somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উপচে পড়া সামাজিক দুরত্ব-পর্ব-১

১৮ ই মে, ২০২০ ভোর ৪:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বাংলাদেশে প্রথম রোগি ধরা পরার পর থেকেই আতঙ্ক কাজ করা শুরু। ক্লাস নেই মাস্ক পরে, সেনিটাইজার ব্যবহার করি এক ঘন্টা পর পর । এর মধ্যে বাজারে মাস্কের কৃত্তিম সংকট তৈরি হল। ৫ টাকার সার্জিকাল মাস্ক ফেব্রুয়ারী থেকেই ২০ টাকা করে কিনছিলাম। কিন্তু যেই না করোনা রোগী সনাক্ত হল ঠাস করে মাস্কের মূল্য বেড়ে হয়ে গেল ১০০ এবং এন-৯৫ নামের ভুয়া মাস্ক ২০০ টাকা। তবুও মানুষ বাঁচতে চায়, যে যার সাধ্যমতে কিনে ফেলল মাস্ক, একেকজনের মুখের দিকে তাকানো যেত না ,সবাই যেন হন্যে হয়ে ঘুরছে একটা মাস্ক বা স্যানিটাইজার এর জন্য কিন্তু অসাধু ব্যবসায়ীরা সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে ফায়দা লুটছে। বাজারে তদারকি করেও খ্যান্ত নেই, জরিমানা করে যাওয়ার পরদিন আবার শুরু একই ধান্দা।
১৬ মার্চ এসে সাধারণ মানুষের দাবির মুখে সরকার স্কুল কলেজ বন্ধ ঘোষণা করল ২৭ মার্চ পর্যন্ত। আরো আতঙ্ক যেন বেড়ে গেলো । পাশাপাশি বলব সতর্ক হতে সরকার যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। জনগণ তো যে যার মত বাজার করে স্টক করা শুরু করলো, সরকারকে এবার জনগণ কে ঠিক করতে বিবৃতি দিতে হল “বাজারে পর্যাপ্ত পণ্য আছে আপনারা বেহুদা পণ্য কিনে কৃত্তিম সংকট তৈরি করবেন না।“ আর এই সুযোগটা কাজে লাগালো ব্যবসায়ীরা।
“২৩ মার্চে ঘোষণাঃ করোনা ভাইরাসের কারণে ২৬ মার্চ থেকে আগামী ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি ছুটি থাকবে। এর মধ্য ২৯ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী ১০ দফার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।১০ সিদ্ধান্তের মধ্য রয়েছে গণপরিবহন চলাচল সীমিত রাখা, সব রকম সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় জনসমাগমে নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।“
এই নিউজের পর থেকে বাজারে হুমড়ি খেয়ে পড়ল মানুষ, সরকারী ছুটি পেয়ে যে যার মত বাড়ি ফিরতে আরম্ভ করলো। অথচ হুকুম ছিল যে-যেখানে আছে সেখানেই অবস্থান করা । উপচে পড়া ভিড় বাস-ট্রেন ষ্টেশনে। টিকেট কাটার লম্বা লাইন দেখে ২৪ মার্চ-আবার হুকুম জারি হল “আজ এই মুহুর্ত থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ”। আর বাস চলাচল বন্ধ ২৬ তারিখ থেকে।
৪১ লাখ গার্মেন্টস শ্রমিক বিপাকে পড়ল। এই ৪১ লক্ষ শ্রমিকের ৭০% ব্যাচেলর ভাড়া থাকে। নিজেরা রান্না পারে না আবার বুয়াও আসতে পারবে না। তাই না খেয়ে মরতে না চেয়ে ছুটলো বাড়ির পানে। কেউকেউ ২৪ তারিখ ছুটি পেয়েছে, আবার কেউ বা ছুটি পাবে ২৬ তারিখ। বেতন কতজন শ্রমিক পেল কি, পেল না তাঁর খবর কে রাখে। এ যাত্রায় আরো যুক্ত হল বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের কিছু অংশ, এরাও ব্যাচেলর মেস এ থাকে তাই যেতে হবেই বাসায়। বাদ রইলো না বিশ্ববিদ্যালয়য়ের ছাত্রছাত্রীরাও । হল বন্ধ করে দিয়েছে ২৬ তারিখ থেকে । তাই ছুটলো সবাই গ্রামের বাড়ি বাধ্য হয়েই ।
নাফিম গাজিপুরের এক গার্মেন্টসে কাজ করে সুপারভাইজার হিসেবে। তাঁর ছুটি ২৬ তারিখ সন্ধ্যায়। মেসে সে একমাত্র প্রাণী যে গতদুদিন আলু সেদ্দ ভাত খেয়েছে। যে জীবনে রান্নার হাড়ি ধরেনি বাড়িতে, সে দুদিন রান্না করে বুঝে গেছে এভাবে তার বাঁচা সম্ভব না। তাই অপেক্ষা করছে ছুটির মুহুর্তের।
সন্ধ্যায় অফিস করেই ছুটছে গাড়ির খোঁজে । সে বিয়ে করেছে ফেব্রুয়ারী মাসের ২২ তারিখে, নব্যবিবাহিত একজন টগবগে তরুণ। সে ট্রেন ছাড়া জার্নি করতে পারে না কিন্তু এই পরিস্থিতিতে বাসেই যেতে হবে। বাস স্টেশনে গিয়ে দেখে কোন বাস খালি নেই, যাওয়া যেন অসম্ভব।
আমাকে সে মুহুর্তে মুহুর্তে সকল আপডেট দিচ্ছে কারণ আমি একমাত্র তার পরিচিত যে কিনা বুদ্ধি দিয়ে সহযোগিতা করি। তবে রাজিবপুরের কোন বাস নেই ,শেরপুরের একটা বাস আছে তাউ দিগুন ভাড়া দিতে হবে। বললাম চলে যাও, শেরপুর থেকে কোন একটা ব্যবস্থা হবে। আমার এদিকে ঘুম নেই, এই ছেলের রেকর্ড খুব একটা ভাল না। একবার বাসে করে আসছিলাম ঢাকায় । আমাকে সহযাত্রী পেয়ে তো মহাখুশি । খুশীতে ঠিক করলো বাসে আমার সাথে আসবে। বাসে উঠে মাত্র ৩০ মিনিট ছিল, বমি করে বেহুঁশ অবস্থা, সে আর আসবেই না ঢাকা, চাকরী থাকুক আর না থাকুক। পরের দিন ট্রেনে আসবে। সত্যি সত্যি সে বাস থেকে নেমে গিয়েছিল এবং আমাকেও নামতে হয়েছিল, অবস্থা যেহেতু খুবই নাজুক ছিল ছেলেটার । তাকে বাসায় পৌছে দিয়ে আমি পরের বাস ধরে আসছিলাম। এবং এর পর কোনদিন বাসে উঠেনি।
সেদিনের পর আজ আবার বাস জার্নি তাই আমি অতি চিন্তায় আছি কখন সে শেরপুর পৌছবে। এক ঘন্টা পর কল দিলাম দেখি বমি করে একেবারে অসুস্থ আমি বললাম কিছু একটা টক জাতীয় খাবার মুখে দিতে। এর পর ঘুমিয়ে যেতে বলে রেখেদিলাম।
রাত এগারটা নাগাদ সে শেরপুর পৌছার কথা কিন্তু আমি ভয়ে কল দিচ্ছি না। সারে এগারটায় কল করে বলল শেরপুর পৌছে গেছে। শুনে একটু হাফ ছেঁড়ে বাঁচলাম। কিন্তু তার কণ্ঠ শুনেই বুঝে গেছি কোনরকমে তার জীবন টা আছে। বলল ভাই, একটা মসজিদে শুয়ে আছি একটু রেস্ট না নিলে মরে যাব। বললাম মসজিদে ঢুকতে দিল ? নাফিম বললঃ নতুন নির্মান হচ্ছে । শুনেই ভয়ে গা ছমছম করে উঠল, যে হারে ছিনতাই বেড়েছে এ আবার ছিনতাইয়ের পালায় পরে কিনা। বললাম বেড়িয়ে সিএনজি করে যেন চলে যায় কিন্তু তার এক কথা একঘণ্টা ঘুমাই ভাই প্লিজ। তার আকুতিভরা আবদারে বুজলাম সত্যি অনেক ভেঙ্গে পড়েছে।
এক ঘন্টা পর কল দিলাম দেখি সে শুয়েই আছে। বলল আর আধা ঘন্টা ভাই । আমি আর পারছি না উঠতে, শরীর চলছে না। শুনে শুধু বললাম ঠিক আছে বলেই রেখে দিলাম । ঠিক আধা ঘন্টা পর কল করে দেখি ফোন বন্ধ, আমি যেন এক অন্ধকারে পরে গেলাম। ছেলেটার কিছু হল না তো?
সারারাত আর ঘুমুতে পারলাম না। কিছুক্ষণ পর পর কল করি। আর মন কে বুঝ দেই যে ঈচ্ছা করে মোবাইল বন্ধ করে ঘুমুচ্ছে ছেলেটা। মন থেকে ঝেটিয়ে বিদায় করি খারাপ চিন্তাগুলো। ভোর চারটা নাগাদ বাড়ি পৌছবে যদি ঠিক টাইমে গাড়ি পায়। কিন্তু না পাচটা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও কল এল না। আমি তার বাড়িতে কল করে বললে কান্না কাটি করবে তাই আর না বলেই অপেক্ষা করছি সে নিজে কল করুক। বসে বসে দোয়া করছি আর মোবাইলে কল করতেছি এই বুঝি মোবাইলটা অন করে কল করে বলবে ভাই আমি ঠিক আছি ।
সারে পাচটায় একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে কল এলো ভয়ে গা কেমন করছে। কলটা কাপা কাপা হাতে ধরে ভেজা কণ্ঠে বললাম হ্যালোঃ ওপাশ থেকে অপরিচিত কণ্ঠে বলল বাবা নাফিম বাসায় পৌছেছে। আমি শান্তিতে বললাম আলহামদুলিল্লাহ্‌। আপনি ওর আম্মা বলছেন?
জ্বি বাবা, ওর শরীর ঠিক আছে চিন্তা করো না। ঘুমাও। আর ওর মোবাইলের চার্জ শেষ তাই বন্ধ হয়ে গেছে।

আচ্ছা, ওর আম্মা কি করে বুঝলো আমি সারা রাত ঘুমাতে পারিনি এই ছেলেটার জন্য? মা কি সব বুঝে যায়? আশ্চর্য সব মায়েরা এমন কেন? সন্তানদের এমনকি সন্তানের বন্ধুদের ও তাঁরা বুঝে ফেলে। আমি মোবাইল টা রেখে নামাজ পরে ঘুমালাম।
“করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার এক ব্যক্তির লাশ দাফনে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। জ্বর ও সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত ওই ব্যক্তিকে বাঁচানোর জন্য তাঁর স্ত্রী রাতভর আকুতি জানালেও কেউ এগিয়ে আসেনি।“
এসব খবর পড়ি আর জনগণের আতঙ্কিত ছায়ামুর্তি ভেছে উঠে। কে মরতে চায় এ ভুবনে? কিন্তু সঠিক প্রটেকশন নিয়ে এগিয়ে এলে হয়তো বেচে যেত এই বাবা যার একটা ফুটফুটে বাচ্চা আছে। ভয় ভয়ে রুমেই আবদ্ধ আমি। সঠিক লকডাউন মেনে যাইনি বাড়ি। ব্যাচেলর হয়েই মেসে বাস করছি একা রান্না করি খাই আর ছোটখাট একটা ক্লাস নেই অনলাইনে।

আমরা কেমন মানুষ মাঝে মাঝে ভেবে পাইনা । ভাল নাকি জঘন্য । করোনা রোগি আছে কিনা জানতে চেয়ে বাসায় ঢুকে তরুণীকে ধর্ষণ। মাদারীপুরের শিবচরে কালোবাজারে বিক্রির উদ্দেশ্যে মজুত করে রাখা সরকারি ৬৮ বস্তা চাল জব্দ করেছে পুলিশ। এই চাল মজুত করার অভিযোগে যুবলীগের এক নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আবার ভাল খবর ও আছে। রাজবাড়ীতে পুলিশ বানাচ্ছে ৫০ হাজার স্যানিটাইজার। ফোন করতেই পুলিশ রোগীকে হাসপাতালে পৌঁছে দিল।
যাঁরা লকডাউন মানছেন না, তাঁরা নিজেদের জীবন নিয়ে খেলছেন। লকডাউন মেনেই চলছে সারা দেশ এটা আশা করে যখন সারাক্ষণ রুমেই আবদ্ধ আর অনলাইনে অর্ডার করে সরকারী নির্দেশনা পালন করছি। তখন কতিপয় স্বার্থপরের দল তাদের স্বার্থের জন্য ত্রাণ চুরি করে নিজের আখের গুছাচ্ছে, তেল চুরি করে খাটের তলায় রেখে আমাদের লজ্জায় ফেলেছে।
আবার করোনা সংক্রমণের ঝুঁকির মধ্যেই বন্ধ থাকা পোশাক কারখানা খুলে দেওয়ার দাবি করেছে বাংলাদেশ গার্মেন্ট বায়িং হাউস অ্যাসোসিয়েশন (বিজিবিএ)। তারা বলছে, প্রতিযোগী দেশগুলো ক্রমশই ব্যবসা খুলে দিচ্ছে। তা ছাড়া বিশ্বব্যাপী কিছু পোশাকের চাহিদা বাড়ছে। কারখানা চালু করা না হলে এই ব্যবসা অন্যদেশে চলে যাবে। পোশাক কারখানার খোলার দাবি জানিয়ে আজ মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখ্যসচিব বরাবর চিঠি দেন বিজিবিএর সভাপতি কাজী ইফতেখার হোসাইন ।
গত ১ এপ্রিল দেশের বাণিজ্য পরিস্থিতি নিয়ে অনুষ্ঠিত সভা শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, পোশাক কারখানা চলতে বাধা নেই। তবে স্বাস্থ্য বিধি মানতে হবে। সভায় ৫ এপ্রিল কারখানা খোলার বিষয়েও গুরুত্ব দেওয়া হয়। সেদিনই কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর (ডিআইএফই) এক বিজ্ঞপ্তিতে বলে, যেসব কারখানায় ক্রয়াদেশ আছে এবং করোনা প্রতিরোধে জরুরি পণ্য-পারসোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই), মাস্ক, হ্যান্ডওয়াশ বা স্যানিটাইজার, ওষুধ ইত্যাদি উৎপাদন কার্যক্রম চলছে সেসব কারখানার বন্ধের বিষয়ে সরকার নির্দেশনা দেয়নি। পরদিন ২ এপ্রিল বিকেএমইএ আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়, ৪ এপ্রিলের পর সদস্য পোশাক কারখানা বন্ধ রাখার বিধি-নিষেধ থাকবে না। তবে কারখানা খোলার বিষয়ে মালিকদের ব্যক্তিগতভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। অবশ্য বিজিএমইএ নতুন করে কিছু বলেনি।
কাল রোববার গার্মেন্টস কারখানা খুলছে। তাই ঢাকায় ফিরছে দলে দলে মানুষ। আর এ খবর পেয়ে গাড়ি না থাক সত্বেও মালিক পক্ষ কল করে শ্রমিকদের কাজে জয়েন করতে বলে, না হলে চাকরী থাকবে না। শ্রমিকরা মানুষ না এরা টাকার কল এদের কিছু হলে কার কি আসে যায়। পায়ে হেটে- ভ্যানে চরে কিংবা নৌকায় পার হয়ে কোন রকমে ঢাকা এসে শুনে গার্মেন্টস খুলতে দেবে না সরকার। আবার ফিরো বাড়ী। এ যেন রঙ্গ মঞ্চ হয়ে গেছে যে যেমনে পারছে গার্মেন্টস শ্রমিকদের গাড় মারছে। সহজ সরল মানুষগুলোর চোখেমুখে ডর-ভয় নাই।
অনলাইনে হাজারো মানুষের ফিরে আসার খবর পড়ে, টিভিতে ছবি দেখে অবাক লাগলো। বুঝে উঠতি পারছি না কেন পোশাক কারখানা বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে না। পোশাক কারখানা খোলা রেখে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা হয় কিভাবে? আমাদের দেশে হাজার-হাজার মানুষ করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়নি, তার মানে এই নয় যে শিগগরিই হবে না। করোনাভাইরাস সামাজিক পর্যায়ে সংক্রমণ ঠেকাতে হলে আমাদের সব ধরণের কারখানা বন্ধ রাখতেই হবে। শুধু সরকারি বেসরকারি অফিস বন্ধ রেখে করোনার প্রাদুর্ভাব ঠেকানো যাবে না।
“পোশাকশ্রমিক দিদার প্রথম আলোকে বলেন, কাল গার্মেন্টস খুলবে, তাই ফিরছেন। তবে এই কর্মী বলেন, এ পারে এসে শুনলাম কারখানার বন্ধ বাড়াবে। এখন ঢাকা যাব, নাকি ফিরে যাব, বুঝতে পারছি না।
মাওয়া ঘাটে ফেরিতে পার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। নেই সামাজিক দূরত্ব। ছবি: দীপু মালাকার”

করোনা সংক্রমণের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে ২৬ এপ্রিল থেকে ধাপে ধাপে কারখানা খুলে দেওয়া হতে পারে। শেষপর্যন্ত সেটি হলে ২ মে থেকে সব কারখানা খুলবে। তাতে পোশাকশিল্প মালিকদের সহায়তা করবে সরকার।
নাফিমকেও কল করেছে অফিস থেকে । ছেলেটা নতুন বউ রেখে শুধু চাকরী বাঁচাতে মৃত্যুকে থোরাই-কেয়ার করে ট্রাকে -পায়ে হেটে পৌছেছে মৃত্যুপুরীতে। আমি খালাম্মাকে কল করেছিলাম সেই সূত্রে জানলাম। এর পর কল করলাম গার্মেন্টস এর অবস্থা জানার জন্য। শুনে আমি রিতীমত হতভম্ব হয়ে গেলাম।
এক সাথে চার-হারজার কর্মী প্রবেশ করে এবং ছুটির সময় রাস্তায় বের হয়। গা ঘেঁষাঘেঁষি অবস্থা। কারো মুখে মাস্ক আছে আবার কারো মুখে নেই। অফিসের গেট এ শরীরের তাপমাত্রা মাপার কথা কিন্তু এর কোন ব্যবস্থা নেই। নেই কোন ডিসইনফেক্ট করার ব্যবস্থাও, নামে মাত্র স্যানিটাইজার হাতে দেয়া হচ্ছিল তাও দু-তিনদিন পর থেকে ওসব আনুষ্ঠানিকতাও উঠে গেছে। ভেতোরে একটা ফ্লোরে ১০০ থেকে ১৫০ মানুষের কাজ তিনফুট তো দুরের কথা আগে যেমন মেশিন বসানো ছিল সেরকমই আছে। কেউ একজন আক্রান্ত হলে এক সাথে ওই ফ্লোর আক্রান্ত হবে।

ওরে সাবধানে থাকতে বলে নারানগঞ্জের এক গার্মেন্টসে কল করলে একই অবস্থার বর্ণনা শুনলাম তবে ওরা তাপমাত্রা মেপে অফিসে প্রবেশ করাচ্ছে । বেশ কিছু গার্মেন্টস এ খবর নিয়ে জানতে চেষ্টা করলাম কিন্তু অনেক প্রতিষ্ঠান তথ্য দিতে চায় না। শ্রমিকরা অবশ্য বাধ্য হয়েই কাজ করছে বলতেছে।

৭ মে গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির গবেষণা
৯৬ পোশাকশ্রমিক করোনায় আক্রান্ত


রপ্তানিমুখী পোশাকশিল্পের ৯৬ জন শ্রমিক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এ ছাড়া একজন কর্মকর্তাও ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন। করোনায় আক্রান্তদের ৮০ শতাংশ শ্রমিকই ঢাকা বা তার আশপাশের শিল্প এলাকায় কর্মরত ছিলেন।

আক্রান্ত পোশাকশ্রমিকদের মধ্যে ৫৩ শতাংশ পুরুষ ও ৪৭ শতাংশ নারী। তা ছাড়া আক্রান্তদের ৫০ শতাংশের বয়স ২৫-৩৫ বছর। ৪০ শতাংশের বয়স ১৮ থেকে ২৫ বছর। আর ১০ শতাংশের বয়স ৩৫ বছরের ওপরে। গত ২৬ এপ্রিল পোশাক কারখানা খুলে দেওয়ার পর ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন ৫২ শতাংশ শ্রমিক। তার মানে, কারখানা চালুর পর তুলনামূলক কম দিনে বেশিসংখ্যক পোশাকশ্রমিক আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে।
করোনাভাইরাস। ছবি: রয়টার্সরপ্তানিমুখী পোশাকশিল্পের ৯৬ জন শ্রমিক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এ ছাড়া একজন কর্মকর্তাও ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন। করোনায় আক্রান্তদের ৮০ শতাংশ শ্রমিকই ঢাকা বা তার আশপাশের শিল্প এলাকায় কর্মরত ছিলেন।

আক্রান্ত পোশাকশ্রমিকদের মধ্যে ৫৩ শতাংশ পুরুষ ও ৪৭ শতাংশ নারী। তা ছাড়া আক্রান্তদের ৫০ শতাংশের বয়স ২৫-৩৫ বছর। ৪০ শতাংশের বয়স ১৮ থেকে ২৫ বছর। আর ১০ শতাংশের বয়স ৩৫ বছরের ওপরে। গত ২৬ এপ্রিল পোশাক কারখানা খুলে দেওয়ার পর ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন ৫২ শতাংশ শ্রমিক। তার মানে, কারখানা চালুর পর তুলনামূলক কম দিনে বেশিসংখ্যক পোশাকশ্রমিক আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে।
খবরটা পরেই প্রথম যে কল দিলাম নাফিম কে। বলল সে সুস্থ আছে কিন্তু তার প্রতিষ্ঠানে চারজনের পজিটিভ আসছে। তার বিপরীত বিল্ডীং থেকে। আশ্বস্ত করে কল রেখে আবার লেখার মধ্যে দুবে গেছি।

১১ মে রাতে কল করে বলল জ্বর আসেছে শুনেই বেশ আতঙ্কিত হলাম কিন্তু তাকে সাহস দিলাম কিছু হয়নি । বয়স কতই হবে ছেলেটার ২৭ কিংবা ২৮ । লেখাপড়া এইচএসসি পাস, ডিগ্রি তে ভর্তি হয়েছিল কিন্তু পারিবারিক অস্বচ্ছলতায় গার্মেন্টসে পাড়ি দিতে হয়েছে। এই ছেলে পড়াশোনায় ভাল ছিল পরিবেশ আর সাপর্ট পেলে বড় অফিসার্স হবার যোগ্যতা রাখে। এমন হাজারে হাজার গার্মেন্টস শ্রমিক আছে যাদের যোগ্যতা-দক্ষতা অফিসার্স লেভেলের কিন্তু পরিস্থিতির স্বিকার হয়ে এরা শ্রমিক। সকল শ্রমিকের একটা করে পরিবার আছে। ৪১ লক্ষ শ্রমিকের কমছেকম দশ-বিশ হাজার শ্রমিক তো সদ্যবিবাহিত হতেই পারে।
যে ভয়টা ছিল সেটা সত্যিই হল। করোনা পজিটিভ। সে যে মেসে থাকে সেখান থেকে বের করে দেয়া হল। কোথায় যাবে সে? অবশেষে কুর্মিটোলা হসপিটাল। পাসে কেউ নেই । এক মাত্র ছেলে টা পরে রইলো খেয়ে না খেয়ে । আরও দুর্বল হতে লাগলো।

আমি একদিন গেলাম দেখতে কিন্তু ডাক্তার নার্সরা আইসোলেশন ও্যার্ডে এলাও করল না। হয়তো আমার কোন ডেসিগনেশন নেই বিদায় অথবা কাউকে ঢুকতে দেয় নি সেদিন । এর পরদিন আবার গিয়ে শুনলাম ছেলেটার মোবাইল কে যেন চুরি করে নিয়েছে। বাড়ি তেও যোগাযোগ বন্ধ ।
{ছবি সুত্রঃ প্রথম আলো }

সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মে, ২০২০ ভোর ৪:২৫
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

সম্পর্ক

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২


আমারা সম্পর্কে বাঁচি সম্পর্কে জড়িয়ে জীবন কে সুখ বা দুঃখে বিলীন করি । সম্পর্ক আছে বলে জীবনে এত গল্প সৃষ্টি হয় । কিন্তু
কিছু সম্পর্কে আপনি থাকতে চাইলেও থাকতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×