somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ক্ষমা করো নুহা- যে পৃথিবীতে আনলাম তোকে, বাসযোগ্য হয়নি সে আমারই

২০ শে জুলাই, ২০১১ রাত ১:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

‘মামনি আজকে থেকে তোমার নাম জিহ্বা’

‘কি নাম?’

‘জিহ্বা, তুমি চিনতে পারোনি? ঐ যে মুখের ভেতর থাকে, আর নড়াচড়া করে?’

কথাগুলো আমার ভাগনির। হুটহাট ফোন করে সে শ্লীল-অশ্লীল বিভিন্ন নামকরণ করে আমাদের। গালিও শিখেছে কিছু। তার ‘আমাদের বাসায় আসো এক্ষুনি’ আদেশের বীপরিতে ‘যেতে পারছিনা’ জাতীয় কোন কৈফিয়ত দিতে গেলে তার প্রয়োগ হয়। অতঃপর যাওয়া। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চায়ের হাতে সমর্পণ করা পাকস্থলি যখন গোগ্রাসে গিলতে চায়, সে তখন ভাতের প্লেট টেনে নিয়ে যায়, বলে ‘আমি তোমাকে খাইয়ে দেই’

আমি তাকে বুঝাই, আমি তো বড় হয়ে গেছি, হাত দিয়ে খেতে পারি।



বিশ্বাস করুন আর অবিশ্বাস করুন, ও তখন বলে ‘আমি তো তোমার মা, তাই খাইয়ে দেব’

অগত্যা...

ছোট ছোট হাত, চারটা ভাত তুললে তার তিনটা যায় পড়ে। আহারের তিন মিনিটের মামলার নিস্পত্তি হয় তিন ঘন্টায়। এর নাম কি? এর নাম কি ভালোবাসার অত্যাচার? একটা শিশুর মত করে কেউ কি কখনো এই অত্যাচার চালাতে পারে? আমি জানি একটা শিশুর কি অসীম ক্ষমতা। শুধু চারকোণা একটা ফ্ল্যাটের দুই/চারজন বাসিন্দা নয়, একটা পুরো পরিবারের নিউক্লিয়াস হয়ে ওঠে একটি শিশু, সকলের রিফ্রেশমেন্টের একমাত্র জায়গা হয়ে উঠবেই সে। ব্যাংক থেকে ‘বিষাদ’ লোন করলেও তার সান্নিধ্যের মুহূর্তগুলো হবে বিষাদহীন।

ওর নাম সামিহা। জন্ম ২০০৬ এর আগস্টে। ওর চেয়ে বয়সে একবছরের ছোট আরেকটি মেয়েচ, নাম নুহা, জন্ম ২০০৭ এর আগস্টে। নুহা হাসলে কেমন দেখাত আমি জানতাম না, আমি শুধু নুহার ছবি দেখেছি। নুহার বন্ধুরা ওর ছবি আর ‘আমি এখন বন্ধু ছাড়া’ প্ল্যাকার্ড নিয়ে আজ মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছিল প্রেসক্লাবের সামনে। চার বছর বয়সে ডাকাতদের হাতে প্রাণ দিতে হয়েছে নুহাকে। কি অদ্ভুত!! আগেরদিন দারুস সালামে কিশোর-তরুণেরা বিক্ষোভ করেছে তাদের বন্ধুদের নির্মম হত্যাকান্ডের বিচারের জন্য। আমিন বাজারের মানুষের শরীরে অন্য রঙের রক্ত? তারা কি খুন করে আনন্দ পায়? নাকি তারা বাধ্য হয়ে তুলে নিয়েছে নিজের নিরাপত্তার দায়? কোথায় ছিল পুলিশ, কোথায় ছিল এলিট ফোর্স র‌্যাব? আমিন বাজারের মানুষ কি পুলিশ চেনে না? র‌্যাব চেনে না? নাকি তারা জেনে গেছে ওদের কাছে তাদের নিরাপত্তা নাই? তাই তো সন্দেহের বসে হত্যা করল ছয়টি মানুষকে! নিহত ছয় কিশোর-তরুণের ছয়জন মাকে সান্তনা দেবে কে? এই দায় কার? রাষ্ট্রের নাকি এই সাতজন মায়ের? ‘যে পৃথিবীতে আনলাম তোকে, বাসযোগ্য হয়নি সে আমারই’- এই মায়েরা কি অদৃশ্য কন্ঠে সন্তানের বিদ্রুপ শুনতে পাবে না, ‘কেন তুমি আমাকে এই নরকে নিয়ে এলে মা?’

আজ চার বছরের একটা শিশুকে পার্কের দোলনা থেকে নেমে রাস্তায় আসতে হয়েছে তার বন্ধুর বিচার চাইতে। কোথায় যাচ্ছি আমরা? মাতৃহীন এই আমাকে যে কানেকানে আমাকে বলেছে ‘আমি তোমার মা হই’, তার জীবনের নিরাপত্তা কোথায়? সামিহা, মা আমার...



মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, রোজ রাতে অনাহারে ঘুমুতে যাওয়া কয়েক লাখ রাস্তার শিশু এখনো আপনার বাসভবন ঘেরাও করে ‘ভাত দে নইলে মানচিত্র খাবো’ বলে চিৎকার শুরু করেনি। শেষরাতের ঠান্ডায় উষ্ণতা প্রত্যাশী বস্ত্রহীন যে শিশু রাস্তায় কুকুরকে জড়িয়ে ধরে ঘুমায় তারা এখনো আপনার বাসভবন ঘেরাও করে ‘পরনের কাপড় চাই’ বলে চিৎকার করে ওঠেনি। কারওয়ান বাজারে রাস্তার পাশে ঝাঁকায় ঘুমানো শিশুগুলো আপনার নরম তুলোর বিছানার দখল চেয়ে চিৎকার করে বলতে শুরু করেনি ‘বাসস্থান আমার মৌলিক অধিকার’।

ওদের ৪র্থ মৌলিক অধিকার ‘শিক্ষা’র সুযোগের প্রশ্নই আসে না, তাই তারা জানেনা মহান সংবিধান তাদেরকে কত্ত অধিকার দিয়েছে! মৌলিক অধিকার!! তাই বিবস্ত্র শিশুরা ক্ষুধা পেটে রাস্তার ধারে ঝাঁকায় ঝাঁকায় ঘুমায়...



কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমরা মধ্যবিত্ত। সুযোগ থাকুক না থাকুক, এক নম্বুরী পথে না হলে অন্য পথ দিয়ে আমরা ঠিকই জোগাড় করি পেটের ভাত, বই-খাতা-শ্লেট। তাই আমরা জানি ঐ মুক্তিযুদ্ধ, ঐ সংবিধান আমাদেরকে পাঁচটি মৌলিক অধিকার দিয়েছে। ভয় পাবেন না, আমরা মধ্যবিত্ত। এত সহজে আমরা রাস্তায় নামি না, আমরা শান্তিকামী(!)। আমরা আপনাকে ক্ষমা করে দিচ্ছি, প্রয়োজন নেই খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থান-শিক্ষা-চিকিৎসার। সংখ্যাগরিষ্ঠের ক্ষমতায় আপনি সংশোধন করে সংবিধান থেকে কেটে দিন এই অধিকার, শুধু একটা দাবী আমাদের, আমরা আমাদের সন্তানদের স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুলাই, ২০১১ রাত ১:৪০
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×