দৈনন্দিন খাবার খালিকায় মাছ, গোশ্ত-এর পরিমাণ সীমিত, ডাল পরিমিত এবং শাক-সব্জি পর্যাপ্ত থাকা উচিত। বাঁধাকপি, ডাঁটা, লালশাক, পুঁইশাক, সজনে ও আঁশ জাতীয় সব্জি পর্যাপ্ত থাকা উচিত।
শীতকালে নিয়মিত পালংশাক, ব্রোকোলি ও গাজর খান।
পুষ্টির জন্যে নিয়মিত এক চা চামচ মধু, এক গ্লাস দুধ, একটি ডিম খান।
শাক-সব্জি অতিরিক্ত সিদ্ধ না করে আধা সিদ্ধ কান। প্রতিদিন খাবারে সালাদ খান। সালাদে লেটুস, টমেটো, ধনে পাতা, পুদিনা পাতা, গাজর, শশা, রেড ক্যাবেজ, ক্যাপসিকাম ব্যবহার করুন।
নিয়মিত দই খান। তবে মিষ্টি দই খাবেন না। সাধারণ চিনি ছাড়া দই (ইয়োগার্ট) খাবেন।
প্রতিদিন খাবারে ডাল রাখুন। মসুরি, মুগ, মাশ, বুট মটর, অডহর ডাল এক সাথে মিশিয়ে রান্না করুন।
প্রতিদিন সকালে উঠে এক মুঠি ভিজানো কাঁচা ছোলা, এক টুকরো আদা ও এক চিমিট বিট লবণ সহ খাওয়ার অভ্যাস করুন।
প্রতিদিন কমপক্ষে দেড় লিটার বা ৬ গ্লাস পানি পান করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
মৌসুমী ফল সব সময় পর্যাপ্ত খাওয়া উচিত। যে মৌসুমে যে ফল হয়, তা সে মৌসুমের রোগের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। আম, কাঁঠাল, কলা, কুল, পেয়ারা, আমরা, আনারস, চালতা, জাম্বুরা, আমলকি অর্থাৎ দেশীয় ফল প্রচুর পরিমাণে খাবেন। ফ্লু বা ভাইরাস জ্বরের আক্রমণ শুরু হওয়ার আগেই বাজারে আনারাস চলে আসে। তখন পরিমিত আনারস কেলে ফ্লু আক্রমণ করা সুযোগ পায় না। সেজন্যেই বলা হয়, মৌসূমের ফলের মধ্যেই মৌসুমের রোগের দাওয়াই রয়েছে। যাদের ঠাণ্ডা লাগার প্রবণতা বেশি তারা শীত আসার একমাস আগে থেকে প্রতিদিন একটি মাঝারি সাইজের জাম্বুরার অর্ধেক খেলে ঠাণ্ডা-সর্দি থেকে অনায়াসে রেহাই পেতে পারেন।
খাবারের ব্যাপারে বিশ্বের সচেতন মানুষেরা এখন প্রাকৃতিক খাবারের প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছেন। পাশ্চাত্য স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ এখন টিনজাত, প্রক্রিয়াজাত ও পরিশোধিত খাবারের বদলে স্বাভাবিক প্রাকৃতিক খাবারের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ ও পুষ্টিবিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে, ‘প্রক্রিয়াজাত খাবার বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি এমন কি ক্যান্সার সৃষ্টি কারণ হচ্ছে। তাই ময়দার পরিবর্তে লাল আটা খাবেন। চিনির পরিবর্তে গুড় খাবেন। দুধ-চায়ের পরিবর্তে গুড় দিয়ে হালকা রঙ-চা খাবেন। টিনজাত খাবার পুরোপুরি বর্জন করবেন। ফলের রসের পরিবর্তে টাটকা ফল খাবেন। গুঁড়ো দুধ পুরোপুরি বর্জন করবেন। গরুর খাঁটি দুধ প্রত্যেক দিন এক গ্লাস করে খাবেন। হরলিক্স, ওভালটিন ইত্যাদি তথাকথিত পুষ্টিকর খাবার পুরোপুরি বর্জন করে পুষ্টির জন্যে নিয়মিত দুধ, কলা, ডিম খাবেন। মিষ্টি খাবেন না। বিশেষত রঙিন মিষ্টি পুরোপুরি বর্জন করবেন। কারণ খাবারে যে রঙ ব্যবহার করা হয়, তা ক্যান্সার সৃষ্টির কারণ হতে পারে।
তথাকথিত কোমল পানীয় পান করবেন না। কারণ এই পানীয়ের মধ্যে নেশা রয়েছে। আর এই তথাকথিত কোমল পানীয় ডায়াবেটিস এবং কিডনী ও মূল ব্যাধির কারণ। কোমল পানীয়ের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে আমাদের দেশের বিশিষ্ট কিডনি ব্যাধি বিশেষজ্ঞ ব্রিগেডিয়ার সিরাজ জিন্নাত ১৯৯৪ সালের বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবসের আলোচনা সভায় সুস্পষ্ট মতামত ব্যক্ত করেছেন। কোমাল পানী আপনার কিডনি ও মূত্রাশয়ের জন্যে অত্যন্ত কঠিন প্রমাণিত হতে পারে। তাই কোমল পানীয়ের পরিবর্তে সবসময় ডাব খাবেন। ডাবের পানিতে ১৯টি প্রাকৃতিক খনিজ দ্রব্য রয়েছে যা স্বাস্থ্যের জন্যে অত্যন্ত উপকারী। ডাব পাওয়া না গেলে লেবু পানি খান।
কতটুকু খাবেন? সবসময় পরিমিত খাবার খাবেন। বেশি খেলে আপনার রোগ ব্যাধি বেশি হবে।। এ ব্যাপারে নবীজীর (স.) একটি হাদিস আমরা অনুসরণ করতে পারি। তিনি বলেছেন, তুমি তোমার পাকস্থলীর এক-তৃতীয়াংশ খাবার ও এক-তৃতীয়াংশ পানীয় দ্বারা পূর্ণ করো। আর বাকি এক-তৃতীয়াংশ ফাঁকা রাখো। দীর্ঘ নিরীক্ষায় দেখা গেছে যে, এভাবে খাবার গ্রহণ করলে পাকস্লীর ব্যাধি থেকে পুরোপুরি মুক্ত থাকা যায় এবং শরীরের ওজন সবসময় নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকে।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুন, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:০১