শিখ সম্প্রদায় অধ্যুষিত ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশ বহুদিন যাবত স্বাধীনতার জন্য লড়াই করে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে খালিস্তান নামক শিখ রাষ্ট্র। ভারত সরকার শক্ত হাতে এ লড়াই প্রতিহত করেছে। ১৯৮৪ সালের ৫ জুন স্বর্ণমন্দিরে অভিযান পরিচালনা করা হয়। কারণ, এখান থেকেই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া হচ্ছিল। এ অভিযানে ৮৩ জন ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছিলেন। ২৪৮ জনের গুলি লেগেছিল। শিখ আন্দোলনের প্রধান জার্নাইল সিং ভিন্দ্রানওয়ালেসহ বিচ্ছিন্নতাবাদী মারা গিয়েছিলেন ৪৯২ জন আর দেড় হাজারেরও বেশি লোক গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।
অপারেশনের নাম ছিল অপারেশন ব্লু স্টার। এ অপারেশনের ফলে শুধু ভারতের নয়, সারা বিশ্বের শিখ সম্প্রদায়ের ধর্মানুভূতিতে আঘাত লেগেছিল। ভারতীয় সেনাবাহিনী নিশ্চিতভাবেই জয়ী হয়েছিল, কিন্তু রাজনৈতিক পরাজয় হয়েছিল তৎকালীন ভারত সরকারের। অবশেষে ইন্দিরা গান্ধীকে নিজের প্রাণ দিয়ে এর মূল্য চোকাতে হয়েছিল।
সম্প্রতি কানাডায় খালিস্তান আন্দোলনের নেতা হারদীপ সিং নিজ্জার খুন হন, যিনি ১৯৯০ সালের শেষদিকে কানাডাতে চলে গিয়েছিলেন। ২০২০ সালে তাকে 'সন্ত্রাসবাদী' হিসেবে ঘোষণা করেছিল ভারত। একাধিক নিষিদ্ধ সংস্থার জন্য নিয়োগের কাজ এবং প্রশিক্ষণে তিনি সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন- এমনটাই অভিযোগ ছিল। তিনি 'শিখ ফর জাস্টিস'-এর অংশ ছিলেন। ২০০৭ সালে লুধিয়ানা বিস্ফোরণের ফলে ৬ জনের মৃত্যু এবং ৪২ জন আহত হয়েছিলেন; এর সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ উঠেছিল হারদীপের বিরুদ্ধে। এছাড়াও ২০১০ সালে পাটিয়ালায় একটি মন্দিরে বিস্ফোরণের ঘটনায় উঠে আসে তার নাম।
যাহোক, হারদীপ হত্যার ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায় কানাডা। জানায়, এ হত্যাকাণ্ডে ভারতের সম্পৃক্ততা আছে। এ কারণে সেদেশের এক ভারতীয় কূটনীতিককে বহিষ্কার করে। ভারতও ক্ষুব্ধ হয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ এক কূটনীতিককে বহিষ্কার করে কানাডিয়ানদের জন্য ভিসা স্থগিত করে। ভারত-কানাডার সম্পর্ক এখন তলানিতে। এসবের রেশ কাটতে না কাটতেই কানাডায় সুখদুল সিং নামে আরেকজন খালিস্তান আন্দোলনের কর্মী খুন হয়েছেন।
শুধু অমৃতসর কেন, আসাম, ত্রিপুরা, মণিপুর, কাশ্মিরসহ ভারতের অনেক প্রদেশই স্বাধীনতা চায়। স্বাধীনতা চায় পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশও। সাবেক পূর্ব পাকিস্তান, বর্তমান বাংলাদেশও একসময় সংগ্রাম করে স্বাধীন হয়েছে। ভারতের এসব প্রদেশ স্বাধীনতা পাচ্ছে না কেন? বেলুচিস্তান স্বাধীনতা পাচ্ছে না কেন?
শ্রীলঙ্কার তামিলরা এলটিটিই'র নেতৃত্বে ৩০ বছর লড়াই করে গেছে স্বাধীনতার জন্য। অবশেষে ২০০৯ সালে তাদের নেতা ভেলুপিল্লাই প্রভাকরণ নিহতের মাধ্যমে তাদের লড়াই থামে। এদের শক্তিশালী বাহিনী ছাড়াও নিজস্ব বিমানবন্দর ছিল। তবুও কেন এদের আন্দোলন হালে পানি পায়নি?
কোনো দেশই আসলে নিজেদের ভূখন্ড হারাতে চায় না। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার কথা বাদ। বাংলাদেশের পাহাড়িরা বহুদিন যাবত স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখছে। বাংলাদেশ কি স্বাধীনতা দিয়ে দিয়েছে? দেয়নি বরং সেনাবাহিনী পাঠিয়ে অপারেশন চালিয়েছে। প্রত্যেকটা রাষ্ট্রই সর্বশক্তি প্রয়োগ করে আন্দোলন দমিয়ে রাখে।
যদিও শক্তি প্রয়োগ দীর্ঘস্থায়ী সমাধান নয়। শরীরে ঘা হলে যেমন ঠিক চিকিৎসা নিতে হয়, এ সমাধানটাও তেমনই হওয়া উচিত। কেন আন্দোলন সংগঠিত হয়; সেসব খোঁজ করা উচিত। নিজেদের ন্যায্য হিস্যা পেলে বোধহয় কেউই বিচ্ছিন্ন হতে চায় না। পাকিস্তান যদি বাংলাদেশিদের ওপর অন্যায় আচরণ না করত, পাকিস্তান বিচ্ছিন্ন হতো?
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পেছনে লড়াই যেমন গুরুত্বপূর্ণ ছিল, আন্তজার্তিক সমর্থন আরও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আন্তর্জাতিক সমর্থন ছাড়া এ যুগে কোনো রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা অসম্ভব। এলটিটিই সুসংগঠিতভাবে স্বাধীনতার লড়াই করেছে। কেবল আন্তজার্তিক সমর্থনের অভাবে তাদের আন্দোলন ব্যর্থ। ভারত, পাকিস্তান বা যে কোনো দেশের যে কোনো জাতিগোষ্ঠী যতই লড়াই-আন্দোলন করুক, আন্তর্জাতিক সমর্থন না থাকলে মনে হয় না তারা তাদের কাঙ্খিত ফল পাবে।