somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নাস্তিক-আস্তিকের নৈতিকতা

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৪:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নৈতিকতা কি
নৈতিকতা একধরনের মানসিক অবস্থা বা স্পিরিচুয়াল কন্ডিশন।যা কাউকে অপরের মঙ্গল কামনা করতে এবং সমাজের প্রেক্ষিতে প্রচলিত ভালো কাজে অনুপ্রেরণা দেয়।

নৈতিকতার উৎস
প্রাথমিক অবস্থায় পরিবার। পরবর্তীতে সামাজিক অন্যান্য প্রতিষ্ঠান যাতে সে ইনভলভড হয়। উল্লেখ্য, স্বশিক্ষাও এক ধরনের প্রতিষ্ঠান।

আস্তিকের নৈতিকতা
আস্তিকের নৈতিকতার প্রধান উৎস, তার ধর্ম। প্রাথমিক ভাবে স্রষ্টায় বিশ্বাসীগন স্রষ্টার আদেশ নির্দেশ মানতে নৈতিকতার পাঠ নেয়। আর সেই আদেশ নিষেধ ঠিকভাবে মানতে পারলে নৈতিকতা তার মজ্জাগত হয়ে যায়, কারন কারো একবার মানসিক অবস্থা কোন কন্ডিশনে স্থিতি পেলে সে স্বভাবতই ঐরকম হয়ে যায়।আর ধর্মের পাশাপাশি অন্যান্য সামাজিক প্রতিষ্ঠান থেকেও একজন আস্তিক নৈতিকতার পাঠ পেয়ে থাকে এবং অনেক সময় একজন আস্তিকের উপর তা ধর্মের চেয়ে বেশি প্রভাব ফেলতে পরে।যেমন গরীব-দুস্থ দের সাহায্য করা, এই নৈতিকতা অন্য সামাজিক প্রতিষ্ঠানে যেমন শিক্ষা পায় তেমনি ধর্মেও শিক্ষা পায়। গরীব-দুস্থদের সেবা করার সময় এই দুই উৎসের নৈতিকতা তখন যুগোপৎ ভাবে কাজ করে।

নাস্তিকের নৈতিকতা
নাস্তিকের কাছে নৈতিকতার পাঠ ধর্ম ব্যতীত অন্যান্য উৎস। সামাজিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সে তার সে শিক্ষা পেয়ে থাকে।

আস্তিকের আর নাস্তিকের নৈতিকতার পার্থক্য:

ক. উৎস: নাস্তিকের নৈতিকতার উৎস আস্তিকের চেয়ে একটি উৎস কম, তা হল ধর্মীয় উৎস। আর অনেকের মতে ধর্ম নৈতিকতার অন্যতম উৎস।

খ.অপরাধবোধ:
নাস্তিকের পরকালে শাস্তির ভয় নেই, এমনি স্রষ্টার তরফ থেকে ইহকালের শাস্তি ( সোজা বাংলায় গজব) এর ও ভয় নেই। তাই স্বভাবতই তার অপরাধবোধ আস্তিকের তুলনায় কম ।

গ. অনুশোচনা:
অনেকসময় মানুষ ক্ষনিকের প্ররোচনায় তার নৈতিকতা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়। পরে হয়ত নিজ ভুল বুঝতে পারে। আস্তিকরা সেক্ষেত্রে অনুশোচনা করে এবং স্রষ্টার কাছে ক্ষমা প্রার্থনার উদ্দেশ্যে ক্ষতিগ্রস্থদের সাহায্য করে এবং তার পাপ মোচনের উদ্দেশ্যে আরো সৎ ভাবে চলার চেষ্টা করে বা সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজের মাধ্যমে স্রষ্টার অনুগ্রহ প্রাপ্তির আশা করে। নাস্তিকেরও অনুশোচনা হয়, সেও ক্ষতিগ্রস্থদের সাহায্য করার চেষ্টা করে। কিন্তু স্রষ্টার অনুগ্রহের ইচ্ছা না থাকায় অন্যান্য দিকে তার অবস্থান একই থাকে।

ঘ. যৌক্তিকতা:
নাস্তিক তার কাজের বিচার করে যুক্তি দ্বারা, তাই কোন কারনে যদি তার ব্লাক সাইড হোয়াইট সাইডের উপর আধিপত্য বিস্তার( যা মানব প্রকৃতিতে অতি সাধারণ ঘটনা) করে, তখন সে যুক্তি খুঁজবে এই পাপে তার ধরা পড়ার সম্ভাবনা আছে কি নেই, না থাকলে আর কোন ব্যরিআর থাকবে না সেই পাপ আর তার মধ্যে। এক্ষেত্রে একজন ভালো আস্তিক লোকের আরেকটা ব্যারিয়ার রয়ে যায়, তা হল উপরওয়ালার নজর।

অপরাধী-নিষ্পাপ সম্পর্কে:
প্রশ্ন আসতে পারে তাহলে অপরাধীরা সব কি কোন বিশেষ গ্রুপ আস্তিক বা নাস্তিকদের অর্ন্তভুক্ত হবে । অবশ্যই না, অপরাধীরা আস্তিক বা নাস্তিক উভয়ই হতে পারে। কারন যে অপরাধি হয় সে তার নৈতিকতার শিক্ষাকে পায়ে দলে তারপর হয়। একজন নাস্তিক অপরাধী তার সামাজিক নৈতিকতাকে বিসর্জন দেয়, আর একজন আস্তিক অপরাধী সামাজিক ও ধর্মীয় উভয় নৈতিকতাকে বিসর্জন দেয়। তারমানে একজন আস্তিক যখন অপরাধী হয় তখন সে একজন আস্তিকের চেয়ে এক ধাপ বেশি নৈতিকতা বিসর্জন দেয়, তারমানে একজন অপরাধী এবং যে নাস্তিক তারচেয়ে একজন অপরাধী এবং যে আস্তিক সে বেশি নিন্দনীয়।

তবে স্বভাবতই এখন পর্যন্ত আস্তিক মানুষ বেশি বলে আস্তিক অপরাধী বেশি হতে পারে, তবে সমাজে যখন নাস্তিকদের পরিমাণ বাড়বে তখন অপরাধের হার আরো বেশি বাড়বে সন্দেহ নেই। কারন এখনো এমন অনেক মানুষ আছে যারা তাদের নৈতিকতার প্রধান ব্যারিয়ার ধর্ম। এই ব্যারিয়ার ভেঙ্গে গেলে সেসব মানুষও অপরাধপ্রবণ হবে সে সম্ভাবনা থাকে।
আবার কিছু মানুষ আছে নিষ্পাপ ভালো মানুষ । তারা আস্তিক বা নাস্তিক যাই হোক না কেন তারা ওরকমই স্বভাবগত ভাবে। তাদের কথাও ভিন্ন।

মধ্যবর্তীরাই নৈতিকতার এসব ধাপের ফলপ্রসূতা বহন করে।( অবশ্য মধ্যবর্তী কারা সেটা নিয়ে আবার গ্যান্জাম লাগতে পারে;))

জ্ঞাতব্য:
এই আলোচনা শুধুমাত্র আস্তিকতা ও নাস্তিকতার নৈতিকতার তুলনামূলক বিশ্লেষণ, এর সাথে ধর্ম সত্য না মিথ্যা তার সম্পর্ক নেই । এখানে ধর্মকে শুধুমাত্র একটি নৈতিকতার উৎস হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১০ বিকাল ৩:১৮
৭টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসলামে পর্দা মানে মার্জিত ও নম্রতা: ভুল বোঝাবুঝি ও বিতর্ক

লিখেছেন মি. বিকেল, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১:১৩



বোরকা পরা বা পর্দা প্রথা শুধুমাত্র ইসলামে আছে এবং এদেরকে একঘরে করে দেওয়া উচিত বিবেচনা করা যাবে না। কারণ পর্দা বা হিজাব, নেকাব ও বোরকা পরার প্রথা শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×