আবীর ক্লাসের সবচেয়ে প্রানবন্ত ছেলে। সব কিছু তে সামনে এগিয়ে যাওয়ার দৃঢ় মনোবল আছে।সবসময় আশেপাশের সবার খোঁজ খবর নিচ্ছে। ক্লাসে কার কি প্রয়োজন তা আবীর জানছে এবং যত টুকু সম্ভব সে তার মত করে ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। ক্লাসে ফার্স্ট হতে না পারলেও ক্লাসমেটদের পাশাপাশি শিক্ষকদের কাছেও সমান জনপ্রিয়।
আমরা একটু লক্ষ্য করলেই আমাদের আশেপাশে এরকম মানুষ দেখে থাকব। আমাদের বন্ধু কিংবা আত্মীয় দের মধ্যে অথবা হতে পারে কাজের জায়গা তে-কারো কারো সাথে কথা বলতে আমাদের বেশ ভাল লাগে, ভরসা করার মত মানুষ বলে মনে হয়। আমরা কি খেয়াল করে দেখেছি কেন এমনটা হচ্ছে? একেই বলা হয় আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা এবং আমাদের আবেগীয় বুধিমত্তার তারতম্যের কারনে এমন হয়।
বুদ্ধিমত্তা কে আমরা দুই ভাগে ভাগ করতে পারি- একাডেমিক এবং আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা। একাডেমিক বুদ্ধিমত্তা নিয়ে হয়ত বেশি কিছু বলার নেই।যা ভাল করার জন্যে আমরা হয়ত নিরন্তর চেষ্টা করে এসেছি এবং হয়ত আমাদের সন্তানদের উপর সব সময় প্রয়োগ করার চেষ্টা করছি।এখন আসি আমার লেখার এই বিষয়বস্তু আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা কি সেই অংশে।বুদ্ধিমত্তা কে ব্যবহার করে নিজের আবেগ এবং এর সাথে সাথে আশেপাশের লোকজনের আবেগ কে বোঝা, এবং একি সাথে এই আবেগ কে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে তাও জানা।
হয়ত মনে হতে পারে এটি জেনে বা বুঝে আমাদের লাভ কি! বলা হয়ে থাকে চাকরি পেতে হলে আপনার হয়ত বুদ্ধির প্রয়োজন কিন্তু তা টিকিয়ে রাখতে গেলে অথবা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হলে আপনার আবেগীয় বুদ্ধির যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। এছাড়াও আমাদের পরিবার, বন্ধু বান্ধব অথবা কাজের ক্ষেত্রের সম্পর্ক গুলো আরও ভালোর দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্যে এর প্রয়োজন রয়েছে।
যাদের এই ধরনের বুদ্ধি বেশি তারা তাদের কথা, চিন্তা পরিষ্কার ভাবে প্রকাশ করতে পারে। নেগেটিভ ইমোশন যেমন ভয়, ঘৃণা, লজ্জা, হতাশায় ভেঙ্গে পরে না। এছাড়া আমাদের হয়ত মন ভাল নেই কিন্তু বন্ধু হয়ত পাশে বসে আগের দিনের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে তার মজার অভিজ্ঞতা বলে যাচ্ছ- যেটা হয়ত কারো কারো ক্ষেত্রে বেশ বিরক্তিকর হতে পারে।শুধু মাত্র মুখের কথা না তারা নন ভারবাল কমুনিকেশন দিয়েও বুঝতে পারে পাশের মানুষটি কি চাচ্ছে। নিজেদের আবেগ চিহ্নিত করার সাথে সাথে এরা তা রেগুলেশন করতে পারে।
কিভাবে আমরা আমাদের এই বুদ্ধিমত্তা কে বাড়াতে পারব!
অনেক কে বলতে শোনা যায় আমি যে মাঝে মাঝে কি করে ফেলি নিজেই জানি না। আমি যখন তখন রাগ প্রকাশ করে ফেলি অথবা খুব বেশী খুশী তে কি করি নিজেই বুঝতে পারি না।এক্ষেত্রে কয়েকটা বিষয় লক্ষ্য করতে পারি। প্রথমত একটু খেয়াল করে দেখতে পারি আমরা কি আমাদের নিজস্ব বিচার দ্বারা আমাদের আবেগ প্রকাশ করে ফেলছি কিনা! আমরা আমাদের চারপাশের পরিবেশ এবং অন্য আরেকজনের পরিস্থিতি বুঝতে পারছি কিনা! অর্থাৎ আমরা অন্যের ব্যাপারে সহানুভূতিশীল হয়ে আমাদের আবেগ যদি প্রকাশ করতে পারি তাহলে দেখব এটি আমাদের অনেক বড় গুন হিসেবে দাঁড়াবে যা অন্যের কাছে নিজেদের আরও গ্রহণীয় করে তুলবে ।
এছাড়াও আমাদের জীবনের প্রত্যেকটি মুহূর্ত এক রকম যাবে না। আমরা একটু চিন্তা করে দেখতে পারি প্রতিকুল কিংবা স্ট্রেস ফুল পরিস্থিতে আমরা কিভাবে আচরণ করে থাকি। আমি কি ভেঙ্গে পরি নাকি সামনে এগিয়ে যেতে পারি। আমি কি এরকম পরিস্থিতিতে অন্যেকে দোষ দিতে থাকি নাকি পরিস্থিতির মূল্যায়ন করতে পারি। নিজেকে যে কোন পরিস্থিতিতে মাথা ঠাণ্ডা রেখে চলতে পারাটাও আরেকটি বিশেষ গুন। ভেবে দেখতে পারি আমি নিজের শক্তিশালী দিক গুলোর পাশপাশি নিজের দুর্বলতা কে বুঝে চলতে পারি কিনা।নিজের কাজের দায়িত্ব নিজের নেওয়া এবং এর ফলাফলের গুরুত্ব নিজের নেওয়া আবেগীয় বুদ্ধিমত্তার একটি বিশেষ দিক।
আমাদের অনেক সম্যসার সমাধান হয়ত আমরা খুজে পেতে পারি যদি কিনা আমাদের আবেগ এর বহিঃপ্রকাশ যদি ঠিকভাবে করতে পারি। তাই এখন থেকেই আমরা এর প্রতি মনযোগী হয়ে দেখতে পারি আমাদের প্রকাশভঙ্গী কেমন হছে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




