হাতে রজনীগন্ধার স্টিক নিয়া ঘরের দরজা নক করিতে বেশ খানিকটা সংকোচ হইতেছে। একবার ভাবিলাম ফুলগুলা ফালাইয়াই দিই, আবার মনে হইল বিশটা টেকা পানিতে যাইবো! থাক না, বাসাতে গিয়া নাহয় সাজাইয়াই রাখি। কিন্তু বাসায় সাজাইবার জন্য ফুলদানি নাই। সিদ্ধান্ত নিলাম বোতল দিয়াই ফুলদানির কাজ সারিয়া নিতে হইবে। ফুলগুলা যে আমি শখ করিয়া বা বিশেষ কোন উদ্দেশ্যে কিনিয়াছি তা কিন্তু না। সিগন্যালে আটকাইয়া ছিলাম, এক পিচ্চি আইসা জোর কইরা ধরাইয়া দিল। সে এমনভাবেই ধরিয়াসিল যে আরেকটু হইলে সে আমারেই ধরিয়া প্রায় ঝুলিয়াই পরিতেসিল। তাই তারে ঝুলানোর চেয়ে ফুলগুলারে ঝুলানোটাই আমার নিকট বুদ্ধিমানের কাজ মনে হইল।
দরজা খুলিয়াই বৌ_ম্যাডামের চক্ষু কপালে উঠিল আর ঠোঁটে একখানা লজ্জাবতী নায়িকা মার্কা হাসি ছড়াইয়া পড়িল! যাক বিশ টাকা একেবারে জলে যায় নাই, পয়সা উসুল।
কন্ঠে পর্যাপ্তেরও বেশি রোমান্স ঢালিয়া কহিলাম-
: খুশি হইসো জানপাখি? (মেয়ে দেখি লজ্জায় পারিলে মাটিতেই ঢলিয়া পড়ে!)
: হুমম, এত্তগুলা খুশি! খুশিতে এক্কবারে গদগদ অবস্হা! (বউয়ের চেহারা দেখিয়া অবশ্য খুশির আভাস টের পাওয়া গেলনা এইবার! লক্ষণ খারাপ!)
: গদগদ হওয়ার কি হইল! (বেশি কিছু বলার রিস্কে যাওয়া ঠিক হইবে না)
: অবশ্যই গদগদ, খুশিতে একেবারে বিগলিত হইয়া যাইবার অবস্হা। (অবস্হা সুবিধার না)
: প্রব্লেম নাই ম্যাডাম, আপনে গলিলে নাহয় আমি জমাট বাঁধাইয়া দিব আবার। একেবারে মোমের মত। গলিবে, জমাট বাঁধিবে; জমাট বাঁধিবে অতঃপর আবার গলিবে। পানি চক্রের মতই ইহাকে গলন চক্র নাম দেয়া যাইতে পারে।
: ফাজলামো করবা না। মেজাজ খারাপ।
: ক্যান!
: তোমার ভাইয়ে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হইতেসে, সারা দুপুর মিটিং করিয়া আসিয়াছে।
: তাতে কি?
: তাতে কিস্যু না, আমি তারে একটু বুদ্ধি ধার দিতেসিলাম।
: সেটা কেমন!
: ওরে বলিলাম, রাজনীতিই যদি করিবা তবে কোন দলের না করিয়া নিজেরই একখানা আস্ত দল করা ভাল।
: সেটা ক্যান!! (বৌ ম্যাডাম কয় কি! নিজের দল!!)
: এই যে দেখ, রাজনীতি করিয়া তুমি নেতা হতে পারিবা ঠিক, তবে তুমি যদি তোমার নামে মিছিল মিটিং, মরার পরে সম্মাননা, এপিটাফে শ-দুয়েক শ্রদ্ধাঞ্জলি লেবেল লাগানো কূটনৈতিক পুষ্পমাল্য, রাস্তার মোড়ে তোমার নামের রঙচঙে ব্যানার- এইসব চাও তবে আর যাই হোক বা না হোক, নিজের একটা আলাদা দল করিতে হবেই। (বউ এক নিঃশ্বাসে এইটুকু বলিয়া হাঁপাইয়া থামিল)
: তা ক্যান হইবে! দেশ ও জনগণের সেবা করিলেই…
: আর রাখো তোমার ওইসব কচকচানি। দেশপ্রেম টেম ওইসব কিস্যু না, ওগুলা সব চোখে পট্টি বাঁধার ত্যানা মাত্র, যাতে টের না পায় কেউ এগিয়ে আসা অসময়ের পদধ্বণি। আরে দেশপ্রেমই যদি বলবা, তাইলে আমাদের শহীদ স্যার তাজউদ্দীন আহমেদের কি দেশপ্রেম কম ছিল? তবু উনার নামে আজ শ’পাউন্ডের কেক নাই, রাস্তার মোড়ে মোড়ে বাদ্য নাই, ব্যানার নাই-মিছিল নাই, দেয়াল জুইড়া চিকা নাই, মাঠে হাজার কর্মী নাই; কিস্যু নাই। ক্লাস টেনের অনেক ছাত্রও আজ জানেনা অনেকেই তাজউদ্দীনের নাম, এইটাই তার প্রাপ্তি!!
প্রবলেম একটাই, উনি বঙ্গবন্ধু বা শহীদ প্রেসিডেন্টের মত দল করিয়া যান নাই। যদি করিয়া যাইতেন, তাইলে আজ এই ক্ষমতার কামড়াকামড়িতে তার নামও যুক্ত হইত, ব্যবহৃত হইতো। কারো বাপ নয়তো স্বামী হইয়া তিনিও নিয়মিত প্রিয়জনের কাছে ক্ষমতা-ব্যবসার কাঁচামাল হইতেন। এইভাবে নিশ্চুপ আড়ম্বড়ে এই মহান দিনটা শেষ হইয়া যাইত না। তাই এইসব দেশপ্রেম পকেটে রাখিয়া একখানা দল গঠনই উত্তম নয় কি ??!
মাননীয় আদালত, আমার কিস্যু বলার রহিল না; দলাদলি আমারে আপাদমস্তক স্পীকার বানাইয়া দিল !!!
পুনশ্চঃ
অতঃপর আমি রজনীগন্ধা হাতেই আবার বাহির হইলাম। স্যারের একখানা আবক্ষ ছবি দরকার। এই ফুল তারই প্রাপ্য ।।
অংকনের সাতকাহন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


