somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সম্রাট জাহাঙ্গীর+সম্রাজ্ঞী নূর জাহান

১৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ ভোর ৬:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


জাহাঙ্গীর ১৫৬৯সালের৩০শে আগস্ট থেকে ১৬২৭সালের২৮শে অক্টোবর পযন্ত ছিলেন মুঘল সাম্রাজ্যের চতুর্থ সম্রাট । তিনি ১৬০৫ সাল থেকে তার মৃত্যু অবধি ১৬২৭ সাল পর্যন্ত রাজত্ব করেছেন ।

জাহাঙ্গীর ছিলেন মুঘল সাম্রাজ্যের তৃতীয় সম্রাট আকবর এর পুত্র । তিনি ১৫৯৯ সালে তার পিতা আকবর এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন । সেই সময় আকবর দক্ষিণ ভারত এ ব্যস্ত ছিলেন । তিনি হেরে গেলেও পরবর্তী কালে তার সৎমা রুকাইয়া সুলতান বেগম এবং সেলিমা সুলতান বেগম এর সমর্থনে ১৬০৫ সালে রাজা হতে সমর্থ হন । প্রথম বছরেই তাকে তার বড় ছেলে খসরুর বিদ্রহের মোকাবিলা করতে হয় এবং তিনি তাতে সফল হন । তিনি খসরু সমর্থিত ২০০০ লোককে মৃত্যুদণ্ড দেন ও খসরুকে অন্ধ করে দেন । বাবার মত চমৎকার প্রশাসন ছাড়াও জাহাঙ্গীর এর শাষনামলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা শক্তিশালী অর্থনীতি এবং চিত্তাকর্ষক সাংস্কৃতিক সাফল্য বিদ্যমান ছিল । তাছাড়া সার্বভৌম সীমানা অগ্রসরও অব্যাহত ছিল বঙ্গ মেওয়ার, আহমেদনগর ও দক্ষিণ ভারত পর্যন্ত তার রাজ্য বিস্তৃত ছিল ।

এই সাম্রাজ্য বৃদ্ধির একমাত্র বাঁধা আসে যখন প্যারস্য অঞ্চলের সাফারীদ রাজবংশের শাহেনশাহ আব্বাস কান্দাহার আক্রমন করেন । তা ঘটে যখন ভারতে তিনি খসরুর বিদ্রহ দমন করছিলেন । তিনি রাজপুতানা রাজাদের সাথে সমস্যার সমাধান নিয়ে আলোচনায় বসেন এবং তারা সকলেই মুঘল আধিপত্য মেনে নেন ও তার বদলে তাদের মুঘল সাম্রাজ্যে উঁচু পদ দেওয়া হয় । জাহাঙ্গীর শিল্প বিজ্ঞান এবং স্থাপত্য সঙ্গে মুগ্ধ হয়ে তরুণ বয়স থেকেই চিত্রকলার প্রতি ঝোঁক দেখিয়েছেন এবং তার নিজের একটি কর্মশালায় ছিল । মুঘল চিত্রকলা শিল্প, জাহাঙ্গীর এর রাজত্বের অধীনে মহান উচ্চতায় পৌঁছেছিল । তার সময় উস্তাদ মনসুর পশু পাখির ছবি একে বিখ্যাত হয়েছেন । জাহাঙ্গীরের একটি বিশাল পক্ষিশালা এবং পশুশালা ছিল । জাহাঙ্গীর ইউরোপীয় এবং ফার্সি শিল্পকলাকেও ভালবাসতেন । তিনি ফার্সি রানী নুর জাহান দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তার সাম্রাজ্য জুড়ে ফার্সি সংস্কৃতি প্রচার করেন । তার সময়েই শালিমার গার্ডেন তৈরি হয় । জাহাঙ্গীর তার বাবার মত একজন কঠোর সুন্নি মুসলমান ছিলেন না । তিনি সার্বজনীন বিতর্কে বিভিন্ন ধর্মের মানুষদের অংশগ্রহণ করতে দিতেন । জাহাঙ্গীর তার লোকদের কাউকে জোড়পূর্বক ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে বারণ করতেন । তিনি সকল প্রকার ধর্মের লোকেদের থেকে সমান খাজনা নিতেন । থমাস রো এডওয়ার্ড টেরি সহ অনেকেই তার এইপ্রকার আচরণের প্রশংসা করেন । থমাস রোর মতে জাহাঙ্গীর নাস্তিকতায় বিশ্বাসী ছিলেন ।

তার অনেক ভাল গুন থাকা সত্ত্বেও মদ্যপান এবং নারী এই দুই আসক্তির জন্য জাহাঙ্গীর সমালোচিত হয়েছেন । তিনি এক সময় তার স্ত্রী নুর জাহান কে অতিরিক্ত ক্ষমতা দিয়ে ফেলেন এবং নুর জাহান বিভিন্ন বিতর্কিত চক্রান্তের সাথে জড়িয়ে পড়েন । ১৬২২ সালে তার পুত্র ক্ষুরাম প্রথম বিদ্রোহ করেন । কিন্তু ১৬২৬ সালে জাহাঙ্গীরের বিশাল সেনাবাহিনীর কাছে কোণঠাসা হয়ে তিনি নিঃশর্তভাবে আত্মসমর্পণ করেন । কিন্তু ১৬২৭ সালে তার মৃত্যুর পর ক্ষুরামই নিজেকে শাহ জাহান উপাধিতে ভূষিত করে সিংহাসন দখল করেন । জাহাঙ্গীরের মৃত্যুর পর বিভিন্ন গল্প সিনেমা এবং সাহিত্যে তার ও আনারকলির রহস্যে ভরা সম্পর্ক স্থান পায় ।
রাজকুমার সেলিম ৩৬ বছর বয়েসে তার বাবার মৃত্যুর ৮ দিন পর ৩০ নভেম্বর ১৬০৫ সালে ক্ষমতায় এসে নিজেকে নুরুদ্দিন মহম্মদ জাহাঙ্গীর বাদশাহ গাজী উপাধিতে ভূষিত করেন । সেখান থেকেই তার ২২ বছরের রাজত্বের শুরু হয় । তিনি প্রথমেই তার ছেলে খসরু মিরজার বিদ্রোহের মুখে পড়েন । খসরু কে তিনি অন্ধ করে দেন এবং তাকে আর্থিক সাহায্য করায় পঞ্চম শিখ গুরু অর্জন দেব কে পাঁচ দিন ধরে অত্যাচার করা হয় । পরে তিনি নদীতে স্নান করার সময় উধাও হয়ে যান । জাহাঙ্গীর তার ছোট ছেলে খুরাম ও পরবর্তী কালে শাহ জাহানকে উত্তরাধিকার এর বিষয় সমর্থন করতেন । উত্তরাধিকার নিশ্চিত করতে শাহ জাহান ১৬২২ সালে তার বড় ভাই খসরু কে খুন করেন । মেয়ার এর রানা এবং শাহ জাহান এর মধ্যে একটি সফল চুক্তি হয় । শাহ জাহান বঙ্গ ও বিহার ব্যস্ত থাকার সময় জাহাঙ্গীর তার জেতা রাজ্য কে নিজের বলে দাবি করেন । নিজেদের মধ্যে বিবাদের সাহায্য নিয়ে ফার্সি ভাষা রা কান্দাহার জয় করেন । এর ফলে মুঘল রা আফগানিস্তান এবং প্যারস্য এর মুল্যবান বাণিজ্যিক রুট গুলি নিজেদের অধীন থেকে হারিয়ে ফেলেন ।


নূর জাহান তিনি একজন মুঘল সম্রাজ্ঞী যার পিতৃদত্ত নাম ছিল মেহের উন নিসা । তিনি মুঘল সম্রাজ্ঞী এবং সম্রাট জাহাঙ্গীরের প্রধানা মহিষী ছিলেন । একজন বলিষ্ঠ সম্মোহনী ও উচ্চশিক্ষিত নারী হওয়ায় তাকে ১৭শ শতাব্দীর সবচেয়ে প্রভাবশালী নারী ভাবা হয়ে থাকে । তিনি সম্রাট জাহাঙ্গীরের বিশতম এবং সর্বাপেক্ষা প্রিয়া স্ত্রী ছিলেন যিনি মুঘল সাম্রাজ্যের সর্বোৎকৃষ্ট পর্যায়ে রাজত্ব করেন । তাদের ভালোবাসা অনেক কিংবদন্তীর প্রায়শঃ প্রশ্নসাপেক্ষ জন্ম দিয়েছে । তার দ্বিতীয় স্বামী সম্রাট জাহাঙ্গীরের মদ্য এবং আফিমের প্রতি তীব্র আসক্তি থাকায় নূর জাহান একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজকীয় ভূমিকা পালন করেন যাকে সিংহাসনের পেছনের মূল শক্তি ধরা হয় । তিনি শুধু ঐতিহাসিকভাবে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক ক্ষমতার অধিকারিণীই ছিলেন না সেই সাথে ভারতীয় সংস্কৃতি, দাতব্য কাজ, বৈদেশিক বাণিজ্য এবং লৌহমানবীর ন্যায় ক্ষমতা পালনের জন্য বিখ্যাত ছিলেন । তিনি সম্রাজ্ঞী মমতাজ মহলের মাসি ছিলেন যার জন্য সম্রাট শাহজাহান তাজমহল তৈরি করেন । এছাড়াও তিনিই একমাত্র মুঘল সম্রাজ্ঞী যার নাম রৌপ্যমুদ্রায় অঙ্কিত আছে ।

অনলাইন থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে ।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ ভোর ৬:৪১
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×