সম্প্রতি ঢাকায় নিজেদের উন্নয়নের ফিরিস্তি দিয়ে বিল-বোর্ডে পুরো ঢাকা ছেয়ে ফেলেছে আওয়ামীলীগ। কত উন্নয়ন-ই না তারা করেছে......দেশ ডিজিটাল হয়েছে, 3-জি দেশে এসেছে, যানজট নিরসনে ফ্লাই ওভার হয়েছে, সমুদ্র সীমা জয়, শিক্ষার মান উন্নয়ন, পাসের হার বৃদ্ধি পেয়েছে, আর কত কি। বিগত ৩ রমজানে নাকি তারা নিরিবিচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ করে গেছে।
বেশিদূর যেয়ে খোঁজ নিতে হবেনা, রামপুরা-বনশ্রী এলাকায় খোঁজ নিলেই জানতে পারবেন যে রমজানে নিরিবিচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুৎ ও পানি এই এলাকার জনগণ পেয়েছে কিনা।
এতোই তাদের উন্নয়ন যে, উন্নয়নের ফিরিস্তি দিতে যেয়ে তারা অন্য কোম্পানির বিল-বোর্ড পর্যন্ত ছিনতাই করে সেখানে তাদের কর্মকান্ড প্রকাশ করছে (সূত্র- আজকের প্রথম আলো)।
এখন প্রশ্ন হল, এত উন্নয়ন তবুও কেন ভোটের মাঠে আর সাধারণ জনগণের প্রত্যাশার জায়গায় এরা ব্যর্থ?
উত্তরটা আমার মতে খুব সিম্পল। আপনি উন্নয়ন করলেন ঠিকই, কিন্তু যার/যাদের পকেটের টাকা মেরে এতো উন্নয়ন করলেন সেই জনগণ যদি এই উন্নয়নের ভোগকারী না হতে পারে, সুবিধা বঞ্চিত হয় তবে এই উন্নয়নের দরকার কি? গ্রামের মানুষের টাকা দিয়ে শহরের উন্নয়ন করলেন, শহরে উরাল সেতু করলেন কিন্তু গ্রামের রাস্তা এখনো চলাচলের অযোগ্য তাহলে এই উন্নয়নের বিপরীতে ফলাফল কি হবে তা সহজেই অনুমেয়।
দেশে 3 জি এসেছে ভালো কথা, কয়জনের পক্ষে তা ব্যবহার করা সম্ভব তা বিটিসিএল-ই ভালো জানে।
দেশ এখন ডিজিটাল, আর সেই ডিজিটাল দেশের ইন্টারনেট সংযোগের এমন খারাপ অবস্থা আর এত ব্যয়বহুল যে মানুষ মোবাইল ছাড়া ব্রডব্যান্ড ও ওয়াইম্যাক্স ব্যবহার করতে সাহস পায়না। যারা ব্যবহার করে তারাও জানে এর ভোগান্তির কথা। মোবাইল কোম্পানী তথা এসব অপারেটর এক চেটিয়া ব্যবসা করে গেলেও সাধারণ মানুষ পুরো অসহায় এদের কাছে।
শিক্ষার মান এতোই উন্নত হয়েছে যে, ডাবল এ+ নিয়েও ভালো কোন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে কেউ ভর্তি হতে পারেনা। গ্রাজুয়েশন করেও কেউ চাকরি পায়না। নানা-চাচা-মন্ত্রী কোটা তো আছেই।
হলমার্ক, শেয়ার বাজার, রেল কেলেঙ্কারী, পদ্মা সেতু, সোনালী ব্যাংক, ডেস্টিনি, বিসমিল্লাহ গ্রুপ সহ হাজারো কোম্পানির কোটি-কোটি টাকার দূর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের সফলতা শূন্য! এই সকল কোম্পানির জন্য যে সকল পরিবার পথের ফকির তারা কোন দুঃখে সরকারের পক্ষে যাবে?
এছাড়া বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড সহ সাগর-রুনী ইস্যু তথা বিশ্বজিত ও লিমন সহ ছাত্রলীগের সোনার ছেলেদের যা কর্মকান্ড গত ৫ বছরে চলেছে, তাতে সাধারণ মানুষের সরকারের বিপক্ষে অবস্থান নেয়া স্বাভাবিক। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের হয়রানী করতে সরকারের নেয়া পদক্ষেপ ছিল দেখার মত।
তাছাড়া যে দেশের প্রধানমন্ত্রী স্থানীয় ভোটে তার কর্মীদের পরাজয়ে দিশেহারা হয়ে বলতে পারে যে, ঈদের পর থেকে তাদের আমলে চালু করা পাওয়ার স্টেশন গুলো সব বন্ধ করে দিয়ে সাধারণ মানুষের দূর্ভোগ বাড়িয়ে দিয়ে তাদেরকে আগের সরকারের কথা মনে করিয়ে দেবে, সেই অপদার্থ নেত্রীকে সাধারণ জনগণ বর্জন করবে সেটাই স্বাভাবিক। উন্নয়নের বিপরীতে সরকারের এরকম হাজারো ব্যর্থতা আছে।
পরিশেষঃ উন্নয়ন যতই করেন, তা যদি মানুষের কাজে না লাগে আর তা যদি হয় সাধারণ মানুষের পকেট কেটে আর ভোগান্তি যদি উন্নয়নকে পেছনে ফেলে, তাহলে সেই উন্নয়নের ফিরিস্তি যতই ছিনতাই করা বিলবোর্ডে প্রকাশ করেন.........ফলাফলে জুটবে অশ্ব-ডিম্ব!