somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সৌমিত্র – প্রিয় বন্ধু, প্রিয় সহকর্মী

২৫ শে মে, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মোবাইলটা বেজেই চলেছে। এত ভোরবেলা কে ফোন করছে? আজ কি আমার মর্নিং শিফট? না, নাতো , আজ আমার জেনারেল শিফট ডিউটি। চোখে চশমা নেই, তাই অনেক হাতড়ে বের করলাম মোবাইল ফোনটা। আলভির ফোন। “আলভি, কি ব্যাপার?” আমি বললাম। ওপাশ থেকে আলভি বলছে,“পরাগ ভাই, উঠছেন? একটা ব্যাড নিউজ আছে। সৌমিত্র ভাই মারা গেছে। নাফিজ ভাই যাচ্ছেন উনার বাসায়। আপনিও চলে যান উনার বাসায়।” আমি বিস্ময়-হতবাক-হতবুদ্ধি হয়ে বললাম,“ঠিক আছে”। ফোনটা কেটে গেল। আমি তাড়াতাড়ি ক্যালেন্ডার দেখতে লাগলাম, আজ কি পয়লা এপ্রিল নাকি? না, আজ ছাব্বিশে নভেম্বর।

নাফিজ ভাইকে ফোন করলাম, “ভাই, কি হইছে?’’। “কিছুই তো বুঝতে পারছিনা। তুমি চলে এসো, চকবাজার অলি খাঁর মসজিদের সামনে।”কোনরকম মুখটা ধুয়েই বের হয়ে পড়লাম। রিকশা ভাড়া মেটানোর সময়ই দেখতে পেলাম নাফিজ ভাই আর আজাদ ভাইকে। নাফিজ ভাই বলল, “রাত তিনটের সময় নাকি সৌমিত্রের রুম থেকে তীব্র গোঙানির আওয়াজ আসছিল। তখনই সৌমিত্রের মা যান ওর ঘরে। ছেলের মাথাটা কোলে নিয়ে মা জিজ্ঞেস করেন কি হয়েছে? মা ছেলেকে পানি খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। বন্ধ হয়না গোঙানি। আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে যায় দেহটা। ঠোঁটের কোণা দিয়ে বের হতে থাকে ফেনা। অ্যাম্বুলেন্স আসে, পাশেই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ। ডাক্তার নাড়ী দেখে, একটা কাগজে সাইন করলেন – ব্রট ইন ডেড- ডেথ সার্টিফিকেট।”

ছাব্বিশ বছরের একটা ছেলে। বলা নেই, কওয়া নেই, এভাবে চলে যেতে পারল। বন্ধুরা, সহকর্মীরা সান্ত্বনা দেয়,“সৌমিত্র বোধ হয় এতটুকু আয়ু নিয়েই এসেছিল।” মন যে মানে না। ওপর-ওয়ালা ‘মায়া’ জিনিসটা কেন দিলেন? নিথর পড়ে আছে দেহটা, এখনো তাজা। অশ্রু-আহাজারিতে বাতাস ভারি হয়ে গেছে। বুক ফেটে কান্না আসে। গতকাল বিকেলেইতো ওর সাথে ক্যান্টিনে বসে চা-সিঙ্গারা খেলাম। কত্ত মজার মজার কথা বললাম। “লাভ ইন দ্যা টাইম অফ কলেরা” সৌমিত্রের প্রিয় একটা মুভি। আমি অনেকবার ওকে মুভিটা আনতে বলেছি, কিন্তু নবাবজাদার আনতে মনে থাকেনা। আমি বললাম, “আজকে বাসায় গিয়ে তোমার প্রথম কাজ হচ্ছে মুভিটা পেন-ড্রাইভে কপি করা।” কিন্তু ওর কাছ থেকে এই মুভি কখনও আমার পাওয়া হয়নি। পরে নাফিজ ভাইয়ের কাছে জেনেছি, ওর পেন-ড্রাইভ ঘেঁটে পাওয়া গিয়ে ছিল এই মুভিটা।

এইত কিছুদিন আগের কথা। আমি আর কায়সার একইদিনে চাকুরিতে জয়েন করলাম। কায়সার একজন হাসিখুশি ছেলের সাথে পরিচয় করিয়ে দিল, নাম সৌমিত্র দাস। এখানে ইলেকট্রিক্যাল ডিপার্টমেন্টে জয়েন করেছে আমাদের কিছুদিন আগে। চুয়েট থেকে পাস করা, চিটাগাং এর ছেলে। খুব স্বতঃস্ফুর্ত একটি ছেলে, নিমিষেই আপণ করে নিল। ভাল মানুষ দুনিয়াতে বেশিদিন বাঁচেনা। সৌমিত্রের কথা ভাবলে মনে হয় খুব সে খুব চমৎকার একটি ছোটগল্প – ঝটপট শুরু আর কাহিনী ডালাপালা মেলার আগেই শেষ।


২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×