somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দরজার ওপাশে... ...

৩১ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১২:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নূর সাহেব নাকে সিগারেটের গন্ধ টের পাচ্ছেন। এও জানেন সেটা কোত্থেকে আসছে। ভুরু কুঁচকে সেদিকে চাইলেন একবার। দরজাটা বন্ধ। দরজাটা বন্ধ হলেও দরজার ওপাশে কি হচ্ছে সেটা তিনি না দেখেও বেশ বুঝতে পারেন। নিশ্চয়ই ছেলেটা এখন পায়ের ওপর পা তুলে আয়েশ করে সুখটান দিচ্ছে আর হেডফোনে ফিসফিস করছে। অবশ্য এখন সেটা ফিসফিসের পর্যায়ে নেই। আগে বোধহয় তাকে একটু হলেও সংকোচ করত, এখন সে বেশ জোরেই ফিসফিসটুকু করে। কান একটু খাড়া করলেই সবটুকু তার রুম থেকেই শোনা যায়। তবু নূর সাহেব কান না দিয়ে এড়িয়ে চলতে চান সেসব। প্রতিনিয়ত জান, টিয়া, ময়না, বুলবুলি এসব শুনতে ভাল লাগেনা তার।
শুভ এখন বড় হয়েছে। নিজের ভাল মন্দ বুঝতে শিখেছে। এটাই তার ভাল মনে হচ্ছে, তাই হয়ত করছে। কি জানি! ভাল হতেও পারে হয়তোবা। এখন ভালোর সংজ্ঞা পাল্টেছে। আগে ছেলেদের জন্য লুঙ্গিই ভালো ছিল, এখন সেটা ভালো না। শুভ লুঙ্গি পড়েনা। সে এমন কিছু প্যান্ট পড়ে ঘোরে যেটাকে ফুলপ্যান্টও বলা যায়না, হাফপ্যান্টও বলা যায়না। মাঝামাঝিতে আটকে গেছে। আগে শিশুরা দুলে দুলে আমপাতা জোড়া জোড়া পড়ত। সেটাই তখন ভালো ছিল। এখন অজগর, আমপাতা কোনটাই ভালো না। এখন জ্যাক এন্ড জিল আর হাম্পটি ডাম্পটিই নাকি ভাল।
শুভও সেসবই পড়েছে। এরপর ইংলিশ স্কুলে গেল, তারপর যে কি থেকে কি হয়ে গেল! ছেলের আর নাগালই পেলেন না নূর সাহেব। ছেলে আর তিনি এখন দুজন দুজগতের বাসিন্দা! ছেলেকে শাসন করারও তাই প্রশ্ন ওঠেনা। করবেনই বা কিভাবে? মাঝেমাঝে ছেলেকে তার নিজেরই অচেনা কেউ মনে হয়।

রকিং চেয়ারটা বুড়ো হয়ে গেছে। দুলতে গেলেই ক্যাচ কোঁচ আওয়াজ করে। একসময় এই চেয়ারে বসে শুভকে বুকে নিয়ে দুলতেন তিনি। এটা শুভর খুব পছন্দের ছিল। সন্ধ্যা হতেই পড়ার টেবিলকে কোনমতে ফাঁকি দিয়ে এসে উঠে বসত বাবার কোলে, তারপর বাপ-বেটা দুলত। কখনো দুজনেই সেখানেই ঘুমিয়ে যেত, কখনো শুধু শুভ। নূর সাহেব তখন শুভর মুখের দিকে তাকিয়ে স্বপ্ন দেখতেন, আগামীর স্বপ্ন। তবে স্বপ্নে কোনদিন আজকের দিনটা দেখেননি তিনি।

বোধহয় ঘুমিয়ে পড়েছিলেন, হঠাৎ কপালে কার যেন হাত টের পেলেন নূর সাহেব! চমকে উঠতে গিয়েও সামলে নিলেন। শুভ তার গায়ে ততক্ষণে একটা চাদর টেনে দিয়েছে। পরক্ষণেই গালে একটা পানির ফোঁটা আছড়ে পড়ল নূর সাহেবের! শুভ কাঁদছে!
ধড়মড় করে উঠে বসলেন তিনি।
: কাঁদছিস কেন শুভ?
: বাবা…

অনেকদিন এই ডাক ঠিক এই সুরে শুনেননি নূর সাহেব। চোখে জল চলে এল তার।
: কি হয়েছে শুভ?
: আমি কি খুব বেশি দূরে চলে এসেছি বাবা…?
: দূরে কেন যাবি রে পাগলা, এই তো তুই আমার কাছেই আছিস…
: সত্যি বাবা… আসলেই কি আমি কাছে আছি…?
: আছিস…অবশ্যই আছিস, ঠিক যখনই তোর বন্ধ দরজাটা নিজ হাতে খুলে বেরিয়ে এসেছিস, ঠিক তখন থেকেই তুই আবার আমার কাছেই আছিস।
: দরজার ওপারে আমি আর ফিরে যাব না বাবা…

নূর সাহেব অবাক হয়ে খেয়াল করলেন- রকিং চেয়ারটা আর আগের মত বিদঘুটে আওয়াজ করে কাঁদছে না !!!

দরজার ওপাশে / সাতকাহন ।।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১২:১৫
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×