somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"সন্ধির প্রেম"

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাত প্রায় ৩টা। কারেন্ট নেই। প্রচন্ড গরম। শরীর থেকে বৃষ্টির মতো ঘাম ঝরছে। বৃষ্টির মতে হলেও বৃষ্টি ঝড়লে যতটা আনন্দ লাগে ঘাম ঝড়লে ততটাই অসহ্য। আর এই "অসহ্য" এর মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে "তোফাজ্জেল সাহেব"। এমনিতেই প্রচন্ড গরম, টুপ টুপ করে ঘাম ঝড়ছে তার উপর তার বকবকানি।

বকবকানি টা হলো সে তার যৌবন কালের ব্যার্থ প্রেমের কাহিনী বলা শুরু করেছে। সেই যে শুরু করেছে তার আর শেষ হচ্ছে না। আজ রাতে ও শেষ হবে বলে মনে হচ্ছে না। এই গরমের ভেতর লোডিশেডিং এ তার এরকম বকবকানি শোনার কোন ইচ্ছেই আমার নেই। তবুও শুনতে হচ্ছে বাধ্য হয়ে।

- বুঝলেন ভাই মেয়েটাকে জান প্রাণ দিয়ে ভালবাসছিলাম। কিন্তু বুঝলো না। বুঝলোই না
- বুঝবে তোফাজ্জেল সাহেব বুঝবে
- ধুর মিয়া! আর কবে বুঝবে? ওই মেয়েটাকি এখনো আছে নাকি? ওই মেয়েটার তো,,
- মারা গেছে? বলেন কি!! ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি,,,,
- ধুর মিয়া মরবো কেন? বাঁইচা আছে। বিয়ে হয়ে গেছে
- ও আচ্ছা

তোফাজ্জেল সাহেব আমার ভেতর বিরক্তিরর ছাপ দেখতে পেলো। সে তার ব্যার্থ প্রেমের প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে অন্য প্রসংঙ্গে চলে গেলো।

- কি ঘাম ই না ঝড়তেছে! দেখছেন ভাই?
- জ্বি
- ঘাম যদি বিক্রি করা যেতো তাহলে কতোই না ভাল হতো। তাই না?
- জ্বি ভাই। 'ঘাম' একদিন শিল্প হবে। আর আপনি সেই শিল্প মানে আপনার ঘাম বিক্রি করে বড়লোক হবেন!

তোফাজ্জেল সাহেব আর কিছুই বললেন না। সে বুঝতে পেরেছে যে আমি এই গরমে তার প্রেম কাহিনী কিংবা অন্য কোন কথাই শুনতে আগ্রহী না। তাই সে চুপ করে গেছে। মানুষের মনের মধ্যে যত কষ্ট আছে তা অন্য একজন মানুষের কাছে শেয়ার করতে চায়। শুধু কষ্ট না। সুখ ও। কিন্তু তার জন্য ভাল একজন শ্রোতা দরকার। আমি সেই ভাল শ্রোতা নই। মানুষে একাকীত্বের সঙ্গী খোজে সেটা ও আমি নই।

আর সেই বিষয় টা তোফাজ্জেল সাহেব ভাল ভাবেই বুঝতে পেরেছে। তাই সে চুপ করে গিয়েছে। কিন্তু আমি এবার চুপ থাকলাম না। আমি তোফাজ্জেল সাহেবকে বললাম:

- তোফাজ্জেল সাহেব আপনার মোবাইলটা একটু দেয়া যাবে?
- কি করবেন ভাই?
- ফোন দিবো
- মোবাইল দিয়ে তো ফোন দেয় না। টেলিফোন দিয়ে ফোন দেয় আর মোবাইল দিয়ে কল দেয়

কথাটা বলতে বলকে তিনি মোবাইল টাটা আমার দিকে এগিয়ে দিলেন। তোফাজ্জেল সাহেবের ওই থিওরী নিয়ে না ঘাটাঘাটি করে আমি কল দিলাম। প্রথমবার রিসিভ না করলেও পরেরবার করলো। এতো রাতে প্রথম কলে ঘুম না ভাঙাটাই স্বাভাবিক।

- হ্যালো সন্ধি?
- হ্যাঁ! কে বলছেন?

সন্ধি আমাকে চিনলো না কারন নাম্বার টা আমার না। আমি লাইনটা কেটে দিয়ে মোবাইলটা তোফাজ্জেল সাহেবকে দিতে যাবো তার মধ্য ফোন আসলো।

- হ্যালো কে বলছেন?
- আমি?
- আমি কে?
- আমি
- প্রিয়!
- হ্যাঁ,
- তা এতো রাতে কি মনে করে ফোন দিয়েছিলো?
- কেন দিতে পারি না?
- অবশ্যই পারো। কিন্তু তার আগে তো তুমি আমাকে কখনো এতো রাতে ফোন দাও নি। ইভেন কোনদিন আগেও ফোন দেও নি। আজকে হঠাৎ?
- আচ্ছা সন্ধি তুমি কি ঘুমাচ্ছিলে?
- তো এতো রাতে কি করবো?
- অাচ্ছা তাহলে ঘুমিয়ে পড়ো। সকাল সকাল উঠো ভোরের সূর্য টা দেখো। সূর্যস্নান করো
- কেন?
- এমনি
- না বলো
- ঘুমিয়ে পড়ো। রাখছি
- না এখন আমার ঘুম আসছে না। তুমি আমার ঘুম ভাঙিয়ে দিয়েছো
- চোখ বন্ধ করো তাহলে ঘুম চলে আসবে
- না আসবে না। তুমি আমার ঘুম ভাঙিয়েছো। তোমাকেই এর খেসারত দিতে হবে
- খেসারত!!
- হ্যাঁ, এখন আমাকে নিয়ে ঘুরতে বের হতে হবে।
- এতো রাতে!!!
- হ্যাঁ, আমি রেডি হয়ে আসছি। তুমি আমার বাসার নিচে এসে দাড়াও। যদি না আসো তাহলে আমি নিজেই তোমার ওখানে চলে যাবো। ঠিকাছে?
- সন্ধি শোনো,,,,,,,

সন্ধি না শুনেই ফোন কেটে গেল। তারমানে সন্ধি কে নিয়ে এখন আমার রাস্তায় বের হতেই হবে। কোন উপায় নেই। ঘড়িতে কাটায় কাটায় ৩ টা। সন্ধিদের বাসায় হেঁটে যেতে লাগবে আরো ৫ মিনিট। আমি দেরী না করে কালো শার্ট পড়ে রওনা দিলাম। যেই শার্টটা সন্ধির একেবারেই অপছন্দ। তোফাজ্জেল সাহেব বিষ্মিত হয়ে বললেন:

- এতো রাতে কোথায় যাচ্ছেন?
- খেসারত দিতে
- মানে
- ঘুম ভাঙানোর খেসারত

তোফাজ্জেল সাহেব আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো। আমি ছোট্ট করে বললাম 'আসি'। আমি বের হয়ে গেলাম বাসা থেকে। হাঁটতে হাঁটতে সন্ধিদের বাসার সামনে এসে গিয়েছি। রাস্তায় কেউ নেই। শুধু মশা, জোনাকি পোকা আর সোডিয়াম বাতি ছাড়া। সন্ধি জানলা দিয়ে লক্ষ করলো আমি এসেছি কি না। আমি আবার সেটা লক্ষ করলাম।

সন্ধি নিচে নেমে এলো। কেউ দেখেছে বলে মনে হয় না। কারন কেউ দেখলে তার মুখে সুন্দর একটা হাসি থাকতো না। সন্ধি একটা শাড়ি পড়ে এসেছে। শাড়ির রংটা ঠিক ধরতে পারছি না। সুন্দর লাগছে সন্ধি কে!

- তোমাকে কেউ দেখেনি সন্ধি?
- দেখলেই বা! তোমার তাতে কি?
- কিছু না
- তুমি আবার এই শার্ট টা পড়ে আসছো?

ইচ্ছে করেই আমি সন্ধির অপছন্দের শার্টটা পড়ে এসেছি। সন্ধিকে রাগানোর জন্য। প্রিয় মানুষকে রাগানোর মাঝে ও অন্যরকম একটি ভাললাগা আছে। আমি সন্ধির কথার উত্তর না দিয়ে হাসলাম একটু!

- হাসছো কেন? তোমাকে না বলছি এই শার্ট টা পড়ে আমার সামনে আসবা না?
- এই শার্ট টা কি দোষ করলো?
- এই শার্টটা আমার ভাল লাগে না
- কেন?
- এমনি
- ওহ! আচ্ছা তোমার শাড়ির রং টা কি?
- হালকা গোলাপি
- আচ্ছা এই হালকা গোলাপির সাথে কিন্তু কালো রং টা বেশ যায়। তাই না?
- উফ
- এখন কি দাড়িয়ে থাকবে না? না কি হাঁটবে?
- হাঁটবো
- চলো
- চলো

সন্ধি হাসি মুখে হাঁটছে। দুজন দুজনার হাত ধরে হাঁটছি। সোডিয়াম বাতির আলোতে সন্ধিকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে। যেন পরী!

- আচ্ছা সন্ধি পরীরা তো রাতে পৃথিবীতে নেমে আসে। তাই না?
- কে বলছে তোমাকে এই কথা?
- শুনেছি
- না ভুল। পরী বলতে আসলে কিছু নেই। ওগুলো রূপকথা
- আছে
- তুমি দেখেছো?
- হ্যা
- কোথায়?
- আমার পাশে
- মানে?
- আমার হাত ধরে হাঁটছে

সন্ধি কিছু না বলে চোখের সামনে থেকে হাত দিয়ে চুল সড়ালো। খানিকটা লজ্জা পেয়েছে বোধ হয়। বাঙালী মেয়েদের লজ্জা বেশী। আর লজ্জা পেলে বাঙালী মেয়েদের আরো সুন্দর লাগে। লজ্জা মেয়েদের সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে দেয়।

- আচ্ছা তুমি কি লজ্জা পেলে?
- জানি না
- কেন?
- জানি না

মেয়েদের "জানি না" কথাটার মধ্যে অনেক কিছু লুকিয়ে থাকে। সেই লুকিয়ে থাকা ব্যাপার গুলো নিয়ে গবেষণা করতে নেই। সন্ধি কিছুটা দূরে হাটঁছে। আমার হাত ছেড়ে। কিছু একটা ভাবছে। গভীর রাত, চাঁদের আলো, সোডিয়াম বাতির আলো আর আমার সাথে অপ্সরী হাঁটছে।

- প্রিয়!
- হুম?
- কিছু না
- কেন?
- এমনি
- কিছু তো একটা বলতে চাচ্ছিলে
- হ্যাঁ
- বলো
- ভালবাসি
- আমিও
- তোমার হাতটা আবার ধরি?
- ধরো
- তোমার বুকে একটু মাথা রাখি?
- কেউ দেখে ফেললে?
- এতো রাতে কে দেখবে?
- যদি কেউ দেখে ফেলে? চাঁদ টা ও তো আছে
- না রাখবো
- আচ্ছা
- এদিক - ওদিক কি দেখছো? এতো রাতে কেউ আমাদের প্রেম দেখতে আসছে না।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৭
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×