বাংলাদেশের মানুষ মোটা দাগে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থি। জামায়াত, জাপা বা অন্য দলগুলোর কিছু ভোট থাকলেও অদূর ভবিষ্যতেও প্রধান দুটো দলকে টপকে যেতে পারবে বলে মনে হয় না।
ভালো করলেও খারাপ করলেও দুটো দলের মধ্যেই থাকবে। কেন এমন হয়? আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের দল। তাদের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়েছে। দেশের অগ্রগতিও হয়েছে বেশ। তবে দলটাকে গণতন্ত্র আহরণকারী বলা হচ্ছে। কারণ, গত দুই মেয়াদে কোনোমতে নির্বাচন করে ক্ষমতায় আছে। কারচুপির ভয়ে বড় আরেকটি দল নির্বাচনে আসেনি।
অপরদিকে স্বাধীনতা বিরোধীদের নিয়ে গঠিত দল বিএনপি। দলটি যখন গঠন করা হয়, কিছু উচ্চাভিলাষী সেনা কর্মকর্তা ও মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের লোক ছাড়া এখানে আর কাউকে পাওয়া যায়নি। সেনানিবাসে জন্ম নেওয়া দলটি রাজপথে বেড়ে উঠে। যদিও তাদের শাসনামল নিয়ে সমালোচনা আছে। তবুও দলটির বেশ জনসমর্থন লক্ষ্য করা যায়। আওয়ামী লীগের বিরোধীরা যেমন; এর বাইরে নতুন প্রজন্ম যারা বিএনপির আগের শাসনামল দেখেনি, তাদের অনেকেই দলটিকে সমর্থন করছে।
ক্ষমতাসীনদের বাড়াবাড়ির দরুণ একসময়কার পতিত দল এখন গণতন্ত্রের ধারক ও বাহক। এমতাবস্থায় করণীয় কী? বিএনপিকে সমর্থন করা? অনেকেই বলছেন, জনগণ যাকে বেছে নেবে, তাকেই নিক। এটা কতটুকু যুক্তিসংগত? জনগণ যদি চোর-বাটপারকে বেছে নেয়, তাও মেনে নিতে হবে? বাংলাদেশের মানুষ ঠিক কতটুকু রাজনীতি সচেতন যে যোগ্য লোককে বেছে নেবে? মাত্র ৫০০ টাকায় ভোট কেনাবেচার নজির আছে অনেক। গণতন্ত্রের নামে কি আমরা মূর্খদের বেছে নেব? তারেক রহমান কি কোনোভাবে দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্য?
অন্ধভাবে দেখি অনেকে একে ওকে সমর্থন করছে। খালেদা, হাসিনা ভুল করলেও তাদের ভুলকে ফুল বিবেচনা করা হয়। এত এত শিক্ষিত হয়ে কী লাভ আমরা যদি অন্যায়কে অন্যায় না বলতে পারি? আমাদের জন্মদাতাও যদি ভুল করে, অন্যায় করে আমরা কি মেনে নেব? দলের চেয়ে নাকি দেশ বড়। বাংলাদেশের কয়জন মানুষ এটা মানে? নেতা যা বলছে, তাই অন্ধভাবে বিশ্বাস করে দেশ ও জাতির ক্ষয়-ক্ষতি করা কতটুকু যৌক্তিক? আমরা কেন সাদাকে সাদা কালোকে কালো বলতে পারি না?
কেউ কি অস্বীকার করবেন দেশে সুশাসন বেশি দরকার? দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখাও জরুরি। অথচ এদিকে নজর নেই কারও। ক্ষমতাসীনরা হয়তো জানেন না বাজারদর। বিরোধীরা মনে করছে তারা ক্ষমতায় এলে সব ঠিক হয়ে যাবে। জনগণকে বোঝাচ্ছে ভোটাধিকার বেশি দরকার। ভোটাধিকার পেয়ে বিজয়ী হয়ে দেশের কী করবে, তা আগেও দেখা গেছে। যদিও এটা ঠিক তখন দায়বদ্ধতা বেশি থাকবে।
গণতন্ত্র, ভোটাধিকার- এগুলো ফাও কথা। ১৯৯১ সাল থেকে আজ পর্যন্ত গণনা করলে তাই দেখা যায়। সুশাসন বেশি দরকার। সেটা কোথায়? দিনদুপুরে সন্ত্রাসীরা গুলি করে চলে যায়। পুলিশ আসামি ধরে কিন্তু যে জীবন গেল, তা কি ফেরত পাওয়া যায়? মানুষ কেন দ্বিদলের বৃত্ত ভেঙে কেবল দেশের কথা ভাবে না? যে যে দলই করুক না কেন, কেন মেনে নেয় না এক দলের কর্মীরা অন্য দলের ভাই-বন্ধু? কেন হিংস্র হতে হবে? বিরোধীকে হত্যা করতে হবে? একই দেশের মানুষ, একই ভাষা আবার একই ধর্ম, তবুও কেন ভ্রাতৃত্ববোধ তৈরি হয় না।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে আগস্ট, ২০২৩ রাত ১১:২৪