somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শোক কোথায়?

১৬ ই আগস্ট, ২০১৭ ভোর ৪:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


যেদিন কাক ডাকতেও ভুলে যায় তেমনি এক ভোরে, ধানমণ্ডি ৩২-এ, একটু আড়ালেই দাঁড়িয়ে দেখছি। লোকসমাগম বাড়ছে। সরব হয়ে উঠছে চারদিক। সময়-তারিখজ্ঞানের উর্ধ্বে থাকায় বুঝিনি আজই শ্রাবণ মাসের শেষ দিন। আমার মন খারাপের শুরুর পূর্বমুহুর্ত দেখে নিলাম, সেদিনের মতই জলের রঙ গাঢ় সবুজ। সামনের বাড়িটা চাঁদোয়ার সাময়িক আড়ালে।
আপনার চেয়েও আপন, মলিন মুখে, ভারাক্রান্ত হৃদয়ে দাঁড়িয়ে আছে, বাঁধ না মানা চোখে জল সেই দুই এতিমের। আমি নিরুপায়, এতিম আমাকে বলতেই হচ্ছে। তাদের সেই কষ্ট নিরাকার আমায় ছুঁলেও ছুঁতে পারেনি তাঁদের। তাঁদের যেতে মন চাইছে না তবু যেতে হবেই, পেছনে যে লাখো জনতা অপেক্ষামাণ। জনকের কাছে বিদায় নিয়ে, জননীর সাথে দেখা করতে হবে যে...
অতপর গুরুজনেরা এলেন, মানি মানুষ তাঁরা, খুব কষ্টে নিজেকে প্রথম সারিতে স্থির রাখতে অল্প বিস্তর ঘেঁষাঘেঁষি করে টিকে রইলেন। ক্রমেই এই ঘেঁষাঘেঁষি ধাক্কাধাক্কিতে রূপ নিল। মানি লোকেদের পরে যারা এলেন তাঁদের দেখেই বুঝা গেল এদের এখন যুদ্ধে যাবার বয়স। প্রতিটি দলের সামনের সারিতে ভীড়, খুব ভীড়। পেছনে...যারা তাঁদের কদাচিৎ দেখেছি বলে ঠিক চিনতে পারিনি। তবে সামনের সকলেই পরিচিত।
হঠাৎই ভাবনায় ছেদ পরল, আমায় যেন ধাক্কা দিয়ে কেউ সামনে এগিয়ে গেল। একি এদের হাতে অস্ত্র, আমি তাকাতেই চোখ ঝলসে গেল। স্থান ত্যাগে বাধ্য হলাম।
মাথায় একটি প্রশ্ন, তবে কি শোক, এই ঘেঁষাঘেঁষি ধাক্কাধাক্কিতেই নিহিত?
জনাকীর্ণ স্থান ছেড়ে অনেক কষ্টে প্যান্ড্যাল এর বাইরে গিয়ে দেখি লাইনে দাঁড়িয়ে আছে সকলে, নামসর্বস্ব ফুল হাতে। এক দলের পরে আরেক দল একই লাইনে দাঁড়িয়ে অস্ত্র হাতে দুসেকেন্ড করে সময় নিয়ে এগিয়ে যেতে দিচ্ছে। কেউ কেউ নিজ হাতে অস্ত্র তুলে নিচ্ছে তবে চ্যাপ্টা এই অস্ত্র। ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে ব্যবহার করছে।
এতই মনযোগী ছিলাম যে, হোঁচট খেয়ে সম্বিত ফিরে পাই, সে কি সেই চ্যাপ্টা অস্ত্রটি লাঠির মাথায় কেন, আর সবাই সেদিকে তাকিয়ে আছে। কারও দাঁত দেখা যাচ্ছে, বেশ বেশ উচু দাঁত যাদের তাঁদের এমন হয় একটু আধটু, অনেকের দেখলাম উপরে নিচে দশ-বারটা দাঁত দেখা যাচ্ছে, হলুদ বলে একটু খারাপই লাগলো। দাঁতের মাজন ব্যবহার করে না হয়তো। তবে সেখানে সবাই সমবয়সী একজন শুধু একটু বেশি বয়সী, সেই নিশ্চয়ই পথপ্রদর্শক। তবে সবার হৃদয়ে যে শোক তা আপাত প্রতীয়মান।
কালো রঙের প্রাধান্য দেখছি, হৃদয়েও ধারণ করছে নিশ্চয়ই। ও হ্যাঁ কাল হাঁটে গিয়ে দেখি সারা শহরেই এখন হাট, যেথাসেথা সব কিনতে পাওয়া যায়। অনেক ঘুরেও মন খারাপ আমার, পছন্দ হয়না কিছুই, দোকানে দোকানে সবাই সাদাকালো কাপড় কিনছে। দোকানে দোকানে খুব হিড়িক পরে গেছে কালো পাঞ্জাবি, শাড়ি আর শার্ট কিনবে বলে। কেউ কেউ সাদা পাঞ্জাবি, সাদার উপর কালো ছাপা কিংবা কালো মুজিবকোট ক্রয় করছে তবে বোতাম ছয়টা আছে কি না দেখছে না।
মনখারাপের রাস্তা ধরে হেঁটে চলেছি, বাত্তির খুটি গুলোতে ঝুলছে, নামসর্বস্ব, কুৎসিত ডিজাইনের পোস্টার, এটাই এখনকার নিয়ম ভেবে চলেছি সম্মুখে। খুব মর্মাহত হয়েছি, চলটা উঠে যাবার মত লাল রঙ ব্যবহার করেছে কালো কোটে সেই ছবিটা আমাদের জাতির জনকের। ত্রিমাত্রার ডিজাইন বলেই হয়তো এমন হয়েছে। সৌজন্যমূলক নাম ব্যবহারে জেনেছি কে বানিয়েছে সেই পোস্টার, আমার অসীম আগ্রহ বিধায় অনেকের কাছে জিজ্ঞেসাও করেছি ইনি কে, উনি কে। সেই কষ্টও অনেকে কমিয়ে দিয়েছে পোস্টারে নিজের ছবি ব্যবহারের মাধ্যমে কারণ আমার আর কাউকেই জিজ্ঞেস করতে হয়নি। যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমার চেষ্টা বিফলে গেছে, বেশির ভাগ মানুষকেই তাঁরা কেউ চেনে না, শুধু বলেছে অমুক দলের হবে হয়তো।
হেঁটে হেঁটে রাস্তার মোড়ে গিয়ে একটা পত্রিকা কিনে পড়তে লাগলাম, চোখ গেল শোক দিবসের বাহারি পত্রিকার বিজ্ঞাপনের দিকে, কত কষ্ট করে উপার্জিত টাকা খরচ করে এগুলো ছাপিয়েছে, কিন্তু বাহারি সেই বিজ্ঞাপনদাতার শ্রেণী কেমন জানতে ইচ্ছে করে। আমার কান্না পেয়ে গেল।
একটু বিশ্রাম নিতে চায়ের দোকানে এসেছি, দোকানে বসে দেখি যুবক শ্রেণীরা ফুল দিয়ে এসেছে, কার ছবি কেমন এসেছে তাই দেখছে, কেন্দ্রিয় ব্যক্তির কত কাছে যেতে পেরেছে, সামনের সারির কত কাছে ছিল তাই দেখছে, ফুলে হাত দিতে পেরেছে কি পারেনি তাই দেখছে। আমি আড় চোখে দেখছি ওদের কর্মকান্ড।
ইদানিং ফেসবুক বলে কি যেন একটা আছে তাতেই একে অপরকে ট্যাগ করছে, একজনের প্রোফাইলে দেখলাম বত্রিশ দাঁতসহ সুন্দর ছবি তাই ফ্রেমে বন্দী, এক কোনায় নিচে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
স্ক্রল করে করে পোস্ট দেখছে আমি আড় চোখেই দেখতে পেলাম সেই এতিমদ্বয়ের ছবি, কান্নাজড়িত চোখের ছবি, সেই ছবিতে মেকি কিছু নেই। বুক ফাটা কষ্ট টের পাচ্ছি। ফেসবুকে অনেকেই প্রোফাইলে ব্যবহার করেছে আমি আর চোখেই দেখলাম। কমেন্টে কেউ লিখেছে, দারুন লিডার, নাইস হয়েছে।
আমার বুক ফাটা কষ্টগুলো মুখে শব্দ হয়ে যা বেরোলো তা হল এরাও কি নেতা? আর তাঁদের অনুসারীরা এরা?
এখানে আর এক দণ্ড বসে থাকা যাবে না।
রাস্তার মোড়ের দিকে হেঁটে চলেছি। এখানে প্যান্ড্যাল কেন? প্যাকেটে এগুলো কি? তাঁর উপর লেখা অমুক ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ। প্যাকেটে যাই লিখা থাকুক হৃদয়ে নিশ্চয়ই শোকই আছে।
তারা এতিম, আসলেই এতিম, শোক তাদের জন্যেই, বুকফাটা কান্নাও তাদেরই জন্য, অন্যদের যেন নিয়মরক্ষার প্রতিভু। এ কেমন শোক?
তাঁরা আসলেই এতিম। এতিমের দুঃখ বুঝতে পারার মত কেউ নেই এই বাংলাদেশে।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই আগস্ট, ২০১৭ ভোর ৪:০১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×