মানবসভ্যতার একেবারে “দোলনা”লগ্ন থেকে সবসময়ের সঙ্গী হয়ে ছিল কুকুররা।নিজেদের বিশ্বস্ততা-ভক্তি দিয়ে কুকুর জায়গা করে নিয়েছে উপকথা আর ইতিহাসের পাতায়।এমনকি তাদের স্থান হয়েছে কোরআন-বাইবেলের মত ধর্মগ্রন্থেও।সচেতন পাঠক মাত্রই জানেন আসহাবে কাহাফের দলের কথা।এমন অনেক প্রচলিত কথা আছে যেখানে প্রভুর আনন্দের সময়ে কুকুর নিজের লেজ নেড়ে আনন্দে সামিল হয়েছে ঠিক তেমনি বিপদের সময়ে নিজ প্রাণ বিপন্ন করে চেষ্টা করেছে ট্র্যাজেডি ঠেকাতে।পারস্পরিক সহযোগিতার এই ১৫০০০ বছরে এমন কোন শক্তিশালী প্রমাণ কি আছে যেখানে কুকুরের মানুষের সুখ-দুঃখ বুঝতে পারার কারণ ব্যাখ্যা করা যায়?সম্প্রতি নতুন এক গবেষণায় জানা গেছে কুকুরের এই লেজ নাড়ার পেছনে আসলেই গভীর কিছু কাজ করে।
অতীত গবেষণায় ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল যে প্রাণীরা সহানুভূতি অনুভব করতে পারে।ইঁদুর ও বানররা তাদের স্বগোত্রীয়দের ইলেকট্রিক শক থেকে বাঁচাবার জন্য নিজেরা খাবার খাওয়া থেকে বিরত ছিল বলে দেখা গিয়েছিল।অনুরূপভাবে গরিলারাও বিভিন্ন সংঘাতের সময় একে অন্যকে শান্ত করতে চেষ্টা করে বলে সাম্প্রতিক এক ডকুমেন্টারিতে দেখা গেছে।আসলে এই সব পরীক্ষণ প্রমাণ করে যে প্রাণীরা স্বপ্রজাতির অন্য সদস্যদের বিপদে অনুভূতি প্রকাশ করে এবং একে অপরের পাশে দাঁড়ায়।লন্ডনের গোল্ডস্মিথস কলেজের ডেব্রাহ কাস্টেন্স ও জেনিফার মেয়ার দেখতে চেয়েছিলেন যে কুকুররা কি সত্যিই মানুষের আবেগের বিভিন্ন স্তরগুলো সনাক্ত করতে পারে কি না?
গোটা ব্যাপারটা পর্যবেক্ষণ করতে ডঃ কাস্টেন্স এবং মিস মেয়ার এক পরীক্ষার আশ্রয় নেন যেখানে তারা দেখতে চান একজন মানুষ যদি কাছে কোথাও হঠাৎ কান্না শুরু করেন তবে কুকুরের প্রতিক্রিয়া কি হয়?গবেষকরা জানতেন যে কুকুরদের আচরণগুলো ব্যাখ্যা করা কষ্টকর হবে তারপরও তাদের করা আচরণগুলো ছিল ঘ্যানঘ্যান করা,নাক ঘষা,জিহ্বা চাটা,কোলে মাথা রাখা এমনকি কুকুরেরা সে সময় কান্নারত মানুষের জন্য খেলনাও ছিনিয়ে আনছিল।যদিও এমন আচরণ দেখে মনে হচ্ছিল কুকুরটি মানুষ যাতে শান্ত হয়,এমন কিছু করার চেষ্টা করছিল।কিন্তু এই আচরণ একই সাথে কুকুরটির কৌতুহলের চিহ্ন হতে পারে অথবা এটাই প্রমাণ করে যে প্রভুর বিপর্যস্তকালীন সময়টাতে কুকুরও বিষাদগ্রস্থ হয়।
এই পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে গবেষকগণ বিভিন্ন প্রজাতির ১৮ টি কুকুরকে ২০ সেকেন্ড সময়কালের চারটি বিভিন্ন পরিস্থিতির মধ্যে পর্যবেক্ষণ করেন।এই পরিস্থিতি চারটি ছিল কুকুরগুলোর মালিকের কান্না,কুকুরগুলোর কাছে অপরিচিত এমন একজনের কান্না এবং উভয়ে আলাদা আলাদা ভাবে গুনগুণ করে “ম্যারি হ্যাড এ লিটল ল্যাম্ব” ছড়াটি আবৃত্তি করে শোনানো। এই চারটি অবস্থা কুকুরগুলো যাতে আলাদা করতে পারে সেজন্য মিস মেয়ার এবং কুকুরগুলোর কাছে অপরিচিত ব্যক্তিটি এবং কুকুরের মালিক দুই মিনিটের এক আলাপচারিতায় অংশ নেন।
ডঃ কাস্টেন্স এবং মিস মেয়ার ধারণা করেন যে,যদি কান্নার অস্বস্তিকর পরিবেশ কুকুরকে বিষাদগ্রস্থতায় আক্রান্ত করে,তাহলে কে কান্না করছে সেটা ব্যাপার না বরং সে তার মালিককে সান্ত্বনা দিতে ছুটে যায়।তাঁরা এই সিদ্ধান্তেও উপনীত হন যে যদি কুকুরদের মাঝে দুঃখ-কষ্টের অনুভূতির চাইতে কৌতুহলের প্রাধান্য বেশি হত,তবে গুনগুন করে ছড়া বলার সময়ও কুকুরেরা প্রতিক্রিয়া দেখাত।
“এনিমেল কগনিশন” ম্যাগাজিনে করা তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন কুকুরের মালিক কিংবা কুকুরের কাছে অপরিচিত কেউ যখন গুনগুন করে ছড়া কাটে তখন কুকুরদের “ব্যক্তি-নির্ভর আচরণ” কখনো কখনো প্রকাশ পায়।কিন্তু এই ঘটনা দ্বিগুণ ঘটতে শুরু করে যখন কেউ কাঁদতে শুরু করে।এই ঘটনা এটি প্রমাণ করে যে কুকুররা অদ্ভুত আচরণ এবং কান্নার মধ্যে পার্থক্য করতে পারে।১৫টি কুকুরের উপর চালানো এই পরীক্ষণে দেখা যায়,যখন অপরিচিত কেউ কাঁদতে শুরু করে ,তখন সবগুলো কুকুর তাদের মালিকের চাইতে বরং অপরিচিত লোকের দিকে মনোযোগ দেয়।
এইসব উদ্ঘাটন প্রমাণ করে যে অন্যর সুখ দুঃখে নিজেদের অনুভূতি প্রকাশের ক্ষমতা কুকুরদের আছে।যদিও এই পরীক্ষণের ফলাফল অনেকটাই পরিষ্কার,তারপরেও ডঃ কাস্টেন্স মনে করেন এটা সত্যিকার অর্থে অন্যর দুঃখ কস্ট বুঝবার অনুভূতি কিনা তা বুঝতে আরও পরীক্ষার দরকার।তিনি আরও বলেন,এটাও হওয়া সম্ভব যে কুকুররা হয়তো পুরস্কার পাওয়ার জন্য হতাশাগ্রস্থ মানুষদের কাছে গিয়েছে।
ইকোনমিস্ট অবলম্বনে
পড়তে পারেন এখানেও
*****মিলিটারি বাহিনীতে যোগ না দেওয়া সত্ত্বেও আমাকে জেনারেল করার জন্য সামহোয়্যার ইন ব্লগ কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুলাই, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:০৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


