মনে পড়ে, প্রায় মাস দেড়েক আগে গত হওয়া বছরের এই দিনে, অর্থাৎ ২০শে ফেব্রুয়ারী দিনটি ছিলো শুক্রবার।
সেই দিনটি ছিলো আমাদের সবার অতি প্রিয় সবার ছোট খালামণির ছোট রাজপুত্তুরটির ৩য় জন্মদিন। অর্থাৎ, সেদিন সেই পিচ্চিটার ৩য় জন্মদিন ছিল। বড় আরেকটি ছেলেও আছে। সেটিও ঠিক যেন ছোটটিরই মত। গত বছরের নভেম্বর মাসের ৪ তারিখে বড় ছেলেটি ১০ বছর বয়সে পা দিয়েছিলো।
যা বলছিলাম। সেই ছোট ছেলেটির জন্মদিনের আনন্দের রেশ কাটতে না কাটতেই আমাদের জন্য ছিলো একটি চরম ধাক্কা।
দিনটি ছিলো শুক্রবার। আমরা ময়মনসিংহে থাকি। কিছুদিন আগেই একটি বড়সড় ফাঁড়া কেটে গিয়েছে ভেবে আমরা স্বাভাবিক মুডে ছিলাম। আমার ছোট খালা থাকতেন ঢাকায়।
আমার ছোট খালার কিউট পিচ্চিটার জন্মদিনের রেশ কাটতে না কাটতেই সেদিনই আমার ছোট খালা এই পৃথিবী থেকে চিরদিনের জন্য বিদায় নেন। সেদিনই বলতে, সেদিন বিকেলেই।
আমার ছোট খালামণির উভয় কিডনির ৮০% ড্যামেজ অবস্থা ধরা পড়ে। এক লাফেই ৮০%। এর আগে আরও হাজার টেষ্ট করতে দেওয়া সত্বেও ধরা পড়েনি। হঠাৎ করেই ২০০৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে ধরা পড়ে। সময়টা খুবই মারাত্মক ছিল। কারণ, ধরাই পড়লো কিনা একেবারে গিয়ে ৮০% এ। এর মাঝেই তাড়াহুড়ার মাঝে কোনমতে কিডনি জোগাড় করা হলো। আমার খালামণির ব্লাড গ্রুপ ছিলো ও+। এই গ্রুপের কিডনি তখন জোগাড় করা কঠিন হয়ে উঠেছিল। আমাদের নিজেদের মাঝে ও+ গ্রুপের ব্লাড খুব কমই আছে। আমি ও+। আমি নিজেই আমার প্রাণপ্রিয় খালামণিকে কিডনি দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বয়সের বাধার কারণে দিতে পারিনি।
শেষে ও+ কিডনি পাওয়া গিয়েছিলো। কিডনি ট্র্যান্সপ্ল্যান্টও সফলভাবে করা হয়েছিলো। আমার খালামণিও প্রায় পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন। ট্র্যান্সপ্ল্যান্ট পরবর্তী ডায়ালাইসিস চলছিলো এ্যাপোলো হসপিটালে। কিন্তু ২০শে ফেব্রুয়ারী বিকেলে হঠাৎ করে হার্ট অ্যাটাক। এবং কিছু বুঝে ওঠার আগেই উনি আমাদেরকে ছেড়ে চিরতরে বিদায় নিলেন, আমাদের সকল ভাই-বোনদের সবচাইতে প্রিয় খালামণি।
আজ তাঁর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। বিগত একটি বছরের পুরোটা সময়ই উনার কথা খুব মনে পড়েছে। আজ আরও বেশি করে মনে পড়ছে। কেন এমনটা হলো? নিজেই নিজেকে সান্তনা দিই, "জন্মিলে মরিতে হয়" বলে। কিন্তু তাই বলে এমন কম বয়সেই যে কারও বিদায় মনে গভীর দাগ কাটে।
ব্যস্ত জীবনের কারণে প্রিয় এই খালামণির সাথে অনেক কম দেখা হতো। তারপরও সময় পেলেই ঢাকায় ছুটে যেতাম। সর্বশেষ দেখা হয়েছিল ২০০৮ সালের মে মাসের ১৯ তারিখে। আমার ছোট মামার বিয়ের দিন। এরপর আর দেখা হয়নি। উনি অসুস্থ থাকাকালে একটা কথা অনেক বলতেন....
"এখন তো এমনিতে দেখতে আসো না। আমি যদি মারা যাই, তাহলে তোমরা সবাই'ই আমাকে দেখতে আসবে।"
তারপর তো দেখলাম সর্বশেষ দেখা।
কথাটি কেন যে এভাবে সত্যি হলো!!
উল্লেখ্য, আপনারা আমাকে যে নামে চেনেন, অর্থাৎ আমার "নির্ঝর" নামটিও আমার ছোট খালামণিরই প্রদত্ত। সে কারণেই কি না, সর্ব মূহুর্তেই উনার কথা খুব মনে পড়ে।
আল্লাহ তা'য়ালা উনাকে বেহেশত নসীব করুন।