somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আত্মপোলব্ধি-অথবা অন্যকিছু-১

২০ শে জানুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৪:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পল্টন থেকে সোজা হাঁটছে মুক্তা। হাঁটছে অনেকটা উদ্দেশ্যহীনভাবেই। না কথাটা ঠিক নয় সে হাঁটছে সময় নামক এক দানবকে হত্যা করার জন্য। শাহবাগ অথবা বাংলামোটর পর্যন্ত হেঁটে এরপর গাড়িতে উঠবে এই ছিল তার প্ল্যান।

শীতকাল, রাত তখন প্রায় ৯টা বাজে, ঢাকা শহরের যানযটে গাড়ীর বিষাক্ত ধোঁয়া অথবা শীতের কুয়াশায় উন্নয়নের জোয়ারে ভেসে যাওয়া পথঘাটে নতুন লাগানো এলইডি লাইটগুলোর আলোও অনেকটাই ম্রিয়মান। ল্যাম্পপোষ্টের দিকে তাকালে প্রতিটি লাইটে কতটি করে ছোট ছোট এলইডি ল্যাম্প লাগানো আছে তা অনায়াসে গোনা যায়। প্রচন্ড ঠাণ্ডায় তার হাত প্যান্টের পকেটে পুরে সে নির্বিকারচিত্তে হেঁটে চলেছে আর রাস্তার গাড়ীর মিছিল দেখছে। না চলন্ত মিছিল নয়, স্থির, অনঢ় শান্ত মিছিল। মাঝে মাঝে তার মনে প্রশ্ন জাগে কি দরকার আমাদের এই এত্ত এত্ত গাড়ির বিষাক্ত কালো ধোঁয়া আর লাগামছাড়া ভাড়া দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়িতে স্থির বসে থেকে যাতায়াত করার। যেখানে হেঁটে গেলে সর্বোচ্চ ২০-৩০ মিনিট লাগে সেখানে গাড়িতে ১০-১৫ টাকা ভাড়া দিয়ে যেতেও লাগে ৩০-৪০ মিনিট। বোনাস হিসেবে রয়েছে মানুষের চিৎকার, ঠেলাঠেলি, ভদ্রলোকের অসহ্য হয়ে কণ্ডাক্টরকে অশ্রাব্য গালি শোনা। তাই সে মাঝে মাঝেই ব্যস্ত ঢাকা শহরের ব্যস্ত রাস্তাগুলি দিয়ে একযায়গা থেকে আরেক যায়গায় যাওয়ার সময় ১-৩ কিলোমিটার পর্যন্ত হেঁটে চলে যায়।

এভাবে সে হাঁটতে হাঁটতে সেই ফকিরাপুল থেকে এখন হাইকোর্টের সামনে চলে এসেছে। কিন্তু যে গাড়িটিতে ওঠার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে হাঁটার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সেই গাড়িটির দেখা এখন পর্যন্ত পেল না, মানে গাড়িটি হয়ত এখনও আটকে আছে পল্টনের দিকের কোন একটি সিগন্যালে। যাহোক সে হাইকোর্টের পাশের ফুটপাত দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে দেখে কিছু মানুষ ফুটপাতের ওপর ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করে কিছু কাপড় বিছিয়ে রাতে ঘুমুনোর ব্যবস্থা করছে। অবাক হয়ে সে দেখে তার মধ্যে কয়েকজন আবার প্রায় ষাটোর্ধ ব্যক্তি। তাদের মধ্যে কয়েকজন আবার মহিলা। তারা মাত্র একটি কাঁথা নিচে বিছিয়ে পা'দুটো গুটিয়ে নিয়ে আরেকটি কাঁথা/কম্বল জাতীয় কিছু একটা গায়ে দিয়ে পৌষের এই হীম হীম ঠান্ডায় রাত পাড়ি দেওয়ার আয়োজন করছে। সে হঠাৎ করেই আঁৎকে উঠল, ওহ্ খোদা, এটা কিভাবে সম্ভব। রাস্তা গাড়ি চলাচলের ফলে বাতাশের আক্রমণ, ঠাণ্ডা মাটির পরশ আর এই হীম হীম ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় কিভাবে তাদের রাত কাটবে? অবাক হয়ে সে নিজের অস্তিত্ব ভুলে যায়, ভুলে যায় সে কে কোথায় যাচ্ছিল, কেনই বা যাচ্ছিল, সে চুপচাপ একটু দুরে ঠায় দাঁড়িয়ে তাদের এই সময় নামক এক ঠাণ্ডা দৈত্তর সঙ্গে যুদ্ধে নামার প্রস্তুতির প্রতি অবাক নয়নে, আনমনে চেয়ে রইল।

এভাবে কতসময় পার হয়েছে সে বলতে পারবে না, তার হুশ ফিরল মোবাইলের চিৎকারে, পকেট থেকে একটা ভাঙ্গাচোরা মোবাইল বের করে দ্যাখে দেশের বাড়ি থেকে তার অসুস্থ বৃদ্ধা মা ফোন করেছে। তার ফোনটি রিসিভ করে তার কথার উত্তর দিতে দিতে সে আবারো চলতে শুরু করে, তার চলা শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই রাস্তায় দাঁড়ানো স্থির গাড়িগুলোও এতক্ষণ পরে মুক্তির আস্বাদ পেয়ে তীব্র হাঁকডাক ছেড়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল সামনের দিকে। সে চিৎকার করে মোবাইলে বলল মা এখন রাখেন আমি বাসায় গিয়ে আপনার সঙ্গে কথা বলব। বলে কল কেটে দিয়ে আবার হাঁটতে থাকে। একটু এগোতে দেখে লাল কম্বল মুড়ি দিয়ে এক জটা বাবা শুয়ে আছে আর তার পাশে আজানুলম্বিত পাগড়ি-জোব্বা পরিহিত এক শিষ্য তাকে ইশারা করছে আর বলছে মুশকিল্ মুশকিল। সে দুবার তাদের দু'জনের দিকে তাকিয়ে যেমন আনমনা হয়ে হাঁটছিল সেভাবেই নিজের অপস্রায়ন বজায় রাখল। পেছন থেকে সাগরেদের আরও কয়েকটি চিৎকার তার কানে গেলো রাস্তায় ছুটেচলা মৃত্যু-দৈত্তদের হুঙ্কার ভেদ করে। (চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৩:২৩
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পেচ্ছাপ করি আপনাদের মূর্খ চেতনায়

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৮

আপনারা হাদি হতে চেয়েছিলেন, অথচ হয়ে গেলেন নিরীহ হিন্দু গার্মেন্টস কর্মীর হত্যাকারী।
আপনারা আবাবিল হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়াতে চেয়েছিলেন, অথচ রাক্ষস হয়ে বিএনপি নেতার ফুটফুটে মেয়েটাকে পুড়িয়ে মারলেন!
আপনারা ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×