চোখের পাতা আরও ভারী হয়ে আসছে। জোর করেও খোলা যাচ্ছে না। মাথার চুলে কে যেন বিলি কেটে দিচ্ছে পরম মমতায়। অভ্যস্ত না হওয়ার কারণে অস্বস্তি লাগছে। কিন্তু নিষেধ করার ক্ষমতাও ততক্ষণে লোপ পেয়েছে। আট বছরের দাম্পত্য জীবনে একদিনের জন্যও বউ মাথায় হাত দিতে পারেনি। তবে কি ঘুমানোর সুযোগ পতি সেবার সুযোগ নেয়া হলো। না!- তাতো হতে পারে না। এ বিষয়ে ১৪৪ ধারা জারি করা আছে। তবে ...!!! ইস্ এই চোখের পাতা খোল।
একেবারে স্কুল জীবনের কথা। মাথায় তেল দিলে মাথা ভালো থাকে। মা বলতেন-
: মাথা ভালো রাখতে হলে মাথায় তেল দিতে হয়।
প্রথম দিকে মাথা ভালো রাখার জন্য এমন তেল মা দিয়ে দিতো যে দেখে মনে হতো তেলের ড্রাম থেকে চুবিয়ে আনা হয়েছে। দু’দিকের চিপ দিয়ে চুয়ে চুয়ে পড়তো তেল। সে এক বিরক্তিকর ব্যাপার। তা অবশ্য অনেক পরের উপলব্ধি। তাই মাকে নিষেধ করা হয়। কিন্তু কে শোনে কার কথা। সন্তানের ভালো মাথা বানানোর চিন্তায় তার ঘুম হারাম। তাই ছেলে ঘুমিয়ে পড়লেই চলতো তৈল্য চর্চা। কত দিন ঘটেছে এই ঘটনা। মাথায় তেল দেয়ার সাথে সাথে এমন মমতায় চুলে বিলি কাটতো যে চোখের পাতা খোলার জো ছিল না। প্রতিবাদতো দুরে কথা। দু’ একদিনতো ছেলের হাতে ধরা পড়ায় বিব্রতকর অবস্থা।
: মা তুমি কেন আমার মাথায় তেল দিলে।
মা তেলের বাটি হাতে নিয়ে দ্রুত সরে পড়তেন আর বলতেন-
: তোর ভালোর জন্যইতো...তোর ভালোর জন্যই...
: আমার ভালো আমি বুঝবো। তুমি আর কখনও এটি করবে না।
: আমি তোর মা- তোর ভালো আমি ছাড়া আর কে বোঝে বাবা!
আজ মনে হয় কত সত্যি কথা মায়েরা বলেন।
আজ অনেকদিন পর.. কে কে চুলে বিলি কাটে। অল্প আবছা আবছা বোঝা যায়, খুব ছোট একটি হাত। আপন মনে বিলি কাটছে। এবার মোটামুটি স্পষ্ট। এ হাত! একটি ছোট হাত। হ্যা আর কোন দ্বিধা নেই, এই হাত অর্চির হাত। সে বাবার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর গুন গুন করে গান গাচ্ছে। গানের কথাগুলোও এখন শোনা যাচ্ছে। -“মায়ের কোলে দুলে দুলে/আয়রে ঘুম হায়/ঘুম পাড়ানি মাসি পিসি/গেলোরে কোথায়”।
ঘুম ভেঙ্গে গেলেও মুখে কোন কথা নেই। মেয়ের কণ্ঠ শুনতে শুনতেই মায়ের মুখ ভেসে উঠলো চোখের সামনে। নিজের অজান্তেই বেরিয়ে এলো-একটি শব্দ
: মা...।
অর্চি বলে উঠলো-
: জি বাবা। কি হলো বাবা।
তারপর আবার চুপচাপ।
মামবি# প্রজাপাড়া#পীরগঞ্জ-রংপুর।
১৩.০৭.১২# দুপুর-১:৪৪
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুলাই, ২০১২ সকাল ১১:৩৬