somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিশ্বকাপ ফুটবল ২০১০ এর প্রথম কোয়ার্টার ফাইনাল।(একজন অতি সামান্য ফুটবল ভক্তের দৃষ্টিতে)

০২ রা জুলাই, ২০১০ দুপুর ১২:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দেখতে দেখতে পৃথিবীর বেশিরভাগ জাতি এবং মানুষের অতি আরাধ্য বিশ্বকাপ ফুটবল প্রায় শেষের পর্যায়ে। আর মাত্র ৯ দিনেই ফয়সালা হয়ে যাবে, কারা আনন্দে কাঁদবে আর কারা বেদনায় কেঁদে বিদায় নিবে। তারই প্রথম ধাপ(নকআউট পর্ব/দ্বিতীয় রাউন্ড) শেষ হয়েছে ২৯ তারিখে। এখন শুধুই উত্তেজনাময় কিছু ম্যাচ। এবারের বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করা ৩২ দলের সেরা ১৬টি দলই উঠেছিলো ২য় রাউন্ডে। সেখান থেকে সেরা ৮ দল। নিয়মানুসারে লড়াইটা ক্রমেই ছোট হচ্ছে। এবং নকআউট পর্ব হচ্ছে পরীক্ষার আসল স্থান। ১ম রাউন্ডটা ঠিক যেন মডেল টেষ্টের মত। যা ভুলভাল থাকবে, সেগুলো সেরে নিয়ে আবারও পরীক্ষা করার জন্য ৩টি ম্যাচ হাতে থাকে। গত ৪ বছর দলগুলো কিভাবে গড়ে উঠেছে, সেটা বোঝার প্রথম ধাপই থাকে ১ম রাউন্ড। কোন ম্যাচে ভুল করে ফেললেও সেটা শুধরে নেওয়ার সুযোগ থাকে। কিন্তু ২য় রাউন্ড থেকে সেই সুযোগটা নেই। খারাপ খেললে বাদ যেতে হবে। তবে কিছু কিছু দল সেটাও করতে পারেনি। যেন কোন ক্লাসে সারাবছর ভালো করতে পেরেও ঠিক পরীক্ষার আগে মনযোগ উধাও হয়ে যাওয়া। তারই প্রমাণ ইতালিয়ান ফুটবল দল। তারাই ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন। নিঃসন্দেহে তাদের প্রথম রাউন্ড থেকে বাদ যাওয়াটাই সবচাইতে বড় ধাক্কা হয়ে এসেছিলো ফুটবল বিশ্বের জন্য। তারওপর গতবারের রানার্সআপ ফ্রান্সের বিদায়ও। ফ্রান্সের ব্যাপারে তেমন কিছু বলা যায় না। কারণ, ওরা এবার তেমন কোন দল হয়ে বিশ্বকাপে আসেনি। তবে ওদের বাদ পড়ে যাওয়াটা অবশ্যই শকিং। হোমওয়ার্ক ঠিকমতো করতে পারেনি যে দলগুলো, সেগুলোর মাঝে অবশ্যই কঠিনভাবে উল্লেখ করতে হয় ইতালি এবং ফ্রান্সের কথাই। যদিও ইতালির ব্যাপারে আমার মনে হয়, ইতালি বোধহয় মাত্রাতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসে ভুগছিলো। এটাই ওদের পতনের কারণ। শুরুতে প্যারাগুয়ের সাথের ড্র মেনে নেওয়া যায়। প্যারাগুয়ে মোটামুটি শক্ত দলই আছে। তারই প্রমাণ রেখেছে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে এসে। কিন্তু পরবর্তীতে নিউজিল্যান্ডের মত একটা দলের সাথে ড্র করাটা মেনে নিতে খুবই কষ্ট হয়। নিউজিল্যান্ডের মত দল প্রতিটা ম্যাচে ওদের চাইতে কঠিন প্রতিপক্ষের সাথে খেলে প্রতিটা ম্যাচই ড্র করে ৩ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের ৩য় স্থানে থেকে বিশ্বকাপ হতে বিদায় নিয়েছে। কিন্তু ইতালি? দুই ম্যাচ ড্র এর সাথে এক ম্যাচ হেরে গিয়ে মাত্র ২ পয়েন্ট নিয়ে বিদায় নিয়েছে। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের কাছ থেকে এটা আমরা কেউই আশা করিনি। শুভকামনা থাকলো ওদের প্রতি।
স্পেন শুরুতেই অপ্রত্যাশিতভাবে সুইজারল্যান্ডের কাছে হেরে গিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করেও এখন অনেকটা স্বপ্ন দেখাচ্ছে। জার্মানিরও সার্বিয়ার কাছে হার অপ্রত্যাশিত ছিলো।

২য় রাউন্ডে আসার পথে একমাত্র দুইটি দল গ্রুপ পর্বে নিজ নিজ গ্রুপের প্রতিটি ম্যাচই জিতে ৯ পয়েন্ট নিয়ে ২য় রাউন্ডে এসেছিলো। সে দুইটি হলো আর্জেন্টিনা এবং নেদারল্যান্ডস। ৭ পয়েন্ট(দুইটি জয়, একটি ড্র) করে নিয়ে এসেছিলো দুইটি দল। ব্রাজিল এবং উরুগুয়ে। ৬ পয়েন্ট(দুইটি জয়, একটি হার) করে নিয়ে এসেছিলো চারটি দল। স্পেন, চিলি, জাপান এবং জার্মানি।

অবশ্য এসব পয়েন্ট-টয়েন্ট কোন কাজে লাগবে না এখন।

২য় রাউন্ডে জার্মানির কাছে হেরে বাদ গিয়েছে ইংল্যান্ড। মেক্সিকো হেরেছে আর্জেন্টিনার কাছে। ব্রাজিল জিতেছে চিলির সাথে, পর্তুগাল হেরেছে স্পেনের কাছে, উরুগুয়ে বিদায় করে দিয়েছে এশিয়ার ভরসা দক্ষিণ কোরিয়াকে। নেদারল্যান্ডস জিতেছে ইতালিকে হারিয়ে ২য় রাউন্ডে উঠে আসা স্লোভাকিয়াকে। ইউএসএ হেরেছে ঘানার সাথে এবং টাইব্রেকার ট্র্যাজেডিতে এশিয়ার আরেক দল জাপান হেরেছে প্যারাগুয়ের কাছে।

আজ থেকে শুরু হচ্ছে কোয়ার্টার ফাইনাল। প্রথম ম্যাচটিই আগুন ঝরানো। ব্রাজিল বনাম নেদারল্যান্ডস। ব্রাজিল অবশ্যই এগিয়ে থাকবে, জনপ্রিয় দল এবং খেলার মান অনুসারে। কিন্তু নেদারল্যান্ডসকে পিছিয়ে রাখার সাহসও কারও আছে কি না, সন্দেহ। নেদারল্যান্ডসও হেলা-ফেলা করার দল নয়। ওরা এখনও ওদের টোটাল ফুটবলের ঝলক দেখাতে পারেনি। তবে একটি কঠিন দল হিসেবেই আবির্ভূত হয়েছে। ব্রাজিলও তাদের ঐতিহ্যবাহী সাম্বার ঝলক দেখাতে পারেনি, শুধুমাত্র চিলির সাথের ম্যাচের কিছু অংশে ছাড়া। তবে দুইটি দলই ম্যাচটি জেতার ক্ষমতা রাখে। নেদারল্যান্ডসের মূল শক্তি অবশ্যই মাঝমাঠ। ওয়েসলি স্নাইডার, আরিয়েন রোবেনদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা মাঝমাঠ অবশ্যই যেকোন দলের প্রধান ভরসা হয়ে থাকবে। আরিয়েন রোবেন এই বিশ্বকাপে ইনজুরির কারণে খেলতেই পারেনি। তবে স্লোভাকিয়ার বিপক্ষে মাঠে নেমেই ঝলক দেখিয়েছে অসাধারণ একটি গোল করে। ওকে বাদ দিলে ওয়েসলি স্নাইডার নামক একজন অসাধারণ মিডফিল্ড জেনারেল রয়েছে নেদারল্যান্ডসের। তবে রোবেন ছাড়া একা স্নাইডারকে সত্যিই খুব একা একা লেগেছে আগের ম্যাচগুলোতে। যদিও স্নাইডার ঝলক দেখিয়েছে অনেক, তবুও। নেদারল্যান্ডসের মিডফিল্ডে রয়েছে আরও দুই শক্তি, ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার। মার্কো ভ্যান বোমেল এবং নাইজেল ডি ইয়ং। ডিফেন্সে নেদারল্যান্ডসকে এবার মোটামুটি ভালোই শক্তিশালি বলা হচ্ছে। রাইট উইংব্যাক গ্রেগরি ভ্যান ডার ওয়েল, সেন্ট্রাল ডিফেন্সে জন হেইটিঙ্গা এবং ইয়োরিস ম্যাথিয়েসেন ও লেফট উইংব্যাক জিওভান্নি ভ্যান ব্রংহোর্ষ্ট(অধিনায়ক) অবশ্যই কঠিন প্রতিরোধ তৈরি করে তুলতে পারেন। ভ্যান ডার ওয়েল এবং ব্রংহোর্ষ্ট আক্রমণেও সহায়তা করবেন। ডাচদের মূল সমস্যা বোধহয় ষ্ট্রাইকিং-এ। রবিন ভ্যান পার্সি এবারের বিশ্বকাপের পুরোটাতেই জ্বলে উঠতে পারেননি। তবে ক্লাস ইয়ান হান্টেলার রয়েছেন। আছেন আরেক তরুণ এলজেরো এলিয়া। যিনি বলদি হিসেবে মাঠে নেমে অনেক ঝলক দেখিয়েছেন। ষ্ট্রাইকিং এ রয়েছেন আরেকজন। লিভারপুল ষ্ট্রাইকার ডির্ক কুইট। যিনি দলের প্রয়োজনে একটু নিচে নেমেও খেলতে পারেন। দেখা যাক, এই ডাচ তারকারা কি করতে পারেন।

বিপরীতে ব্রাজিল দলও অনেক শক্তিশালি। রাইট উইংব্যাক মাইকনের কথা বিশেষভাবে কিছু বলার নেই। উনি অনেক চমক দেখিয়েছেন, আরও যে দেখাবেন না সেটা মোটেই বলা যায় না। সেন্ট্রাল ডিফেন্সে রয়েছেন দুই পরীক্ষিত সৈনিক হুয়ান এবং অধিনায়ক লুসিও। লেফট উইংব্যাক হিসেবে আছেন মিশেল বাস্তোস। যিনি মাইকনের মতই বারবার আক্রমণে উঠে যেতে অভ্যস্ত। ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে রয়েছেন অভিজ্ঞ জিলবার্তো সিলভা এবং সামান্য মাথাগরমকরা খেলোয়াড় ফেলিপে মেলো। তারাই শুরুতে ফেরাবেন আক্রমণকারীদের। তারপর তো লুসিও এবং হুয়ান রয়েছেনই। কাজটা ডাচদের জন্য সহজ হবে না। ব্রাজিলের আক্রমণভাগ বিশেষভাবে বৈশিষ্টমণ্ডিত। কাকা অবশ্যই ডিফেন্সচেরা পাস প্রদান করবেন লুইস ফ্যাবিয়ানোর উদ্দেশ্যে। যিনি সুযোগ মিস করতে জানেন না। রবিনহো দেখাবেন সাম্বার ঝিলিক। ডাচ ডিফেন্ডারদের জন্য আজকের দিনটি অবশ্যই বিশেষভাবে খাটতে হবে। দেখা যাবে, কারা জয়ী হয়। :)


তবে রেফারিদের কথাও উল্লেখযোগ্য। এবারের বিশ্বকাপে প্রতিটি ম্যাচে তারাই মূল খেলোয়াড়। তাদেরকে বর্তমানে মোটেই উপেক্ষা করা যাচ্ছে না! আজকের খেলায় মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে এসেছেন একজন কুখ্যাত রেফারি। নাম তার ইয়ুচি নিশিমুরা। তিনিও অবশ্যই আজকের ম্যাচেও প্রধান ভূমিকা রাখবেন বলে মনে হয়। তবে তিনি প্রধান ভূমিকা না রাখলেই সবাই খুশি হবেন।


আশা করছি, একটি জম্পেশ ম্যাচের। আজকের ম্যাচটি উভয় দলের জন্যেই বিশেষ পরীক্ষা। এবং অবশ্যই অস্তিত্বরক্ষার ম্যাচ। কোন ভুল করলে শোধরানোর কোন সুযোগ নেই। উভয় দলেরই সম্ভাবনা রয়েছে। বাকিটা নির্ধারণ করবে রেফারি এবং ভাগ্য। ব্রাজিলই জিতবে, এটা বললে সেটা হবে অন্ধ আবেগ। আবার নেদারল্যান্ডসই জিতবে, এটা বলেও অন্ধ আবেগের বশবর্তী কিংবা ব্রাজিলের বিরোধী হবার কারণেই বলা হবে। নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে দেখলে মোটেই বলা যাবে না, কে জিতবে। কারণ, উভয় দলই বিশেষ বিশেষভাবে শক্তিশালী।


একটি সুন্দর ম্যাচ দেখার আশায় লেখা শেষ করছি। বেশি বড় হয়ে গেলো বোধহয়। কষ্ট করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ। নিজ নিজ দলের জন্য শুভকামনা।
৭টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×