হোটেলে ঢুকেছি খাবার পার্সেল করে বাসায় নেব। এর মধ্যে এক মহিলা সাহায্য চাইতে এসেছে। খেয়াল করলাম সুস্থ-সবল মানুষ। চাইলেই কাজ করে খেতে পারে। একসময় মায়া কাজ করলেও এদের দেখলে এখন রাগ হয়। অনেকে নিজে খেতে পারে না কিন্তু বাচ্চা পয়দা করে তিন-চারটা করে। মনে হয় এদের ভরণপোষণের দায়িত্ব অন্য মানুষ নিয়েছে। নিজেদের চলা যেখানে কঠিন সেখানে সুস্থ কাউকে টাকা দিয়ে ভিক্ষাবৃত্তিকে উৎসাহিত করার মানে হয়? দিলাম ঝাড়ি।
একই রকম ঘটনা দু'দিন আগেও হলো। সুস্থ-সবল এক মহিলা সাহায্য চায়। স্বামীর চিকিৎসা করাবে। বিরক্ত হয়ে বললাম, কাজ করতে পারেন না? বিড়বিড় করে কী জানি বলে চলে গেল।
ঢাকায় যারা থাকেন তারা জানেন অনেকে এখন মরা মা-বাবার নাম বেচে খায়। 'আমার মা মারা গেছে, বাড়ি নেওয়ার টাকা নেই', 'আমার মেয়ের বিয়ে দেব, সাহায্য চাই'। এসব কমন ঘটনা। কারওয়ান বাজারের ওদিকে এক মহিলা এক বছর যাবত মেয়ের বিয়ের টাকা তুলছেন।
ঢাকা শহরের বিভিন্ন মসজিদ-মাদ্রাসার সামনেও, বাজারঘাটে, এমনকি যানবাহনে ভিক্ষুক বা টাকা তোলা এমন লোকের অভাব নেই। ঢাকা কেন সারা দেশেই একই অবস্থা। অসুস্থ হলে বা পঙ্গু হলে বা পরিস্থিতির কারণে সাহায্যপ্রার্থী হলে না হয় কথা ছিল; কিন্তু এসব সাহায্য প্রার্থী সুস্থ-সবল এবং দিনের পর দিন এভাবেই চলে। কাজ দিলে করতে চায় না। ফাও টাকা পেলে কাজ করার দরকার কী? এসব তাদের ব্যবসা।
বাচ্চা সাথে নিয়ে অনেককে দেখা যায় ভিক্ষা করতে, যেন দৃষ্টি আকর্ষণ করা সম্ভব হয়। অথচ এসব ভিক্ষাবৃত্তি বাদ দিয়ে মেসে বা মানুষের বাসায় কাজ করলেও ম্যালা টাকা পাওয়া যায়। অন্তত কারও কাছে তো হাত পাততে হয় না। নারীরা সেলাইয়ের কাজটাও শিখতে পারে। এসবের বাইরে বলতে গেলে শীতের মৌসুমে পিঠে বানিয়ে বেচা যায়। চা-পান বেচা যায় সারাবছর (সুস্থ তো বটেই অসুস্থ যে কেউ ফুচকা-ঝালমুড়ি বেচতে পারে)।
লোভের ফাঁদে পড়ে অনেক মহিলা বিদেশে যায়। সেখান থেকে আসে গর্ভবতী হয়ে। আগে লোকজন মনে করত ওসব দেশের মানুষ দুধে ধুয়া তুলসীপাতা। কিন্তু এখন তো মিডিয়ার কল্যাণে বোঝা যায় বদমাশ সব জায়গায় আছে। তাও কেন এরা বিদেশে যায়?
শীতকালে গাড়ি থামিয়ে থামিয়ে টাকা তোলা (ওয়াজের নামে) আরেক বিপদ। লোকজন মান-সম্মানের ভয়ে কিছু বলতেও পারে না। শীত শেষ হলেও এদের উৎপাত কমে না। ওমুক মাদ্রাসার নামে, তমুক মাদ্রাসার নামে টাকা তোলা চলেই। অনেকসময় দেখা যায় ওসব নামে মসজিদ-মাদ্রাসাই নেই।
আরেক যন্ত্রণা হিজড়ারা। এরা তো রীতিমতো চাঁদাবাজি করে। টাকা না দিলে গালমন্দ করে। মান-মর্যাদা ঠিক রাখতে দিতেই হয় কিছু।
এত এত যন্ত্রণা ভোগ করে সাধারণ মানুষের বাঁচা কঠিন। দেখার যেন কেউ নেই। প্রশাসন থেকে শক্ত পদক্ষেপ নিলে এদের উৎপাত কমত। মানুষ স্বস্তি পেত।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ৮:২২