ডা. ফজলুল হক খান সম্পর্কে আমার দাদা হলেও ছোটবেলা থেকে তাঁকে নানাভাই বলেই ডেকে আসছি। তিনি আমার অনেক শ্রদ্ধেয়, সম্মানীয় এবং অত্যন্ত প্রিয় একজন মানুষ। তাঁর গবেষিত আরো একটি বই আছে যার নাম ' বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম এর তাত্ত্বিক ও গাণিতিক ব্যাখ্যা '। কিছুদিন আগে তাঁর আরো একটি বই " আল কুরআনে একত্ববাদের নিদর্শনাবলী ( গাণিতিক বিশ্লেষণে আল কুরআন একত্ববাদের গ্রন্থ) " প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর আদরের নাতনী হওয়ার সুবাদে আমি একটি বই উপহার পেয়েছি তাঁর কাছ থেকে। এই বইগুলো তিনি বিক্রির উদ্দেশ্যে নয় সকলের জানার উদ্দেশ্যে প্রকাশ করেছেন এবং সেটা আমাদের চাপ সৃষ্টির কারনেই। মনে হয়েছে তাঁর এই গবেষণা সম্পর্কে মানুষ জানুক, আলোচনা করুক। মনে হয় বেশি কথা বলে ফেলছি, বেশি কথা বলে থাকলে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আসলে আমার মনে হলো উনার বইয়ের কিছু অংশ আমার ব্লগার ভাই-বোনদের সাথে শেয়ার করি। ভালো লাগলে পুরোটাই আমার নানাভাই'র কৃতিত্ব আর খারাপ লেগে থাকলে পুরো ব্যার্থতাই আমার ।
" সমগ্র কুরআনে আয়াত সংখ্যা ও তার গাণিতিক প্রমাণ "
সূরা ফাতিহাকে কুরআনের প্রথম স্থান দেওয়ার কারণ হলো- আল্লাহ কুরআন পাঠকারীকে এই শিক্ষা দিচ্ছেন যে, কুরআন থেকে উপকৃত হতে হলে প্রথমেই তাঁর নিকট প্রার্থনা করতে হবে। তাই এটা পরিষ্কারভাবে বুঝা যায় এই সূরাটি কেবল কুরআনের সূচনা বা প্রারম্ভিক সূরা নয়; এটি আল্লাহর নিকট প্রার্থনা। আর এই প্রার্থনার জবাবে আল্লাহপাক তাঁর পক্ষ থেকে বান্দাকে দান করেছেন এক উত্তম জীবন-ব্যবস্থা, আর সেটি হলো কুরআন মাজীদ, আল্ হামদুলিল্লাহ্।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে- আল কুরআনের আয়াত সংখ্যা কত? প্রচলিত অভিমত যা বহুকাল থেকে ইসলামি বই-পুস্তকে ও সাধারণ জ্ঞানের ডাইরীতে উল্লেখ আছে তা হলো- ৬৬৬৬টি আয়াত। কিন্তু এর সমর্থনে কোন প্রমাণ দলিল নেই। অথচ প্রায় সব মুসলমানের ঘরেই কুরআন মাজীদ রয়েছে। তা থেকে দেখা যায় কুরআনের সর্বমোট আয়াত সংখ্যা- ৬২৩৬টি। আবার সাবেক ইসলামিক একাডেমী ( ঢাকা ) থেকে প্রকাশিত কুরআনে আয়াত সংখ্যা আছে - ৬২৩৭টি। তবে সর্বদলীয় মতে কুরআনের আয়াত সংখ্যা- ৬২৩৭টি এবং এই সংখ্যাটি গ্রহণযোগ্য। এ সম্পর্কে পরবর্তী পর্যায়ে গাণিতিকভাবে প্রমাণ পাওয়া যাবে। সূরা ফাতিহার বৈশিষ্ট্যপূর্ণ অনেক নামের মধ্যে একটি নাম হলো- ' 'উম্মুল কুরআন ' বা ' কুরআনের জননী '। কেননা সমগ্র কুরআনের
' সার-সংক্ষেপ ' বা 'নির্যাস' নিহিত রয়েছে সূরা ফাতিহার মধ্যে। অন্যভাবে বলা যায় সমগ্র কুরআনে যা কিছূ বিবৃত হয়েছে তার সারমর্মই রয়েছে সূরা ফাতিহাতে। তা-ই যদি হয় তাহলে এটা বুঝা যায় ( ১১৪-১)= ১১৩ টি সূরার সারমর্মই রয়েছে একটি সূরার ( সূরা ফাতিহা) মধ্যে। কাজেই ( ৬২৩৭-৭)= ৬২৩০ আয়াত মানে ১১৩টি সূরার আয়াত সংখ্যঅ। অতএব, ৬২৩০ আয়াত= ৭ আয়াত, কিন্তু কিভাবে? এখন সমূকরণের মাধ্যমে উপরোক্ত সংখ্যাগুলো বর্গ করলে দেখা যায় :
( ৬)২ + (২)২ + (৩)২+ (০)২ = (৭)২
> ৩৬+৪+৯+০= ৪৯
> ৪৯=৪৯। তা হলে এটা প্রমাণ হলো- ১১৩ সূরার সারমর্মই রয়েছে- ১টি সূরাতে ( সূরা ফাতিহায় )। গাণিতিকভাবেও তা প্রমাণিত হলো। কাজেই কূরআনের সর্বমোট আয়াত সংখ্যা ৬২৩৭টি যা সর্বদলীয় মতে স্বীকৃত।
পর্যবেক্ষণ ও সিদ্ধান্ত :
এতক্ষণ আমরা সূরা ফাতিহার যে গাণিতিক বিশ্লেষণ পর্যবেক্ষণ করেছি তাতে দেখা যাচ্ছে- কুরআনের সূরা, আয়াত, রুকু, পারা, শব্দ ও অক্ষর সংখ্যাগুলো পরস্পরের সাথে এক অদৃশ্য, অবিচ্ছেদ্য ও জটিল গাণিতিক বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বিপুলভাবে একত্ববাদের প্রতীক রচনা করেছে। এতে কুরআনের কোথাও ছন্দপতন ঘটেনি। সর্বত্রই ছিল সুশৃঙ্খল ও সুবিন্যস্ত। এই অলৌকিক ও জটিল বন্ধনে আধুনিক বিজ্ঞানের প্রকৃত বিজ্ঞান গণিত শাস্ত্রের ১০ (দশ) এবং ১৯ (উনিশ) দুইটি সংখ্যা মূখ্য ভূমিকা পালন করেছে এবং কুরআনে ব্যাপকভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। কোথা থেকে এলো এই সংখ্যা দুইটি? এখানে উল্লেখ্য, পবিত্র কুরআনের প্রতিটি সূরার শীর্ষে বসে রয়েছে - একত্ববাদের মুকুট (Crown of Islamic Monotheism) ' বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম '। এই কল্যাণময় আয়াতটিতে অদৃশ্যভাবে নিহিত আছে ১০ ( দশ) এবং ১৯ (উনিশ) দুইটি সংখ্যা ( যার বিশদ বিবরণ আমার প্রকাশিত ' বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম এর তাত্ত্বিক ও গাণিতিক ব্যাখ্যা ' বইতে উল্লেখ করেছি। প্রয়োজনে পাঠক তা দেখে নিতে পারেন। ) এই সংখ্যা দুইটির একক অংকের সর্বশেষ যোগফল দাঁড়ায়- ১ (এক) বা ' একক ' একটি সংখ্যা। এই ১ ( এক) সংখ্যাটিই তাওহীদের প্রতীক ( চিহ্ন/ নির্দশন)। চৌদ্দশ' বছর আগে যখন জ্ঞান-বিজ্ঞানের তেমন কোন প্রসার ঘটেনি; শূণ্য (০) সংখ্যাটিও ছিল মানুষের অজানা তখন কোন্ বৈজ্ঞানিক বা গণিতবিদ আধুনিক বিজ্ঞানের জননী ( Mother of all science ) নামে খ্যাত গণিত শাস্ত্রের উক্ত সংখ্যা দুইটির মাধ্যমে কুরআন মাজীদের পাতায় পাতায় এক জটিল প্রক্রিয়ায় ( ইন্টারকলিং পদ্ধতিতে) একত্ত্ববাদের চিহ্নগুলো ব্যাপকভাবে বসিয়ে রেখেছেন। এতসব হিসেব কষে কুরআনের মতো এত বিশাল একখানা গ্রন্থ রচনা করে কি মানুষের পক্ষে সম্ভব? অবিশ্বাসীদের প্রতি আল্লাহ্ চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেন : "( হে রাসূল!) বলে দাও মানুষ ও জ্বিন সকলে মিলে যদি এই কুরআনের অনুরূপ আনবার চেষ্টা করে তবে তা আনতে পারবে না, তারা পরস্পরের যত সাহায্যকারী হোক না কেন? " ( সূরা বনী ইসরাঈল ১৭:৮৮) । এই অদৃশ্য, সুশৃঙ্খল জটিল গাণিতিক বন্ধনের কারণে কুরআনের একটি আয়াত, শব্দ এমনকি এটি অক্ষরও বাদ দোং বা পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। পরিবর্তন করতে গেলে দরা পড়বে, অর্থের পরিবর্তন হবে এবং কুরআনে মজবুতভাবে প্রতিষ্ঠিত ( ইন্টারলকিং পদ্ধতির) ' তাওহীদের প্রতীক চেইন' ভেঙ্গে পড়বে। তাই কুরআন মাজীদ একত্ত্ববাদের এক অলৌকিক গ্রন্থ ( Supernatural Book) বৈ কি! নিশ্চয়ই এই অলৌকিক গ্রন্থ রচনার পেছনে এক মহাশক্তিশালী, অসীম, জ্ঞানী, সুক্ষ, কৌশলী ও সচেতন সত্তার হস্তক্ষেপ অবশ্যই ছিল। আর তিনি হলেন- মহাজ্ঞানী-প্রজ্ঞাময় ও অসীম ক্ষমতাধর একক সত্তা- আল্লাহ রাব্বুল আলামীন। এছাড়া পৃথিবীর দেশে দেশে কোটি কোটি মুসলমান কুরআনে হাফিজ হয়ে রয়েছেন এবং প্রতিনিয়ত হাফিজ হচ্ছেন এবং তাদের মন ও মগজে কুরআনকে ধারন করে রাখছে। এভাবে আল্লাহপাক কুরআনকে এমন সুদৃঢ়ভাবে রচনা করেছেন যার ফলে পবিত্র গ্রন্থটি নাযিলের পর থেকে এত দীর্ঘকাল যাবত অবিকল অবস্থায় স্ব-মহিমায় ও স্ব-গৌরবে পৃথিবীর সবৃত্র বিরাজ করছে। তাই আল্লাহপাক পবিত্র কুরআনে বলেছেন: " নিশ্চয়ই এ কুরআন আমি নাযিল করেছি এবং আমিই এর সরক্ষণ করবো। ( সূরা হিজর ১৫:৯) "।
সুপ্রিয় পাঠক, বিজ্ঞানের শ্রেষ্ঠ নিয়ামক গণিতের মাধ্যমে পবিত্র কুরআনে-এর আয়াতকে বিশ্লেষণ ও পর্যবেক্ষণ করার পর কারো মনে এই পবিত্র গ্রন্থ সম্পর্কে আর কোন সন্দেহ-সংশয় থাকতে পারে? যদি এরপরও কারো মনে যুক্তিহীন কোন সন্দেহ থাকে তাদেরকে জ্ঞান-পাপী ছাড়া আর কি বলা যায়? তাদের সম্পর্কে আল্লাহ সুবহানাহুতা'আলা পবিত্র কুরআনে বলেন: " আল্লাহ তাদের অন্তর ও কর্ণসমূহের উপর মোহর মেরে দিয়েছেন ও তাদের চোখের উপর আবরণ রয়েছে এবং তাদের জন্য রয়েছে মহাশাস্তি। ( সূরা বাকারা ২:৭ আয়াত) ।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




