somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মহাশূন্য

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ সকাল ৯:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি মধ্যবিত্ব মধ্যবয়স্ক একজন যুবক। এই বয়সটা এমন বিড়ম্বনার! না নিজেকে ফেলা যায় যুবকে, না ফেলা যায় বয়স্কতে, অথচ মনটা পরে থাকে কৈশরে। শুনতে অযৌক্তিক মনে হলেও এটা সত্য। আর এই সত্যটা তীব্রভাবে সত্য একজন নিম্ন মধ্যবিত্ব যুবকের কাছে।

মধ্যবিত্ব ঘরে জন্ম নেওয়া একটা অপরাধের মত। সারাজীবন একটা দীর্ঘ চাপা নিঃশ্বাস বয়ে বেড়াতে হয়। ছাড় দিতে হয় প্রতিটি পদে পদে। এই ছাড় থেকে জীবনে হয়তো অনেক অনেক নৈতিক শিক্ষা পাওয়া যায়। তবে চাপা নিঃশ্বাস থেকেই যায়, বাড়ে হতাশা। এক একটা মানুষ পরিণত হয় এক একটা মহাশূন্যে।

না থাকা হয় পরিবারের কোন সিদ্ধান্তে, না কোন প্রায়োরিটিতে। একটা সময় পরে একটা জিনিসই পাওয়া যায়, যেটা নেওয়ার ইচ্ছা বা আকাঙ্ক্ষা কারোই হয়তো থাকে না। তার নাম দায়িত্ব।

আজকের গল্পের মূল নায়ক আমার দাদা। ধরে নেই তার নাম আন্তারেস। আমার সাথে আন্তারেস এর খুব বেশিদিন সময় কাটানো হয়নি। আমি যখন কৈশোরে পা দিবো দিবো করছি তখন আন্তারেস চলে গেলো অজানার দেশে। এরপর শুরু হলো আমার আরেকটা জগত, যেটাতে আমি আন্তারেসের সাথে কথা বলি, আড্ডা দেই, পরামর্শ নেই। যতদিন আন্তারেস ছিলো, ততদিন পর্যন্ত তার দেওয়া দীক্ষার মূল্য বুঝে উঠতে পারিনি। সে চলে যাওয়ার পর আস্তে আস্তে শুরু হলো আমার আরেক পৃথিবীর অবকাঠামো তৈরি।

আন্তারেস আর আমি নদীর পারে বসে আছি। আন্তারেস পাতার বিড়ি টানতে টানতে বললো, একটা কথা মনে রাখবা ভাইয়ু। জীবনে ঠোঁট থেকে হাসি সরাবা না। পরিস্থিতি যত খারাপই হোক না কেন!

তার এই কথা রাখতে গিয়ে প্রথম বিপদে পরলাম একজনের লাশ দাফন করতে গিয়ে। সবার চোখে পানি, হাহাকার কান্নার রোল! আর আমার সাথে যেই কথা বলে বা তাকায়, আমি মুচকি মুচকি হাসি। সবাই খুব অবাক হয়ে তাকায়, মনে হয় যেন আমিই খুন করে মেরে ফেলছি লোকটাকে। বুঝলাম এই থিওরি কাজে লাগানো যাবেনা। কিন্তু ওই যে অবচেতন মনের একটা ব্যাপার আছে। খুব বিপজ্জনক ওইটা। সব সিরিয়াস মোমেন্টে হেসে ফেলি। খুব বড় অপরাধ করে ফেলছি, বাসায় সবাই বকা দিচ্ছে, আমি মাথা নিচু করে হাসতেছি। ক্লাসে স্যার পিটাচ্ছে, আমি মাথা নিচু করে হাসতেছি। কারো সাথে ঝগড়া হইছে, মাথা নিচু করে হাসতেছি।

তবে এই সমস্যা বাড়লো কিছুদিন পর থেকে। হয়তো খুব মন খারাপ। আমার চোখে পানি, কিন্তু হাসতেছি। মনে হলো আমি পাগলের পর্যায়ে চলে যাচ্ছি। নদীর পারে গেলাম। বসে অপেক্ষায় রইলাম আন্তারেসের। কিন্তু সেদিন সে আসলো না। আসলো হঠাত একদিন গভীর রাতে। আধো ঘুমের মধ্যে মনে হলো, সে রুমের চেয়ারে বসে আছে। আস্তে আস্তে মাথার কাছে এসে বসলো। বললো তুমি যা ভাবতেছো, ওইটা নিয়া দুশ্চিন্তার কিছু নাই। তুমি হাসো। হাসাও। বেঁচে থাকো। বলে হঠাত চলে গেলো। এরপর অনেকদিন আন্তারেস আসে নাই।

একদিন হঠাত করে আব্বা মারা গেলো। সবসময় ঢাকা থেকে গ্রামে নিয়ে যাইতো আব্বা, ওইদিন আমরা আব্বাকে ঢাকা থেকে গ্রামে নিয়ে গেলাম। লোকটা কথা কম বলতো, ওইদিন একেবারে চুপ হয়ে গেলো। আমি পাথর হয়ে গেলাম। বুক ফেটে যাচ্ছে কান্নায়, কিন্তু আমার মুখে মুচকি হাসি। আব্বাকে কবরে নামায়া দেওয়ার পর ওইদিন রাতে কবরের পাশে দাড়ায়া মন খুলে কাঁদলাম। কান্না শেষে মুচকি হাসি দিয়া বলে আসলাম, আব্বা ভালো থাইকো। আবার কবে কথা বলতে পারবো তোমার সামনে দাড়ায়া, জানি না।

আন্তারেস এসে কাঁধে হাত রাখলো। বললো, হারানোর ব্যাথা সয়ে যে মুখে হাসি ধরে রাখতে পারে। সে কখনো থেমে থাকবে না।

সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ সকাল ৯:৪৭
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারো বলছি দেশে জঙ্গী নেই উহা ছিল আম্লিগ ও ভারতের তৈরী

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:০৮


আওয়ামী নস্টালজিয়ায় যারা অন্তরের ভিতর পুলকিত বোধ করে তাদের কাছে বাংলাদেশ মানেই হলো জঙ্গী, অকার্যকর অথবা পাকিস্তানের মতো ব্যর্থ রাষ্ট্র। ৩৬ জুলাই পরবর্তী মহা-গণবিস্ফােরনকে কোনাভাবেই মানতে পারেনি তারা ভয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী-লীগের ছায়া দায়িত্ব নিয়ে তারেক জিয়া এখন দেশে

লিখেছেন অপলক , ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৩৬



সংবাদের টাইটেল অনেক কিছু বলে দেয়। ভেতরেটা না পড়লেও চলে। বস্তুত: এতদিন ধরে ভারতের গ্রীন সিগনাল পাচ্ছিলেন না, তাই তারেক জিয়া দেশে আসার সময় বারবার পিছাচ্ছিলেন। এখন চুক্তি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভোটের পর, আমরা পাকীদের বুটের নীচে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৩২



পাকীরা অমানুষ, অপসংস্কৃতির ধারক ও বাহক; ওরা ২টি জাতিকে ঘৃণা করে, ভারতীয় ও বাংগালীদের; ওরা মনে করে যে, বাংগালীদের কারণেই পাকিরা হিন্দুদের কাছে পরাজিত হয়েছে ১৯৭১... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফুড ফর থট!!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৩৫



একটা বিশাল আলোচনাকে সংক্ষিপ্ত আকার দেয়া খুবই কঠিন, বিশেষ করে আমার জন্যে। তারপরেও বর্তমান পরিস্থিতিতে ভাবলাম কিছু কথা বলা উচিত। দেশের আভ্যন্তরীন বা আঞ্চলিক রাজনীতিতে ক্রমাগত বড় বড় ভূমিকম্প... ...বাকিটুকু পড়ুন

তারেক রহমান আসবে, বাংলাদেশ হাসবে?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৩৮


আমি যখন স্কুলে পড়তাম, দুপুরের শিফটে ক্লাস ছিল। একদিন স্কুলে যাওয়ার আগে দেখি ছোটো মামা সংসদ টিভিতে অধিবেশন দেখছেন। কৌতূহল হলো, মামা এত মনোযোগ দিয়ে কী দেখছেন। আমিও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×