somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

পথিকরাজপুত্র
আমি মনোযোগী পাঠক। পড়তে ভালবাসি। পড়ে কোথাও কিছু একটা অসঙ্গতি আছে মনে হলে সেটা আলোচনা করি। ভাল লাগলেও আলোচনা করি, খারাপ লাগলেও আলোচনা করি। কেননা আমি বিশ্বাস করি, পাঠকই লেখক তৈরী করে।

বিষয় বাঙালির প্রেম এবং প্রেমে বাংলা সিনেমার মহৎ ভূমিকা

০১ লা জুন, ২০১৬ বিকাল ৫:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোটবেলা থেকে ব্যাপকভাবে আনন্দিত বিনোদিত হতাম বাংলা সিনেমা দেখে। সিনেমা দেখায় আমার বন্ধু সহযোগী ছিল আমার খালা। খালার তখনো বিয়ে হয়নি। আমার সাথে যুদ্ধ-ঝগড়া তার ছিল নিত্য-নৈমিত্তিক। খাবারের থালায় মাছের টুকরো নিয়ে ঝগড়া, নানুর পাশে ঘুমোনো নিয়ে ঝগড়া। তবে সিনেমা দেখার সময় আমাদের ছিল গলায় গলায় ভাব। মুগ্ধ-বিমুগ্ধ হয়ে আমরা বাংলা সিনেমা দেখতাম। প্রতি শুক্রবারে। নিয়ম করে বিকেল ৩:৩০ টায়। জমজমাট সিনেমা হলে ঝালমুড়ি এবং বিবিধ পিঠাও আয়োজনে রাখা হত। তখন কেবলমাত্র বিটিভি ছিল বলে, প্রতিসপ্তাহে একটা সিনেমাই ছিল পুরো সপ্তাহ জুড়ে আলোচনার বিষয়। তো বাংলা সিনেমা ভক্ত আমি শীঘ্রই এর কমন কিছু প্যাটার্ণ বুঝে ফেলি। যেমন-

১। বেশিরভাগ সময়ই নায়ক গরীব এবং ধনীদের ঘৃণা করে। (যেহেতু আমরাও গরীব ছিলাম বলে যুক্তিতে ধনীদের ঘৃণা করতাম)
২। বেশিরভাগ সময়ই নায়কের ছোটবেলায় বাবা/মা বা যে কোন একজন মারা যাবে। এবং বেশিরভাগ সময়ই, ভিলেন নায়কের মা-বাবাকে মেরে ফেলবে।
৩। নায়ক টোকাই বা এ জাতীয় থেকে জনগণের বন্ধু টাইপ সন্ত্রাস হবে। প্রতিশোধ নেয়ার জন্যে ঘুরবে। সময় হলে প্রতিশোধ নেবেই কোন ছাড় দেবে না।
৪। প্রেমের শুরুটা হবে নায়িকাকে রাস্তা-ঘাটে বিরক্ত করা থেকে (বিশেষ করে একটা গান হবে এই টাইপ, দশ-বারোজন নায়িকাকে ঘিরে ধরবে, নায়ক টিজ করবে এবং একসময় নায়িকা গলে নায়কের সাথে মাখামাখি মাখন হয়ে উদ্দাম নৃত্য করবে।
৫। নায়ক সন্ত্রাস হলেও সে বিচিত্রভাবে নিজেকে সৎ বলে দাবি করবে আর নিজের সন্ত্রাস হয়ে ওঠার পিছনে সমাজকে দায়ি করবে।
৬। কিছু কিছু সিনেমাতে দেখাবে নায়ক-নায়িকা ছোটবেলাতেই একজন অন্যজনকে চরম-ব্যাপক ভালবাসে আর তারা আলাদা হয়ে যায় (পিতা-মাতারা সিনেমায় তাদের আলাদা হওয়ার দৃশ্য দেখে খুবই আহত হন আর বাস্তবে পাশের বাড়ির মেয়েটার সাথে মিশতে দেন না ছেলেকে) । আবার বিশ বছর পরে টাইপ সময় পরে তাদের দেখা হয়। এবং যেকোন একজন বা উভয়ের মনেই বাল্যপ্রেম জাগ্রত হয়।
৭। বাংলা সিনেমাতেই ব্যাপকভাবে রিক্সাওয়ালা এবং ট্যাক্সিওয়ালার প্রেমে পড়া সাপোর্ট করা হয়। এবং হাজারো ছবিতে দেখানো হয়েছে, বড়লোকের শিক্ষিত মেয়ে অশিক্ষিত রিক্সা/ট্যাক্সিওয়ালার প্রেমে পড়ছে আর বাপের কাছে ধরা খেলে মাখো মাখো আবেগ নিয়ে টেনে টেনে বলছে- বাবা আ আ আ আ.... রিক্সাওয়ালা বলে কি ও মানুষ নয়?
৮। কোন কোন সিনেমায় প্রেমের ব্যাপক ক্লাইমেক্সের সময় নায়িকা নায়কের প্রেমকে ভুল বুঝে গায়ের ওড়না একটানে শরীর থেকে নামিয়ে মহা চিৎকার দিয়ে বলে- তুমি আমার মন চাওনি, দেহ চেয়েছো, এই নাও দেহ! ওদিকে আদর্শবান নায়ক একহাতে চোখ ঢেকে আরেকহাতে ওড়না খুঁজে নিয়ে নায়িকার গলায় জড়িয়ে দেয় (যদিও আমার মাথায় কখনো ঢোকেনা, ওটা নায়ক গলাতেই কেন পরায়)। কিছু কিছু তেজি নায়ক আবার নায়িকাকে ঠাস করে আকাশ-বাতাস প্রতিধ্বনিত করা চড় দিয়ে বলে- ছি! তুমি আমাকে এমন ভাবতে পারলে? (বলার সময় চোখে জল থাকে অবশ্যই)।
৯। বাংলা সিনেমায় প্রেম হলেই অবধারিত ভাবেই জড়িয়ে ধরতে হবে। আর মাখামাখি নৃত্য থাকবে। (এটা অবশ্য ভারতীয় সিনেমাতেও ব্যাপকভাবে প্রচারিত)।
১০। বাংলা সিনেমায়, নায়কের হাত ধরে নায়িকার পালিয়ে যাওয়া বিষয়টা নৈতিক এবং অত্যন্ত উচিত একটা কাজ বলে প্রমাণ করার চেষ্টা করা হয়।

যাইহোক, অারো অনেক প্রকারের প্রেমও আছে তবে বাংলাদেশে প্রেমের ফাউন্ডেশনের বিষয়টা কেমন সেটা নিয়ে একটু ধারণা দেয়ার চেষ্টা করা। এখন যদি আপনারা প্রেমকে একটা অসামাজিক কার্যকলাপ এবং ইভটিজিংকে সামাজিক ব্যধি মনে করেন আর সেজন্য সমাজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে হাহাকার করে থাকেন তাহলে তারা সর্বাগ্রে দোষ দিতে পারেন বাংলা সিনেমার। দোষ দিতে পারেন, চিত্রপরিচালকদের, অভিনেতা-অভিনেত্রীদের, প্রযোজকদের এবং দর্শক হিসেবে নিজেদের। আমাদের সিনেমাগুলো বাস্তবতা থেকে এক আলোকবর্ষ দূরে।

দীর্ঘকাল ধরে আমাদের সিনেমাগুলো কিছু ভুল ধারণা দিয়েছে, যেমন- এই সিনেমাগুলো মানুষকে ঘৃণা করা দোষের কিছু নয়- এই মত প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করে। গরীবদের কোন কারণ ছাড়াই ধনীদের খারাপ ভাবতে প্ররোচিত করে। প্রতিশোধ পরায়ণতাকে সঠিক বলে প্রচারের চেষ্টা করে। অশ্লীলতাকে স্বাভাবিক এবং বাল্যপ্রেম স্বাভাবিক বলে প্রমাণের চেষ্টা করে। ইভটিজিং করে নায়িকাকে পটানো স্বাভাবিক আচরণ বলে ধরে নেয়ার মানসিকতা গড়ে দেয়।

অশ্লীলতাকে কিভাবে স্বাভাবিক প্রমাণের চেষ্টা করে সেটা যদি পাঠক আমাকে বিশ্লেষণের জন্যে তীব্রভাবে প্রমাণ দিতে বলেন তাহলে আমি সাধারণভাবেই উদাহরণ দেব- ‘খেয়াল করে দেখুন, বাংলা সিনেমায় কলেজ/ভার্সিটি পড়ুয়া নায়িকাদের কেমন পোশাকে উপস্থাপন করে আমাদের সিনেমা। আমি কোন ভার্সিটি বা কলেজে ওইরকম পোশাক পরা কোন মেয়ে আমি দেখিনি। আমি দেখিনি, ছেলে-মেয়েরা প্রেম করছে বলে রাস্তা-ঘাটে একজন অন্যজনকে জড়িয়ে ধরছে।’

প্রেম একটি স্বাভাবিক ব্যাপার, নিজস্ব ব্যাপার। দুজন মানুষের বিশ্বাস, বোঝাপড়া ও আবেগের ব্যাপার। এটা খোলা মাঠের ব্যাপার নয়। মানুষ কুকুর বিড়াল নয় যে তাদের প্রেম খোলা-মাঠে দেখাতে হবে বা চলতে পারে। এছাড়াও বাঙালি হিসেবে আমি বিশ্বাস করি, ইউটিউবে যে ভিডিওগুলো আসছে তা প্রেমের সংজ্ঞা নয়। বাঙালি এই প্রেম সাপোর্ট করে না। বাঙালি উগ্র পোশাকের সংস্কৃতি সাপোর্ট করে না। বাঙালি খোলা মাঠে আট-দশজনের সামনে চুমু খাওয়া সমর্থন করে না। বাঙালির প্রেম সবাইকে দেখানোর সংস্কৃতি কখনো ছিল না। এটা নতুন ট্রেন্ড। বাঙালির প্রেম মহৎ ছিল, বাজারি ছিল না কখনো।

সর্বোপরি বাঙালির প্রেমে নম্রতা-শালীনতা ছিল এবং আছে ও থাকবে। এটাকে বদলে ফেললে আপনি নিশ্চিতভাবেই জানুন আপনি আর বাঙালি থাকছেন না। আপনি তখন আন্তর্জাতিক গুণসম্পন্ন একজন মানুষ। আর অত গুণ নিয়ে আমাদের এই অভাগা দেশে পড়ে থাকা আপনার জন্যে মোটেও স্বাভাবিক নয়।

আমার সমসাময়িক অনেক লেখককে দেখেছি এটাকে স্বাভাবিক বলছেন। আমি সাইকোলজি নিয়ে খুব বেশি পড়াশুনা করি বলে আমি জানি, তারা মুখে এটাকে স্বাভাবিক বলে অন্য ছেলে মেয়েদের কাছে নিজেকে জনপ্রিয় করে তোলার চেষ্টায় থাকলেও বাস্তবে তারা কখনোই তাদের স্কুল পড়ুয়া বোনকে এমন করার জন্যে উদ্বুদ্ধ করবেন না। এবং ভবিষ্যতে যদি কখনো তারা মেয়ের বাবা হন, আমি লিখে দিতে পারি তারা তার স্কুল পড়ুয়া মেয়েকে এমনটা করতে উদ্বুদ্ধ করবেন না বরং মেয়েকে খুন-টুন ও করে ফেলতে পারেন। আমি অপেক্ষা করছি.... যদি বেঁচে থাকি, আমি সেই দিনটি দেখতে চাই যেদিন, বিশিষ্ট প্রগতিশীল লেখক/কবি/সাহিত্যিক নিজের স্কুল পড়ুয়া মেয়েকে আট-দশটা ছেলের মাঝখানে প্রেমিকের সাথে ছেড়ে দিচ্ছেন আর তারা চুমু খাচ্ছে এবং তিনি মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন আর থেকে থেকে আবেগে চোখের পানি মুছতে থাকছেন। আমি এই দৃশ্যটা দেখতে চাই।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুন, ২০১৬ বিকাল ৫:১০
৭টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কৃষ্ণচূড়া আড্ডার কথা

লিখেছেন নীলসাধু, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০২



গতকাল পূর্ব নির্ধারিত কৃষ্ণচূড়ায় আড্ডায় মিলিত হয়েছিলাম আমরা।
বছরের একটি দিন আমরা গ্রীষ্মের এই ফুলটির প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে প্রকৃতির সাথে থাকি। শিশুদের নিয়ে গাছগাছালি দেখা, ফুল লতা পাতা চেনাসহ-... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×