somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আরজ আলী মাতুব্বরকে নিয়ে ভাবনা ১

০৩ রা জানুয়ারি, ২০১০ রাত ৮:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আরজ আলীর মাতুব্বর,আমাদের দেশের স্বশিক্ষিত একজন দার্শনিক, চিন্তাবিদ। তিনি বিখ্যাত তার জিজ্ঞাসু দর্শনের জন্য, তার মনের মধ্যে জমে থাকা প্রশ্ন তিনি প্রকাশ করেছেন আর সেই প্রশ্নের মধ্যেই লুকিয়ে রাখতে চেয়েছেন তার উত্তর।
কারো কারো নিকট তিনি পরম শ্রদ্ধাভাজন...আর কারো নিকট তার প্রাপ্য শুধু ঘৃণা...তবে তার পুরো ব্যাপারটা আমার কাছে ভীষণ দু:খজনক মনে হয়।

প্রাথমিক জীবনে মায়ের মৃত্যু আর সেই মায়ের,জগতে সবচেয়ে প্রিয় মানুষটির, জানাজা নিয়ে তৎকালীন কিছু ধর্মান্ধ ব্যক্তির নোংরামিতে তার ধর্ম সম্পর্কে যে আমরণ বিতৃষ্ণা জন্মাবে সেটা ধারনা করা যায়...তিনি বলেছেন'আমার প্রণীত বা সম্পাদিত আলোচ্য যাবতীয় পুস্তক-পুস্তিকাই হচ্ছে আমার মায়ের মৃত্যু দিনের বাঞ্ছিত দামামার অংশ বিশেষ। এছাড়া আমার অন্যান্য কৃতকর্মেও রয়েছে ঐ একই প্রেরণা'...

তিনি ছিলেন যে সমাজের সে সমাজ ছিল ধর্মীয়সহ যাবতীয় কুসংস্কারের লালন ক্ষেত্র..আসল ধর্ম থেকে বিচ্যুত সে সংস্কারগুলো ধর্মেরই দুর্বলতা হিসেবে ধরা পড়েছে আজীবন তার চোখে...বারে বারে সেসব তার লেখায় উঠে এসেছে...
মনের যে সীমাহীন ক্ষোভ ধারন করে তিনি লিখেছেন সত্যের সন্ধান, সে ক্ষোভ ছিল সেই সমাজের সেই বাড়াবাড়ি করা মোল্লাদের আচরণের ফল, সেই ক্ষোভের উৎস মূলধারার ধর্ম নয়, যদিও ততদিনে সবই তার কাছে একাকার হয়ে যায়।


তার সেই ক্ষোভ নিয়ে তিনি মুক্তমনে কতটা অনুসন্ধান বা বিচার বিশ্লেষণ করতে সক্ষম হয়েছেন তা বলা মুস্কিল, তবে তার লেখায় অত্যন্ত ধীর স্থির, সহজ ভাষায় আর কনভিন্সিং যুক্তি দেখে তার লেখনীর স্বতন্ত্র দিক ধরা পড়ে..নতুন নাস্তিকতায় দীক্ষিত কারো কাছে নিমেষে হয়ে উঠে বেদ বাক্যের মত। তাই আমার মত হয়তো অনেকে আছেন তার আদর্শের সাথে ভিন্নমত হওয়া সত্বেও তার লেখা সাহিত্য পাঠের আনন্দ নিয়ে পড়তে পারি।

আরজ আলীর লেখাগুলো এমন যে উত্তর দেয়া যায় এমন নয়, তিনি প্রশ্ন করছেন ঠিকই কিন্তু সত্যিকারের উত্তর তিনি চাননি, প্রশ্নের মাধ্যমে আসলে তিনি তার সিদ্ধান্ত গুলো জানানোর একটা সহজ ও কার্যকরী মাধ্যম পেয়েছেন।

আরজ আলীর প্রশ্নের আরো একটা ব্যাপার হল এমন সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যার আসলে কোন উত্তর হয় না..যেমন স্রষ্টার আকৃতি, আত্মা ..এসব নিয়ে ধর্মগুলোতে ডিটেইলস আলোচনা নেই...তাই সেসব প্রসংঙ্গ নিয়ে খুব বেশি আলোচনার সুযোগ নেই...

ধর্ম শুধু স্রষ্টার বন্দনাই নয়, ধর্ম নৈতিকতার অন্যতম উৎস-এ সত্য আরজ আলীর চোখে ধরা পড়ে নি তার সেই অতলান্তিক ক্ষোভের কারনে...

আরজ আলীকে তাই কখনো মনে হয় ক্ষোভাতুর দুর্ভাগার মত, যে সত্য সন্ধানের নাম করে তার ক্ষোভ নিবারনে ধর্মকে যাচাই করে গেছেন আজীবন।

তবে ব্লগে আরজ আলীর ভক্তদের উহু আহা দেখে কখনো বিরক্ত লাগে, তাকে আমাদের দেশের সেরা দার্শনিক হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচেষ্টার যেন অন্ত নেই, আরজ আলী ধর্মবিরোধী লেখা লিখেছেন বলেই বাকী সবার উপরে তিনিই দেবতুল্য..
এক ব্লগার ইদানিং আছেন যার নামখানা বাদে নিজের আর কোন স্বত্তা নেই, আরজ আলী যা লিখেছেন তাই তার মুখ দিয়ে বেড়োয়, প্রতিটি পোষ্ট আরজ আলীর বইয়ের, হুবহু তুলে দেয়া...এমন কোন ব্লগ হতে পারে আমার সে ধারনা ছিল না। এমনকি তিনি কোন কমেন্টের জবাব পর্যন্ত দেন না কেননা আরজ আলীর পবিত্র বানী ছাড়া তাহার মুখ দিয়ে কিছুই নি:সৃত হয় না..এমন ভক্তি আস্তিকগনের মধ্যেও দুর্লভ.. আরজ আলী তার সত্যের সন্ধানের প্রচ্ছদে যে চতুষ্পদটি অঙ্কন করেছেন তা তার এমন ভক্তদের প্রতীক হিসেবেই কিনা জানি না...

অবশ্য সেজন্য অনেকদিন পর আরজ আলীর লেখাগুলো আবার চোখে পড়ল...ইচ্ছা রইল সে লেখাগুলো নিয়ে ধীরে ধীরে আরো আলোচনা করার...

শেষ করছি একটা উপলব্ধি দিয়ে....

কোন প্রাথমিক শিক্ষার্থী তার গণিত শিক্ষককে প্রশ্ন করল π এর মান কিভাবে বের করতে হয়, তিনি তখন মুখে স্মিত হাসি ফুটিয়ে উত্তর দিলেন, ওর জানার ইচ্ছাকে প্রশংসা করলেন, ওকে ভালবাসলেন..

খানিক পর শিক্ষার্থীটি শিক্ষককে জিজ্ঞেস করে π এর মান কেন শেষ হয় না, শিক্ষক তখন বললেন সেসব তুমি বুঝবে, তবে আগে আরো অনেক কিছু জানা লাগবে তোমার..শিক্ষার্থীটি তখন অনুরোধ করে,জেদ করে..শিক্ষক দীর্ঘশ্বাস ফেলেন..ধীরে ধীরে বলা শুরু করেন...পাইএর মান নির্ণয়ে মহাত্মা গণিতবিদ আর্কিমিডিসের পলিগনিক মেথড দিয়ে শুরু করেন..তারপর আরো আরো পদ্ধতিতে কীভাবে এর মান বের হয় তা বলা শুরু করেন ক্রমান্বয়ে...

'আমি এত কিছু জানতে চাই না'..ঝাঁঝালো প্রতিবাদ আসে শিক্ষার্থীটির তরফ থেকে...আরো সহজে ..সোজা করে আর সরাসরি জানতে চাই আমার কথার উত্তর...আপনি আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে অক্ষম..তাই এত কিছু বলছেন...
শিক্ষক দীর্ঘশ্বাস ফেলেন আবার...নির্বাক তাকিয়ে থাকেন শিক্ষার্থীর চলে যাওয়ার দিকে..তার অক্ষমতার দাবীকারি শিক্ষার্থীর জন্য তার মনে কোন ঘৃণা নেই...তার দুচোখ সহানুভূতিতে সিক্ত...

শিক্ষক প্রতিবাদ করেন না,রাগ করেন না.... করেন শুধু অপেক্ষা, সেই শিক্ষার্থীর জন্য...
তিনি জানেন সে অপেক্ষার প্রহর ফুরোবে শীঘ্রই...

(চলবে)

সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:১৭
২৪টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসলামে পর্দা মানে মার্জিত ও নম্রতা: ভুল বোঝাবুঝি ও বিতর্ক

লিখেছেন মি. বিকেল, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১:১৩



বোরকা পরা বা পর্দা প্রথা শুধুমাত্র ইসলামে আছে এবং এদেরকে একঘরে করে দেওয়া উচিত বিবেচনা করা যাবে না। কারণ পর্দা বা হিজাব, নেকাব ও বোরকা পরার প্রথা শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×