জন্ম: ১২ জানুয়ারি, ১৮৬৩ – ৪ জুলাই মৃত্যৃ: ১৯০২
পূর্বাশ্রমের নাম নরেন্দ্রনাথ দত্ত। তিনি ছিলেন ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রসিদ্ধ হিন্দু ধর্মগুরু রামকৃষ্ণ পরমহংসের প্রধান শিষ্য এবং রামকৃষ্ণ মিশনের প্রতিষ্ঠাতা। স্বামী বিবেকানন্দ ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বেদান্ত ও যোগশাস্ত্রের প্রচার ও প্রসারে মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে হিন্দুধর্মকে বিশ্বজনীন ধর্মের স্তরে উন্নীত করা তথা সর্বধর্মসমন্বয় চেতনার বিস্তারে তাঁর ভূমিকা অনস্বীকার্য। আধুনিক ভারতে হিন্দু পুনর্জাগরণের প্রধান চালিকাশক্তি ছিলেন বিবেকানন্দ। তাঁর সর্বাধিক খ্যাতি ১৮৯৩ সালে বিশ্বধর্ম মহাসভায় "আমেরিকান ভ্রাতা ও ভগিনী"দের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত বিখ্যাত বক্তৃতাটির মাধ্যমে পাশ্চাত্য সমাজে হিন্দুধর্মের পরিচিতি প্রদানে ব্যাপক ভূমিকা রাখে।
১৮৬৩ সালে কলকাতার এক সম্ভ্রান্ত কায়স্থ পরিবারে স্বামী বিবেকানন্দের জন্ম। তাঁর চিন্তা-চেতনার অন্যতম অনুপ্রেরণা ছিলেন তাঁর যুক্তিবাদী পিতা ও ধর্মপ্রাণা জননী। ছেলেবেলা থেকেই তাঁর মধ্যে আধ্যাত্মপিপাসা ও গভীর ঈশ্বরানুরাগ লক্ষিত হত। ঈশ্বরকে প্রত্যক্ষ করেছেন এমন এক ব্যক্তির সন্ধানে বেরিয়ে তিনি রামকৃষ্ণ পরমহংসের সান্নিধ্যে আসেন এবং পরে তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। গুরু শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁকে অদ্বৈত বেদান্তের শিক্ষা দেন। তাঁর কাছ থেকেই বিবেকানন্দ শেখেন যে সব ধর্মই সত্য এবং মানুষের সেবাই সর্বোৎকৃষ্ট ঈশ্বরোপাসনা। গুরুর মৃত্যুর পর সন্ন্যাস অবলম্বন করে তিনি সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশ পদব্রজে পর্যটন করেন। পরবর্তীকালে শিকাগো যাত্রা করে ১৮৯৩ সালের বিশ্বধর্ম মহাসভায় হিন্দুধর্মের প্রতিনিধিত্ব করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ফোরাম, বিশ্ববিদ্যালয় ও সংঘ তাঁর বাগ্মীতায় মুগ্ধ হয়ে বক্তৃতাদানের আমন্ত্রণ জানান। একাধিক সাধারণ ও ব্যক্তিগত সভায় ভাষণ দিয়ে তিনি আমেরিকা, ইংল্যান্ড ও আরও কয়েকটি দেশে বেদান্ত, যোগশাস্ত্র ও হিন্দুধর্মকে সুপরিচিত করে তোলেন। আমেরিকা ও ইংল্যান্ডে তিনি স্থাপন করেন বেদান্ত সোসাইটি। ভারতে প্রত্যাবর্তন করে ১৮৯৩ সালে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন নামে একটি মানবকল্যাণমূলক আধ্যাত্মিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। স্বামী বিবেকানন্দ ভারতে অন্যতম জাতি-স্রষ্টারূপে পরিগণিত হন। তাঁর শিক্ষা মহাত্মা গান্ধী, জওহরলাল নেহেরু, সুভাষচন্দ্র বসু, অরবিন্দ ঘোষ, সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন প্রমুখ একাধিক জাতীয় নেতা ও দার্শনিককে প্রভাবিত করেছিল।
তার কিছু বাণী ....
প্রত্যেক আত্মাই সম্ভাব্যরুপে ঐশ্বরিক/দেবসুলভ।
লক্ষ্য হচ্ছে বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণের দ্বারা এ দেবত্বকে সুষ্পষ্টভাবে দেখানো।
কর্ম, বা পূজা, বা মন নিয়ন্ত্রণ, বা দর্শন - একটির দ্বারা, বা অধিকের দ্বারা, বা এ সকলগুলির দ্বারা এটি কর - এবং মুক্ত হ্ও।
এটি হচ্ছে ধর্মের সমগ্রতা। মতবাদ, বা গোঁড়া মতবাদ, বা ধর্মীয় আচার, বা গ্রন্থ, বা মন্দির, বা মূর্তি হচ্ছে গৌণ খুঁটিনাটি বিষয় ছাড়া কিছুই নয়।
যতক্ষণ পর্যন্ত আমার দেশের একটি কুকুরও ক্ষুধার্ত, আমার সমগ্র ধর্মকে একে খাওয়াতে হবে এবং এর সেবা করতে হবে, তা না করে অন্য যাই করা হোক না কেন তার সবই অধার্মিক।
জেগে ওঠো, সচেতন হও এবং লক্ষ্যে না পৌঁছা পর্যন্ত থেমো না।
শিক্ষা হচ্ছে মানুষের মধ্যে ইতোমধ্যে থাকা উৎকর্ষের প্রকাশ।
ধর্ম হচ্ছে মানুষের মধ্যে ইতোমধ্যে থাকা দেবত্বের প্রকাশ।
মানুষের সেবা করা হচ্ছে ঈশ্বরের সেবা করা।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



