somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইসলাম ধর্মে মোজেস ( পর্ব ২)

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইসলাম ধর্মে মোজেস ( পর্ব ১)

প্রাচীন কালে যারা মরুভূমি অতিক্রম করতেন তারা তদের যাত্রাপথে একমাত্র উদ্দেশ্য থাকতে নির্দিষ্ট লহ্ম্যে পৌছানোর জন্য পথের মরুদ্যান বা কূপের নিকট পৌছানো । কারণ তা হলে গাছের ছায়াতে সূর্যের প্রচন্ড তাপ থেকে শরীরকে সুশীতল করা কূপের পানি প্রচন্ড তৃষ্ণা কে নিবারণ করা যায় । সর্বোপারি মরুভূমির জনশূন্যতা থেকে রহ্মা পেয়ে মানুষের সঙ্গ লাভ করা যায় । মূসা শেষ পর্যন্ত মাদইয়ানের একটি মরুদ্যানে পৌছাতে সহ্মম হলেন কিন্তু তিনি ছিলেন পথশ্রমে ক্লান্ত এবং তৃষ্ণার্থ সুতরাং স্বাভাবিকভাবে তিনি পানি পান করার জন্য আগ্রহী ছিলেন । কিন্তু কুপে তখন একদল রাখাল তাদের জন্তুদের পানি পান করাচ্ছিলেন । সে সময়ে তিনি লহ্ম্য করেন যে দুজন রমণীদ্বয় তাদের পশুপালকে আগলিয়ে রেখেছেন তাদের পশুদের পানি পান করানোর জন্য । তখন মূসা আঃ রমণীদ্বয়কে জিজ্ঞেস করলো তোমাদের কি ব্যাপার ? তোমরা তোমাদের পশুপালকে আগলিয়ে দাড়িয়ে আছ কেন ? অন্যদের ন্যায় কূপের কাছে এনে পানি পান করাও না কেন ? তারা জওয়াব দিল আমাদের অভ্যাস এই যে আমরা পুরুষের সাথে মেলামেশা থেকে আত্মরহ্মার জন্য পশুপালগুলোকে পানি পান করাই না যে পর্যন্ত তারা কূপের কাছে থাকেন । তারা চলে গেলে আমরা পশুপালগুলোকে পানি পান করাই । রমণীদ্বয় এটাও বলল যে আমাদের পিতা অতিশয় বৃদ্ধ ।

তিনি একাজ করতে পারেন না । তাই আমরা একাজ করতে বাধ্য হয়েছি । অতঃপর মূসা আঃ রমণীদ্বয়ের প্রতি দয়াপরবশ হয়ে কূপ থেকে পানি তুলে তাদের পশুপালগুলোকে পান করিয়েছিলেন । কোন কোন রেওয়ায়েতে আছে যে রাখালদের অভ্যাস ছিল তারা জন্তুদেরকে পানি পান করানোর পরে একটি ভারী পাথর দ্বারা কূপের মুখ বন্ধ করে দিতেন । ফলে রমণীদ্বয় তাদের উচ্ছিত পানি পান করাত । এই ভারী পাথরটি দশ জনে মিলে স্থানান্তরিত করতো । কিন্তু মূসা আঃ একাকী পাথরটি সরিয়ে দেন এবং কূপ থেকে পানি উত্তোলন করেন । আর এ কারণেই রমণীদ্বয়ের একজন মূসা আঃ সম্পর্কে সে রমনীদ্বয়ের পিতার কাছে বলেছিলেন যে সে অনেক শক্তিশালী । মূসা আঃ সাত দিন ধরে কোনকিছু আহার করেন নাই । তখন এক বৃহ্মের ছায়ায় এসে আল্লাহু তাআলার সামনে নিজের অবস্থা এবং অভাব পেশ করলেন । এটা দোয়া করার একটা সূহ্ম পদ্ধতি । রমণীদ্বয় নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই বাড়ী পৌছে গেলে বৃদ্ধ পিতা এর কারণ জিজ্ঞেস করলেন । কন্যাদ্বয় ঘটনা খুলে বললেন । পিতা দেখলেন লোকটি অনুগ্রহ করেছেন তাকে এর প্রতিদান দেয়া উচিত ।

তাই তিনি কন্যাদ্বয়ের একজনকে তাকে ডেকে আনার জন্যে পাঠালেন । মূসা তখন সবেমাত্র বিশ্রাম নিচ্ছিলেন ঠিক সে সময় মেয়েটি লজ্জাজড়িত পদক্ষেপে সেখানে পৌঁছালো । প্রয়োজনবশত সেখানে পৌছে মেয়েটি লজ্জা সহকারে কথা বলেছে । বালিকাটি বিণীতভাবে বললেন মুসা আঃ কে যে আপনি আমাদের জন্য যা করেছেন তার জন্য আমার পিতা আপনার কাছে কৃতজ্ঞ । তাই তিনি আপনাকে ব্যক্তিগতভাবে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের জন্য এবং পারিশ্রমিক দেবার জন্য ডেকেছেন । তাফসীরে আরোও বলা হয়েছে যে মূসা আঃ তার সাথে পথ চলার সময় বললেন তুমি আমার পশ্চাতে চল এবং রাস্তা বলে দাও । বলাবাহুল্য মেয়েটি প্রতি দৃষ্টিপাত থেকে বেঁচে থাকাই ছিল এর লহ্ম্য। সম্ভবত এই কারণেই মেয়েটি তার সম্পর্কে পিতার কাছে বিশ্বস্ততার সাহ্ম্য দিয়েছিলেন । এই মেয়েটির পিতা কে ছিলেন এ সম্পর্কে তফসীরকারকগণ মতভেদ করেছেন । কিন্তু কোরআনের আয়াতসমূহ থেকে বাহ্যত এ কথাই বোঝা যায় যে তিনি ছিলেন হযরত শোয়ায়ব আঃ ।

বৃদ্ধ পিতা এবং মূসার আঃ দেখা হওয়া মাত্রই তাদের মাঝে বন্ধুতে পরিণত হয়ে যায় । মূসা তাকে তার জীবন কাহিনী সব খুলে বলেন । তিনি কে ছিলেন কিভাবে তিনি কোথায় থেকে এখানে এলেন কি পরিপ্রেহ্মিতে তিনি জন্মভূমি মিশর ত্যাগে বাধ্য হলেন । তার সকল ঘটনা পূর্ণ বিবরণ তিনি রমণীদ্বয়ের বৃদ্ধ পিতার কাছে বর্ণনা করলেন । সম্ভবত তাদের সাথে রমণীদ্বয়রাও এই কাহিনী শুনার জন্য সেখানে অংশগ্রহণ করেছিলেন । রমণীদ্বয়ের এক জন্য তার বাবার কাছে যে বলতে লাগল এই যে গৃহের কাজের জন্য আপনার একজন চাকরের প্রয়োজন । আপনি চাইলে তাকেই নিযুক্ত করতে পারেন । মেয়েটির পিতা হযরত শোয়ায়ব আঃ নিজেই নিজের পহ্ম থেকে কন্যাকে হযরত মূসার আঃ এর সাথে বিবাহে দেওয়ার কথা ও ইচ্ছা ব্যক্ত করলেন । তার প্রস্তাব ছিল মূসা তার যে কোন একটি কন্যাকে বিবাহ করতে পারে বিনিময়ে তাকে কমপহ্মে আট বছর তার পশুচারণের কাজ করতে হবে । অবশ্য তুমি ইচ্ছা করলে দশ বছরও থাকতে পার । সূরা আল কাসাসের ২৮ নং আয়াতে আল্লাহু তাআলা উল্লেখ করেন
( মূসা বললেন আমার ও আপনার মধ্যে এই চুক্তি স্থির হল । দুটি মেয়াদের মধ্য থেকে যে কোন একটি পূর্ণ করলে আমার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকবে না । আমরা যা বলছি তাতে আল্লাহর উপর ভরসা । )

যখন হযরত মূসা আঃ দশ বছর পূর্ণ করলেন যখন তখন হযরত শোয়ায়ব আঃ এর কাছে প্রস্তাব করলেন এখন আমি জননী এবং ভগ্নির সাথে সাহ্মাতের উদ্দেশে মিসর যেতে চাই । ফেরাউনের সিপাহীরা তাকে গ্রেফতার এবং হত্যার জন্যে খোজ করছিল । এ আশঙ্কার কারণেই তিনি মিসর ত্যাগ করেছিলেন । দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ার ফলে এখন সে আশঙ্কা অবশিষ্ট নেই । শোয়ায়ব আঃ তাঁকে স্ত্রী অর্থাৎ নিজের কন্যাসহ কিছু অর্থকড়ি এবং আসবাবপত্র দিয়ে বিদায় দিলেন । পথিমধ্যে শাম অঞ্চলের শাসকদের পহ্ম থেকে বিপদাশঙ্কা ছিল তাই তিনি পরিচিত পথ ছেড়ে অখ্যাত পথ অবলম্বন করলেন । তখন ছিল শীতকাল । স্ত্রী ছিলেন অস্তসত্তা এবং তার প্রসবকাল ছিল নিকটবর্তী । সকালে বা বিকাল যে কোন সময় প্রসবের সম্ভাবনা ছিল । রাস্তা ছিল অপরিচিত । তাই তিনি মরু অঞ্চলে পথ হারিয়ে তূর পর্বতের পশ্চিমে এবং ডান দিকে চলে গেলেন । গভীর অন্ধকার ছিল । কনকনে শীতও ছিল । মাটি ছিল বরফসিক্ত । সে দুর্যোগ ময় মুহুর্তে স্ত্রীর প্রসব বেদনা শুরু হয়ে যায় । মূসা আঃ শীতের কবল থেকে আত্মরহ্মার্থে আগুন জ্বালাতে চাইলেন । কিন্তু তিনি আগুন জ্বালাতে ব্যর্থ হলেন । হঠাৎ তিনি দেখলেন তূর পর্বতে আগুলে দেখতে পেলেন । সেটা ছিল প্রকৃতপহ্মে নূর । তিনি পরিবারবর্গকে বললেন তোমরা এখানেই অবস্থান কর । আমি আগুন দেখেছি । সম্ভবত আগুনের কাছে কোন পথপ্রদর্শক ব্যক্তিও পেয়ে যেতে পারি যার কাছ থেকে আমরা পথের সন্ধান জানতে পারবো । পরিবারবর্গের মধ্যে স্ত্রী যে ছিলেন তা তো সুনিশ্চিত । কোন কোন রেওয়ায়েত থেকে জানা যায় যে কোন খাদেমও সাথে ছিল । তাকে উদ্দেশ করেও সম্বোধন করা হয়েছে । আবার কোন কোন রেওয়াতে আছে যে কিছুসংখ্যক লোক সফর সঙ্গীও ছিল । কিন্তু পথ ভুলে তিনি তাদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন ।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:৪১
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×