somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঋণের বৃত্ত

১৭ ই মে, ২০১২ রাত ৮:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আসলে ঋণের বৃত্তে যে একবার প্রবেশ করে সে বের হতে পারে না। ঋণের বৃত্তে যদি জড়িয়ে পড়েন ঋণের পরিমাণ বাড়তেই থাকবে। সেটা যে ঋণেরই হোক, দরিদ্র যারা ঋণ নিয়ে ব্যবসা করছেন, তারা হোক, আমরা যারা অনেক টাকা নিয়ে ব্যবসা করছি তারা হোক।

আমাদের ছোটবেলায় গাছপালা ছিলো, পাখ পাখালিও ছিল। কিশোরদের মধ্যে একটা আকর্ষণ ছিলো পাখি ধরা। পাখিকে ধরা হতো কিন্তু মারা হতো না, তাকে সুতো বা দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হত। দড়িটা ছোট, যেন সে অল্প একটু উড়তে পারে কিন্তু বেশী উড়তে না পারে। খাবার না দিলে মারা যাবে তাই তাকে পানিও দেয়া হত, খাবারও দেয়া হত। যেন সে বেঁচে থাকে কিন্তু কোথাও যেতে না পারে, হাতের মুঠোর মধ্যে থাকে।

ঋণ জর্জরিত জীবন এরকমই। একবার ঋণ জর্জরিত হয়ে পড়লে আপনি নড়তে চড়তে পারবেন, শ্বাস নিতে পারবেন, একটু হাসতেও পারবেন, কিন্তু ভালোভাবে হাসতে পারবেন না। প্রাণখুলে হাসতে পারবেন না।
ঋণের মারাত্মক প্রভাবের জ্বলন্ত উদাহরণ হচ্ছে মাইকেল জ্যাকসন। আপাত দৃষ্টিতে এই অনন্যসাধারণ শিল্পীর মৃত্যুর কারণ প্রোপোফল এবং লোরাযেপামের মত ওষুধের ওভারডোজ, যেগুলো তিনি সেবন করছিলেন ইনসমনিয়া থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য। প্রশ্ন হচ্ছে কেন তার এ ওষুধগুলোর প্রয়োজন হল, তার ইনসমনিয়ার কারণ কি?

জ্যাকসনের সামপ্রতিক-কালের বন্ধু এবং সমবয়সী ইনক্রিডেবল হাল্কের অভিনেতা লাউ পেরিংগো সরাসরি বলেছেন এসবের নেপথ্যে রয়েছে জ্যাকসনের পর্বতপ্রমাণ ঋণজনিত মানসিক চাপ। বিস্ময়কর হলেও সত্য যে মানুষটির শুধু আমেরিকাতেই এলবাম বিক্রি হয়েছে ৬১ মিলিয়নের ওপরে, আমাদের দেশী টাকায় যার উপার্জন ছিল, যার সম্পদের পরিমাণই ছিল ১০০ কোটি ডলার অর্থাৎ সাত হাজার কোটি টাকা, মৃত্যুর সময় তার ঋণের পরিমাণ ছিল ৪০ কোটি ডলার অর্থাৎ ২৮০০ কোটি টাকা। প্রতি বছরই তিনি ব্যয় করতেন তাঁর বাৎসরিক আয়ের থেকে ২/৩ কোটি ডলার অর্থাৎ ২০০ কোটি টাকা বেশী। ফলশ্র“তিতে বিগত বছরগুলিতে তাকে বেশ কয়েকটি মামলার মুখোমুখি হতে হয়। বাহরাইনের রাজার দ্বিতীয় ছেলে আবদুল্লাহ বিন হামাড আল খালিফা, যিনি একসময় জ্যাকসনকে প্রচুর অর্থ ধার দিয়েছিলেন এলবাম এবং আত্মজীবনীর জন্য, পরবর্তীতে হতাশ হয়ে প্রায় পঞ্চাশ কোটি টাকার মামলা করেন জ্যাকসনের বিরুদ্ধে।
ঋণ পরিশোধ না করতে পারলে তার প্রিয় নেভারল্যান্ডসহ সমস্ত সম্পত্তি নিলাম করতে হবে এই আশঙ্কা থেকেই লন্ডনে কনসার্টের সিদ্ধান্ত নেন জ্যাকসন। আশা করছিলেন এই কনসার্টের আয়ের থেকে ঋণ পরিশোধের টাকা উঠে আসবে। এজন্য নিজের শরীরের ওপরও কম অত্যাচার করেননি তিনি। কিন্তু এতসবের পরও শেষ রক্ষা হল না। ঋণের চাপে বিলীন হয়ে গেলেন এই ক্ষণজন্মা শিল্পী।

আসলে সাফল্য ও প্রাচূর্যের জন্য প্রয়োজন ঋণ নয়, সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি। যদি ঋণ নিয়ে পরিবর্তন আসতো তাহলে কোটি কোটি টাকা ঋণ বা বিদেশি সাহায্য নেয়ার পর আমরা সুপার পাওয়ারের পরিবর্তে সুপার পুওর হয়ে যেতাম না।
ঋণ যে-ই দেয় তার উদ্দেশ্য একটাই। আপনাকে কৃতদাসের মতো কাজে লাগানো। এটা শাইলক বা কাবুলিওয়ালা অর্থাৎ সেকালের ঠাকুরদের ক্ষেত্রে যেমন সত্য একালের যারা ঠাকুর তাদের বেলায়ও সত্য। যেখান থেকে আপনি ঋণ নিন না কেন, ঋণদাতার মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে আপনার উড়ে বেড়ানোর ডানা কেটে দেওয়া, গান গাওয়ার গলা কেড়ে নেওয়া, আপনি যেন দাসের মতো সবসময় থাকতে পারেন। আর্থিক সমস্যা তো বটেই, ঋণ থেকে সৃষ্টি হয় পারিবারিক সমস্যা, শারীরিক সমস্যা, মানসিক সমস্যা এমনকি মাদকাসক্তি এবং এর চুড়ান্ত ফলাফল হচ্ছে পরবর্তী প্রজন্মকেও শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে ফেলা। একারণে রাসূল (স.) যে কয়েকটা জিনিস থেকে পানাহ চেয়েছেন তার মধ্যে একটা ঋণগ্রস্থ হওয়া থেকে।
অতএব যত দ্রুত সম্ভব এই ঋণের বৃত্ত থেকে বের হয়ে আসুন। বিশ্বাস করুন, ঋন জর্জরিত জীবন নয়, ঋনমুক্ত সচ্ছল জীবন আপনার মৌলিক অধিকার।
১৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

সম্পর্ক

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২


আমারা সম্পর্কে বাঁচি সম্পর্কে জড়িয়ে জীবন কে সুখ বা দুঃখে বিলীন করি । সম্পর্ক আছে বলে জীবনে এত গল্প সৃষ্টি হয় । কিন্তু
কিছু সম্পর্কে আপনি থাকতে চাইলেও থাকতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×