somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার বোকা আব্বু এবং চুইংগাম

০৭ ই নভেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৪:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিয়ের পর বাবার বাড়ি যাওয়ার সৌভাগ্য আমার কমই হয়েছে। দেখা গেছে, যেদিন গেছি সেদিন সন্ধ্যায় ফিরে আসতে হয়েছে। এর জন্য অনেকটা আমার স্বামী দায়ী। ট্রেন, বাসে করে আমাদের বাড়িতে যাওয়ার অনেক ঝক্কি তাই সে গাড়ি ছাড়া যাবে না। তার আবার নিজের গাড়ি নাই। গাড়ি ভাড়া করতে হয়, গাড়ি ভাড়ার আবার সব সময় টাকা থাকে না, এইসব। লাটসাব আর কি!

একদম যে থাকিনি এমনও না, অনেক সময় সপ্তাহ ১০ দিনও থাকতাম। তো, একবার বাড়ি গেলাম। সপ্তাহখানেক থাকলাম। অনেক আনন্দ করলাম। যেন কোন পিছু টান নেই, কোত্থেকে আমার ২টা পাখা গজিয়েছে, কেবল উড়ি আর উড়ি! কিভাবে যে দিনগুলো চলে যাচ্ছিল বুঝতেই পারছিলাম না।

ও হঠাৎ না বলেকয়ে চলে আসল। ওর আবার সারপ্রাইজ দেয়ার বাতিক আছে। আমি আকাশ থেকে ধপ করে মাটিতে পড়লাম। আমার ডানা খসে পড়েছে। যথারীতি ও একটা গাড়ি ভাড়া করে নিয়ে এসেছে, এই গাড়ি দিয়েই ফেরা হবে। আমি ওকে বলতেও পারছি না আর কয়েকটা দিন থাকি কারণ আবার ওকে একগাদা টাকা খরচ করে গাড়ি নিয়ে আসতে হবে। লাটসাহেবের আবার টাকার টানাটানি!

কি আর করা, মন খারাপ করে সব গোছগাছ করছি। পারতপক্ষে আমার মা, বোনদের চোখের দিকে তাকাচ্ছি না। মন দুর্বল হয়ে যায় তখন এদের ছেড়ে যেতে ইচ্ছা করে না। কিন্তু যেতে তো হবে, হায় সংসার!

আমরা চলে আসছি। আব্বু আমাদের সাথে এগিয়ে দিতে আসছেন, সামনের রাস্তায় নেমে যাবেন। মেয়ের সঙ্গে আরও কিছুক্ষণ থাকার লোভ। কিন্তু আব্বুর ফিরতে কষ্ট হবে ভেবে আমার স্বামী বলল, বাবা, আপনার কষ্ট হবে ফিরতে, আপনি এখানেই নেমে যান।
গাড়ি যখন ব্রেক করল আমার বুকটা ধক করে উঠল। আমার চোখে কান্না জমছে।
আব্বু অনেক ভেবে নেমে গেলেন। আমার চোখে মেঘ দেখে তিনি এপাশ ওপাশ উদভ্রান্তের মত তাকাচ্ছেন। তাকে কি অসহায়ই না লাগছিল। রাস্তার পাশের দোকানে এক দৌড়ে গিয়ে আবার ফিরে আসলেন। আব্বুর দুহাত ভরা চুইংগাম। আমার হাতে দিয়ে বললেন, মামনি, চুইংগাম খাও।
ঝপ করে আমার চোখে অন্ধকার নেমে আসল, এইবার জমে থাকা মেঘ ঝরে পড়ল। আমার চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছা করছিল। আব্বু তুমি কি ভেবেছ এখনও তোমার এই মেয়েটি সেই ছোট্ট খুকিটিই আছে, যার হাতে চুইংগাম ধরিয়ে দিলে সে কান্না ভুলে যাবে? কি বোকা আমার আব্বু!
আব্বুকে রেখে গাড়ি এগুচ্ছে। আমার বোকা আব্বুটা ছোট হতে হতে পুতুলের মত হয়ে হারিয়ে গেলেন। আমিও কি বোকা, ঘাড় ব্যাথা হয়ে গেছে তবু্‌ও ফিরে ফিরে আব্বুকে দেখার চেষ্টা করি।
আমার স্বামী বলল, আহ, কি করো, ড্রাইভার তাকিয়ে আছে। আর কি কান্ড, বাবা, কি মনে করে এতগুলো চুইংগাম কিনে দিলেন?
আমি কান্না চাপতে চাপতে বললাম, এটা তুমি এখন বুঝবে না।
ও বলল, তাই, তা কখন বুঝব?
যখন বাবা হবে, তখন...।
২১টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×