somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঢাকার একজন নবাব আবদুল গনি

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


নবাব আবদুল গনি ১৮৩০ সাল থেকে ১৮৯৬সাল পযন্ত ঢাকার বড় জমিদারদের মধ্যে তিনি অন্যতম একজন জমিদার । যিনি উনিশ শতকের শেষার্ধে পূর্ববঙ্গের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব ছিলেন । ঢাকার জমিদার নবাব খাজা আহসানউল্লাহ ছিলেন তার পুত্র এবং নবাব সলিমুল্লাহ ছিলেন তার নাতি । ঢাকার এই নবাব পরিবারের সদস্যরা আজীবন ঢাকাতেই বাস করেছেন এবং ঢাকাতেই তারা পরলোকগমন করেছেন । নবাব আবদুল গনি পূর্বপুরুষেরা ছিলেন কাশ্মিরী । এই পরিবারটি ঢাকাবাসীর কাছে নবাব পরিবার এবং খাজা পরিবার হিসেবে পরিচিত ছিলেন ।

নবাব আবদুল গনির জন্ম হয় ১৮৩০ সালে । তাকে নবাব উপাধিতে ভূষিত এবং তা বংশানুক্রমে ব্যবহার করার অধিকার দিয়েছিলেন তখনকার সময় বৃটিশ সরকার । তার জমিদারি এবং বৃটিশ সরকারের সাথে সু সসম্পর্ক তাকে আরও প্রভাবশালী করে তুলেন । তার বাসভবন আহসান মঞ্জিলে দরবার ছিল যেখান থেকে তিনি পঞ্চায়েত এর মধ্যমে তার জমিদারির প্রজাদের সহ ঢাকার মুসলমানদের নিয়ন্ত্রন করতেন । তিনি বর্তমান ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলের আদি ছাত্রদের একজন ছিলেন । তার সহপাঠীদের মধ্যে ঢাকা ব্রাহ্মসমাজের প্রতিষ্ঠাতা ব্রজসুন্দর মিত্র ও জনিদার নিকি পোগজ আর জমিদার মৌলভী আব্দুল আলী ছিলেন অন্যতম । আবদুল গনিকে মাত্র আঠারো বয়সে পরিবারের কর্তৃত্ব গ্রহণ করতে হয়েছিল ।

নবাব আবদুল গনি ইংরেজ শাসকদের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলেন মাত্র সাতাশ বছর বয়সে । ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিপ্লবের সময় তিনি ইংরেজদের অর্থ ও হাতি, ঘোড়া এবং নৌকা সবকিছু দিয়ে খুবই সক্রিয়ভাবে সাহায্য করেছেন । সেজন্য বাংলার শাসক হ্যালিডের রিপোর্টে গনি মিয়ার নাম বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে । ১৮৬০ সালে ঢাকায় মুসলমান শিয়া সুন্নীদের দাঙ্গা যখন ইংরেজ সরকার থামাতে ব্যর্থ হয়েছিল তখন নবাব আবদুল গনি নিজের চেষ্টায় তিন দিনের মধ্যে ঢাকা শহরকে শান্ত করেছিলেন । এই জন্য সরকার তাকে সি এস আই কম্পানিয়ন অব দি অর্ডার অফ দি স্টার অব ইন্ডিয়া উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন । ১৮৬৭ সালে ভাইসরয় তাকে আইন পরিষদের সদস্য হিসেবে মনোনীত করেছিলেন । ১৮৭৫ সালে তাকে বংশানুক্রমিক নবাব উপাধি দেওয়া হয় । ১৮৬৮ সালে কে সি এস আই কিং কম্পানিয়ন অব দি অর্ডার অফ দি স্টার অব ইন্ডিয়া উপাধি লাভ করেন ।

ঢাকা শহরে নবাব আবদুল গনির প্রভাব প্রতিপত্তের প্রতীক ছিল আলী মিয়ার কেনা রংমহল । যা বর্তমানে আহসান মঞ্জিল নামে পরিচিত আছে । তিনি বাড়ীটিকে মেরামত করে ছেলের আসহানউল্লাহ এর নামে নামকরণ করেন । বাড়ীটি ঢাকাবাসীর কাছে নবাব বাড়ী হিসেবেই বেশি পরিচিত । ঢাকা শহরের শাহবাগ বেগুনবাড়ী সহ অনেকাংশেরই মালিক ছিলেন নবাব আবদুল গনি । তিনি বেগুনবাড়ীতে চা বাগান করেছিলেন । ঢাকায় পেশাদারী ঘোড়াদৌড় শুরু করেছিলেন বলে অনেকের মতে ঢাকার রেসকোর ময়দানও নাকি নবাব আবদুল গনির সম্পত্তি ছিল । তখন ঘোড়াদৌড় ঢাকায় শহুরে বিনোদন হিসেবে বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।

নবাব আবদুল গনিই ঢাকা শহরে প্রথম বিশুদ্ধ পানির সরবরাহের ব্যবস্থা করেছিলেন। ১৮৭৯ সালে নবাব আবদুল গনির কে.সি.এস.আই উপাধি পাওয়া এবং প্রিন্স অফ ওয়েলসের সুস্থ হয়ে ওঠা উপলক্ষে সরকারকে পঞ্চাশ হাজার টাকা দান করেছিলেন। তখন একটি কমিটি করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল ঢাকাবাসীর জন্য বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা করা হবে। নবাব আবদুল গনি আরও প্রায় দুই লক্ষ টাকা দান করেছিলেন এই প্রকল্পে।

ব্যক্তিগত জীবনে আবদুল গনি দুই বার বিয়ে করেছিলেন। তার সন্তানাদির সংখ্যা ছিল ছয় জন। ১৮৭৭ সালে খাজা পরিবারের দায়িত্বভার দিয়েছিলেন পুত্র আহসান উল্লাহের উপর। ১৮৯৬ সালে যেদিন তিনি পরলোকগমন করেন সেদিন ঢাকার সকল স্কুল, কলেজ, অফিস-আদালত বন্ধ ছিল।

তথ্যইন্টারনেট
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১:৪১
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×