somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাড়ন্ত বিষবৃক্ষ

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কথায় বলে, যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই রাত হয় ! বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের সঙ্গে সোনালীর বিয়ের কথা চলছে । আর এখানেই সোনালীর যত বিপত্তি ! যদিও সোনালী আজও তার বাবার আদর্শে অবিচল, কিন্তু বিয়ের বেলায় বাবার মতের সাথে বনিবনা না হওয়ায় ভেতরে ভেতরে সে জ্বলে পুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে । অথচ বাবার ইচ্ছার বিরুদ্ধে দ্রোহের মানষিকতা কখনও সে পোষণ করে না, যদিও সেও বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্ব্বোচ্চ ডিগ্রী ধারী, তবে বাবার মতই গুনী ও ধৈর্য্যশীলা ।

সোনালীর জন্মের কয়েকদিন পরেই তার বাবা আবুল হাসেম শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হয়ে “গোল্ড মেডেল” পেয়েছিলেন বলে তিনি তাঁর মেয়ের নাম রেখেছিলেন সোনালী । তার পর পরই আবুল হাসেম সাহেবের কাছ থেকে সরকার জনগণের জন্য আরও ভাল সেবা পাবার আশায় পদন্নতি দিয়ে তাঁকে অন্যত্র বদলী করে দিয়েছিল । সে কারণেই তাঁর সাথে শিক্ষা জগতের একটা ব্যবধান রচিত হয়ে গিয়েছিল । মাত্র দুই দশকের ব্যবধানে শিক্ষা জগতের অপ্রত্যাশিত অবক্ষয়টা তিনি মোটেই আঁচ করতে পারেননি । যদিও তাঁর বড় ছেলে আবীরের আচরণে তিনি কিছুটা হলেও বিব্রত এবং আশাহত !

আবুল হাসেম সাহেবের বড় দুই সন্তান, আবীর এবং সাব্বিরের ধারণা, তাদের বাবার সততার বিণিময়ে তাদের কাঙ্খিত প্রাপ্য থেকে তারা বঞ্চিত হয়েছে । বিশেষ করে, সোনালীর বয়স যখন মাত্র পাঁচ বছর, তখন তাদের মায়ের মৃত্যু তাদের মনে অনটনের স্মৃতিটা এখনও খচ-খচ করে ব্যথা জাগায় । তাদের ধারণা, অনেক অর্থ যোগানোর সামর্থ থাকলে তাদের মায়ের মৃত্যুকে ঠেকানো যেত, যেটা ইচ্ছা করলেই বাবা পারতেন ! এই না পারার ব্যর্থতার জন্য তাদের বাবার সততাকেই তারা আজও দায়ী করে থাকে ! কিন্তু মায়ের মৃত্যুর পর থেকে আজ অবধি সোনালী তার বাবাকে সব সময় এতটাই কাছে পেয়েছে যে, সে তার মায়ের অভাবটাকে কখনও বুঝতেই পারেনি, বরং কিছুটা বুঝতে শেখার পর থেকে তাদের জন্য তাদের বাবার ত্যাগটাকেই সে সবচেয়ে বেশী করে উপলব্ধি করেছে এবং যতই উপলব্ধি করেছে ততই বাবার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়েছে ।

একজন মহান শিক্ষকের সন্তান হিসেবে সোনালী তার বাবার জন্য দারুন ভাবেই গর্বিত, কিন্তু তার বাবার মহান পেশাকে আজ আর সোনালী আগের মত মহৎ বলে মেনে নিতে পারছে না বলে মাঝে-মধ্যেই সে খুব হতাশায় ভোগে ! যদিও তার বাবার মনে শিক্ষকতা পেশার প্রতি আজও সেই শ্রদ্ধাবোধ আগের মতই বিরাজমান । সে কারণেই তিনি তাঁর বড় ছেলেকে শিক্ষকতার প্রতি উৎসাহিত করেছিলেন এবং চেয়েছিলেন ছোট ছেলেও যেন এ পেশাতেই আত্মনিয়োগ করে । সেই সাথে মেয়ের বিয়েও তিনি একজন শিক্ষকের সাথে দেবেন বলেই মিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ।

আবীর মাত্র শিক্ষা জীবন শেষ করে বেড়িয়ে এসেছে । তখন তারই একজন সহপাঠী স্থানীয় রাজনীতির মাঠ কাঁপানো উঠতি নেতা ! তাদের বাড়ীর অনতিদুরের শহরতলীতে একটা নতুন কলেজ প্রতিষ্ঠার তোড়-জোড় চলছে । আবীর চায়, সে সেই কলেজের সাধারণ কোন শিক্ষক হিসেবে নয়, একেবারে অধ্যক্ষ হিসেবেই যোগ দিয়ে কর্ম জীবন শুরু করতে ! তার বাবা আবুল হাসেম সাহেব এলাকায় খুবই একজন সম্মানিত ব্যক্তিত্ব ! আবালবৃদ্ধবণিতার সবাই তাঁকে শ্রদ্ধা করে । আর আবীর সে কারণেই তার বাবাকে তুরুপের তাস হিসেবে ব্যবহার করে নিজের অন্যায্য খায়েশ পূরণ করতে চায় ! আসলে দুর্বল মনের মানুষের আত্মবিশ্বাস যে কম হয়, আবীরই তার নিকৃষ্ট উদাহরণই বটে !

হাসেম সাহেব বিষয়টাকে মোটেই ভাল ভাবে মেনে নিতে পারেন নি । তিনি চেয়েছিলেন, আবীর আরও কিছুটা সময় নিয়ে ভাল ভাবে প্রস্তুতি সম্পন্ন করে সরকারী কলেজের শিক্ষকতায় যোগদান করবে । তাতো হ’লোই না বরং তাঁর মত একজন বরেণ্য ব্যক্তিত্ব এমন একটা চাকরীর জন্য ছেলের পক্ষে সুপারিশ করতে গিয়ে খুবই ব্যথিত হলেন ! তারপরও তিনি সেটা করলেন ! কারণ তিনি জানতেন যে, তাঁর দুই পুত্রই তাদের মায়ের মৃত্যুর জন্য তাঁর আর্থীক সংকটকেই দায়ী করে বসে আছে । তাই তাঁর প্রতি তাদের অভিমান ও মনের ক্ষোভটাকে প্রশমিত করতেই তিনি এমন একটা অন্যায্য পদক্ষেপ গ্রহণ করলেন !

সোনালী যতটাই গর্বিত তার বাবার জন্য, ঠিক ততটাই লজ্জিত তার বড় দুই ভাইয়ের জন্যও ! তার বড় ভাই আবীরের আয়-রোজগারের চাইতে তার ব্যয়ের পাল্লাটা অনেক বেশী ভারী হওয়াটা তার কাছে মোটেই প্রত্যাশিত ছিল না । বিশেষ করে অধ্যক্ষ নামের সাথে কবি-সাহিত্যিক বিশেষণ টা যুক্ত করতে সে যে ভাবে অর্থের অপচয় করে, সেটা মোটেও দৃষ্টিগ্রাহ্য নয় ! তারপরও সোনালী তার ভাইয়ের প্রকাশিত বই ও পত্র-পত্রিকায় ছাপানো গল্প-কবিতাগুলো বেশ আগ্রহ সহকারেই পড়ে থাকে । যদিও সে কখনও পুরোপুরি তৃপ্ত নয় । তদুপরি আবীর তার অপছন্দের একজন লিখিয়েকে হেয় করার জন্য, তার চরিত্র হননের উদ্দেশ্যে এমন একটা গল্প লিখে পত্রিকায় প্রকাশ করলো, যাকে রীতিমত একটা পর্ণগ্রাফী বলাই যুক্তিযুক্ত !

আর ছোট ভাই সাব্বির ! সে তো আরও একধাপ এগিয়ে ! সে এখন মাঠের রাজনীতিতে নিজেকে মানিয়ে নেবার চেষ্টায় যেমন উৎসাহী তেমনি মনোযোগী ! সে মনে মনে প্রতিজ্ঞাই করেছে যেন যে, কখনও সে পরাজিতদের সঙ্গে নয় বরং বিজয়ীদের সাথে থেকে সবার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অঢেল সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলবে ! নেতৃত্ব পাওয়া না পাওয়ার ব্যাপারে তার কোন মাথা ব্যথা না থাকলেও সম্পদ অর্জনের দৌড়ে সে কখনও পেছনে পড়তে রাজী নয় ! যা দেখে তাদের বাবা আবুল হাসেম সাহেব এখন শুধু বেদনাক্রান্তই নয়, ধরণীর প্রতি বীতশ্রদ্ধও হয়ে উঠেছেন ! সে কারণেই তিনি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, আদরের মেয়েকে বিয়ে দিয়ে জাগতিক সংসার থেকে পালিয়ে বাঁচতে চান !
বর পক্ষ্য অনেকটা সময় হয় সোনালীকে দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষমান । সোনালীর মনে এখনও সংশয় ! পাত্র ড: ইরফান খন্দকার তারই বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নের শিক্ষক ইরফান খন্দকার নয় তো ! তখনই শুনেছিল, তিনি নাকি পি এইচ ডি করার জন্য দেশের বাইরে যাবেন । তিনিই ফিরে এসে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন নাই তো ! নিজেকেই সে প্রশ্ন করে আবার স্বাভাবিক হবার আপ্রান চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে । আবার ভাবছে, যদি তিনিই হয়ে থাকেন তাহলে কিভাবে বাবাকে বোঝাবে, ভেবে পাচ্ছে না । এমনই এলো মেলো ভাবনার মাঝে পাত্র পক্ষ্যের সামনে এসে পাত্রের দিকে তাকাতেই সোনালীর সব কিছু যেন এলো মেলো হয়ে গেল ! মাথাটা একটা চক্কর দিয়ে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলবার উপক্রম ! কোন রকমে নিজেকে সামলে নিয়ে সোফায় বসবার অনুমতি প্রাপ্তির অপেক্ষায় ক্ষণ গননায় ব্যস্ত । আর করুণাময়ের কৃপায় যে কোন ভাবেই হোক, এ যাত্রায় বেচেঁ যাবার জন্য তাঁরই কাছে সাহায্য কামনা করতে করতে প্রায় টলতে টলতে সোফায় বসে পড়ল ।

বসা মাত্রই তার স্মৃতিপটে ভেসে উঠল তারই শিক্ষক ইরফান খন্দকারের সেই বিব্রত চেহারাটা । সোনালী তখন রসায়নের শেষ বর্ষের ছাত্রী আর ইরফান খন্দকার তাদেরই দারুন হ্যান্ডসাম শিক্ষক । চুড়ান্ত পরীক্ষার আর বেশী বাকী নেই । সোনালী কে একদিন ক্লাশ শেষে ইরফান খন্দকার ডেকে বললেন, তোমাকে নিয়ে আমরা সবাই খুব আশাবাদী । তুমি এক সময় আমার রুমে এসো, তোমাকে কিছু টিপস দেয়া উচিৎ বলে মনে করছি । অবশ্য সোনালী আসলেই সবার মনেই আশা জাগানিয়া ধরণেরই ছাত্রীও বটে । কথা মত সোনালী একদিন ডরমেটরীতে ইরফান খন্দকারের রুমের কাছাকাছি আসতেই বাসী ফুলের মত কুঁকড়ে যাওয়া তারই সহপাঠী অনুকে অবিন্যাস্ত ভাবে ইরফান খন্দকারের রুম থেকে বেড়িয়ে যেতে দেখে তার ভ্রু টা কিছুটা হলেও কুঁচকে গিয়েছিল । আবার কী মনে করে শেষ পর্যন্ত সে তার শিক্ষকের দরজা পর্যন্ত পৌঁছে গেল ।

নক করতেই ইরফান খন্দকার দরজা খুলেই সামনে সোনালীকে দেখে হতভম্ভ হয়ে গিয়ে কি করবে ভেবে না পেয়ে শুধু তাকে বসতে বলে ত্রস্ত পায়ে ওয়াশ রুমের আড়ালে গিয়ে নিজেকে আড়াল করবার ব্যর্থ চেষ্টা করল মাত্র । কেননা বসতে বসতে সোনালী বিছানায় এমন কিছু দেখে ফেলে, যা দেখার পর সোনালীর পক্ষ্যে সেখানে আর একটি মুহুর্তও অপেক্ষা করা সমীচীন ছিল না । ক্ষোভে-দুঃখে-ঘৃণায় তড়িৎ গতিতে রুম থেকে বেড়িয়ে সে রাস্তায় নেমে এলো !

এই সেই ইরফান খন্দকার যিনি ডক্টরেট ডিগ্রী অর্জন করে আজ তারই সাথে বিয়ের সানাই বাজাতে এসেছেন ! একেই বলে ভাগ্যের নির্মম পরিহাস ! মানুষ কতটা বে-শরম আর নির্লজ্জ হলে এমনি করে তার কদর্য চেহারাটা মানুষের সমাজে তুলে ধরতে পারে ! সোনালীর বাবাও শিক্ষক ছিলেন, যিনি তাঁর ছাত্র-ছাত্রীকে সন্তান ভেবেই তাদের সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্ট করে শেষ্ঠত্ব অর্জন করেছিলেন । আর এই ইরফান খন্দকারও শিক্ষক, যিনি স্বয়ং বিষবৃক্ষে পরিণত হয়ে সমাজকে ধ্বংশ করার দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নিয়েছেন !
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:২৪
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

সম্পর্ক

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২


আমারা সম্পর্কে বাঁচি সম্পর্কে জড়িয়ে জীবন কে সুখ বা দুঃখে বিলীন করি । সম্পর্ক আছে বলে জীবনে এত গল্প সৃষ্টি হয় । কিন্তু
কিছু সম্পর্কে আপনি থাকতে চাইলেও থাকতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×