যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হওয়ার ব্যাপারে উদ্বিগ্ন নয় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ এ প্রসঙ্গে বলেছে, যুদ্ধাপরাধের বিষয়টি নিয়ে আমরা মোটেই উদ্বিগ্ন নই। কারণ, এর জন্য সরকারকে এত বেশি মিথ্যার আশ্রয় নিতে হবে যে তা ধোপে টিকবে না। আর জনগণের কাছে এমনিতেই সব পরিষ্কার হয়ে যাবে। আজ বিকেল সাড়ে ৪টায় রাজধানীর বড় মগবাজারে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সে এসব কথা বলে। এতে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিল জামায়াতের নায়েবে আমির মকবুল হোসেন, মওলানা আব্দুস সোবাহান, দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মাদ কামারুজ্জামান, আবদুল কাদের মোল্লা, এটিএম আজাহারুল ইসলাম প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে অপর এক প্রশ্নের জবাবে মুজাহিদ বলে, সরকারের গণ-গ্রেফতার ও জুলুম-নির্যাতনের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে নামার জন্য আইনজীবীদের সাথে পরামর্শ করা হচ্ছে। আরেকটি প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে সে দাবি করে, এদেশে জামায়াত-শিবির সমর্থকের সংখ্যা ১ কোটির কম নয়।
শনিবার রাতে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠক সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে জামায়াত সেক্রেটারি বলে, ঐ বৈঠকের পর বিএনপি বা জামায়াতের পক্ষ থেকে কোনো কিছু বলা হয়নি। যে পত্রিকা যা পারছে তা-ই লিখছে। বিএনপির সাথে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ডাক দেয়া হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সে বলে, বিএনপি তার মতো এগুচ্ছে আর আমরা আমাদের মতো এগুচ্ছি। সময় হলে আমরা রাজপথেও ঐক্যবদ্ধ হব।
জামায়াত সরকারের বিরুদ্ধে জেহাদে নামবে কিনা-এই প্রশ্নের জবাবে সে বলে, জিহাদের মানে তো সংগ্রাম। আর সংগ্রামের ডাক আমরা ইতিমধ্যেই দিয়েছি। জামায়াত-শিবিরের নেতাদের রিমান্ড সম্পর্কিত অন্য একটি প্রশ্নের জবাবে সে বলে, যাদের রিমান্ডে নেয়া হচ্ছে, তাদের জীবন কোনোভাবে হুমকির মধ্যে পড়লে তার দায় সরকারকেই নিতে হবে।
এ সময় কেন্দ্রীয় জামায়াতের পক্ষ থেকে আগামী ১০ দিনের জন্য নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে মুজাহিদ। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন ও পিলখানায় নিহত সেনা কর্মকর্তাদের স্মরণের পাশাপাশি জামায়াত-শিবিরের গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি ও দায়েরকৃত সকল মামলা প্রত্যাহারের দাবিসহ সরকারের জুলুম-নির্যাতনের প্রতিবাদে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আগামী ১৬, ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি মহানগরী, জেলা ও উপজেলায় বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল, ১৯ ফেব্রুয়ারি পেশাজীবীদের সাথে মতবিনিময়, ২০ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা, ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা শহীদদের স্মরণে দেশের প্রতিটি ওয়ার্ডে দোয়া মাহফিল এবং ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় নিহত সেনা কর্মকর্তাদের স্মরণে সভা ও দোয়া মাহফিল।
এর আগে মুজাহিদ তার লিখিত বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সমালোচনা করতে গিয়ে বলে, মন্ত্রীরা নিজেদের দায়িত্ব পালনের বদলে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার উদ্দেশে জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে দায়িত্বহীন বক্তব্য দিচ্ছেন। তাদের ভাষা সন্ত্রাসের ভাষা, গণতন্ত্রের ভাষা নয়-এমনটি দাবি করে সে সরকারের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন রেখে বলে, দেশে বর্তমানে যা ঘটছে তার দায়িত্ব কি এই সরকার এড়াতে পারবে? সরকারকে হুঁশিয়ার করে সে আরো বলে, ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেলে পরিস্থিতি কারো আয়ত্তের মধ্যে না-ও থাকতে পারে। আপনাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই- ক্ষমতা চিরদিন কারো হাতে থাকে না।
তথ্যসূত্রঃ