যারা ঢাকায় থাকেন চাকুরির জন্যে আর বাড়ি-ঘর সব ঢাকার বাইরে তাদের নিশ্চয়ই মাসে এক-দুবার ঢাকার বাইরে যেতে হয়। এবং তাদের নানারকম হ্যাপা সামলাতে হয়। হ্যাপা সামলানোর ব্যাপারটা স্বাভাবিক। আমি এখানে অস্বাভাবিকতার কিছু দেখিনা। আপনি ঢাকায় চাকুরি করেন ভাল কথা, বাড়ি-ঘর থাকলেই আপনাকে ঢাকার বাইরে বেরুতে হবে? এটাতো ঠিক না। আপনার বাড়ি-ঘরে যাওয়ার জন্যে কর্তৃপক্ষ আপনার হাতে-পায়ে ধরছে? রিমাইন্ডার দিচ্ছে মোবাইলে এসএমএস পাঠিয়ে- বাড়ি যান, বাড়ি যান বলে? তাহলে, কেন খামাকা যানজট বাড়াতে ঢাকার বাইরে যাবার জন্যে লাফালাফি করে কর্তৃপক্ষকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেন? দেশ ও সমাজের কাছে আপনি এই প্রশ্নের কি জবাব দেবেন?
উপরোক্ত বক্তব্য পাগল ছাড়া কেউ দেবে না সম্ভবত। তবে কি আমি পাগল? নারে ভাই, এখনো পাগল হই নাই তয় হমু যে কোন দিন।
আমার বাড়ি চট্টগ্রাম। ঢাকায় থাকি কাজের জন্যে। বাড়ি যাই ছুটি-ছাটা পেলে। এখন সমস্যা হচ্ছে, আমাকে এবং আমার মত হাজারো সাধারণকে যাত্রাবাড়ি ফ্লাইওভারের নিচের রাস্তা দিয়ে ঢাকা থেকে বেরুতে হয়। এখন বলতে পারেন, আমাদের মানসিক সমস্যা আছে, মানে আমরা যারা মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার দিয়ে ঢাকা থেকে না বেরিয়ে নিচের রাস্তা দিয়ে বের হই। এই মানসিক সমস্যাটির কারণ, আমাদের আয় রুজি কম। আমরা নন-এসি বাসে চড়ি। চড়তে হয় আসলে। যারা এসি বাসে চড়ে ঢাকা থেকে বের হন তারা জানেন না কি ভয়ঙ্কর নৃত্য কসরতে বাসগুলো ঢাকা থেকে বেরোয়। ঢাকার চারদিক এত উন্নত হচ্ছে অথচ মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের নিচের রাস্তার কেন রুগ্ন দশা সেই প্রশ্ন আমার বহুদিনের। তবে বাসে চড়ে আসতে যেতে পাবলিক বলে- ভাঙা রাস্তা ইচ্ছে করেই সাড়ানো হয় না। কেননা যদি নিচের রাস্তা ফ্লাইওভারের মত মসৃণ ও ঝকঝকে হয় তবে ফ্লাইওভারের টোল কেউ দেবে না। মূলত টোল ব্যবসার সুবিধার্থেই নিচের রাস্তা সাড়ানো হয় না। তবে এসব কথায় পাত্তা দেবার কিছু নাই। পাবলিকতো আজাইরা কথা বলতেই পারে। এদের আর কাজ কি বলেন? এরা খায়, টয়লেট করে আর ঘুমায়। এদের দেশের উন্নতি বোঝারও ক্ষমতা নেই। এরা আজাইরা কথা বলেই খালাস।
ফলে, আমার একটি বিশেষ আইডিয়া আছে। যাতে কর্তৃপক্ষকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করে কেউ বিব্রত করতে না পারে। উপরন্তু আমার এই আইডিয়ার বাস্তবায়ন হলে, সবাই সুড়সুড় করে টোল দিয়ে ফ্লাইওভার ব্যবহার করবে খুশিমনেই। কেউ কেউ দেখা যাবে ফ্লাইওভারের পাশে দাঁড়িয়ে হেলে পড়ে নিচের টলটলে দৃশ্যের সাথে মিতালি করে সেলফিও তুলছে। আমার আইডিয়া হলো- নিচের রাস্তায় মাছ চাষ করা হোক। নিচের রাস্তায় যে পরিমাণ গর্ত রয়েছে তা মাছ চাষের জন্যে ব্যাপক উপযোগি। এখন যা করতে হবে, তা হল- বৃষ্টির পানি যেন কোন দিকে যেতে না পারে সে ব্যবস্থা করা। মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের নিচের রাস্তার চারপাশে বাঁধ দিতে হবে। ঢাকায় জলাবদ্ধতা খুবই স্বাভাবিক সমস্যা। তো জল কে আবদ্ধ করার জন্যে আমাদের কর্তৃপক্ষকে খুব একটা বেগ হবে বলে মনে হয় না। জলাবদ্ধতা সমস্যাকে সুবিধায় পরিণত করে চারপাশে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ শুরু করা উচিত। তবে বাঁধটা ভাল করেই দিতে হবে, কেননা কোটি কোটি টাকার মাছ চাষ করা হবে। এখন বাঁধ ভেঙে মাছ যদি বেরিয়ে যায় তাহলে আজাইরা পাবলিকরাতো রাস্তায় হেঁটে হেঁটে মাছ ধরবে! মাছ আমিষের অভাব পূরণে উল্লেখযোগ্য অবদান ও রাখবে। আর উদ্বৃত্ত মাছ দেশের বাইরে রপ্তানি করে কিছু বাড়তি আয়ও করা যাবে। পাশাপাশি, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও হয়ে যাবে। তাই, এই অধমের আইডিয়া, মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের নিচের রাস্তা বন্ধ করে মাছ চাষ করুন। এতে করে মাছও পাবেন, টোল ওয়ালারাও টোল বেশি করে পাবে। সবচেয়ে বড় কথা, ভেনিস নগরীর আদলে ঢাকার সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে এইরকম উদ্যোগ বিশাল অবদান রাখবে।
বিঃদ্রঃ মাননীয় যোগাযোগ মন্ত্রী বা মাননীয় মেয়র (আমি জানি না রাস্তাটি নিয়ে কে মাছ চাষের উদ্যোগ নিতে পারেন।) যদি এই লেখাটি পড়েন তবে, তাদের অনুরোধ করবো, মাছ চাষের সম্ভাবনা যাচাইয়ের জন্যে আপনারা সাধারণ যাত্রী সেজে গোলাপবাগ-সাঈদাবাদের রাস্তা ধরে মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের শেষ মাথা পর্যন্ত ভ্রমণ করবেন। আশা করি, আমারই মত আপনারাও একই সম্ভাবনায় আনন্দিত হয়ে উঠবেন। সবশেষে মাছ চাষের সাফল্য কামনা করছি।