন যোগ করা
না হলে কৃত্রিম পণ্যে ব্যর্থ হয় গানের পসরা।
তাই আমি মেনে নিই সে নিন্দার কথা
আমার সুরের অপূর্ণতা।

আমার কবিতা, জানি আমি,
গেলেও বিচিত্র পথে হয় নাই সে সর্বত্রগামী।
কৃষাণের জীবনের শরিক যে জন,
কর্মে ও কথায় সত্য আত্মীয়তা করেছে অর্জন,
যে আছে মাটির কাছাকাছি,
সে কবির বাণী-লাগি কান পেতে আছি।”

পৃথিবীতে ক্ষণজন্মারা আসেন কালেভদ্রে। কেউ কেউ দ্রুতই পরিচিতি বা মূল্যায়ন পান, কেউ বা পান পরে, কারও সেটা আসে মৃত্যুরও পরে। তবে যাই হোক না কেন, তাদের যাপিত জীবনটাই একসময় মহাকাব্য হয়ে যায়। তারা হয়ে ওঠেন অমর, অজর, অবিনাশী!




২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×