ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে ব্যবস্খা গ্রহণ এবং তাদেরকে সুশিক্ষিত করে গড়ে তুলতে স্কুলে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টিতে কাজ করে যাওয়ার বিকল্প নেই। ছাত্র-ছাত্রীদেরকে ভবিষ্যতে সমাজ গঠনের দায়িত্ব নিতে সঠিক শিক্ষার মাধ্যমে নিজেদেরকে আলোকিত করার প্রয়োজন। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বইকে গুরুত্ব দেয়াই হবে সবচেয়ে উত্তম পথ। ইউরোপীয় রেনেসাঁ এবং শিল্প বিপ্লবের মূল হচ্ছে বই এবং জ্ঞান। পাশ্চাত্য এখনও সেই কথা ভুলেনি। বরং বিপুল সমৃদ্ধি অর্জন সত্ত্বেও বইকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। সেখানে একটি বইয়ের লাখ লাখ কপি বিক্রি হয়। আমরা যদি পশ্চিমা বিশ্বের এই গুণটি গ্রহণ করতে পারি, তাহলে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের প্রচেষ্টায় সফল হবো।
ভবিষ্যতে সমাজ গঠনের দায়িত্ব নিতে সঠিক শিক্ষার মাধ্যমে নিজেদেরকে আলোকিত করতে হবে। আসলে অনেক অনেক ডিগ্রি ও সার্টিফিকেটের চাইতেও আমাদের এখন বেশি প্রয়োজন আলোকিত মানুষের। কারণ আলোকিত মানুষ ডিগ্রিধারীর চাইতেও বড় কিছু। তারা শুধু জ্ঞান অর্জনই করেন না, বাস্তব জীবনে অর্জিত জ্ঞানের চর্চা করে মানুষকে, সমাজকে পথ দেখান। এই ধরনের আলোকিত মানুষেরই আজ বড় প্রয়োজন।
আমাদের দেশে শিক্ষার হার ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে। বৃদ্ধি পাচ্ছে উচ্চ শিক্ষিত মানুষের সংখ্যাও। কিন্তু তারপরও আমরা কি বলতে পারি, কাáিক্ষত সমাজ আমরা পেয়েছি? কাáিক্ষত সমাজ না পাওয়ার মূল কারণ আলোকিত মানুষের অভাব। আর প্রসঙ্গত এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, আলোকিত মানুষ হওয়ার জন্য জ্ঞান অর্জন আবশ্যক। তবে শুধু জ্ঞান অর্জন করলেই কেউ আলোকিত মানুষ হয়ে যায় না। জ্ঞানের যে নির্যাস, তার দীপ্তিতে নিজের আচরণকে সমৃদ্ধ করলেই কেউ হতে পারেন আলোকিত মানুষ। এর পরিবর্তে অর্জিত জ্ঞানের আলোকে কেউ যদি নিজেকে পরিশুদ্ধ না করে বরং ধুর্ত হয়ে ওঠে, তখন মানুষটি একজন মুর্খ মানুষের চাইতেও হয় ভয়ঙ্কর। এই জাতীয় মানুষকেই বলা হয় জ্ঞানপাপী। আমাদের সমাজে এই ধরনের জ্ঞানপাপীদের কোনো প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন আলোকিত মানুষের। কারণ জ্ঞানপাপীদের ধুর্তামী আর অনাচারে আমাদের সমাজ এমনিতেই ভারাক্রান্ত হয়ে আছে।
আলোকিত মানুষ হওয়ার ব্যাপারে দ্বি-মত পোষণের কোনো অবকাশ নেই। কিন্তু এই আলোকিত মানুষ আমরা কিভাবে পাবো? এ অভাব তো আমদানি করে পূরণ করা যাবে না। বরং বিষয়টি অর্জনের। যারা দেশকে ভালোবাসে, ভালোবেসে দেশের মানুষকে তারা যেমন জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে নিজেদেরকে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার সাধনায় সচেষ্ট থাকবে, ঠিক তেমনি নবীনদেরও আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে চালাবে আন্তরিক প্রয়াস। এই প্রয়াসে শুধু সরকার নয়, আজ শরীক হতে হবে পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সামাজিক সংগঠন এবং রাজনৈতিক দলগুলোকেও। আসলে আলোকিত মানুষ গড়ার বিষয়টিকে আমাদের দিতে হবে জাতীয় আন্দোলনের রূপ। এটিই এখন সময়ের দাবি। এ দাবিতে কে কতোটা সাড়া দেন সেটাই এখন দেখার বিষয়।