somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বন্ধু

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মোহতেশাম ছোট শিশু। বয়স আট কি নয়। সে তার বাবা-মায়ের সাথে ঢাকায় থাকে। এবার সে তার দাদার বাড়ীতে এসে ঈদ করবে। সামনে কোরবানীর ঈদ। তাই এ উপলক্ষে সে ঈদের দু’দিন পূর্বেই গ্রামের বাড়ীতে চলে আসল। মেঘনার তীর ঘেষে তার দাদার গ্রামের বাড়ী।
মোহতেশামের গ্রাম দেখতে খুব ভাল লাগে। মাঝে মাঝে স্কুল বন্ধ হলে যে চলে আসে দাদার কাছে। তখন আর যেতে ইচ্ছে করে না তার। শহরের মত যানজট নেই এখানে। মুক্ত আবহাওয়ায় ছুটাছুটি করতে পারে। নেই কোন বাঁধা। নদীতে সাঁতার কেটে গোসল করতে পারে। আরও কত্ত কি! তাইতো তার গ্রাম এত ভাল লাগে।
শনিবার দিন শ্রীঘর বাজার থেকে তার দাদা একটা কুরবানীর গরু কিনে আনল। দাদা যখন বাজারে যায়, তখন মোহতেশাম তার সাথে গিয়েছিল। সে গরুটি পছন্দ করেছে। কুচকুচে কালো ষাড়। নাদুস-নুদুস শরীর তার। গরু যখন বাড়ীতে আনল তখন তার দাদাকে দিয়ে একটা ছবি তুলে রাখল।
ঈদের দিন সকাল বেলা চারদিকে হৈ চৈ পড়ে গেল। ছেলে-মেয়েদের কোলাহল। কেউতো এ মূহুর্তে বিছানায় নেই। সবাই মেঠে উঠল ঈদের আনন্দ উপভোগ করার জন্য। সবার মনে আজ শুধু আনন্দ আর আনন্দ। মোহতেশাম তার দাদাকে সাথে নিয়ে মেঘনা থেকে গোসল সেরে আসল। মা সেমাই পাক করছে। বাবা-মা, দাদা সবাই এক সাথে মিলে সেমাই খেল।
মা পরিপাটি করে মোহতেশামকে কাপড় পড়িয়ে দিলেন। সুন্দর করে চিরুনী দিয়ে মাথা আচরিয়ে দিলেন। তারপর মোহতেশাম দাদুর কাছে এসে বললো, দাদা!
দাদা বললেন, কি দাদা ভাই।
চল আর দেড়ী কেন? ঈদগাহে যায়।
হ্যাঁ চল দাদা ভাই।
তাড়াতাড়ি চল্ দাদা নামাযের সময় হয়ে যাচ্ছে।
দাদা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো, হ্যাঁ তাইতো!
মোহতেশাম নামাযের বিছানা হাতে নিল। দাদা-নাতী দু’জনে ঈদগাহের দিকে রওয়ানা হলো। নানা রঙের পোশাক পড়ে কচি কচি ছেলে-মেয়েরা ঈদগাহে যাচ্ছে। মোহতেশাম পড়েছে পাঞ্জাবী ও পায়জামা। দাদা-নাতী যখন ঘর থেকে বের হচ্ছিল তখন একটি গরীব ছেলে এসে মোহ্তেশাম বললো, আমারে একটা ট্যাহা দাও।
ছেলেটির পড়নে একটা অর্ধময়লা শার্ট ও একটা ছেঁড়া হাফপ্যান্ট। মুখটা শুকনা। তাকে দেখে মোহতেশামের মায়া লেগে গেল। সে ছোট থেকেই গরীব দু:খিকে ভালোবাসে। গরীবের দু:খ দেখলে তার চোখ দিয়ে জল এসে যায়।
মোহতেশাম ছেলেটিকে লক্ষ্য করে বললো, আচ্ছা তোমার নাম কি?
ছেলেটি বললো, আমার নাম রফিক।
তোমার মা-বাবা নেই?
ছেলেটির চোখ অশ্রুসজল হয়ে গেল। কাঁদো কাঁদো স্বরে বললো, আজ দু’বছর হয় আমার বাবা নৌকা ডুইব্বা মারা গেছে।
আর তোমার মা?
মা আমারে ছেড়ে আর এক বেডার লগে বিয়া বইয়া গেছে।
এখন তোমার বাড়ীতে কে আছে?
আমার বুবু আছে। সাথে আমি থাকি। বুবু সারাদিন ভিক্ষা কইরা যা আনে তাই দিয়ে আমরা চলি।
ছেলেটি মোহতেশামের কথার জবাব দিতে দিতে চোখে জল এসে গেল।
দাদা এসব দৃশ্য দাঁড়িয়ে দেখছেন।
মোহতেশাম ছেলেটির গায়ে ময়লা জামাটার দিকে তাকিয়ে বললো, তোমার কি কোন ভাল জামা নেই?
না। ভাল জামা কত্তে আনমু। ঠিকমত তো খাইতেই পারি না।
মোহতেশামের এ দৃশ্য দেখে দাদা ভাবছে, এতোটুকু ছেলের গরীবের প্রতি কত দরদ।
মোহতেশাম তার বাবার কাছে এসে বললো, বাবা আমারতো অনেক জামা। একটা জামা ঐ গরীব ছেলেটাকে দিয়ে দেই?
ছেলের মুখে এ কথা শুনে বাবাতো রীতিমতো অবাক! তারপর বললেন, তুমি যদি দিতে চাও, তাতে আমার কোন আপত্তি নেই।
মোহতেশাম ছেলেটিকে তার একটা শার্ট দিয়ে দেয় ও দশটা টাকা দেয়। ছেলেটি টাকা ও জামা পেয়ে খুশীতে বাহ্ বাহ্। সে তার দু’হাত দিয়ে দু:খ ভরা অশ্রু মুচলো। তারপর বললো, আল্লাহ তোমাকে অনেক বড় করুক। এ বলে ছেলেটি চলে গেল। পরে দাদা-নাতী দু’জনে ঈদগাহে রওয়ানা হল।
সারি বেঁধে মানুষ ঈদগাহে যাচ্ছে। রাস্তায় যেন আজ লোক জনের ঢল নেমেছে। ধীরে ধীরে ঈদগাহ ময়দান কানায় কানায় পরিপূর্ণ হলো। দাদা-নাতী দু’জনে পাশাপাশি নামাযে দাঁড়ালো। নামায শেষে যখন ইমাম সাহেব খুৎবাহ পড়ছেন মোহতেশাম তা মনযোগ দিয়ে শুনছে। মুনাজাতের পর শুরু হলো কুলাকুলি পর্ব। সমবয়সী ছেলেরা পরপস্পরের সাথে কুলাকুলি করছে। মোহতেশামের ইচ্ছে দাদার সাথে কুলাকুলি করতে কিন্তু ছোট বলে তার দাদার বুক নাগাল পাচ্ছে না। তাই সে লাফ দিয়ে তার দাদার কোলে উঠে কুলাকুলি করলো। দাদাতো নাতীর বুদ্ধি দেখে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেন।
ঈদগাহ থেকে এসেই ইমাম সাহেব গরু জবেহ করার জন্য প্রস্তুত হলেন। মোহতেশামের সমবয়ী ছেলে-মেয়েরা গরু জবেহ দেখার জন্য ইমাম সাহেবের পিছে পিছে ছুটল। মোহতেশামও ইমাম সাহেবের পিছনে ছুটল। কিছুক্ষণের মধ্যেই আল্লাহু আকবার বলে হৈ চৈ শুরু হয়ে গেল। গরুকে যখন মাটিতে শুয়ানো হল তখন সবাই গরুর কাছাকাছি চলে গেল। যখন আল্লাহু আকবার বলে ছুরি চালানো হল; তখন লাফিয়ে দৌঁড়ে চলে আসল মোহতেশাম।
যখন মোহতেশামদের গরুটি জবেহ করার জন্য ইমাম সাহেব আসলেন তখন তার মায়া লেগে গেল গরুটির প্রতি। নিরীহ প্রাণীটি আল্লাহর রাস্তায় কুরবানী হয়ে যাবে তা ভাবতেও পারে না মোহতেশাম। গরু জবেহ হয়ে গেল। গোস্ত কাটার কাজে লেগে গেল মোহতেশাম। গোস্ত কাটা শেষে মোহতেশাম বেড়িয়ে পড়লো ঐ এতিম ছেলেটির সন্ধানে। ছেলেটিকে খুঁজে বের করলো। তাদের গোস্ত রান্না হলে তাকে গোস্ত দিয়ে ভাত খাওয়ালো। তারপর তাকে বললো, আজ থেকে তুমি আমার বন্ধু।
এরপর থেকে যখনই মোহতেশাম গ্রামের বাড়ীতে আসত তখনই ছুটে যেত ঐ এতিম ছেলেটির কাছে। হাত বাড়িয়ে দিত বন্ধুত্বের।

রচনাকাল- মার্চ-২০০০খ্রি:
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×