somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গণতন্ত্রের নামে চলছে ধর্ষণ

২৫ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১২:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যেদিন জন্ম নিলাম এই পৃথিবীতে সেইদিন থেকে চারিদিক থেকে শুনতে পেলাম কতই না সুন্দর পৃথিবীতে আগমন ঘটেছে আমার। চারিদিকে মানুষের কোলাহল, আনন্দ মিছিল, উৎসব দেখে আমিও ভাবতে রইলাম জীবন আমার সার্থক হল। ঘণ্টা বাজতে না বাজতে হারে হারে টের পেলাম এই পৃথিবী হয়তো সুন্দর কিন্তু আমি এই বিশাল পৃথিবীর মধ্যে একটি ক্ষুদ্র দেশে জন্ম নিয়েছি। যার নাম বাঙলাদেশ।
দেশেটি দৈর্ঘ্য প্রস্থ উচ্চতা আয়তনে ছোট হলে কী হবে; এই দেশের জনসংখ্যার ঘনত্ব এতটাই যে আদমশুমারি সরকারি ও বেসরকারিভাবেও সঠিক তথ্য দিতে ব্যর্থ। বাঙলাদেশি মানুষেরা খেতে পারুক আর নাই পারুক গণহারে বাচ্চা উৎপন্ন করা ফরজ। দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা এতটাই নিম্নমানের যে চাইলেই দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাওয়া খুবই কষ্টকর। সেক্ষেত্রে আমার বাঙলাদেশ অনেক বিশাল।
ধীরে ধীরে যখন চোখ ফুটতে লাগলো তখন বুঝলাম ছোটবেলায় যেমন ঘুম পারানোর জন্যে বাচ্চাদের ভূত দৈত্য রাক্ষসের গল্প বলত, বাস্তবিক অর্থে আমাদের দেশ তেমনই। এখানে সেকেন্ডে দশটি মানুষকে চোখে পরে কিন্তু আসলে কেউই মানুষের পর্যায়ে পরে না। তবে ভুলবশত মানুষ খুঁজে পাওয়া যায় কোন এক অচিন প্রান্তে।
বাঙলাদেশের পরিবেশ অত্যন্ত দূষিত। বায়ু দূষিত, পানি দূষিত, খাবার দূষিত। এবং সবচে’ বেশি দূষিত মানুষের মন, মানুষের বিবেক, মানুষের মনুষ্যত্ববোধ।
এখন যে সময় চলছে তাকে আধুনিকযুগ অথবা সময় বলা হয়। কোন কোন দেশে উত্তরাধুনিকতার যুগও শুরু হয়ে গেছে। বাঙলাদেশের মত তৃতীয় বিশ্বের দেশে এই “ উত্তরাধুনিক” শব্দটির সাথে পরিচিত হওয়ার কোন প্রয়োজনীয়তা নেই। কারণ বাঙালিরা আধুনিকতা কী সেটাই বুঝে না। এক ভয়াল মধ্যযুগে বাস করছি। যদিও একবিংশ শতাব্দী শুধু নামে মাত্র।
আধুনিক যুগ বা একবিংশ শতাব্দীর বৈশিষ্ট্য কি? গনতন্ত্র, স্বাধীনতা, অসাম্প্রদায়িকতা, ধর্মনিরপেক্ষতা, মননশীলতা, সৃষ্টিশীলতা, ব্যক্তিস্বাধীনতা, আলোচনা সমালোচনা, যৌক্তিক বিচার বিশ্লেষণ , বিজ্ঞান , প্রযুক্ত এবং দুর্নীতি থেকে মুক্তি।
উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যর বিপরীত অর্থই বাংলাদেশের আধুনিকতা। রাজতন্ত্র বা পরিবারতন্ত্র বা শোষণ তন্ত্র, পরাধীনতা, সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মীয় স্বেচ্ছাচারিতা, কুসংস্কার, অযৌক্তিক বিশ্বাস, সৃষ্টির বিনাশ, মত প্রকাশে বাধা বা নিজের মত চাপিয়ে দেওয়া এবং দুর্নীতির উচ্চশিখরে অবস্থান।
কোন বাঙালিকে যদি বলা হয় আগামীকাল আসতে পারবেন প্রতিবাদ কর্মসূচিতে! তখন কাচুমাচু করে বলে ফেলে জীবন নিয়ে খুব ব্যস্ত, সময় হবে না। কিন্তু, তাদের যদি বলা হয় আগামীকাল আসিস আড্ডা মারতে! তখন চট করে উত্তর দিবে চা, সিগরেট, আড্ডা মানেই ত জীবন! বাঙালিরা বুঝেই উঠতে পারেনা, কীসে তাদের ব্যস্ত থাকার কথা! কীসের প্রতি তাদের অলসতা

হয়তো কখনো একটু অবসর সময়ে যদি নিজের এই দেশ নিয়ে ভাবা হয় কোন ভালো দিক মনে পড়বে? বাঙলাদেশে নিয়ে ভালো কোন চিন্তা বা সদর্থক কোন চিন্তা কি মাথায় আসা সম্ভব? ১৯৭১ সালে যে দুঃসময় কাটিয়েছে বাঙালিরা সেই সময়েও সদর্থক চিন্তা ছিল মানুষের মনে, ভাবনায়, কর্মে। ছিল বলেই এক অসম্ভব জয় বাঙালিরা অর্জন করতে পেরেছিল। এক বীভৎস, শোষিত, নিপীড়িত, ধ্বংসাত্মক সময়েও বাঙালিরা পেরেছিল স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে। কিন্তু আজ এই তথাকথিত স্বাধীন দেশে বাস করে আমরা কী আমাদের প্রাপ্য স্বাধীনতা ধরে রাখতে পারছি? আমরা আমাদের নিজের দেশেই পরাধীন। আমরা আমাদের নিজের দেশের মানুষের দ্বারা শোষিত হচ্ছি। স্বাধীন দেশের মানুষ আজ বাঙলাদেশকে বাংলাস্তান করার স্বপ্ন দেখছে। শোষণের মাত্রা এমনই চরম আকার ধারণ করেছে এবং আমাদের সহ্য ক্ষমতা এতটাই মজবুত হয়েছে যে চোখের সামনে যদি কোন মানুষকে হত্যা করা হয় গুটিকয়েক মানুষ ছাড়া প্রতিবাদ করার শক্তি কারও মধ্যে নেই। সোজা ভাষায় জানিয়ে দেওয়া হবে “ সবার নিরাপত্তা দেওয়া তো সম্ভব না সরকারের পক্ষে ”। অথচ এই আমরাই একদিন অন্যদেশের অত্যাচার থেকে জন্মভূমিকে রক্ষা করেছিলাম।
কী নোংরা সমাজে আমাদের বসবাস; যেখানে মানুষকে প্রতি মুহূর্তে ভয়ে থাকতে হয়, যেখানে কথা বলতে হয় অঙ্ক কষে কষে। যেখানে সস্তা কিছু ধর্মীয় অনুভূতিতে তথাকথিত আঘাত লাগার অপরাধে হাজার হাজার মানুষকে খোলা আকাশের নিচে থাকতে হয়। ধর্মীয় বিশ্বাস যদি এতোই সর্বোউত্তম হত; এতটাই মজবুত হত তবে অন্য কারো মন্তব্যে বা অন্য কারো অবিশ্বাসে আঘাত লাগার কথা নয়! যদি ধর্মীয় অলৌকিক ঈশ্বর বা ধর্মীয় অলৌকিক ব্যক্তি বা মহাপুরুষের প্রতি কারও তীব্র এবং জোরালো বিশ্বাস থেকেই থাকে তবে তার সম্পর্কে যে যাই বলুক না কেন তাতে কিছু যায় আসার কথা নয়। অন্যের মন্তব্যের উপর যদি বিশ্বাস নির্ভর করে তবে সেই বিশ্বাস যে কত নিষ্ক্রিয় কত ঠুনকো তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
মত প্রকাশের স্বাধীনতা প্রতিটা মানুষের অধিকার হওয়ার কথা ছিল কিন্তু বাঙলাদেশে এই স্বাধীনতা শুধু মাত্র শক্তিশালী ক্ষমতাশীল দলের দুর্নীতিগ্রস্ত চামারদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এখানে মানুষ নিরাপদ তখনই যখন সে শাসক শ্রেণীর নির্বাচিত বুলি বলবে, সফল সেই; যে শাসক শ্রেণীর পায়ে চুম্বন করতে জানে, স্বাধীন এবং নিরাপদ সেই; যে শাসক শ্রেণীর প্রতিটি কথাকে পাথরে খোঁদাই করা অমর বাক্য বলে জানবে।
এই দূষিত সমাজেও মাঝে মাঝে কিছু সত্যিকারের মহাপুরুষ জন্মায়। যারা মানুষকে বাঁচতে শেখায়, প্রশ্ন করতে শেখায়, সৎ থাকতে শেখায়, যুক্তিবাদী হতে শেখায়, মানুষ হয়ে মানুষের পক্ষে কথা বলতে শেখায়, অযৌক্তিক হাস্যকর ভিত্তিহীন বিশ্বাসের মর্মমূল যুক্তি দিয়ে উপ্রে ফেলে আধুনিকতার অর্থ বুঝায়, প্রয়োজনীয়তা বুঝায়, সভ্য হতে শেখায়। আর তখনই তাদের চিরতরে নিশ্চুপ করে দেওয়া হয়। বেঁচে থাকার মতো প্রাকৃতিক অধিকারও তাঁদের ভাগ্যে থাকে না।
অথচ যারা দিনের পর দিন শোষণ করে যাচ্ছে, দুর্নীতি, মিথ্যাচার, ধর্মের মুখোশ পরে অবলীলায় অত্যাচার আর অভিনয় করে যাচ্ছে তারাই আজ এখানে রাজার আসনে অধিষ্ঠিত। তারাই পৃথিবীর সমস্ত বিলাসিতা উপভোগ করতে পারে, তারাই স্বগর্বে কোটি টাকার গাড়ি হাকিয়ে ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে নাটকীয় সান্ত্বনা দিতে পারে। তারাই দেশ বিদেশ ঘুরে পাচ তারকা হোটেলে নিদ্রা যাপন করতে পারে, আর ফিরে এসে কোন সাম্প্রদায়িক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষণ দিতে পারে, টিভি’তে টক’শো করতে এসে নিজেকে জারজের পরিচয় দিতেও প্রস্তুত; তারাই সংসদে দাঁড়িয়ে আঙুল উঁচিয়ে কাউকে হত্যার হুমকি দিতে পারে, তারাই ভিন্ন ধর্মীয় বিশ্বাসীদের উপর আগুন লাগিয়ে বলতে পারে “বাংলাদেশ ধর্মীয় নিরপেক্ষ দেশ”।
বাঙালিরা এক ভয়াবহ অন্ধকার সমাজে বাস করছি। স্বাধীনতার ৪০ বছর পর বাঙলাদেশের যে অবস্থানে পৌঁছানোর কথা ছিল বা যে দেশের স্বপ্ন নিয়ে মানুষ যুদ্ধ করেছিল নিজের প্রাণের তোয়াক্কা না করে সেই কাঙ্খিত দেশ অর্জন করা তো দূরে

থাক; দিন দিন বাঙালি থেকে বাঙালি মুসলিম, তারপর মুসলিম বাঙালি এবং মুসলিমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। মধ্যযুগ থেকে প্রাচীন যুগে ফিরে যাচ্ছি। অবনতির এতটাই নিম্নস্তরে পৌঁছে গেছি যে স্বাধীন দেশের কিছু নোংরা মানুষ আজ বাঙলাদেশকে বাংলাস্তান করার স্বপ্ন দেখছে। অন্ধকারের গহীনে পৌঁছে গেছি যে বাংলাদেশের অভিধান থেকে আজ গনতন্ত্র স্বাধীনতা, অসাম্প্রদায়িকতা, ধর্মনিরপেক্ষতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, সভ্যতা সর্বোপরি মানুষের মতো মানুষ হয়ে বেঁচে থাকার অর্থ সম্পূর্ণ ভাবে মুছে গেছে।
ফণা তুলে দাঁড়িয়ে আছে হাজার লক্ষ অজগর। ক্যান্সারের মত ছড়িয়ে পরেছে চারিদিকে। আর দেরি না করি, সময় থাকতেই নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে ফেলি। আজ আছি, হয়তো আগামী’তে তাদের আক্রমণের শিকার আপনি-ই হবেন।
৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×