somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আপনারা কাঁদবেন না, প্লিজ

১৯ শে অক্টোবর, ২০০৯ বিকাল ৫:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার বোনটিকে কতদিন দেখি না। বিয়ের পর কেন স্বামী, সবাই ভুলে যায় আমার নিজের পরিবারের লোকজনদের সঙ্গে সময় কাটাতে আমারও ইচ্ছা করে।
এবার আমার এই বোনটার বাবু হবে শুনে ডাবল খুশী হলাম। একটা হচ্ছে তার বাবু হওয়া দ্বিতীয়টা হচ্ছে এইবার এদের সঙ্গে কিছুদিন থাকা যাবে। কি আনন্দ যে হচ্ছিল, একটু পর পর চোখে পানি চলে আসে।

কিন্তু ৮ মাসের সময় জানলাম বাবুটি ওর মার পেটে উল্টে আছে। ডাক্তার অবশ্য বললেন, আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু একমাস ধরে বাবুটার নড়াচড়া কমে আসতে লাগল। একসময় বোনটিকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হলো। ডাক্তার বললেন, সিজার করে ফেলতে হবে, উপায় নেই।
বোনটিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হল। আমি শ্বশুরবাড়ি থেকে ছুটে গেলাম আমার ছোট দুটা বাচ্চাকে রেখে। যাদের কাছ থেকে আমি একঘন্টাও দূরে থাকি নাই অথচ এদের ফেলে আসতে হয়েছিল, উপায় ছিল না বলে। এমন অনেক জায়গায় যেতে পারি নি বাচ্চাদের রেখে যেতে হবে বলে। এই প্রথম আমার বাচ্চাদের ছাড়া কোথাও রাত কাটালাম।

আমার বোনটিকে যখন ওটিতে নিযে যাচ্ছে, সবাই কাঁদছে। আমি শক্ত থাকার চেষ্টা করছি কিন্তু আমার ইচ্ছা করছে চিৎকার করে কাদতে। ওটির দরজা বন্ধ হওয়ার আগে আমার বোনটি আমার দিকে কেমন করে যে তাকিয়ে ছিল। সেই দৃষ্টি আমি কোনদিন ভুলব না।
সেই দৃষ্টিতে কি ছিল? আপু, জানি না ফিরে আসব কিনা, আমার বাবুটা বেঁচে থাকলে তাকে কিন্তু তুই ফেলে দিস না।

আমার চাচাতো বোনরা পরপর বাচ্চা হওয়ার কারণে মারা গিয়েছিল বলে আমরা প্রচন্ড আতংকিত ছিলাম। তার উপর আমার এই বোনটার অনেক জটিলতা।
যাক, একসময় ঝড় যেমন থেমে যায়, আমাদের আতংক শেষ হল। সময়টা কেমন করে কেটে গেছে এটা লিখে বোঝানো যাবে না, এই ক্ষমতা আমার নাই।

ঘুমের ওষুধের প্রভাবে বোনটা ঘুমিয়ে থাকে। আমিই বাবুটাকে নিয়ে রাখি। কেবিনে কতক্ষন থাকা যায়। মাঝে মাঝে করিডোরে বাবুকে নিয়ে হাটি। একদিন বাবু নিয়ে হাটছিলাম। পাশের কেবিন থেকে একটি মেয়ের যন্ত্রণার শব্দ ভেসে আসছে। দরোজা খুলে ভেতর থেকে একজন বের হয়ে এলে আমি জিজ্ঞেস করলাম, ওনার কি হয়েছে?
তিনি বললেন, আজই সিজার হয়েছে। কিন্তু জ্যামের কারণে ডাক্তার আসতে দেরী হয়েছিল, বাচ্চাটাকে বাচানো যায় নি।
আমি জানতে চাইলাম, আপনি বাচ্চার কি হন?
তিনি চোখে পানি নিয়ে বললেন, আমি বাচ্চাটার বাবা। বলতে বলতে তিনি একটা বাচ্চার মত কাদছিলেন।
আমার মাথায় কি হয়ে গেল জানি না। আমি আমাদের বাবুটাকে এগিয়ে দিয়ে বললাম, ভাইয়া, কাদবেন না। আপনি কি একে একটু কোলে নেবেন, প্লিজ।
মানুষটা অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। আমাদের বাবুটাকে একেবারে বুকের মাঝে জড়িয়ে রাখলেন। তিনি দৌড়ে ভেতরে গিয়ে একজন বয়স্ক মহিলাকে নিয়ে এলেন। তার কাছে বাবুটিকে দিলেন। ইনি মানুষটার মা। এই মহিলাও আমাদের বাবুটাকে বুকে ধরে কাদছেন। এদের কান্না দেখে আমিও কাদছি।
অনেকক্ষন পর বয়স্ক মহিলাটি বললেন, মা, আমাদের বাচ্চাটা মারা গেছে জেনেও তুমি আমাদের কোলে দিলে?
আমি প্রথমে ওনার কথা বুঝি নাই, বললাম, কেন খালাম্মা?
তিনি বললেন, না, সবাই বলে এতে নাকি জীবিত বাচ্চার অমঙ্গল হয়।
আমি দৃঢ় কন্ঠে বললাম, কেন অমংগল হবে? আমাদের বাবুটার জন্য আপনারা যদি একটুখানি শান্তি পেয়ে থাকেন তবে আমাদের বাবুর জন্য এরচেয়ে বড় দোয়া আর হয় না।

তিনি আমার মাথায় হাত রেখে কাদতে কাদতে অনেক কথাই বলছিলেন কিন্তু এরা কোনদিনই জানবেন না, আমার আকাশ পাতাল আনন্দের কথা, ভাললাগার কথা।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে অক্টোবর, ২০০৯ বিকাল ৫:১৯
২২টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×