পঞ্চমবারের মতো ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, টানা চতুর্থবার। বুধবার (১০ জানুয়ারি) নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যরা শপথ নিয়েছেন, বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) মন্ত্রীরা। বিগত নির্বাচন বা মন্ত্রীসভার চেয়ে এবারের নির্বাচন বা মন্ত্রীসভা বেশ চমকপ্রদ। বিশেষ করে নওফেল, বা আরাফাতের মতো লোকজন মন্ত্রীসভায় যুক্ত হওয়ায় জনমনে আশার সঞ্চার হয়েছে। কম সংখ্যক মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগ করলেও মনে হচ্ছে যোগ্য লোকদেরই নির্বাচিত করেছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখা গেল লোকজন ব্যারিস্টার সুমনের জন্য জমি লিখে দিতে প্রস্তুত, মাশরাফীর জনপ্রিয়তায়ও ভাটা পড়েনি। মোদ্দাকথা, লোকজন ওজন বা এ জাতীয় কিছু না দেখে পরিবর্তন চেয়েছে (যাদের রাখার রেখেও দিয়েছে। যেমন: নিক্সন চৌধুরী)। ফলাফল এত সংখ্যক স্বতন্ত্র বিজয়ী। আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট অনেক এমপি-মন্ত্রী বাদ পড়ায় বোঝা যাচ্ছে রাজনীতি তার খোলস পাল্টেছে।
এদিকে, এ নির্বাচনে বিএনপিসহ অনেক রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করেনি। বিএনপি বলছে, জনগণ আওয়ামী লীগকে বর্জন করেছে। যদিও মনে করা হয় গণ্ডগোলজনিত ভয়ের কারণে অনেক মানুষ ভোটকেন্দ্রমুখী হয়নি। এটাকে কীভাবে বলা যায় জনগণ ভোট বর্জন করেছে, বোঝা যাচ্ছে না। এত এত খুনোখুনি, অগ্নিসংযোগ হলো, লোকজন কীভাবে বাইরে বের হবে; সেটাও বিবেচ্য।
যাহোক, নির্বাচনের আগে অনেক কথা হলেও দেখা যাচ্ছে চিন-রাশিয়া-ভারত-পাকিস্তানসহ বিশ্বের অনেক দেশ শেখ হাসিনাকে অভিবাদন জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য মোচড় দিলেও মনে হয় অচিরেই তারা অভিবাদন জানাবে। ফেসবুক আর বাস্তবতা যে এক নয়, সেটাই বাস্তব। সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে আমরা অনেক সরকার পরিবর্তন করার প্রচেষ্টা দেখেছি। আদতে কাজের কাজ কিছু হয়নি।
আওয়ামী লীগের কেউ, পুলিশ অথবা মুক্ত চিন্তার কেউ মারা গেলে ফেসবুকে অনেক হা হা রিয়েক্ট দেখা যায়। অনেকে এটাকে আম জনতার বিজয় বলে। এরা আসলে কোন শ্রেণির জনতা? কিশোর বয়সের কিছু ভ্যাগাবন্ড ছেলেপেলে নিশ্চয়ই? উচ্চ পর্যায়ের কেউ এসব বিষয় নিয়ে মাথা ঘামানোর কথা না।
সরকারের বিপক্ষে অনেকে আছে, পক্ষেও যে কম; তা নয়। আওয়ামী লীগের লাখ লাখ অনুসারী যদি এদের মতো অহেতুক পোস্ট-রিয়েক্ট নিয়ে পড়ে থাকত, তাহলে তাদের সংখ্যাও কম হওয়ার কথা না। অন্তত সাবেক-বর্তমান যেসব সংসদ সদস্য বা মন্ত্রী আছেন তাদের আত্মীয়-স্বজনও কিন্তু কম না। ছাত্রলীগের অনুসারীরাও তো বাদ না। এরা যদি ডিফেন্ড করত, তাহলেও খেলা জমত। এরা কেন এসব করে না?
অনেকের অনেক উত্তর। কেউ কেউ বলেন, এদের সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে ভাষা খারাপ করার কী দরকার? এরা এ জায়গায়ই পারে। সুতরাং, এড়িয়ে যাওয়াই মঙ্গল।
ফেসবুক বা ইউটিউব এখন গুজবের আখড়া হয়ে গেছে। যে যা খুশি লিখে প্রচার করছে। অনেকে বিশ্বাসও করছে। মানুষ গুজবই বেশি বিশ্বাস করে। আজকাল মাছ-মাংসেও স্রষ্টার নাম পাওয়া যায়। অনেক ধর্মগুরু যা খুশি তাই বলে যান। আগে পার পেয়ে গেলেও এখন ধরা পড়ে যান অনেকে। আমির হামজা বা তারেক মনোয়ারের কথা অনেকের জানার কথা। তারেক মনোয়ার নাকি অক্সফোর্ডের শিক্ষক ছিলেন, ইংলিশ ক্লাবে খেলেছেনও। এসব জারিজোরি শেষ হয়ে গেছে। লোকজন যথেষ্ট সচেতন। তাও দুঃখজনকভাবে দেখা যায়, এদের ভুল ধরলে অনেকে তেড়ে আসে। বলে, ধর্মের বিরুদ্ধাচারণ হচ্ছে। টাউট-বাটপারদের বিপক্ষে কথা বললে সেটা কেমনে ধর্মের বিরুদ্ধাচারণ কে জানে।
টাউট-বাটপারদের পক্ষাবলম্বন করা লোকজন কিন্তু কম না। এরাও আরেক ধরনের বাটপার। এ শ্রেণিও মানুষের মৃত্যুতে ভেটকায়। আবার নিজেদের কেউ মরলে সেখানে হা হা দিলে নসিহত করতে আসে। যদিও ধর্ম এসবের অনুমোদন দেয় না। কিন্তু তবুও এরা নিজেদের স্বার্থে নিজেদের মতো ধর্ম ব্যবহার করে। অবশ্য এটা রাজনীতির একটা অংশ বটে।
নওফেল শিক্ষামন্ত্রী হওয়ায় এদের গাত্রদাহ শুরু হয়েছে। নওফেল আধুনিক চিন্তা-চেতনার শিক্ষিত লোক। ধর্মান্ধরা ওনার উত্থান সহ্য করার কথা না। দেখলাম অনেকে ব্যারিস্টার সুমনের মুণ্ডুপাত করছে। কারণ, উনি রাজাকারদের বিচারের কাজে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। উনাকে ইসলাম বিদ্বেষী প্রমাণের জোর চেষ্টা চলছে। যদিও উনি প্র্যাক্টিসিং মুসলিম। বাটপারের দল নিজেদের অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য ধর্মকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। এদের ফাঁদে পড়ে অনেকের আবার ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ তৈরি হয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জানুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪