somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গ্রাম থেকে শহরে অভিবাসন: জীবন-জীবিকায় পরিবর্তন ও আর্থসামাজিক প্রভাব

১৯ শে মে, ২০১৪ রাত ৯:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বর্তমানে বাংলাদেশে গ্রাম থেকে শহরে-নগরে-শহরতলীতে অভিবাসন বেড়েই চলছে। অভিবাসনের ফলে অভিবাসিদের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তন ঘটছে। এই পরিবর্তনের ইতিবাচক প্রভাব যেমন আছে তেমনি নেতিবাচক প্রভাবও আছে। নেতিবাচক দিক হচ্ছে, বৃদ্ধি পাচ্ছে-হতাশা, আত্মহত্যা, মানসিক অসুস্থতা, অপরাধপ্রবণতা, মাদকাসক্তি, যৌন নির্যাতন, শিশুশ্রম, সন্ত্রাস, পতিতাবৃত্তি আর গড়ে ওঠছে অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশের বস্তি। কর্মক্ষম মানুষ অলস-বেকার-কর্মহীন হলে তথা বৈধ উপায়ে মৌল মানবিক চাহিদা পূরণে অক্ষম হলে সমাজে চুরি-ডাকাতি-ইভটিজিং বাড়বে, যৌন কর্মী বাড়লে যৌন খরিদ্দারও বাড়বে। আর ইতিবাচক দিক হচ্ছে, নদীভাঙ্গনে ভিটেমাটি হারানো ভূমিহীন কিংবা প্রাকৃতিক দুযোগে সহায় সম্বলহীন অসহায় মানুষ থেকে শুরু করে তুলনামূলকভাবে ভাল শিক্ষার জন্যে আাগ্রহী, নানাবিধ কর্মসংস্থান বা চাকুরির সুযোগ প্রত্যাশী, বিশুদ্ধ পানি-স্যানিটেশন-বাসস্থানের সন্ধানী, খাদ্য-বস্ত্র ও উন্নততর চিকিrসার নিশ্চয়তা বিধানে আকাঙ্খী, ব্যবসা-বাণিজ্য-সেবামূলক কাজের উপযুক্ত পরিবেশ চান-এমন সবাই স্বপ্ন পূরণের নতুন আশায় গ্রাম ছেড়ে শহরে আসেন। গ্রাম থেকে শহরে অভিবাসন করায় অভিবাসিদের জীবন-জীবিকায় বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন ঘটে আর এর আর্থসামাজিক প্রভাব শহর ছাড়িয়ে গ্রামীণ সমাজেও ছড়িয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় এ বিষয়টিকে একটু ভিন্নদৃষ্টিকোণ থেকে দেখা ও এ সংক্রান্ত গবেষণা অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাসঙ্গিক বলে আমার মনে হয়েছে।

অভিবাসন প্রসঙ্গটি আন্তর্জাতিক ও দেশীয় অঙ্গনে অত্যন্ত আলোচিত বিষয়। বাংলাদেশের মত দরিদ্র দেশে অনেকে নগর জীবনের বহুবিধ সংকটের কারণ হিসাবে অনিয়ন্ত্রিত ও অপরিকল্পিত অভিবাসনকে দায়ী করেন। কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধির যে উচ্চহার তাতে শহরকেন্দ্রিক থাকা নাগরিক সুযোগ সুবিধা গ্রাম পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে না পারলে যে শহরে অভিবাসি বৃদ্ধির গতিকে থামানো যাবে না তা সহজেই অনুমেয়। অভিবাসন ঘটার ক্ষেত্রে কিছু `Push factor’ ও কিছু `pull factor’ রয়েছে।এর বাইরেও `social network’ এরও খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে। এটা খুব সহজে বলে দেয়া যৌক্তিক হবে না যে, কোন অভিবাসি বিশেষ একটি কারণে অভিবাসী হয়েছে। কারও একাধিক কারণও থাকতে পারে। ভৌগলিক স্থানচ্যুতি, দারিদ্র্যতা, ভূমিহীনতা, চাকরিহীনতা, অর্থনৈতিক বঞ্চনা - এসবই অভিবাসনের সব কারণ নয়। কে কোথায় অভিবাসন করবে এটি নির্ধারণে `kin based network’ তথা `blood networks’ `marriage networks’ গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে।

অভিবাসনের কারণে অভিবাসিতদের জীবন ও জীবিকা পাল্টে যাচ্ছে। পূর্বে কৃষিকাজ করত কিংবা মাছ ধরত এমন অনেকের নতুন কাজ হচ্ছে, ভিক্ষা করা, ভাঙারি কুড়ানো (ভাঙ্গা চোড়া সংগ্রহ), রিক্সা চালানো,ক্ষুদ্র মুদি দোকানদারি বা হোটেলে কাজ করা, গৃহ নির্মাণ কিংবা কন্সট্রাকশনে কাজ, কারো বিভিন্ন গার্মেন্টস বা অন্যান্য শিল্প কারখানায় কাজ করা ইত্যাদি।বিধবা, তালাকপ্রাপ্ত কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোওগে ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় নারী নিরুপায় হয়ে পেটের দায়ে পতিতাবৃত্তির পথ বেছে নিচ্ছে।জটিল শিল্পভিত্তিক সমাজে অভিবাসীদের মধ্যে অনেকে স্থায়ী অভিবাসী আবার অনেকে অস্থায়ী অভিবাসী। অনেকে ভাড়াটিয়া আবার অনেকে জমি কিনে বাড়ি করে স্থায়ী হয়েছে। অভিবাসন প্রক্রিয়া এমন যে, অনেকে স্বপরিবারে কিংবা যৌথভাবে আসে আবার অনেকে আয় উপার্জনের জন্যে এককভাবে আসে, পরিবারের অন্য সদস্যরা গ্রামেই বাস করে। কখনো আত্মীয়দের বা প্রতিবেশীদের সাথে নিয়েও অভিবাসন সম্পন্ন হয়। দরিদ্রদের মাঝেই যৌথ অভিবাসন বেশী ঘটে। কখনও কখনও রক্ত কিংবা বৈবাহিক সম্পর্কের চেয়েও পাতানো সম্পর্ককে বেশি শক্তিশালী দেখা যায়। গ্রামের সাথে, আত্মীয় স্বজনের সাথে যোগাযোগ-সম্পর্ক অনেকে রাখেন আবার অনেকে রাখেন না।

অনেকে সরলীকরণ করে বলেন, গ্রামীণ দরিদ্ররা গ্রামে যখন আয়ের উrস বা কর্মসংস্থান করতে ব্যার্থ হন তখনই শহরে আসেন। কিন্তু ধনী ও মধ্যবিত্ত মানুষজন কেন সারা জীবন ধরে যে মানুষগুলোর মাঝে নিজের জীবন অতিবাহিত করেন, তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে শহরে এসে বসবাস শুরু করেন। সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক নির্ভরশীলতা কেন তাদেরকে গ্রামীণ পরিমন্ডলে রাখতে পারেন না। গ্রাম ছেড়ে চলে আসার পরও শহরে অভিবাসিরা গ্রামের প্রতি হৃদয়ের টান অনুভব করেন, গ্রামে থাকা মানুষজনের সাথে নানানভাবে সম্পর্ক রক্ষা করে চলেন। শহরে ভিন্ন পরিবেশ ও বাস্তবতায় নতুন অভ্যাস, দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে ওঠলেও গ্রামে মন পড়ে থাকে, ঈদের সময় নাড়ির টানে ছুটেন-এইযে সম্পর্কের টানাপোড়ন এটা বুঝা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

এখনও বিভিন্ন পরিসরে অভিবাসনের প্রভাব, অভিবাসিতদের বহুবিধ সংকট, অভিবাসনের ফলে জ্ঞাতি সম্পর্কের রদবদল, পরিবার ও গৃহাস্থলীর পরিবর্তন, সম্পর্কের নয়া মেরুকরণ, অভিবাসনের সাথে ক্ষমতা সম্পর্ক, লিঙ্গীয় ও শ্রেণী বৈষম্যকে সম্পৃক্ত করে পত্র-পত্রিকা, বিভিন্ন মিডিয়া, টকশো কিংবা ইন্টারনেটে ব্যাপক লেখালেখি হয়নি। দেশের বিভিন্ন শ্রেণীর-পেশার-ধর্মের-অঞ্চলের অভিবাসি মানুষদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ভিন্নতা, বিশ্বাস ও চর্চার ভিন্নতাগুলোর সংমিশ্রণ ঘটে মিশ্র সংস্কৃতি তৈরি হয়।স্থানীয়দের বাস্তবতা ও অভিবাসিতদের বাস্তবতার সমন্বয়ে নতুন ধরনের বাস্তবতা তৈরি হচ্ছে যা অভিবাসি এলাকায় বেড়ে ওঠা শিশুদের সামাজিকীকরণে প্রভাব ফেলছে। এছাড়া বিভিন্ন এলাকার স্থানীয় জ্ঞান বা লোকায়িত জ্ঞানগুলোর সংমিশ্রণ ঘটছে। গ্রাম থেকে শহরে অভিবাসিদের জীবনের বিভিন্ন দিকের অনুসন্ধান, তাদের জীবনধারা, সমাজ সংস্কৃতি, আচার আচরণ, নারী ও শিশুর জীবনে বিশেষ প্রভাব, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও আইনের সাথে তাদের যাপিত জীবনের সম্পর্ক, বিরাজমান নিয়ম নীতি ও বিধি বিধানকে সুস্পষ্টরুপে উন্মোচন করা তথা সামগ্রিক জীবন ব্যবস্থার কার্যাকরণ তুলে ধরা মোটেই সহজ কাজ নয়।অভিবাসিদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, জৈবিক, মনস্তাত্ত্বিক, আধ্যাত্মিক, ঐতিহাসিক তথা সার্বিক দিক পর্য বেক্ষণের জন্যে যে সময় ও সুযোগ দরকার তা চাহিদানুযায়ী পাওয়াটাও কঠিন। তারপরও গ্রাম থেকে শহরে অভিবাসিদের জীবন-জীবিকায় পরিবর্তন ও জগত সম্পর্কে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি বুঝার এবং আর্থসামাজিক প্রভাবকে অনুধাবনের আন্তরিক চেষ্টা করাটা খুবই যৌক্তিক ও প্রাসঙ্গিক।

আমার মূল জিজ্ঞাসা ছিল-গ্রাম থেকে শহরে অভিবাসন কেন ঘটছে, কীভাবে ঘটছে? গ্রাম থেকে শহরে অভিবাসীদের যাপিত জীবনের অতীত ও বর্তমান। গ্রাম থেকে শহরে অভিবাসীদের জীবিকার পরিবর্তন ও ক্ষমতায়ন। গ্রাম থেকে শহরে অভিবাসন কি কি প্রভাব ফেলছে? থেকে শহরে অভিবাসন- সংকট নাকি সম্ভাবনা? গ্রাম থেকে শহরে অভিবাসন- ভবিষ্যত ভাবনা ও করণীয় নির্দেশনা। গ্রাম থেকে শহরে অভিবাসন কেন ও কীভাবে? অনেকে চোখ বন্ধ করে বলবেন-নদী ভাঙন, ঘূর্ণিঝড়,জ্বলোচ্ছাস তথা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে। অথচ বাস্তবতা ভিন্ন।দেখা গেছে, পারিবারিক অশান্তি, বাবা মায়ের কলহ-বিচ্ছেদ-পরকিয়ার কারণে অনেক কিশোর ঘর ছেড়েছে। দালালের খপ্পরে পরে সুদে Fণ নিয়ে বিদেশ যেতে না পারা মানুষ Fণদাতাদের তাগাদা থেকে বাঁচতে আত্মগোপন করে আছে।ছেলে মেয়েদের ভাল শিক্ষার জন্যে, ভাল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-শিক্ষক ও পড়াশুনার উপযোগী পরিবেশের জন্যে অনেকে কষ্ট করে হলেও শহরে থাকছে। চাকুরির প্রয়োজনে, বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে মনের ইচ্ছার বিরুদ্ধেও শহরে থাকতে হচ্ছে অনেকের। আত্মনির্ভরশীল হতে, ব্যবসা বাণিজ্য করে স্বাবলম্বী হবার আশায় নিজের গ্রামের জমিজমা বিক্রি করেও অনেকে শহরে এসেছে। আবার থানা পুলিশের ভয়ে, বিরোধী রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসায় বড় অপরাধীরা অথবা রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ লুকিয়ে বেড়াচ্ছে শহরে। কউ প্রভাবশালী চেয়ারম্যানের ক্ষমতাধর দু:শ্চরিত্রবান ছেলে সুন্দরী মেয়ের পিছু লাগায় বখাটেদের উrপাত থেকে বাঁচতে নিরুপায় হয়ে স্বপরিবারে শহরে চলে এসেছেন। একজনকে পাওয়া গেল যিনি স্ত্রীর পরকিয়ার কারণে, নিকটাত্মীয় কিংবা প্রতিবেশীর সাথে যাতে প্রাণপ্রিয় স্ত্রীর অবৈধ সম্পর্ক না থাকে সেজন্যে তাকে নিয়ে গ্রাম ছেড়ে এসেছেন।

এমন অনেক কারণে গ্রাম থেকে শহরে এসেছে যা শুনলে অবাক হতে হয়। প্রেমে ব্যর্থতার ফলে, প্রেমিকার বিবাহ, প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানে রাগ-দু:খ-অভিমানে, প্রিয়জনের আরেকজনের হাতধরা মেনে নিতে না পেরে মনের দু:খে গ্রাম ছেড়েছেন; এখন হোটেলে কাজ করেন।পরীক্ষায় ফেল করার লজ্জায়, অভিবাকদের শাস্তি, কটুকথা কিংবা পরিচিতজনদের ঠাট্টায় লজ্জিত হয়ে পলায়ে এস গার্মেন্টসে কাজ করছেন। প্রেমঘটিত বিয়ে মেনে না নেয়ায়, অভিভাবকদের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও নিজ পছন্দের বিয়ে পরিবারের মেনে না নেয়ায় উভয়ে গ্রাম ছেড়েছেন-স্বামী গার্মেন্টসে চাকরি করেন আর স্ত্রী কলেজে পড়ে।উন্নততর চিকিrসার জন্যে, ভাল ডাক্তার-হাসপাতাল না থাকায় ছেলে কিংবা মেয়ের শহরের বাসায় গ্রামের বৃদ্ধ-বৃদ্ধা থাকেন-বদ্ধ খাঁচায় থাকতে ভাল লাগেনা তবুও।জীবন বাঁচাতে, জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে শত্রুতা, মারামারি, খুনাখুনি হলে জীবন নাশের আশংকায় মায়ের পরামর্শে গ্রাম ছেড়েছে ছেলে।বৈবাহিক কারণে, মেয়ের স্বামীর বাড়ি যাওয়া কিংবা কারো ঘরজামাই হওয়া-এসব ঘটনাতো অনেক।আত্মীয়কে ব্যবসায় সহযোগিতার জন্যে, কোন আত্মিয় শহরকেন্দ্রিক ব্যবসায়িক তrপরতা বাড়ালে সহযোগিতার জন্যে এসেছেন।প্রতিবেশি পরিচিতের প্রয়োজনে, ধনাঢ্য প্রতিবেশি স্বামী-স্ত্রী চাকরিজীবী হওয়ায় গরিবের ছেলেমেয়ে সহযোগিতার জন্যে এসেছেন-বাসায় কাজ করেন, বাচ্চা লালন পালন করেন।নাতি নাতনির ভালবাসায়, দাদা দাদী বা নানা নানীর নাতি নাতনির টানে গ্রামের বাড়ি ছেড়ে ছেলেমেয়ের বাসায় এসে থাকার ঘটনাও কম নয়।এমনকি ভালবাসার মানুষের টানে, ভালবাসার মানুষ কোন প্রয়োজনে শহরের অভিবাসি হলে তার সংস্পর্শের আকর্ষণেও গ্রাম ছেড়েছে।

গ্রাম থেকে শহরে বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে অভিবাসন করেছেন। অনেকে কোন আত্মীয় কিংবা এলাকার পরিচিতজনের সাথে, অনেকে বন্ধুর সাথে, অনেকে ভাগিনার মাধ্যমে, অনেকে উদ্দেশ্যবিহীন ভাবে, অনেকে ফেসবুক ফ্রেন্ডের মাধ্যমে, অনেকে মোবাইলে পরিচিতজনের মাধ্যমে, অনেকে পত্রিকায় চাকুরির বিজ্ঞপ্তির সূত্র ধরে শহরে এসেছেন।গ্রাম থেকে শহরে অভিবাসীদের অতীত ও বর্তমানে অনেক পরিবর্তন হয়েছে।অতীত নিজের বাড়িতে থাকতেন, বাড়িওয়ালাও এখানে এসে ভাড়াটিয়া হয়েছেন। অবসর সময়ে বন্ধু বান্ধবদের সাথে ঘুরা,জোrস্না রাতে গল্পগুজব-পুঁথি পড়া- গানের আসর, বৃষ্টি বাদলা দিনে আড্ডাবাজি, বিভিন্ন মেলা-উrসবে অংশগ্রহণ করেছেন। এখন অবসর বা ছুটির দিন কখনো ঘুমিয়ে- কেনাকাটা করে কাটে।যাত্রা পালার সেই আনন্দ, খেলাধূলা, মাছধরা, নকশী কাঁথা সেলাই-এখন নেই। চা স্টলে বসে আড্ডাদেয়ার সময় কোথায়? তবে গৃহিনীরা মাটির চুলা থেকে গ্যাসের চুলা, রেডিও টেপ থেকে টিভি ও ভিসিডি, হাতপাখা থেকে বৈদ্যুতিক ফ্যান, হারিকেন কুপি থেকে বৈদ্যুতিক বাতি- এসব পরিবর্তনের কথা বলেছেন। এখন বাচ্চারা গরমে ফ্রিজের ঠান্ডা পানি খায়, ভিডিও গেমস খেলে, গান শুনে, বেড়াতে যায়-আর উনি বাচ্চা বয়সে গরুর ঘাস কাটা- মাছ ধরার মত কাজ করেছেন বলে জানান এক বয়স্ক দাদা।

গ্রাম থেকে শহরে অভিবাসীদের জীবিকার পরিবর্তন ও ক্ষমতা সম্পর্কে পরিবর্তন হয়েছে। জীবিকার পরিবর্তন যেমন-ডে লেবার থেকে রিক্সাচালক হওয়া, প্রবাস জীবন শেষে মুদি দোকানদার হওয়া,বেকার থেকে হোটেলের কর্মচারী হওয়া, চাকর থেকে হকার হওয়া ইত্যাদি।এমন অনেকে আছেন যিনি শহরে জুতাপালিশ করেন, সেলুনে কাজ করেন,প্রাইভেট পড়ান, গার্মেন্টস শ্রমিক হয়েছেন,সিএনজি চালান,কাজের বুয়া হয়েছেন-কিন্তু অতীতে একাজে ছিলেন না।ক্ষমতা সম্পর্কে পরিবর্তন হয়েছে যেমন-শহরে আয় করে গ্রামে ব্যয় করার ফলে অনেকে বেশি কদর করেন, বেকারত্বের আত্মপরিচয় সংকট থেকে মুক্তি পাওয়ায় বন্ধু বান্ধবের কাছে মূ্ল্যায়ন বেড়েছে,বিবাহ ও সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন হয়েছে,গ্রামে অনুষ্ঠানাদিতে দাওয়াত ও অংশগ্রহণ করলে সুদৃষ্টি মিলে,বিপদে আপদে সাহায্য সহযোগিতা প্রদান করায় নেক নজর পড়ে, উপহার বিনিময় করায় ভক্তি সম্মান বাড়ে, দাওয়াত খাওয়ানো ও বেড়ানোতে একটু প্রভাব প্রতিপত্তি বাড়ে, উচুঁস্তরে যোগাযোগ ও সম্পর্ক হওয়ায় অনেকে মেনে চলে।

গ্রাম থেকে শহরে অভিবাসনের প্রভাব ব্যাপক। প্রভাবটা কখনও ইতিবাচক আবার কখনও নেতিবাচক হয়। প্রভাব পড়ে ভাষায়, খাদ্যাভাসে, পোশাকে, বিনোদনে, জ্ঞাতি সম্পর্কে,স্বাস্থ্যে,মনমানসিকতায়, দৃষ্টিভঙ্গিগতে,গৃহাস্থলীতে, রুচি ও সচেতনতায়, শিশু লালন পালনে, শিক্ষায়, পরিবারে। কোথাও স্বক্ষমতার উন্নয়ন ঘটেছে আবার কখনো দেখা যায় নারী নির্যাড়তন বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এটা ঠিক অভিবাসনের সামাজিক প্রভাব আছে, অর্থনৈতিক প্রভাব আছে, সাংস্কৃতিক প্রভাব আছে এমনকি রাজনৈতিক প্রভাবও আছে। গ্রাম থেকে শহরে অভিবাসন- সংকট নাকি সম্ভাবনা?-এ প্রশ্নের সহজ কোন উত্তর কউ দিতে পারবেনা।তবে গ্রাম থেকে শহরে অভিবাসনের ভবিষ্যত ভাবনা ও করণীয় নির্দেশনার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা হতে পারে।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মে, ২০১৪ রাত ৯:০৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=স্মৃতির মায়ায় জড়িয়ে আছে মন=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:০৯


ঘাস লতা পাতা আমার গাঁয়ের মেঠো পথ, ধানের ক্ষেত
জংলী গাছ জড়ানো লতাবতী - আহা নিউরণে পাই স্মৃতির সংকেত,
রান্নাবাটির খেলাঘরে ফুলের পাপড়িতে তরকারী রান্না
এখন স্মৃতিগুলো পড়লে মনে, বুক ফুঁড়ে বেরোয় কান্না।

ফিরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×