আমার এক আত্মীয়কে এক সময় ইংরেজি পড়াতাম। সে তখন এইচএসপি পরীক্ষার্থী। এক দিন খেয়াল করলাম, সে ফেয়ার এন্ড লাভলি ব্যবহার করে। আমি অবাক হলাম। সে এমনিতে উজ্জ্বল ফর্সা। গড়পড়তা বাঙ্গালি মেয়েদের তুলনায় তার গায়ের রং অনেক উজ্জ্বল।
আমি তখন কোন এক পত্রিকায় একটা প্রবন্ধ পড়েছিলাম রং ফর্সাকারী ক্রিমের ক্ষতি সম্পর্কে। মূলত রং ফর্সাকারী সকল ক্রিমে স্টেরয়েড জাতীয় (যদি এত দিনে আমি না ভুলে থাকি) রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয়। এই রাসায়নিকটি ত্বকে মাখলে ত্বক থেকে রক্ত সরিয়ে দেয়। মানে আমাদের ত্বকে যে রক্তবাহী শিরা উপশিরা থাকে সেগুলো থেকে রক্ত প্রবাহ কমে যায়। ফলে মনে হয় যে চামড়া ফর্সা হয়েছে। আসলে গায়ের রং পরিবর্তন করার মতো কোন রং ফর্সাকারী ক্রিম নাই। যেগুলো বাজারে আছে সেগুলো সবই ভুয়া এবং ক্ষতিকর।
আমি তাকে এই কথাগুলো বললাম। সে আমার কথা মানল না, বরং আমি না জেনে কথা বলছি বলে সে আমাকে দোষ দিল।
তারপর বছর কেটে গেল। সে ইতিমধ্যে বাংলাদেশি ফেয়ার এন্ড লাভলি ছেড়ে ভারতীয় ফেয়ার এন্ড লাভলি মাখা শুরু করেছে। তার রং ফর্সা হয় নি সামান্যও। বরং বছরখানেক পরে শুরু হল আসল সমস্যা। ব্রণ হওয়া শুরু হল। এমন ব্রণ হল যে মুখের ধরণটাই বদলে গেল। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে সে চর্ম রোগ বিশেষজ্ঞের কাছে গেল। চিকিৎসক তার জন্য ফেয়ার এন্ড লাভলি নিষিদ্ধ করে দিল। সাবান নিষিদ্ধ করে দিল। কেবল শশা সাবান তার জন্য জায়েজ।
চিকিৎসা চলল দীর্ঘদিন। কোন ফল হল না। এক সময় লোকের কথায় সে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসাও করল। কোন ফলাফল নাই। তারপর লেজার চিকিৎসাও করে দেখল। তাতেও লাভ হল না।
এর মধ্যে তার চেহারায় ওঠা ব্রণ খুটে খুটে তার চেহারায় কালো কালো দাগ পড়ে গেছে।
অনেক দিন পর তার বাসায় গেলাম। সে আমার সামনে এসে কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল, সে দিন যদি আপনার কথা শুনতাম, তবে আমার এই দশা হত না।
পরবর্তীতে অনেক চিকিৎসার পর তার ব্রণ ভালো হয়েছিল। কিন্তু তত দিনে প্রায় ৮ বছর কেটে গেছে।
বর্তমানে ফেয়ার এন্ড লাভলির দেখাদেখি অনেক অনেক রং ফর্সাকারী ক্রিম বের হয়েছে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল ছেলেদের রং ফর্সা করার ক্রিমও বের হয়েছে। এগুলো বিক্রিও হয় প্রচুর। মানুষের অবদমিত ইচ্ছাকে পুঁজি করে একশ্রেণীর ধূর্ত বেণিয়া এগুলো বাজারে ছেড়েছে। তারা জানে এগুলো রং ফর্সা করে না, তারপরও বিজ্ঞাপনে বিজ্ঞাপনে আমাদের প্রলুব্ধ করছে। এই মিথ্যাচার থেকে কি আমাদের কোন পরিত্রাণ নাই ?
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই অক্টোবর, ২০০৯ দুপুর ১:৪৭