অভ্যুত্থান ঘটে গেছে। নিহত প্রেসিডেন্ট জিয়া। লাশ তখনো পড়ে আছে চট্টগ্রামের সার্কিট হাউজে।
মেজর রেজা সকালে ঘুম থেকে উঠে জানলেন সব। প্রথমে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল পড়ে থাকা লাশ সরিয়ে নেওয়ার। অন্য কাজ চাইলে দেওয়া হয় চট্টগ্রামের জিওসি মেজর জেনারেল মঞ্জুরের দেহররি দায়িত্ব। শেষ সময় পর্যন্ত এই কাজটি করেছেন।
মেজর রেজা শুরু থেকে পুরোটা বলেছেন প্রমান্য চিত্রটিতে। এটাই তার প্রথম সাক্ষাৎকার। জিয়া হত্যা থেকে শুরু করে দায়ী হিসেবে চিহ্নিত সেনা কর্মকর্তাদের ফাঁসি পর্যন্ত ঘটনা নিয়ে অসংখ্য গল্প চালু আছে। কোনোটা একদমই মিথ্যা, কিছু সত্যের কাছাকাছি। পুরো সত্য মনে হয় মেজর রেজার জবানীতেই জানা যায়।
বিস্তারিত না বলে উল্লেখযোগ্য একটা অংশ বলি। ধরা পড়ার পর তাদের জেনারেল মঞ্জুরসহ সবাইকে নিয়ে আসা হয় হাটহাজারি থানায়। ওসি গোলাম কুদ্দুস। থানায় সবাই অপেক্ষায় আছেন। আসলেন চট্টগ্রামের ডিআইজি এ এস এম শাহজাহান।
জেনারেল মঞ্জুর প্রথম দাবী করলেন সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে দিতে হবে। রাজী হলেন না জনাব শাহজাহান। মঞ্জুর বলেছিলেন, শাহজাহান সাহেব, প্রেসিডেন্ট মারা গেছেন। আমাকে দায়ী করা হয়েছে। সুতরাং আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থন করার সুযোগ দিতে হবে। এ এস এম শাহজাহান বললেন, আপনি যখন ছিলেন তখন আপনার কথা শুনেছি। এখন যারা আছে তাদের কথা শুনতে হচ্ছে। জেনারেল মঞ্জুর তখন বললেন, তাহলে আর্মির কাছে তাঁকে হস্তান্তর করা না হয়। তাঁকে যেন পুলিশের কাছেরা রাখা হয়। ফলে জেলে পাঠিয়ে দেওয়া হোক। এই কথা বার বার বলেছিলেন জনাব শাহজাহানকে।
মঞ্জুরকে ধরার জন্য তখন ৫ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা ছিল। জেনারেল মঞ্জুর বললেন, যার কাছে তিনি ধরা দিয়েছেন সেই যেন টাকাটা পান। এ সময় ওসি গোলাম কুদ্দুস এগিয়ে এলে তিনি বলেন, না, এই সেই ব্যক্তি নন। আমি তো ধরা দিয়েছি একজন হাবিলদারের কাছে। এসময় মেজর রেজা সেই হাবিলদারকে দেখে ডাক দিলে ভিতরে ঢোকেন সেই হাবিলদার। জেনারেল মঞ্জুর এসময় কোমরে লুকানো পিস্তলটি বের করে হাবিলদারকে দেন। পিস্তল দেখে ভয় পেয়েছিলেন থানার অন্যান্যরা। জেনারেল মঞ্জুর অভয় দিয়ে বলেন, আমি যদি নিশ্চিত না থাকতাম যে পুলিশের নিরাপদ কাস্টডিতে আমি নেই তাহলে পিস্তলটা দিতাম না। অন্য কেউ আসলে ব্যবহার করতাম। কিন্তু এখন আমি নিশ্চিত যে পুলিশের কাস্টডিতে আছে, আর্মির না। এ কারণেই সারেন্ডার করছি। এই কথা তিনি বললেন এ এস এম শাহজাহানকে।
সেই এ এস এম শাহাজাহান কি করলেন একটু পরেই?
বাইরে পুলিশের গাড়ি। সাথে একটা পাঁচ টনি ট্রাক। কিন্তু গাড়ি আর ছাড়ে না। কিছু পরে আসলো এক আর্মি জিপ। মেজর এমদাদ সেই গাড়িতে। সব বুঝে ফেললেন জেনারেল মঞ্জুর। খুঁজলেন এ এস এম শাহজাহানকে। কোথাও পেলেন না। আর্মির হাতে তুলে দিয়ে তিনি তখন লুকিয়ে থাকলেন।
তারপরে রেজা জানান, কিভাবে নিরস্ত্র জেনারেল মঞ্জুরকে মেরে ফেলা হয়। জিয়ার হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত না থেকেও এই দায় চাপিয়ে বিনা বিচারে মেরে ফেলা হয় জেনারেল মঞ্জুর।
দুটো পরিচয় নিয়ে কথা বলতে পারি।
ওসি কুদ্দুস। জেনারেল মঞ্জুরকে ধরার পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনিই। দিয়েছিলেন এরশাদ। চাকরি ছেড়ে দেন তিনি। সেই কুদ্দুস এখন দেশের বিশাল ব্যবসায়ী। বিজিএমইএর সভাপতিও ছিলেন। তার গ্রুপের নাম ড্রাগন গ্রুপ।
আর এ এস এওম শাহজাহান?
পরে আইজি হন, সচিব হন, তত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টাও হয়েছিলেন। এখন তিনি সুশীলসমাজের প্রতিনিধি। টক শো তে দেখা যায়। আজও যুগান্তরে একটা কলাম আছে আইনের শাসন নামে। বুদ্ধিজীবি তিনি এখন।
এতোক্ষণ যে প্রমান্য চিত্রটির কথা বললাম সেটির নাম ‘সশস্ত্র বাহিনীতে গণহত্যা (১৯৭৫-৮১)’। এটা নিয়ে আমি গত বছর জরুরী অবস্থার সময় একটা লেখা লিখেছিলাম সামুতে। সশস্ত্র বাহিনীতে গণহত্যা (১৯৭৫-১৯৮১) একটি প্রামাণ্য দলিল সেই প্রামান্য চিত্র অবশেষে আলোর মুখ দেখছে।
আগামি ২১ জুলাই এটির প্রকাশনা উৎসব হবে মুক্তিযুক্ত যাদুঘরে। সাড়ে তিনটায়। প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সময়ে সশস্ত্র বাহিনীওতে ফাঁসির মঞ্চে জীবন দেওয়া, নিখোঁজ হওয়া কয়েকটি পরিবারের সদস্য, সামরিক আদালতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, জেলখাটা সামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন বলে আনোয়ার জানিয়েছে।
সামুতে গত অক্টোবরে এ নিয়ে পোস্ট দেওয়ার পর সরাসরি পোস্টে মন্তব্য করে এবং আমাকে ব্যক্তিগতভাবে মেইল করে অনেকেই এই প্রামান্য চিত্রটি কিনতে চেয়েছেন। কিন্তু সে সময়টা ভাল ছিল না বলে কাউকেই দেওয়া যায়নি। আশা করি এবার সবাই সংগ্রহ করতে পারবেন।
সশস্ত্র বাহিনীতে গণহত্যা (১৯৭৫-১৯৮১): মঞ্জুরের হত্যাকান্ডসহ কিছু অজানা তথ্য ও আমাদের সুশীল সমাজ। প্রকাশনা উৎসব ২১ জুলাই
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
৩৩টি মন্তব্য ২৮টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল
হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন
'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'
নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ
আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন
ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা
গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন
মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.
গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন