somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটু যদি অন্যরকম হত!

১৪ ই জুলাই, ২০১২ বিকাল ৪:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এটা ওটা করে কত্ত কাজ, এই ডকুমেন্ট, ওই ফাইল, ওটার এটেস্টেশন, মেডিকেল রিপোর্ট, ভিসার কাগজপত্র ইত্যাদি করতে করতে তৌহিদের মাথা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। শান্তভাবে নিজের এবং ভবিষ্যত সম্পর্কে ভাবার এতটুকু অবসর তার নেই। তার সমস্ত মাথা জুড়ে শুধু একটাই চিন্তা –“কবে পালাবো? এই সময়টুকু পার করলেই তাকে আর পায় কে? আর ফিরে আসতে হবেনা এই দেশে।”

সকাল বেলা প্রাতঃক্রিয়া করতে করতে সে ভাবতে শুরু করল। সাতটা বছর লাগল তার ব্যাচেলর ডিগ্রি শেষ করতে। আজকে হরতাল, কালকে অমুক সমস্যার জন্য ইউনিভার্সিটি বন্ধ এভাবে দেখতে দেখতে ৩ টা বছর হেলায় হারিয়ে গেল। এই তিনটা বছরে তিনটা রিসার্চ পেপার লেখা যেতো, এই তিনটা বছরে তিনটা কোম্পানী ডিঙিয়ে একটা কোম্পানীতে ম্যানেজার হিসেবে কাজ শুরু করে দিতে পারত অথবা নিজের ব্যবসা খুলে আরো তিনটা সিস্টার কনসার্ন খোলা যেত, একটা বিশ্ববিদ্যালয় আরো তিনটা ব্যাচ করে গ্রাজুয়েট করে দিতে পারত, একটা দেশ নতুন তিনটা প্রজন্ম পেত।

তৌহিদ তো ইচ্ছে করে রাজনীতিতে জড়ায়নি। সংসারের অভাব অনটন থাকা সত্ত্বেও সে দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছে, কিন্তু এই ঢাকা শহরে যে তার থাকা কোন জায়গা নেই, তাকে যেকোন ভাবেই হোক হলে সিট পেতেই হবে। ৪০-৫০ জন ছাত্র একসাথে থাকে গণরুমে, কিন্তু এর বদলে ওকে মিছিলে যেতে হবে, শ্লোগান দিতে হবে, প্রয়োজনে মারপিট করতে হবে। তৌহিদ ভাবে তার শুধু একার নয় আরো হাজার ছেলের বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শুরু হয় এই ভাবে। কিন্তু সে তো এভাবে চলতে চায়নি।

তৌহিদের বাবা মুক্তিযোদ্ধা, ছোটবেলা থেকেই সে দেশকে ভালবাসতে শিখছে, অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে শিখেছে, সুন্দর কে সুন্দর বলতে শিখেছে। স্বপ্ন দেখছে দেশ সেবা করার, দেশের জন্য সর্বস্ব ঢেলে দেবার। কিন্তু সবই যে মরীচিকা। হলের সিট ধরে রাখার জন্য অস্ত্র হাতে নিয়েছে, চাঁদাবাজি করেছে, মোবারকের দোকানে ফ্রি খেয়েছে। তৌহিদের বড়ই আফসোস হয়, সেতো এভাবে চলতে চায়নি।

তৌহিদ ভাবে কেনো শিক্ষাঙ্গনে রাজনীতি প্রয়োজন? ছাত্রদের মাঝে এই বিভক্তিকরণ কি অত্যাবশ্যক? হ্যা, যদি প্রশ্ন আসে রাজনীতি না থাকে তাহলে ভবিষ্যতে দেশ চালাবে কে, নেতা কোত্থেকে হবে? কিন্তু নেতৃত্ত্ব শেখানোর আরো হাজারটা পন্থা আছে। পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা ছাত্র সংগঠন থাকবে, ওরাই ছাত্রদের অধিকার, দাবী-দাওয়া নিয়ে সোচ্চার হবে। এই সংগঠনের বিভিন্ন ধরনের পাঠচক্র থাকবে, যারা জ্ঞান-বিজ্ঞান, অর্থনীতি, রাজনীতি, সাহিত্য-সংস্কৃতি নিয়ে আলোচনা করে নিজেদের সমৃদ্ধ করবে আর সেই সাথে ছিনিয়ে আনবে বৈশ্বিক সম্মান। এখন ইন্টারনেটের যুগ, তথ্য সংগ্রহ কোন সমস্যাই নয়। তৌহিদ ভেবে কুল-কিনারা করতে পারেনা, শুধু বাংলাদেশেই কেনো রাজনৈতিক কারনে, শিক্ষাঙ্গন বন্ধ থাকে। ইউরোপ-আমেরিকা তে কি নেতার প্রয়োজন নেই, ওদের বিশ্ববিদ্যালয়ে কেনো আন্দোলন চলেনা। সব অভিশাপ কেন আমাদের ছোট্ট দেশটাতেই এসে পড়েছে? আমাদের মহামান্য শিক্ষকেরাও দৌঁড়াচ্ছেন এর পিছু পিছু। একেক জন পি এইচ ডি ডিগ্রীধারী ব্যক্তি বড় বড় চাটুকার বনে আছেন, কিসের আশার? এইসব প্রফেসরদের বুদ্ধিতে দেশ চলার কথা, কিন্তু ঘটছে ঠিক উল্টোটা !

তৌহিদের সিনিয়র ভাইদের ছবি দেখে ফেইসবুকে। ওরা কানাডা-আমেরিকায় পি এইচ ডি শেষ করে, ওখানেই থিতু হয়ে গেছে। মা-বাবা অথবা অসুস্থ হলে বা মারা গেলে ওরা কয়েকদিনের জন্য দেশে আসে, আবার ফিরে যায় ভিন দেশে তৃতীয় শ্রেণীর জীবন-যাপন করতে। অথচ কত্ত মেধাবী ওরা, ওদের একটা আইডিয়া দিয়েই দেশটাকে আরো দশ দিক থেকে এগিয়ে নেয়া যেত। ওদের মনে কি আসেনা একবার দেশে গিয়ে কাজ করতে, দেশের সম্মান বাড়িয়ে দিতে, দেশকে কি তারা একটুকুও ভালবাসেনা? তৌহিদ ভাবে সে শুধু তার সিনিয়র ছয় ব্যাচের প্রথম সারির ছাত্রদের দেখছে এভাবে চলে যেতে, কিন্তু দেশে যে আরো একশ ইউনিভার্সিটি আছে, প্রতি বছর যদি প্রত্যেক ভার্সিটি থেকে দশটা ছেলেও বিদেশে তাহলে ফি বছর এক হাজার ছেলে বিদেশে পড়তে গিয়ে আর ফিরে আসেনা। আমার দেশ প্রতি বছর এক হাজারটা করে সোনার ছেলে হারাচ্ছে, কেনো? এই ছেলেগুলো কি দেশকে ভালবাসেনা? ওরা নিশ্চয় আমার মত, নিশ্চয় বাসে। নিশ্চয় বাংলাদেশ নামটা শুনলেই ওদের বুকের মাঝে চিন চিন ব্যথা হয়, চোখের কোণে অশ্রু জমে, মায়ের কথা মনে হয়, রিকশার চড়ে ঘুরার কথা মনে হয়। কেন হবেনা ওরাওতো রক্ত-মাংসের মানুষ।

ইশ সব কিছু যদি একটু অন্যরকম হত, তবে সেও বিদেশ থেকে ডিগ্রী নিয়ে এসে দেশ সেবায় লেগে যেত, ইশ যদি একটু অন্যরকম হত!
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুলাই, ২০১২ বিকাল ৪:৩৩
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×