বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করার জন্য একদল বিপথগামী সেনাসদস্য যে ট্যাংক-কামান নিয়ে গিয়েছিল সেগুলোয় কোনো গোলা ছিল না। অথচ এসব কামান-ট্যাংক দেখে সবাই ভয়ে গর্তে লুকিয়েছে। রক্ষীবাহিনীর ক্যাম্প কাছেই ছিল। ওরা একটা গুলিও ছুঁড়েনি। অথচ ওরা একটু প্রতিরোধ গড়লে খুনিরা কিছুই করতে পারত না। অবশ্য ওদের প্রধান এমএন নুরুজ্জামানকে কৌশলে বিদেশে পাঠানো হয়েছিল। তাই হয়ত প্রস্তুত ছিল না উদ্ভুত পরিস্থিতিতে কী করতে হবে। তাছাড়া ওদের কিছু কাজকর্ম বিতর্কিত ছিল। ওরা নিজেদের অস্তিত্ব নিয়ে সংশয়ে ছিল।
অদ্ভুত আরও একটা ব্যাপার হলো বঙ্গবন্ধুকে নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্বে যারা ছিল, তাদের কাছে গুলি ছিল না। বদলানোর নাম করে কয়েকদিন আগে এগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু জানতেন না। জানলেও কোনো পদক্ষেপ নিতেন কি না কে জানে। ওনাকে সরানোর চেষ্টা চলছে বহুবার বলার পরও ওনি সতর্ক হননি। অনেকটা অরক্ষিত অবস্থায় ৩২ এ থাকতেন।
বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর কর্নেল তাহের ও খালেদ মোশাররফ এবং এম এ জি ওসমানির কর্মকাণ্ডও নিন্দনীয় ছিল। ওসমানী খোন্দকার মোশতাকের সামরিক উপদেষ্টা হয়েছিলেন। খালেদ মোশাররফ বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড নিয়ে তেমন মাথা ঘামাতে নিষেধ করেন। তাহের তো বলে বসেন, "ওর লাশটা দাফন করতে এলাউ করা উচিত হয়নি। বঙ্গোপসাগরে ফেলা উচিত ছিল। এখন তো ওখানে মাজার হবে।"
খোন্দকার মোশতাক শেখ কামালের উকিল বাপ ছিলেন। ১৪ আগস্ট রান্না করে নিয়ে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর জন্য। অথচ ওনিও ছিলেন বঙ্গবন্ধু হত্যার কুশীলব। বঙ্গবন্ধুর পিতৃবিয়োগের খবর শুনে মোশতাক না কি হামাগুড়ি দিয়ে কেঁদেছিলেন। বঙ্গবন্ধু শোক করবেন কী ওনি নিজেই মোশতাককে সান্ত্বনা দিতে শুরু করলেন। বঙ্গবন্ধুকে মোশতাকের সম্পর্ক ছিল তুমি পর্যায়ের। বেঈমানদের চরিত্র অদ্ভুত। অবশ্য ইতিহাসে এমন ঘটনা নতুন না। জুলিয়াস সিজারের বুকে বন্ধু ব্রুটাস ছুরি চালিয়েছিল। ইন্দিরা গান্ধীকে তার বিশ্বস্ত দেহরক্ষীরাই হত্যা করেছিল। মহাত্মা গান্ধীর হত্যাকারী নাথুরাম গডসেও একসময় গান্ধীভক্ত ছিল।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই আগস্ট, ২০২২ সকাল ১০:১৯