somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

পথিকরাজপুত্র
আমি মনোযোগী পাঠক। পড়তে ভালবাসি। পড়ে কোথাও কিছু একটা অসঙ্গতি আছে মনে হলে সেটা আলোচনা করি। ভাল লাগলেও আলোচনা করি, খারাপ লাগলেও আলোচনা করি। কেননা আমি বিশ্বাস করি, পাঠকই লেখক তৈরী করে।

গল্প- ১

১৯ শে অক্টোবর, ২০০৯ সকাল ১১:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জোছনা ভালবাসা
আখতার মাহমুদ


- কি হে, কেমন চলছে?
-ভাল বেশ ভাল।
- এতটুকুও কষ্টে নেই?
- নাহঃ।
- কোন অতৃপ্তি নেই?
- তা আছে। কে কবে কখন পুরোপুরি তৃপ্ত হতে পেরেছে বলো।
- কিসের অতৃপ্তি তোমার?
- থাক না-ই বা শুনলে।
- কেন নিজের কাছে লুকোও?
- মানুষ নিজের সাথেই সবচেয়ে বেশি লুকোচুরি খেলে, তুমি জানো না বুদ্ধু।
- আমি তো তুমিই। তবে নিজেকে বুদ্ধু বলছ?
- হা হা হা! হয়ত ।
- তুমি খুব অহংকারী, জানো?
- অহংকার ছাড়া মানুষ হয় নাকি।
- তুমি মনে কর তুমি ভুল করতে পারো না।
- আসলেই। আমি ভুল করি না।
- তাই? সুন্দরকে স্বপ্ন দেখালে কেন?
- যে স্বপ্ন দেখতে মুখিয়ে থাকে তাকে স্বপ্ন দেখাতে দোষ কি!
- দোষ নেই। তবে মিথ্যে স্বপ্ন দেখানো অন্যায়।
- মিথ্যে নয়।
- তবে প্রতারণা। তুমি প্রতারক।
- আমি প্রতারক নই।
- তবে তুমি ভন্ড, স্বার্থপর, ধোঁকাবাজ।
- তুমি অযথা আমাকে দোষী করছ।
- তুমি দোষী নও?
- আমি জানি না!
- তুমি অপরিণামদর্শী। তুমি চেয়ে আছ সেই পথে, যে পথে কেউ আসবে না। তবু মিছে মায়ায় ভাবছ যদি আসে! অথচ সুন্দর চেয়ে আছে তোমার পথে। কেন স্বপ্ন দেখালে তাকে? কেন চেনালে জোছনায় হেঁটে যাবার পথ? মেঘলা দুপুরে কেন শোনালে একমুঠো রোদ্দুরের গল্প? কেন ভাসালে তাকে দুর্মর আবেগে?
- ভুল করেছিলাম।
- তোমার ভুলের মাশুল কে দেবে তুমি না সুন্দর?
- কখনো কখনো.....
মোবাইল বেজে ওঠায় নিজের সাথে নিজের কথোপকথন থামাতে হল নিঃসঙ্গকে। মিতু ফোন করেছে।
' হ্যাঁ মিতু কি খবর?'
ফোঁপাতে ফোঁপাতে মিতু বলল, ' নিঃসঙ্গ, একটু বাসায় আসবি?'
'কি হয়েছে?'
'তুই আয়, আমার খুব কষ্ট।'
নিঃসঙ্গ বলতে চাইল কষ্ট ভাগ করে নিতে নেইরে মেয়ে। কষ্ট কাউকে কখনো শোনাতেও নেই। একটা দীর্ঘশ্বাস চাপল নিঃসঙ্গ। বলল, ' আমি আসছি।'

বাইরে গুঁড়ি গুড়ি বৃষ্টি। নিঃসঙ্গ একটা সিগারেট ধরিয়ে হাঁটতে থাকল। মিতুদের বাসা খুব দূরে নয়। অনেককালের পুরোনো বন্ধু। সেই প্রাইমারী স্কুল থেকে একসাথে পড়ে এসেছে। বেশ হাসি খুশি উচ্ছল মিতু। মেয়েটার কিসের কষ্ট? নাবিল দেশের বাইরে গেছে পড়াশুনা করতে কিছুদিন আগে। এটা ওর কষ্টের কারণ হলেও হতে পারত। কিন্তু নাবিল যখন চলে যায় তখনও মিতু বেশ স্বাভাবিক ছিল। দুজন দুজনের জন্যে মহা দিওয়ানা। ওরা ভেবে রেখেছে মেয়ে হবে ওদের। নাম হবে অপর্ণা। কি পাগলামী! কে জানে, হয়ত ভালবাসা এমনই। এখন মিতু কাঁদছে কেন? নাবিলের সাথে ঝগড়া হয়েছে নাকি? এলোমেলো ভাবতে ভাবতে নিঃসঙ্গ পৌঁছে গেল মিতুদের বাসায়। মিতুর মা ওকে দেখে বললেন, ' কি ভাগ্য আমার। সূর্য আজ কোন দিকে উঠেছে।'
'খালাম্মা জোশ এককাপ চা খাওয়ানতো। সাথে ঝালমুড়ি থাকলে এক্কেবারে ফাটাফাটি।'
তিনি হেসে বললেন, 'বোস আমি পাঠিয়ে দিচ্ছি।'
' মিতু কই খালাম্মা?
'বেলকনিতে।'

বেলকনিতে গিয়ে দেখল ফোলা ফোলা চোখে ঝিম মেরে বসে আছে মিতু। নিঃসঙ্গ ওর চুল টেনে দিয়ে বলল, 'ওই ছেড়ি, হইছেটা কি?'
মিতু ছলছল চোখে কোন ভুমিকা ছাড়াই বলল, 'আমার বিয়ে ঠিক করেছে ওঁরা। গতকাল এসে দেখে গেছে আমাকে। আমি এখন কি করব?'
এবার নিঃসঙ্গ ঝিম মেরে গেল। এটা মাথায় আসেনি। ভাল করে দেখল মিতুকে। হালকা পাতলা গড়ণের এই মেয়েটিকে অনেকদিন ধরে চেনা ওর। কিন্তু এতটা বিষাদগ্রস্ত আর কখনো দেখেনি ওকে। অতি সাধারণ পুরোনো সেই একই গল্প। ভালবাসার সমাপ্তি, নতুন জীবনের শঙ্কা। দূর থেকে এই দুঃখ বাড়াবাড়ি রকমের হাস্যকর কখনো কখনো বন্ধুদের আড্ডায় উচ্চতর আমোদের বস্তু। কিন্তু প্রায়ই, একেবারে কাছ থেকে অন্যের দুঃখ দেখা হয় না মানুষের। দীর্ঘদিনের একটি স্বপ্ন চিরতরে ভেঙে যাবার মধ্যে অসম্ভব তীব্র একটা কষ্ট আছে। যদিও খুব দীর্ঘদিন এ কষ্টের তীব্রতা থাকে না। তবু অল্প সময়ের জন্যে হলেও এ কষ্ট খুব বেশি সত্য, নির্মম।
মিতুদের কাজের মেয়ে এসে চা দিয়ে গেল । চায়ে চুমুক দিয়ে নিঃসঙ্গ বলল, 'মিতু চোখ বন্ধ কর।'
মিতু অদ্ভুত চোখে দেখল ওকে। ' কি করব?'
'চোখ বন্ধ করবি।'
'আমার এই অবস্থায় তুই ঠাট্টা করছিস?'
'তোকে একটা স্বপ্ন দেবো। ঠাট্টা করছি না।'
'তুই আর কি স্বপ্ন দিবি। আমার স্বপ্নতো এখন প্রবাসী পাখি।'
'তোকে যা বললাম কর। আমি না বলা পর্যন্ত চোখ খুলবি না।'
একটু ইতস্তত করে চোখ বন্ধ করল মিতু।

নিঃসঙ্গ হালকা সুরে বলতে শুরু করল- একটি একতলা বাড়ি। বাড়ির সামনে অনেকখানি জায়গা জুড়ে ফুলের বাগান। লাল নীল বেগুনি হাজার ফুলের মেলা। বাড়ির চারিদিকে হাস্নাহেনার গাছ। বাড়ির গেইটের বাঁ পাশেই একটি কৃষ্ণচূড়া গাছ গম্ভীর দাঁড়িয়ে। ওটায় আগুনরঙা ফুল ফোটে প্রতি গ্রীষ্মে। বসন্তে -বরষায় কখনো ফুলহীন থাকে না এই বাগান। এই বাড়ি-বাগানে জোছনা অনেক বেশি সুন্দর। বর্ষা এখানে স্বপ্নময়। বসন্ত হৃদয়ের অব্যক্ত উচ্ছাস। এখানে শীত রুতা নিয়ে নয়, গভীর মমতায় আসে। এই বাড়িতে কখনো দুঃখ ঢোকে না। এখানে ব্যথা-কষ্ট অনাহূত। এখানে সবটাতেই মমতা ছড়ানো। এখানে কুৎসিত নয় কিছুই। সব সুন্দর-স্বপ্নীল। সেই বাড়ির সামনে বসে তুই। অপর্ণা বাগানে খেলছে। ছোট ছোট বেণী দুলিয়ে। এই ফুল থেকে ওই ফুলের কাছে ছুটে যাচ্ছে রঙীন প্রজাপতির মতন। তুই বসে আছিস প্রতীক্ষায়, কখন ফিরবে সে।
প্রতীক্ষায় তোর অবাক করা সুখ। তোর চোখের তারায় তারায় ঝিলমিলিয়ে ওঠে বারেবারে অজানা পুলক। শুধু কল্পনা আর স্বপ্নে প্রতীক্ষার প্রহর গড়ায় বিকেল থেকে সন্ধ্যা।
সন্ধ্যা হওয়ার আগে আগেই অপর্ণাকে ধরে এনে পড়তে বসিযে দিয়ে তুই হাতের কাজ সেড়ে নিলি প্রতিদিনের মতন। অতঃপর আবারও প্রতীক্ষা, কখন আসবে সে! রাত গড়ায়। অপর্ণার চোখে ঘুম নামে । তোর চোখে জমে অভিমানের মেঘ।
একসময় বহূ প্রতীক্ষিত সেই কণ্ঠ শুনতে পাস সদর দরজায়- কেউ দরজাটা খুলবেন?
তোর চোখে অভিমানের মেঘ সরে গিয়ে হেসে ওঠে হাজারো পূর্ণিমা। দরজা খুলে এবার ছদ্ম রাগ তোর। তুই বললি - ঘরে না এলেই হয়। ঘরে কি দামি কেউ আছে তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে।
নাবিল কাঁচুমাচু হয়ে বলে- অফিসে অনেক কাজ.......
তুই রাগ দেখিয়ে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিলি কিছু না বলে।
নাবিল তোর পেছনে দাঁড়িয়ে তোর চুলের খোঁপা খুলে দিল। একরাশ মেঘচুলের ঢল নামল তোর পিঠে। একটু দূরে সরে গেলি তুই , ওর দিকে তাকাচ্ছিস না। কিছুণ আমতা আমতা করে নাবিল হঠাৎ চুপ। কোন কথা বলছে না, কোন আওয়াজও নেই। ঘর একেবারে নীরব। কেবল বাইরে থেকে ভেসে আসছে ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক। খানিক অপেক্ষা করে নাবিল ফ্রেশ হতে বাথরুমে গেছে ভেবে ফিরতেই দেখলি, মায়াময় হেসে নাবিল দুহাত বাড়িয়ে দিয়েছে। তোর অভিমান নিমেষে উধাও। তুই ছুটে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লি ওর বুকে। নাবিল তোকে বুকে জড়িয়ে ধরে গাঢ় স্বরে বলতে লাগল- পাগলি আমার.... পাগলি আমার....... তোর মনে হতে লাগল স্বর্গ এখানেই, সুখের শুরু এবং শেষও এইখানেই। তোর ঘরে জোছনা ভালবাসা হয়ে উকিঝুঁকি দিয়ে যায়। ঘরের আনাচে ঘোরে ফেরে হাস্নাহেনার মাতাল সুঘ্রাণ। তোর ভেসে যাওয়া কেবল সুখের মেঘে... ভেসে যাওয়া নিরুদ্বেগ,নিশ্চিন্তে।
একটানা বলে নিঃসঙ্গ থামল। মিতু চোখ বন্ধ করেই আছে। ওর মুখে অদ্ভুত সুখের ছায়া। দুগাল ভেজা অশ্রুতে। সে এখন স্বপ্নে বিভোর। বাইরে ঝুম বৃষ্টি নেমেছে। নিঃসঙ্গ নীরবে মিতুর কাছ থেকে সরে এসে বেরিয়ে এল। স্বপ্ন দেখতে থাকা মানুষের কাছে খুব বেশিণ বসে থাকতে নেই।
জোরসে ঝরছে বৃষ্টি। নিঃসঙ্গ ফাঁকা রাস্তায় হাঁটতে থাকে বৃষ্টিতে এলোমেলো, আনমনা। যেন ওর কোথাও যাবার নেই, ফেরার নেই।

সর্বশেষ এডিট : ২১ শে অক্টোবর, ২০০৯ সকাল ৯:৩৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কৃষ্ণচূড়া আড্ডার কথা

লিখেছেন নীলসাধু, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০২



গতকাল পূর্ব নির্ধারিত কৃষ্ণচূড়ায় আড্ডায় মিলিত হয়েছিলাম আমরা।
বছরের একটি দিন আমরা গ্রীষ্মের এই ফুলটির প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে প্রকৃতির সাথে থাকি। শিশুদের নিয়ে গাছগাছালি দেখা, ফুল লতা পাতা চেনাসহ-... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×